আজ ২২শে শ্রাবণ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
আজ বাইশে শ্রাবণ। বাঙালির প্রাণের এ কবি নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও অসামান্য রচনা ও কাজের মধ্যে আজও বেঁচে আছেন তিনি প্রেরণাদাতা হয়ে। ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে সাহিত্যে প্রথম বাঙালি এবং এশীয় হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।
নোবেল ফাউন্ডেশন তার এই কাব্যগ্রন্থটিকে বর্ণনা করেছিল একটি ‘গভীরভাবে সংবেদনশীল, উজ্জ্বল ও সুন্দর কাব্যগ্রন্থ’ রূপে। তার লেখা ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি…’ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। রবীন্দ্রনাথ শুধু বাঙালির নয় বাংলাদেশ ও ভারত দুদেশের মানুষের কাছেই তিনি মানবমুক্তির বারতা নিয়ে উদ্ভাসিত। দুদেশের মানুষের সম্পর্কে সেতুবন্ধ রচনায় রবীন্দ্রনাথ দেখে দিয়েছেন নতুনতর মহিমায়। রবীন্দ্রনাথের জন্ম হয়েছিল কলকাতার এক পিরালী ব্রাহ্মণ পরিবারে। জন্ম ২৫শে বৈশাখ, ১২৬৮; মৃত্যু ২২শে শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ। বাংলার দিকপাল কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, গল্পকার, প্রাবন্ধিক ও দার্শনিক। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি প্রথম কবিতা লেখেন। ১৮৮৭ সালে মাত্র ষোল বছর বয়সে ‘ভানুসিংহ’ ছদ্মনামে তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়।
রবীন্দ্রনাথের দার্শনিক চেতনা ছিল– শুধু নিজের শান্তি বা নিজের আত্মার মুক্তির জন্য ধর্ম নয়। মানুষের কল্যাণের জন্য যে সাধনা তাই ছিল তার ধর্ম। তার দর্শন ছিল মানুষের মুক্তির দর্শন। মানবতাবাদী এই কবি বিশ্বাস করতেন বিশ্বমানবতায়। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সেই দর্শনের অন্বেষণ করেছেন। তার কবিতা, গান, সাহিত্যের অন্যান্য শাখার লেখনী মানুষকে আজো সেই অন্বেষণের পথে, তার অন্বিষ্ট উপলব্ধির পথে আকর্ষণ করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বহুমুখী সৃজনশীলতা বাংলা সাহিত্য ও শিল্পের প্রায় সবকটি শাখাকে স্পর্শ করেছে, সমৃদ্ধ করেছে। তার লেখা গান বাঙালির হূদয়ে প্রতিধ্বনিত হয় আজো। আনন্দে, বেদনায় এমনকি দ্রোহে এখনও রবীন্দ্রনাথ বাঙালির প্রেরণার উত্স। রবীন্দ্রনাথ আমাদের মন-মানস গঠনের, চেতনার উন্মেষের প্রধান অবলম্বন। তিনি গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় নন্দিত। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ও বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাংলা সাহিত্য ও সংগীতে রবীন্দ্রনাথ এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করেন। রবীন্দ্রনাথের লেখা বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে সম্মানের আসনে পৌঁছে দিয়েছে।