একজন রাজীব এর জীবনী (অভিনেতা) (৫)
একজন রাজীব এর জীবনী (অভিনেতা) (৫)
দেবী গাফ্ফার
একমাস পর নির্দোষ প্রমান হয়ে জেল থেকে ছাড়া পেলো।
নাটক, সিনেমা যাত্রার প্রতি প্রচন্ড নেশা ছিলো। কারণ ছোট বেলায় পাসের বাড়ীর চাচার উঠানেই যাত্রা হতো।
প্রতি বছর।
চলার পথে একদিন অভিনেতা সিরাজ হায়দার সাহেব এর সাথে পরিচয় হয়।
তখন উনি রংগনা নাট্যগোষ্ঠীর কর্নধার।
বারেক এর দিকে তাকিয়ে বলেন, নাটক করবেন ? মঞ্চ নাটক ?
বারেক থতমত খেয়ে বলে আমি ? হ্যা আপনি।
নাটকের স্ক্রিপ্ট হাতে আসলো।
কিন্তু কি সমস্যা, রিকশার জায়গায় রিসকা হয়ে যাচ্ছে, বাতাস বলতে গিয়ে বাসাত হচ্ছে।
সবাই হাসহাসি করছে।
সাধুভাষা এত কঠিন ?
সাধুভাষা শিখার ক্লাস শুরু করলো।
হয়ে গেলো।
হায়দার সাহেব কে বললোঃ এবার আমি প্রস্তুত আমাকে পার্ট দেন।
কথা শুনে আরেক দফা হাসির রোল উঠলো।
মনু তুমি করবা নাটক? সবাই বিরক্ত।
বারেক পার্ট করবে মানে, রিহার্সালের সময় নষ্ট।
আরে,রাখে আল্লাহ মারে কে?
সিরাজ সাহেব হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন, ছাই এর নিচেই আগুন আছে।
প্রথম নাটকেই বাজিমাত, মোর নাম বারেক, মোরে ছেনো?
প্রথম পুরস্কার পেলো।
যারা হাসাহাসি করেছিলো তারাই বুকে জড়িয়ে ধরে বললোঃএত বাস্তব অভিনয় কি করে করলে? প্রথম পুরস্কার ও ছিনিয়ে নিলে।
একের পর এক নাটক মঞ্চায়ন হতে থাকে।
চারিদিকে খবর হয় বারেক এর অভিনয় ক্ষমতা আছে বটে।
ওখানেই বন্ধুত্ব হয়, নায়িকা দিলারা ইয়াসমিন, বাবুল আহামেদ সাহেব, জুলিয়া। আরও অনেক।যারা পরবতীতে বাংলা সিনেমায় সাফল্যের সাথে অভিনয় করেছেন।
ছয়মাস বেকার থাকার পর,পেট্রো বাংলা থেকে তলব আসে।
পেট্রো বাংলায় জয়েন করে কমার্শিয়াল অফিসার পদে।
জীবন পাল্টাতে থাকে। উড়োজাহাজ এ সিলেট আসা যাওয়া, ফরেনারদের সাথে সারাক্ষণ ওঠা বসা। ইংরেজি ভাষায় ও ভালো দখল চলে আসে।
জীবনের অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকে, মনের সাথে মনের যুদ্ধ ও বাড়ে।যাকে বিয়ে করানো হলো,এতদিন পার হলো ভালোবাসা তো জন্মায় না।
যদি ভালোবাসা নাই জন্মায় তাঁকে আটকে রাখা উচিৎ হবেনা।
তালাক নামা পাঠানো হয়।
শ্বশুর এর কাছেও এক কপি পৌঁছে যায়।
পরের দিন বারেক এর শ্বাশুড়ি পোটলা নিয়ে কাসেম সাহেব এর বাসায় হাজীর। সাথে একটা চিঠি।
বারেক এর শ্বশুর লিখেছেন, আমার মেয়ে আমি নিয়ে আসবো, আপনাদের মেয়েও আপনাদের কাছে পাঠিয়ে দিলাম।তালাকনামা ও যথা সময়ে পেয়ে যাবেন।
কারণ আমার চার বউয়ের মধ্যে একজন না থাকলে কিছু আসে যায় না।
বারেক এর বাবা পড়ে যান মহা বিপদে।
কোন উপায় না পেয়ে ঢাকার উদ্দেশ্য রওয়ানা দেন।বারেক এর বাসায় উঠে, সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন।
মহা বিপদ,মহিলার দশ বারোটা বাচ্চা নিয়ে তালাক হয়ে যাবে?
গ্রামের লোক কি বলবে? স্বাশুড়ীর কি দোষ?
মানুষ বলবে পর কোনদিন আপন হয় না, যতই লালন পালন করো না কেনো।
কাসেম সাহেব এর ঘুম নেই, রাতভর বারেক এর হাত দু’টি ধরে অঝোরে কাঁদেন।
বাবার কাঁন্না দেখে বারেক ও কাঁদে।
নিজের বাবা কখনো দেখেনি, এই বাবাকে ছোটবেলায় কত জ্বালিয়েছে।
কোনদিন বিরক্ত হয়ে উফ বলেন নি।
এই বাবা কষ্ট পেলে আল্লাহ মাফ করবে না।
চোখের সামনে ভেসে ওঠে কতো স্মৃতি
একদিন বাবার সাথে হাটে যায় সপ্তাহিক বাজার করবে।
বাবাকে বলে বাবা গরুর গলার ঘন্টা কিনে দাও।পিতলের ঘন্টা। চার গরুর চারটি।
বাবা বলেনঃ অন্য সময় কিনবো, আজকে ঘন্টা কিনলে বাজার করতে পারবো না।
সাথে সাথে বারেক গলা ফাটিয়ে কেঁদে বাজারের কাদা মাটিতে শুয়ে পড়ে।
বাবা আদর করে কোলে নিয়ে অবুঝ বারেক এর জন্য ঘন্টা কিনে।
বাজার করা হলো না।
খালি বাজারের থলে নিয়ে টুংটাং ঘন্টার আওয়াজ করতে করতে বাড়ী ফিরলো।
ভেবে ছিলো আজকে বাড়ি ফিরলে মা না তুলকালাম কান্ড বাঁধিয়ে বসে।
কপালে মারও জুটতে পারে।
অন্ধকার রাতে সারা শরীরে কাদা মেখে ভয়ে ভয়ে বাবা ছেলে বাড়ি ফিরে।
সমস্ত ঘটনা মা শুনে, মুচকি হেসে বলেনঃহেতে হইছে কি? মোর এওগ্যা পুলা, বাবা তুই খুশি থাকলে মোগো খাওয়া লাগবো না। গোসল করিয়ে পাসের বাড়ি থেকে অল্প দুধ ধার করে দুধ ভাত মুখে তুলে দেয়।
এই বাবা মাকে দুঃখ দিলে আল্লাহ নারাজ হবে।
বারেক বাবাকে সান্তনা দিয়ে বলেঃ আপনি বাড়ি যান আমি তালাকনামা উঠিয়ে নিবো।
বাবার পা ধরে ক্ষমা চেয়ে বলে,
আপনাদের কোনদিন কষ্ট দিবো না।পৃথিবীর সমস্ত সুখ আপনাদের পায়ে লুটিয়ে দিবো।
কথা দিলাম।
চলবে…….