সাজেদা রানীর গল্প- অদ্ভুত এ ভালোবাসার নাম কি?
অদ্ভুত এ ভালোবাসার নাম কি?
সাজেদা রানী
আমি নতুন অফিস এ ঢুকেছি, ভালো করে কাউকে চিনিনা।আমার সাথে যারা ঢুকেছে তাদের সাথে পরিচিত হয়েছি, বাকিদের সাথে বেশি পরিচিত না।তবে আমার এক খালাতো বোন ছিলো, প্রিয়া। সে দুই বছর হলো ঐ অফিসে চাকুরী করে এবং সে ঐখানে লিডার পদে নিযুক্ত আছেন। অফিসটি খুব সুন্দর আর পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।
ঘণ্টায় ঘণ্টায় হাত ধোয়া, ট্রি ব্রেক, লাঞ্চ টাইম, নামাজ এর ব্রেক। খুব ভালো লাগতো অফিসটা আর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, ঐ অফিসে কোনো ছেলে ছিলো না। সব মেয়ে, ছেলেদের প্রবেশ নিষেধ। এমনকি কারো বাবা, ভাই আসলে ও ঢুকতে দেওয়া হয়না। দেখা করতে হলে অফিসের বাহিরে। একদিন আমি ব্রেক টাইমে টয়লেটে যাবো বলে, ওয়াশরুমে যাই। গিয়ে দেখি একটি ছেলে, আমি অবাক হয়ে গেলাম। দাঁড়িয়ে আছি ছেলেটি আমায় বলে তোমার নাম কি? আমি বলি রানী। তোমার বাসা কোথায় বললাম পানাম। এই বলে আমি চলে আসি, মনে প্রশ্ন নিয়ে। ছেলেটি কে? এতো মেয়ের মধ্যে, একটি ছেলে কেনো? তো আমার সাথে রিম নামের একটি মেয়ে ছিলো ও শুনে এলো ঐ ছেলেটা বৃষ্টি নামের একটি মেয়েকে বলছে, মেয়েটি সুন্দর তাই না, জিজ্ঞাস করোতো প্রেম করবে কি না! যদি প্রেম করে আমি করবো। রিম এসে আমায় বললো, আমি আরো অবাক হয়ে গেলাম। অফিস শেষে, প্রিয়া আপুর সাথে বাড়ীতে যাচ্ছি। আপুকে জিজ্ঞাসা করি, আপু এতো মেয়ের মধ্যে একটা ছেলেকে দেখলাম। ছেলেটা কে? আর আমাদের অফিসে কি করে? তখন আপু বলে ও ছেলে নয়, ও মেয়ে পুড়ো নাম সানজিদা, সবাই সানজু বলে ঢাকে। আর তার পোশাক ও চুল চেঞ্জ করে ফেলছে। আমি জানতে চাই কেনো এমন করলো, কারন কি? আপু বলে না বলতে পারবো না। অনেক রিকুয়েস্ট করে, বলতে রাজী করালাম। আপু বললো, সানজিদা এমন ছিলোনা। সানজিদার চুল কোমড় ছাড়িয়ে যেতো এতো বড় ছিল। কিন্তু তার হাটার ধরন ছিলো একটু ছেলের মতো। হেলে দুলে হাটতো,আর ছেলেদের মতো গলার কণ্ঠস্বর। অনেক মানুষ তাকে অনেক অপবাদ দিতো সে ছেলেদের মতো হাটে, ছেলেদের মতো কথা বলে তাহল কেনো সে ছেলেদের মতো পোশাক পরে না। চুল গুলো কেটে ফেললেই তো হয়। নানা অপবাধ শুনে সে চুল কেটে ছেলের মতো পোশাক পরিধান করতে শুরু করলো। আর নামটা সানজিদা থেকে সানজু হয়ে গেলো। এই ছেলে হওয়ার জন্য একদিন এমন এক কান্ড ঘটলো। মানুষকে হেলিয়ে দিলো। এক অদ্ভুদ প্রেম কাহিনীর ঘটনা ঘটালো, যে প্রেমের কোনো নাম নেই! যার সাথে হলো, সে হলো সানজুর ফ্রেন্ড, নামটা ঠিক মনে নেই। সেই মেয়েটি সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিলো। মেয়েটি সানজুকে ছাড়া কিছু বুজে না। আর সানজু ও তাকে ছাড়া কিছুই বুজেনা। যেখানে যাবে দুজন যাবে।