গরিবের ডাক্তার
অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
ডা. মো. এবাদুল্লাহ ছিলেন সিভিল সার্জন। কিন্তু সাতক্ষীরার লোকে তাঁকে চেনে গরিবের ডাক্তার নামে। পাঁচ টাকা ভিজিট নিতেন। এখন নেন ১০ টাকা।
দৈনিক প্রায় ৭০ থেকে ১০০ জন রোগী আসে নওয়াব ক্লিনিকে। সাতক্ষীরার নানা জায়গা থেকে আসে তারা। বড় অংশই ভ্যানচালক, রিকশাচালক, দিনমজুর বা এ রকম পেশার লোক!
১৯৭৭ সালে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন। পাঁচ টাকা ভিজিট নেওয়া শুরু করেছেন ১৯৭৯ সাল থেকে। ২০১০ সাল পর্যন্ত ভিজিট ছিল ওই পাঁচ টাকাই। সাতক্ষীরার পাকাপুল এলাকার খান সুপার মার্কেটে তাঁর চেম্বার।
১৯৫৩ সালের ৩০ এপ্রিল সাতক্ষীরার আশাশুনির কাদাকাটি গ্রামে তাঁর জন্ম। ১১ ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই সবার বড়। ১৯৬৮ সালে হামিদ আলী হাই স্কুল থেকে প্রথম শ্রেণিতে এসএসসি পাস করেন। এরপর চলে যান খুলনা শহরে। ১৯৭০ সালে বিএল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ভর্তি হন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পড়াশোনায় বিরতি নিয়ে যুদ্ধে যোগ দেন। তখন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবাও দিয়েছেন। যুদ্ধ শেষে আবার কলেজে ফিরে যান। ১৯৭৭ সালে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। তারপর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই সহকারী সার্জন হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮০ সালে নিজ এলাকা সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলে আসেন। পল্লী চিকিৎসকদের মাস্টার ট্রেইনারের দায়িত্ব পালন করেন। তারপর মেডিক্যাল অফিসার হিসেবেও কাজ করেছেন। চাকরির শেষ দিকে ছিলেন সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন। ২০১০ সালে অবসর নেন চাকরি থেকে।
দাদাকে দেওয়া কথা রাখতেই তিনি আজ গরিবের ডাক্তার। দাদার নাম নওয়াব আলী সরদার। ছোটবেলায় এবাদুল্লাহকে পড়াতেন। দাদা বলতেন, ‘বড় হয়ে ডাক্তার হবা, মানুষের সেবা করবা। খেয়াল রাখবা, এটা ব্যবসা না। ছোট-বড় সব মানুষ জানি তোমার সেবা পায়। ’ এবাদুল্লাহ দাদাকে কথা দিয়েছিলেন, মানুষের সেবা করবেন। সেই কথা কখনোই ভোলেন না ডা. মো. এবাদুল্লাহ। বলছিলেন, ‘আমার দাদার কথাগুলো আমি আজও মনে রেখেছি। আমার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের নামও রেখেছি দাদার নামে—নওয়াব ক্লিনিক। ’ ১৯৭৯ সাল থেকেই এবাদুল্লাহ নামমাত্র টাকায় চিকিৎসা সেবা দেওয়া শুরু করেন। অফিস শেষ করে পাকাপুল মোড়ে এসে নিজের চেম্বার খুলে বসতেন তিনি। ভিজিট নির্ধারণ করেন পাঁচ টাকা। বলছিলেন, ‘গরিব মানুষের কাছে ফি চাইতে আমার বিবেকে বাধে। সামাজিক দায়বদ্ধতা ও মানবিক কারণে আমি এই সেবা দিয়ে আসছি। ’ ২০১০ সাল থেকে পাঁচ টাকার পরিবর্তে ফি ১০ টাকা হওয়ার কারণও বললেন, ‘আমার চাকরি যত দিন ছিল আমার টাকার দরকার ছিল না, এখন ছেলে-মেয়েরা চাকরি করে, এখনো টাকার দরকার নেই। তবে চেম্বারের ভাড়াসহ বেশ কয়েকজন নার্স স্টাফের খরচ গুনতে হয়। সে জন্য ফি বাড়িয়ে খরচ পোষানোর চেষ্টা করেছি। এ টাকা আমি নিই না। ’