একজন রাজীব এর জীবনী (অভিনেতা) (৯)
একজন রাজীব এর জীবনী (অভিনেতা) (৯)
দেবী গাফ্ফার
৮৮ বন্যায় ঘরের ভীতরে তিন ফুট পানি।
জয় বিজয়কে কোলে নিয়ে জাকির হোসেন রোড এ আমার এক বান্ধবী বুলির বাসায় উঠি।
লালমাটিয়া বাসা খুঁজি।লালমাটিয়া ক্লাব এর সামনে বাসা পেয়ে গেলাম।
ভাড়া চার হাজার টাকা।
একাই বাসা পাল্টাই,বাচ্চা পালি,বাজার করি।
রাজীব সাহেব সকাল ৮টায় শুটিং এ যান ফিরেন রাত ১২টা ১ টা।
লালমাটিয়া থেকে গাউসিয়া মার্কেট চিনি, আর টাউন হল বাজার চিনি ব্যাস।
কোন এক ছুটির দিন সকালে।
রাজীব সাহেব বারান্দায় বসে পেপার পড়ছেন।
টেবিলে খাবার দিয়ে বারান্দার দিকে আসতে গিয়ে দেখি, একটা চিঠি পড়ে ছিড়ে টুকরো টুকরো করে পাসের বাড়ীর ছাদে ফেলে দিলেন।
আমাকে দেখে খানিকটা অপ্রস্তুত।
রাগে দুঃখে আমার মুখে কথা আসেনা।
কিছু না বলে অপেক্ষা করি কখন উনি বের হবেন।
কার সাথে চিঠি লেনদেন করছেন? কার প্রেমে হাবুডুবু?
সাত পাঁচ ভেবে চোখে পানি চলে আসে।
বিকালে বের হলেন, কোনমতে পাসের বাসার ছাদ থেকে ছেঁড়া কাগজের টুকরো গুলো নিয়ে আসি।
একটার সাথে আর একটা জোড়া লাগাতে থাকি।
চিঠি পড়ে দুঃখের সীমা রইল না।
নিচে লেখা
ইতি তোমার দুঃখিনি মা।আরও কি কি যেনো।
ভেবে পাইনা, মা কেনো এমন চিঠি লিখলেন? প্রতি মাসে মা বাবার জন্য আমি নিজের হাতে টাকা, কাপড়,ঔষধ সব আমিই পাঠাই।
ডাক্তার দেখানো, খবরা-খবর নেওয়া সবইতো আমি করি।
এতকিছু করার পরও আমি পর-ই রয়ে গেলাম?
রাতে চিঠির টুকরো গুলো হাতে নিয়ে, আমি রাজীব সাহেব এর মুখোমুখি বসি।
প্রচন্ড রেগেমেগে জিজ্ঞেস করি, এ-ই লুকোচুরি খেলার কারণ কি?
কোন উত্তর নেই,মাথা নিচু ক’রে বসেই রইলেন।
আমার রাগ আরও বাড়ে।
কুলসুম মেম থেকে শুরু করে মা, বাবা গ্রামের আত্মীয় স্বজন সবার ডাক্তার, বাসায় রাখা,চাকরি দেওয়া।
যাওয়ার সময় এক জোড়া কাপড় লঞ্চ ভাড়া সহ দিয়ে বিদায় দেওয়া সব আমি করি।
আমি একাই চিৎকার করতে থাকি,উনি বোবার মত আমার চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকেন।
দুই চোখে পানি ছলছল, চোখ মুছেন।
আরও রেগে যাই,
কাঁদে কেনো?