কেউ দেখলে ভাবে প্রেমিক প্রেমিকা। আর রাতের বেলা ও সানজু তার ঐ ফ্রেন্ড এর বাসায় ঘুমোতো। সানজু বাবা-মা কারো কথা শুনতো না। সানজু বলে তার ঐ ফ্রেন্ড তার সব। একদিন তার ঐ ফ্রেন্ড এর বিয়ের প্রস্তাব এলো। মেয়েটির বিয়ে ও ঠিক হয়ে গেলো। কিন্তু সানজুর জন্য বিয়েটা ভেঙে যাবার পথে।কারন ছেলের বাড়ীর সবাই মনে করেছিলো সানজু ছেলে, কিন্তু অবশেষ এ সবাই জানলো সানজু আসলে মেয়ে। বিয়েটা ও হচ্ছে। কিন্তু সানজিদা মানে সানজু এসব মেনে নিতে পারছে না। তাকে ছেড়ে তার ফ্রেন্ড চলে যাবে। তার ফ্রেন্ড ও চায় না যে তাকে ছেড়ে চলে যেতে। সানজিদা তার ফ্রেন্ড কে হারাতে পারবে না বলে, নিজের হাত কাটে। তার ফ্রেন্ড ও একি অবস্থা। দু’জন দু’জনকে ছাড়া বাচঁবে না। সে কি দৃশ্য। সানজিদা বাড়ীতে গিয়ে সব ভাংচুর করে। মা বাবা কে বলে সে তার ফ্রেন্ডকে বিয়ে করবে। এ কেমন কথা, একটা মেয়ের সাথে কি আরেকটা মেয়ের কি বিয়ে হতে পারে। যতোই সে ছেলেদের মতো হওয়ার চেষ্টা করুক। সমাজে নানা কথা বলা বলি করছে। কিন্তু সানজু মানে না। গায়ে হলুদে তার ঐ ফ্রেন্ড কে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে, কিন্তু সফল হয়না। বিয়ের দিন বিষ পাণ করে মরার চেষ্টা করে তাও পারে না। তাই সে নেশা জাতিয় যতো রকক দ্রব্য আছে সব সেবন করে। তার ফ্রেন্ড কে ভুলবার জন্য। একদিন আবার ঐ ফ্রেন্ড এর মতো আরেকটি মেয়ে তার জীবনে আসে। প্রিয়া আপুকে আবার জিজ্ঞাস করি, কে সে মেয়ে, আর তার সাথে ও কি কিছু ঘটলো। আপু বললো না, সে এখনো আছে, আর তার জন্যই তো সানজু এ অফিসে ঢুকছে। আমি বলি তার নাম কি? আমি তাকে দেখবো। আপু বলে তুই দেখেছিস। আমি বললাম কিভাবে দেখলাম, বললো ওয়াশরুমে ওর সাথে বৃষ্টি নামের কেউ ছিলো না সেটাই। আমি বললাম অহ এই জন্যই বৃষ্টিকে রাগানোর জন্য এ কথা বলেছে যে জিজ্ঞাস করোতো মেয়েটি প্রেম করবে কি না। এ কি রকম অদ্ভুত প্রেম? প্রেম একটি ছেলে ও একটি মেয়ের মাঝে হয়। বিয়ে ও বিধির বিধান মতো একটি ছেলে ও একটি মেয়ের হয়। এখন শুনলাম মেয়ে মেয়ে প্রেম, আবার বিয়ের প্রস্তাব পুড়োই অদ্ভুত।