এসএসসি ফরম পুরণে পাবনার ২৮৯ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে প্রায় ১৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগ : কর্তৃপক্ষ নির্বিকার
অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পুরনে পাবনা জেলার প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাত্রারিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ ভাবে জেলার ৯টি উপজেলার ২৮৯ মাধ্যমিক স্কুল থেকে প্রায় ১৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অতিরিক্ত বিষয়ে টাকা আদায় করা হলেও রশিদ দেওয়া হচ্ছেনা। এমনকি এ বিষয়ে কোন অভিভাবক যদি ‘মুখ খোলে’ তা হলে সে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত নষ্ট করে দেওয়া হবে বলেও শাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের বলে দেওয়া হচ্ছে ‘কেউ যদি জানতে চায় কত টাকা দিয়েছে তা হলে বলবে ১৮‘শ’ টাকা। তবে এ বিষয়ে রহস্যজনক কারণে কর্তৃপক্ষ নির্বিকার ভুমিকা পালন করছে।
জেলা শিক্ষা অফিস সুত্র জানায়, পাবনা জেলার ৯টি উপজেলায় ২৮৯ মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে। চলতি বছর এ সব স্কুল থেকে থেকে ৭৫ হাজার ২০১ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিবে। সরকার এবং বোর্ড কর্তৃক বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ১ হাজার ৮৩৫ টাকা এবং বাণিজ্য ও কলা বিভাগের জন্য ১ হাজার ৭৩৫ টাকা ফি নির্ধারিত রয়েছে। তবে জেলার প্রতিটি স্কুলেই ‘অন্যান্য ও বিভিন্ন খাত’ সৃষ্টি করে প্রায় ৩ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাবনা শহরের কালাচাঁদপাড়া এলাকার জনৈক গৃহিনী বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, তার স্বামী অল্প বেতনের চাকুরি করে। তার ছেলে পাবনা শহরের সিদ্দিক মোমোরিয়েল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। তার ফরম পুরনের জন্য ৩ হাজার ৮‘শ টাকা দিতে হয়েছে। এ ভাবে শুধু ঐ স্কুলের ৭৩ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছে ১ লক্ষ ৩০ হাজার ১৫৫ টাকা।
এ ব্যাপারে পাবনার সিদ্দিক মোমোরিয়েল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ কেএম মোবারক হোসেন মানিক অতিরিক্ত টাকা আদায়ের সত্যতা স্বীকার করে বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, আমরা অন্য স্কুলের ল্যাব ব্যবহার করি, তাদের টাকা দিতে হয়। বোর্ডের কিছু খরচ আছে পাবনার কিছু সরকারি কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করতে হয় সে জন্য অভিভাবকদের সম্মতিতেই এই অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়।
পাবনার ইমাম গাযযালী স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। ইমাম গাযযালী স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এবার প্রায় সাড়ে আড়াই ‘শ জন পরীক্ষা দেবে। এ ভাবে শুধু ঐ স্কুল থেকেই অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছে চার লক্ষাধিক টাকা। এ ব্যাপারে পাবনার ইমাম গাযযালী স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ বেগম সুরাইয়া সুলতানা বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, তার অগোচরে শুধুমাত্র একটি বাচ্চার কাছ থেকে ৩৪০০ টাকা নেওয়া হয়েছিল। ঐ বাচ্চার অভিভাবক আসলে বাড়তি টাকা ফেরত দেওয়া হবে। এ ভাবে পাবনা জেলা স্কুল পাবলিক স্কুল, আদর্শ গার্লস স্কুল, সেন্ট্রাল গার্লস হাই স্কুল, পুলিশ লাইন স্কুল, জাগির হোসেন একাডেমি, শহীদ ফজলুল হক পৌর উচ্চ বিদ্যালয়, আর এম একাডেমি, বালিয়াহালট আমজাদ হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়সহ পাবনা সদর উপজেলার ৬৫টি স্কুলে মাত্রারিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে পাবনা জেলা শিক্ষা অফিস এসএম মোসলেম উদ্দিন বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, “আমি নতুন যোগদান করেছি। তেমন কিছু জানিনা। তবে খোজ নেব”।
পাবনার জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়ে তার কাছেও অনেকে অভিযোগ করেছেন। তবে টাকা আদায়ের রশিদসহ অভিভাবকের লিখিত অভিযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দোষী বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির ব্যবস্থা নেব। দুদক পাবনার উপ-পরিচালক মো; আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, এ সব বিষয়ে অভিযাগ পাওয়া যাচ্ছে। দুদক বিভিন্ন স্কুলে নজরদারী করছে। প্রমাণ পেলেই হাতে নাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।সূত্র-পিপ।