আগামী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকবে ছাত্রদল : রাজিব আহসান
অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জোরেশোরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল। ৯ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির এই ছাত্র সংগঠনটির সভাপতি রাজিব আহসান তুলে ধরেছেন সংগঠনটির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের পরিকল্পনা।
তিন বছর হয়েছে ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির, আপনাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বলুন?
আমাদের বর্তমান কমিটি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সবচেয়ে দুর্যোগময় সময়ে দায়িত্ব পেয়েছে। আমরা এরমধ্যেই ছাত্রসমাজের অধিকার নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি। তবে সবকিছুর মূলে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আমরা সংগ্রাম করছি। নির্বাচিত হওয়ার পরেই আমরা বলেছিলাম যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারই হবে আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
ছাত্রদলের সাংগঠনিক অবস্থা এখন কেমন?
আমাদের নতুন কমিটি গঠিত হওয়ার পরে ১০৭টি ইউনিটের মধ্যে ৪৭টি ইউনিট পুনর্গঠন করেছি, বাকি অর্ধেকের কাজ শেষ হওয়ার পথে। আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা করেছি, এবং সেখানে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন হল কমিটি ছিল না, সেখানে ১১১ সদস্যের বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়েছি। এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সবকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্নাঙ্গ কমিটি দিয়েছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র, কিন্তু সেখানে ছাত্রদল কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারছে না কেন?
দৃশ্যত মনে হতে পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ও নিশ্চিতভাবে জেনে বলছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের সাংগঠনিক অবস্থা সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের চেয়ে ভাল। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি তাদের চেয়ে আমাদের কর্মীর সংখ্যা বেশি। ২০০৯ সালে এই সরকার ক্ষমতায় আসার পরে আমাদের সংগঠনের ৫০০ জন ছাত্র শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যেই কিন্তু আমরা বিভিন্ন সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করেছি। দিবস ভিত্তিক কর্মকাণ্ড, ভর্তি পরীক্ষায় সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সহায়তা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু বিগত ৯ বছরে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একাকার হয়ে গিয়ে ছাত্রদলকে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে। অনেক সময় আমরা দেখতে পেয়েছি সরকারের বক্তব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মুখে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। ঢাবি ছাত্রলীগ সশস্ত্র সন্ত্রাসী, পুলিশ, র্যাবসহ সরকারের বিভিন্ন বাহিনী দিয়ে নির্যাতন করছে। প্রশ্ন উঠতে পারে আমরা কেন এর প্রতিকারে বা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিচ্ছি না। ছাত্রলীগ আমাদের উপর হামলা করে আমরা যে এর জবাব দিতে পারবো না তা কিন্তু না। ঢাবিতে আমাদের একটা দায়বদ্ধতা আছে। আমাদের কর্মীর সংখ্যা তাদের চেয়ে বেশি সেটা আগেই বলেছি। মাঝেই মাঝেই আপনারাই নিউজ করেন যে হলগুলোতে ছাত্ররা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এই ছাত্রগুলো আমাদের আদর্শ ধারণ করে এবং প্রোগ্রামে আসে। এদের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই পাল্টা জবাব দেয়া থেকে আমরা বিরত থাকি।
কিন্তু ছাত্রলীগের দাবি সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে না। নতুন ভিসি থেকে আপনাদের প্রত্যাশা কী?
