সেলিনা জাহান প্রিয়ার গল্প: ‘অ-মানব’-(৪৭ তম পর্ব)

অ-মানব-৪৭-তম-পর্ব
————————সেলিনা জাহান প্রিয়া
কেনুর তো মাথায় হাত কারন তার ব্যবসা হল না । মনে মনে অ-মানব কে খুব বোকা দিচ্ছে । মন খারাপ করে যখন চেয়ারম্যানের বাড়িতে প্রবেশ করল ।

তখন কেনু চোখে মুখে সরিষা ফুল দেখছে । অবাক হয়ে দেখে ফুলজান । একটা নিস্পাপ মেয়ে । কত মায়া তার মুখে । কেনু কিছু সময়ের জন্য টাকার সুখ ভুলে গেল । শুধু ফুলজানের দিকে চেয়ে আছে । মনে মনে কেনু বলে কত টাকা আসবে যাবে কিন্তু ফুলজান একটাই । অ-মানব একটা যাদু কর মানুষ শুধু মনে মনে বকলাম । যেই কাজ আমি তিন বছরে ফেইল মারছি সে তিন দিনেই করে ফেলছে । ফুলজান কেনুর দিকে চেয়ে একটু মিষ্টি হাসি দিয়ে ঘরে চলে যায় । কেনু যেন মনে মনে সেই হাসির মধ্যে নিজের একটা স্বপ্ন দেখতে পায় ।
চেয়ারম্যানের বউ কেনু কে বলল কিরে একা কেন অ-মানব ভাইজান কোথায় ?
——— মামী চেয়ারম্যান মামার সাথে আসব ।
——— আরে পাগল তুই কোন খবরেই জানস না । তাড়াতাড়ি যা ।
——— মামী কোথায় যাব ?
———- কোথায় আবার মজিদ মিয়ার বাড়িতে ?
———- সেই খানে আবার কি হল ?
———- গেলেই দিখবি ? অ-মানব নাকি ঐ কালা জাম গাছে সন্ধ্যায় যাবে ।
———- কন কি মামী ঐ গাছে তো দিনের বেলায় ভয়ে হুজুর পর্যন্ত যায় না।
———- কথা কম বল । আগে যা ।
———- জি মামী, আমি গিয়ে অ-মানব মামা কে নিয়ে বাড়ি চলে আসতাছি । কেনু বলে এখন মাগরিবের আজান দিবে আর সে কিনা গেছে মজিদ মিয়ার বাড়িতে । অ-মানব মজিদ মিয়ার মেয়ে কে কুলে নিয়ে বলল মা এটা হল একটা গাছ । আমারা যেমন মানুষ সেই হল গাছ, গাছের মানুষের মত হাত পা নাই । তুমি হয়ত ভয় কর মানুষের কাছে মিথ্যা গল্প শুনে । তুমি দাড়াও আমি ঐ গাছের একটা ডাল কেটে আনি। সাবাই বলছে ভাই এখন সন্ধ্যা আপনি গেলে জীবিত আসতে পারবেন না। আর আসলে ও কাল আপনার জর আসবে । আপনি রক্ত বুমি করবেন ।
অ-মানব বলল আমি হলাম অ-মানব । অ-মানব কে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই । বরং আপনারা সেই জন কে ভয় করেন যে আপনাদের পালন কর্তা । বাড়ি ভর্তি মানুষ দক্ষিণে পুকুর তার পর জঙ্গল । একটা দা হাতে অ-মানব জংলের দিকে হেঁটে যায় ।
অ-মানব জঙ্গলে গেছে এই কথা শুনে রাজ্জাক মেম্বার মজিদ মিয়ার বাড়িতে আসে । কেনু এসে বলে মজিদ মিয়া কি করছ চেয়ারম্যান জানলে আর এই লোক মারা গেলে তুমি তো মার্ডার কেইস খাইবা ? মজিদ মিয়া বলল তিনি ভাল মানুষ । আমার মেয়ে রোজ রাতে স্বপ্ন দেখে ঐ জামগাছের ডাল এসে আমার মেয়ে কে নিয়া গলায় প্যাচ দিয়ে মেরে ফেলে । ঐ ডালটা টা আমার মেয়ে পায় । কিছু ক্ষণ পরে অ-মানব একটা ডাল কেটে নিয়ে আসে । দাও টা মজিদ মিয়া কে দিয়ে বলে গাছ কত বিক্রি করবেন বলেন ।
————-মজিদ বলে কত জন দাম করেছে কিন্তু কেউ বিনা পয়সায় নিতে চায় না?
————- আরে কত দাম দিলে চলে বলেন ?
———— এই জাম গাছে দাম মেলা কিন্তু কেউ কিনব না।আপনে যা দেন ?