তিনদিন কথা বন্ধ।
তিনদিনের মাথায় শুটিং থেকে ফোন করে বলেনঃ বাচ্চাদের আগে আগে ঘুম পাড়িয়ে দিও,আজকে তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিবো।
গভীর রাত, দু’জন বারান্দায় বসা,কারও মুখে কথা নেই।
মুখখানা ব্যাথায় মলিন। শুরু করলেনঃ
তুমি যে মার চিঠি নিয়ে এত রেগে আছো,এই চিঠি আমার জন্মদাত্রী মায়ের। হালিমা মা লিখেন নি।
আমি তোমার কষ্ট বুঝি। মা বাবা সবার জন্য যা কর তাতে আমি কৃতজ্ঞ।
না বুঝলে কৈফিয়ৎ দিতাম না।
কি বলে এ-সব? দুই মা?
আমি আপনার ঘরে দুই বাচ্চার মা হলাম,আর আমাকেই কিছু বললেন না? আমি এতটা পর?
রেগে গেলে আপনি বলতাম।
বললেন ঃ সত্যি কথা বললে, পালক মা বাবা মনে করে উনাদের সেবা যত্ন যদি না কর? এ-ই ভয়ে বলিনি।তাছাড়া এ-ই মা বাবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ,উনাদের ঋণ শোধ হয়না।
আমার আপন মায়ের ওপর আমার প্রচন্ড রাগ।
যেহেতু মা ” লালমুন” জন্ম দিয়েছেন, উনার খাওয়া পরা দেখার দায়িত্ব ও আমারই।
আপন মার প্রতি এতো রাগ কেনো জিজ্ঞেস করি।
রেগেমেগে বলেনঃ আমাকে রাস্তায় ফেলে দিলেন কেনো? আমাকে খাওয়াতে না পারলে ভিক্ষুক বানাতো? আমি আমার মাকে ভিক্ষা করে খাওয়াতাম।
এই টুকু শুনে আমিও কাঁন্না শুরু করি। না যেনে খারাপ ব্যাবহার এর জন্য বারবার ক্ষমা চাই।
তখন আমিও একজন মা,মা সন্তানের বিচ্ছেদ, আমাকেও দিশেহারা করে।
চাচাতো ভাই রাজ্জাক, উনার বাসায় মা ছেলের একদিনই কথা হয় মা লালমুন এর সাথে।
তা-ও অতি গোপনীয়তার সাথে।
পালক মা বাবা শুনলে কষ্ট পাবে এই চিন্তা করে।
মাকে জিজ্ঞেস করোনি? তোমাকে এভাবে ফেলে দিলেন কেনো?
করে ছিলাম, সে আর এক কাহিনি।
মা লালমুন তিন বাচ্চা নিয়ে বিধবা হন।
বয়স অল্প, আগুনের মতো গায়ের রং।
চারিদিকে প্রতিযোগিতা লাগে, মা লাল মুনকে কে বিয়ে করবে।
মা বিয়ে করবেন না জানিয়ে দিলেন।
যারা বিয়ে করতে চেয়েছিলো,তাদেরই কেও
ঐদিন রাতেই বাড়িতে আগুন দিলো,ঘর পুড়ে ছাই হ’য়ে গেলো।
তিন বাচ্চা নিয়ে বিধবা মানুষ দুঃখের সীমা রইল না।
আত্মীয় স্বজন মিলে সিদ্ধান্ত নিলো, কম বয়স,তারমধ্যে এত রূপবতী একা রাখা যাবে না।বিয়ে দিয়ে দেওয়াটাই উচিৎ।
পাত্র কে?
কে আবার, আপন দেবর জব্বার? জমি জমা যতসামান্য আছে ঘরেই থকবে।
জব্বার সাহেব এর ঘরে তো বউ বাচ্চা আছে।
সবার একটাই কথাঃ তাতে কি? বিয়ে দিয়ে দিলো।
জব্বার সাহেবের ঘরেই জন্ম নিলেন আজকের রাজীব।
জব্বার সাহেবের বউ বাচ্চার সাথেই থাকতে হবে।
জব্বার সাহেব বিয়ে তো করলেন, ঐ বউ বাচ্চা ব্যাপারটা কিভাবে নিলো?
চলবে………..
একজন রাজীব এর জীবনী (অভিনেতা)-৫
একজন রাজীব এর জীবনী (অভিনেতা)-৬