একজন রাজীব এর জীবনী(অভিনেতা) (৮)
একজন রাজীব এর জীবনী(অভিনেতা) (৮)
দেবী গাফ্ফার
আমার চোখ খুজঁতে থাকে কুলসুম মেম কে।
ছোট করে চুল কাটা,মাথায় কাপড়।
জিজ্ঞেস করি উনার চুল এত ছোট করে কাটা কোনো?
মুখে খামচির মত দাগ।
তখন শুনি, বছরে দুই বার মাথার চুলে জট ধরে যায়।
তখন মাথা ঠিক থাকে না সামনে যাকে পান তাকেই মারেন।
এই অসুখ উনার ছোট বেলা থেকে।
আমার একটু ভয় ভয় লাগতো।
উঠানে চুলা,রান্না উঠানেই হয়।
কুলসুম মেম আমাকে ডেকে পাঠান।
একটা চেয়ার রাখা।
বলেনঃতোমার সাথে তো গল্প করাই হলো না,আমার কাছে একটু বস।
চুলা থেকে দুধের হাড়ি নামিয়ে গ্লাসে ঢালেন,একটু লবন দিয়ে চামচ দিয়ে নাড়াতে নাড়াতে বলেনঃতোমাকে বেশ দূর্বল মনে হচ্ছে, দুধ টুকু খাও ভালো লাগবে।
পরম মমতায় আমার হাতে দুধের গ্লাস উঠিয়ে দেন।
গল্প চলতে থাকে। সাথে কুলসুম মেম এর দুই বোন।
ওনারা আমাকে দেখতে এসেছেন।
আমার সাথে আন্তরিকতার সাথেই গল্প চলে।
কুলসুম মেম ভাই বোনের মধ্যে সবার বড়।
খেয়াল করলাম,আমাকেও বড় বোনের মতো সম্মান দিয়েই ওনারা কথা বলছেন।
রাজীব সাহেবকে ঘিরে শ’খানেক লোক।
মাঝে মাঝে আমারও ডাক পড়ে,আমাকে দেখতে আসা লোকজন,মামা, চাচা ফুফু খালা।
সবার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করো। তাই করি।
আমরা উঠানের এক কোনায় বসি, চাটাই ঘেরা এক টুকরো রান্না ঘর।
পুরো উঠান জুড়ে বিভিন্ন লোকজন এর জটলা।বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তা কানে আসছে।
গল্পের একফাঁকে কুলসুম মেম কে জিজ্ঞেস করি,আপনার লাইফ এমন হলো কেনো?
সংসার যদি না-ই হবে আপনার জীবনের সিদ্ধান্ত আপনি নিলেন না কেনো?
দীর্ঘস্বাস ফেললেন।
কিছুক্ষণ মৌনতার পরে,চোখ মুছে বললেনঃ এই আমার ভাগ্য,নিয়তি বলতে পারো।
দুই ছেলের ভবিষ্যৎ এর কথা ভাবি। ( রাজীব সাহেব এর ছেলে)
একজন সম্ভবত ৭২ এ জন্ম আর একজন ৭৮ এ হবে। বড়ো ছেলে মাসুদ, ছোটজন মামুন। ওরাও মা মা বলে সারাক্ষণ আমার সাথেই থাকে।
কুলসুম মেম বলা শুরু করলেনঃ
ছোট বেলায় এই বাসায় বউ হয়ে আসি।
সুখ দুঃখ এখানেই।
কোথায় যাবো? বাবার বাড়ীতে চার মার সংসারে অতগুলো ভাই বোনের মধ্যে আমার জায়গা কোথায়? (যদিও উনার বাবার বাড়ীর আর্থিক অবস্থা বেশ ভালো ছিলো ) তা-ও এখানে সম্মানের সাথে আছি।
বাকি জীবন এভাবে এখানেই কাটিয়ে দিবো।
বউ শাশুড়ীর প্রচন্ড ঝগড়া, কেও কাওকে সহ্য করেন না।
খাওয়ার সময়টুকু ছাড়া উনার সাথে রাজীব সাহেব এর তেমন কোন কথা হতো না।
কুলসুম মেম ই দাড়িয়ে আমাদের খাওয়া পরিবেশন করতেন।
আত্মীয় স্বজন কাজের লোক এই সব বিষয়ে আলাপ ছিলো মুখ্য।
রাজীব সাহেব বরাবরই কম কথা বলেন।হু হ্যা ছাড়া কোন উত্তর দিতেন না।
কুলসুম মেম আমাকে পরম মমতায় গ্রহন করলেন।
এক ফাঁকে জিজ্ঞেস করি আপনি কি আমার উপর রাগ?
হেসে বলেনঃ কি যে বলো? তুমি তো আমার ছোট বোনের মতো।
আমাদের চার মা, চার মাকেই সমান ভালোবাসি।আমার বাচ্চাদের কাছেও তুমি তাদের মা।
আমার সংসার শুরু তোমার জন্মের আগে।এখানে তোমার কোন ভুমিকা নেই।
আমার কপাল অনেক আগেই আল্লাহ লিখে ফেলেছেন।
গুছানো কথা,তখন মনেই হয় না উনি অসুস্থ হলে অনেক অবাঞ্ছিত কান্ড বাঁধিয়ে ফেলেন।
একবার কুলসুম মেম এর এ-ই অসুখের সময়,রাজীব সাহব এর মা নামাজে দাঁড়ান, পিছন থেকে ধারালো দা দিয়ে কোপ দিয়ে বসেন।
সেবার পাসের বাসার চাচার ছেলেরা মাথায় গামছা পেঁচিয়ে পটুয়াখালী হাসপাতালে নিয়ে যায়। কয়েক মাস হাসপাতালে থাকার পর সেবার উভয়ের ভাগ্যে মা বেঁচে যান।
যে কয়দিন ছিলাম উনি আমাকে আদর করে খাইয়েছেন, সহজ সরল ভালো মানুষ। এমনও জীবন হয়? ভাবনা মাথায় নিয়ে ঢাকা ফেরৎ।
চলচ্চিত্রের কাজ বাড়তে থাকে, সাথে টাকা ও ব্যস্ততা উভয়ই বাড়ে।
৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যা, একে-তো ড্রেন এর সাথে বাসা নিচ তলা।
চলবে……
একজন রাজীব এর জীবনী (অভিনেতা)-৫