গত মাসে ডাকসুর দাবি বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের একটি প্রোগ্রাম ছিল, সেখানে দাওয়াত পেয়ে আমাদের প্রতিনিধি সংহতি প্রকাশ করতে গিয়েছিলেন। সেখানে কিন্তু আমাদের উপর আক্রমণ করা হয়েছিল যদিও সেটা কোনো রাজনৈতিক প্রোগ্রাম ছিল না। আর কে পরীক্ষা দিতে পারবে কে দিতে পারবে না সেটা নির্ধারণ করার দায়িত্বতো ছাত্রলীগের না। ছাত্রত্বের বিষয়টি নির্ধারণ করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, হলে থাকার বিষয়টি নির্ধারণ করবে হল প্রশাসন। কে কাকে নেতা মনে করবে সেটাতো তারা নির্ধারণ করে দিতে পারে না। এটাই হচ্ছে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট চরিত্র। আমি এর জন্য এককভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দায়ী করবো। শিক্ষক হিসেবে, অভিভাবক হিসেবে তাদের যে দায়িত্বটা সেটা তারা পালন না করে সরকারের ধামাধরা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আরেফিন সিদ্দিক স্যারকে আমরা ৯ বছর দেখেছি, আখতারুজ্জামান স্যার এর ব্যতিক্রম হবেন এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। শুধু ছাত্রদলই নয় সাধারণ ছাত্রছাত্রী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সাংবাদিকরা সবসময়ে কমবেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে যে পরিবেশ বিরাজ করছে সেটা ব্যাখ্যাতীত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির কয়জন লাঞ্ছিত হয়েছে আমরা কিন্তু জানি। আমরা আমাদের জায়গা থেকে যতটুকু সম্ভব প্রতিবাদ করেছি। সেই বিষয়গুলোর বিচার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন করেনি। এই প্রশাসনের কাছে কেউ নিরাপদ না। এরা পুরো শিক্ষাব্যবস্থাটাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় বাংলাদেশ ছাত্রদলের মুক্তিযোদ্ধা গবেষণা বিষয়ক সম্পাদককে বহিষ্কার করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ঘটনাটি আসলে কি?
প্রকৃতপক্ষে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করায় তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাকে বহিষ্কার করার পরে সে এই বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে। আমার জানামতে আগেও সেই এই পোস্ট দিয়েছে, শুধু এই কারণে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে এমনটি কিন্তু ঠিক না। আমরা সংগঠনের নীতিমালা অনুযায়ী সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করা সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ছিল যেগুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করছিলাম। তারপর প্রায় সর্বসম্মতিক্রমে তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সংগঠন নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?
আমরা দায়িত্ব নেয়ার পরেই বলেছিলাম যে আমাদের প্রথম চ্যালেঞ্জ হবে হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলন সংগ্রাম করা। সেদিন আমাদের প্রশ্ন করা হয়েছিল শুধু গণতন্ত্র কেন? আমি বলেছিলাম আমরা যদি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারি, এবং এটিকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ভূমিকা রাখতে পারি তাহলে সকল পর্যায়ের সবার অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। বিগত তিন বছরে আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের মিশনে পিছিয়ে নেই, হয়তো আমরা সফলতা নিয়ে আসতে পারিনি। সফলতা নেই দেখে আমরা সংগ্রাম করছি না এমনটা নয়। শুধু ঢাকা শহরে আমাদের ২৭ জন সদস্য গুম রয়েছে। ঢাকা কত বর্গকিলোমিটারের জায়গা? সেখানে গত তিন বছরে একটি সংগঠনের ২৭ জন কর্মীকে গুম করা হয়েছে। সারা দেশে এই গুমের সংখ্যা ১৫৭। এছাড়া সারা দেশে প্রায় তিন শতাধিক কর্মী নিহত হয়েছে। ভুক্তভোগী এই পরিবারগুলোর সঙ্গে বিএনপি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে।
অতীতের ছাত্রদল ও বর্তমান ছাত্রদলের মধ্যে পার্থক্য কী?
অতীতে ছাত্রদল যেমন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে সফল হয়েছে, বর্তমান ছাত্রদলও আশা করি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে সফল হবে। আমরা তাদের ধারাবাহিকতায় কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু আগের থেকে প্রতিবন্ধকতা গুলো বেশি, এখন সবকিছু আধুনিক হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বলতে হয় নির্যাতনগুলোও আধুনিক হয়েছে।
আগামী নির্বাচনে ছাত্রদলের ভূমিকা কী হবে?
আগামী নির্বাচনে ছাত্রদলকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। বর্তমান ভোটার তালিকায় এক তৃতীয়াংশ তরুণ, এর মধ্যে বিরাট একটা অংশ ছাত্র আর কারো হয়তো সদ্য ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে। এই এক তৃতীয়াংশকে জাতীয়তাবাদী প্লাটফর্মে আকর্ষণ করতে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে।
তথ্যসূত্র: ইত্তেফাক