————- অ-মানব কেনু কে বলল মজিদ মিয়া কে ৫ হাজার টাকা দিয়ে দাও।
————– কেনু পাঁচ হাজার টাকা দিল ।
অ-মানব বলল একটু হাসি দিয়ে বলল ঐ গাছে তিনটা জীন থাকত । তাদের কেউ ঐ গাছে বেঁধে গেছিল । তাই এত সমস্যা । আমি সব জীন কে মুক্ত করে দিলাম । এখন আর কোন সমস্যা নাই । পাঁচ হাজার টাকা মজিদ মিয়া কে দিয়ে কেনু কে নিয়া বাড়ির দিকে হাটা দিল, পিছে পিছে রাজ্জাক মেম্বার এসে বলল – ভাই অ-মানব আমার বাচার উপায় বল । আমি জানি ভাই তোমার সাথে জীন আছে । না হয় আমার চাচার
কথা কেউ জানত না।
—— এটা আজব দুনিয়া মেম্বার সাব এই যে আপনি আমি আমার সাথে কেনু এই আমারা সবাই কেউ না কেউ কোন না মোহে আমাদের আসল ঠিকানা ভুলে আছি ।
মেম্বার বলল তোমার এত কঠিন কথা বুঝতে পাড়ি না ভাই অ-মানব ।
কেনু বলে আজ রাতে খুব বৃষ্টি হতে আকাশ যে ভাইবে মেঘ করেছে । অ-মানব বলে মেঘ দেখলে কোন দিন বৃষ্টির আশা কর না। কাউকে ভালবাসলে তার ক্ষতির চিন্তা কর না। আমারা সবাই স্বার্থের প্রেমে নিজেকে জড়াতে গিয়ে দুঃখ পেয়ে আসি যার প্রেমে কোন স্বার্থ নাই তার কোন দুঃখ নাই । রাজ্জাক ভাই আপনি একটু দাঁড়ান ঐ যে জমির মাঝ খানে একটা গাব গাছ আমি ঐ খান থেকে একটু আসি ।
কেনু বলে অ-মানব মামা তোমার কি জানের ভয় নাই ।
কেনু জানের মায়া সব মানুষের আছে কিন্তু আমি অ-মানব । যারা অ-মানব তাদের কোন ভয় নাই । কেনু আর রাজ্জাক মেম্বার চেয়ে দেখে অ-মানাব সেই মাঠের মধ্যে একটা অনেক দিনের পুরাতন গাব গাছ সেই খানে গেল ।
কেনু বলে মেম্বার আমার মনে হয় জাম গাছ থেকে যেই জীন গুলো ধরেছে ঐ গাচ্ছে ছারতে গেছে । দেখেন নাই তো আপনি আর আমিও দেখি নাই । যেই দিন এই অ-মানব বাজারে আসছিল সেই দিন বৃষ্টির মধ্যে অনেক মাছ ধরে বাজারে পাশে মরা নদী থেকে সেই দিন যারা ছিল সবাই বলে জীন মাছ দিয়ে গেছে পানিতে ।
রাজ্জাক মেম্বার বলে কেন আমি অনেক ভুল করেছি পুলিশ দিয়ে তাঁকে ধরাতে চেয়েছি। যদি আমারে জীন চালান করে আমি তো শেষ ।
———–কেন চিন্তা করে বলে মেম্বার এই খানে তো আমি আর আপনে । কি বলেন ?
———– হ্যা কেনু ।
———– তাহলে একটা কাজ করেন । অ-মানব মামা আসা মাত্র পা ধরে মাপ চাইবেন। আমি অ-মানব মামা রে বলব মাপ করে দিতে । আর কেউ দেখব না আপনার ইজ্জত ও ঠিক থাকবে ।
————- দারুন বুদ্ধি ? ঠিক বলেছ কেনু । চেয়ারম্যান সাথে থেকে বুদ্ধি হইছে তোমার । মেঘে ঢাকা রাত । কেউ জানবে না ।
অ-মানব গাব গাছের তলা থেকে মেম্বার আর কেনুর কাছে আসতেই । রাজ্জাক মেম্বার অ-মানবের দুই পায়ে ধরেছে সাথে কেনুও । দুই জনেই জিনের ভয়ে পা ধরে আছে । অ-মানব বলল ঠিক আছে উঠেন । রাজ্জাক মেম্বার বলল কাল সকালে আমি চাচারে আনতে চলে যাব ।
অ-মানব বলল থানায় একটা জিডি করবেন, লিখবেন লোক মারফত জানতে পারলাম চাচা পাগল খানায়। আর যেই লোক কে আমাদের চাচা বলে জেনেছি এটা মনে হয় ভুল তাই বিষয়টা চাচা আসা পর্যন্ত থানায় জানিয়ে একটা সাধারন ডাইরি করে রাখলাম ।
এতে আপনি নিরাপদ থাকবেন । রাজ্জাক মেম্বার বলল ঠিক ভাই অ-মানব । আপনি মানুষ না ফেরেস্থা ।
কেনু মনে মনে খুব ভয় পাচ্ছে । রাজ্জাক মেম্বার চলে গেছে । গ্রামের রাস্তা । কেনু বলে
——— অ-মানব মামা কয়টা জীন ছিল ?
———- কোথায় ?
———- জাম গাছে । ঐ যে আপনে গাব গাছে ছেড়ে আসলেন !
———- কেনু মানুষ জিনের চেয়ে সম্মানী আর তুমি মানুষ হয়ে জীন কে কেন ভয় পাবে । দেখ জীন জাতি কে এই দুনিয়া থেকে বিদায় দিয়ে মানুষ কে পাঠিয়েছে । মানুষের সাথে যদি জীন পারত তাহলে তো সব মানুষ জীন মেরে ফেলত ঠিক কিনা ।
———— হা ঠিক মামা । তাহলে আপনি ঐ গাব গাছের কাছে কেন ।
———— আরে কেনু গাব গাছের সাথে একটা ছোট পুকুর আছে না।
———— হ্যা । আছে তো !!
———— টয়লেট করে পুকুরে পানি দিয়ে পরিষ্কার হয়ে আসলাম । খুব টয়লেট চেপে ছিল ।
———— আর বললেন যে জাম গাছ থেকে জীন ধরেছেন ।
———— আরে পাগল এটা ওদের মনের সাহস বাড়ানোর জন্য । জীনদের খেয়ে কোন কাজ নাই জাম গাছে থাকবে । জীনরা আমাদের আগে দুনিয়ায় এসেছে তারা তাহলে আমাদের চেয়ে জ্ঞানী । তার যদি আমাদের জ্ঞানী না হবে তাহলে শয়তান এত জ্ঞানী কেন ? একবার চিন্তা কর । তাই জীনরা জিনের
দেশে থাকে । তারা আল্লাহর আরসের কাঁচা কাছি যেতে পারে । চিন্তা কর তাদের ক্ষমতা । ঐ গাছে কিছু নাই । কাল কে শহর থেকে পাইকার এনে বিক্রি করাও । লাখ টাকা দাম বুঝলে আমারে কিছু দিও । ওকে ?
কেনু বলে মামা রাজ্জাক মেম্বার কিন্তু খুব ভয় পাইছে । অ-মানব বলে তুমিও ভয় পেয়েছ । এত ভয় থাকলে কি ফুলাজন কে পাবে । ফুলজান কে পেতে হলে মনের সাহস বাড়াতে হবে । চালাকি না করে ভাল কাজ করে টাকা উপার্জন করতে হবে । ফুলজানের বাবা কিন্তু বেশি লোভ করে শেষ । তুমি চেয়ারম্যানের কাছে একজন সত্য বাদী মানুষ হউ কারন একজন চোর বা ডাকাত ও তার মেয়ে বিয়ে দেয়ার সময় ভাল পাত্র খুজে । ফুলজানের কেউ নাই । তোমার বাটপারি কাজ বাদ দিয়ে কাল থেকে গাছ কেনা বেচা শুরু কর । আর শুন কেনু যাদের গাছ কিনবে একটা শর্ত দিবে যে তুমি ঐ বাড়িতে তিনটা গাছ লাগাবে একটা তোমার এই কথা বলে নিবে । একদিন তোমার টাকা আর সম্মানের অভাব হবে না। কেনু আকাশের দিকে দেখ কোন মেঘ আছে ।
কেনু আকাশের দিকে চেয়ে অবাক কোন মেঘ নেই । অবাক হয়ে বলে মামা ব্যাপার কি? কেনু মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকাবা । মানুষ আর আকাশ এদের কোন ঠিকানা নাই । মানুষ জন্ম তার নিজের ইচ্ছায় নিতে পারে না আবার কখন কি ভাবে মারা যাবে সেই মানুষ জানে না। মানুষ আর আর আকাশের কোন ঠিকানা নেই ।
কেনু অবাক হয়ে শুনে অ-মানবের কথা । জীবনে তাঁকে এমন করে কেউ কোন দিন বলে নাই । কেনু অ-মানবের সাথে রাস্তা দিয়ে যায় আর আকাশের দিকে চেয়ে থাকে মনে মনে বলে ঠিক তো আমি জন্ম নিয়েছি অন্যের ইচ্ছায় আর মরে কখন যাব আমি নিজেও জানি নাই । তাহলে জন্ম মৃত সব তো অন্যের হাতে তাহলে আমার হাতে কিছুই নাই । অ-মানবের মুখে দিকে ভাল করে চায় কেন আর বলে মামা আপনি অনেক সুন্দর । অ-মানব বলে তুমি আজ সুন্দর মনের মানুষ হয়েছ বলে আমাকে সুন্দর লাগছে …….।
চলমান ——

অ-মানব-প্রথম পর্ব    অ-মানব-দ্বিতীয় পর্ব    অ-মানব-তৃতীয় পর্ব    অ-মানব-চতুর্থ পর্ব

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!