চা বিক্রেতা কাউন্সিলর আব্দুর রাজ্জাকের গল্প
অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
ফজরের নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আব্দুর রাজ্জাকের দিনটি শুরু হয়। এরপর চলে যান তার ছোট্ট চায়ের দোকানে। সেখানে বসে চা বিক্রির পাশাপাশি শুরু হয় স্থানীয় মানুষের নানা সমস্যার সমাধান।
আব্দুর রাজ্জাকটাঙ্গাইলের মির্জাপুর পৌরসভার একজন নির্বাচিত কাউন্সিলর।
স্থানীয়রা জানায়, ৩৮ বছর বয়সী রাজ্জাক ছাত্রাবস্থা থেকেই একজন সৎ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন, ভদ্র এবং মানুষজনকে সহায্যদানকারী হিসেবে সুপরিচিত। ১৯৯৬ সালে মাধ্যমিকের গণ্ডি পাড় হতে পারলেও উচ্চমাধ্যমিকটা পাশ করা হয়ে ওঠেনি তার।
১৯৯০ সালে রাজ্জাকের বাবা নাজিম উদ্দিন বাইমহাটির উপজেলা পরিষদ অফিসের গেটে চায়ের দোকান দিয়েছিলেন। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে রাজ্জাক বড় হওয়ায় বাবার সঙ্গে ওই চায়ের দোকানে কাজে নেমে পড়েন।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মির্জাপুরের ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বিকে বিপুল ভোটে হারিয়েছিলেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর রাজ্জাকের বাবা নাজিম উদ্দিন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তিনি হাল ধরেন বাবার দোকানের। এখনো তিনিই চালাচ্ছেন সেই দোকান।
রাজ্জাক তার দোকানের জন্য রাখেননি কোনো কর্মচারী। তিনিই তৈরি করেন চা। সেখানে বসেই কান্সিলরের কাজ করেন তিনি। তার ওই ছোট দোকানেই রয়েছে সিল এবং প্যাড।
স্থানীরা তাকে চেনেন মেম্বার হিসেবে। অধিকাংশই তার চায়ের দোকানে সময় কাটাতে পছন্দ করেন।
আব্দুর হামিদ নামে স্থানীয় একজন বলেন, রাজ্জাক আসলেই একজন অসাধরণ ব্যক্তি। সে আমাদের মতো বয়স্ক ব্যক্তিদের চা খাওয়ায়। কিন্তু এর জন্য কোনো অর্থ নেয় না।
প্রফুল্ল সরকার নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজ্জাকের মধ্যে নেই কোনো পরিবর্তন। বরং সে ওই দোকানে বসেই অনেক কঠিন সমস্যার সমাধান করেছে। যা বিগত কয়েক বছর ধরে আটকে ছিল।
মির্জাপুর পৌরসভার মেয়র শাহাদত হোসেন সুমন জানান, রাজ্জাক জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলেও সে অন্যান্য সাধারণ জনগণের মতো বসবাস করে।
কাউন্সিলর হয়েও কেনো চায়ের দোকান চালান এমন প্রশ্নের জবাবে রাজ্জাক বলেন, কাউন্সিলর হিসেবে আমি প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকা আয় করি। কিন্তু আমি যদি আমার চায়ের দোকান চালাই তবে আমি মাসে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করতে পারি।
‘আমি আমার পরিবারের সবাইকে ভালোবাসি। অন্যান্যদের মতো আমার বাড়তি কোনো টাকার প্রয়োজন নেই। আমি আমার এই মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিয়ে গর্বিত।’ বলেন কাউন্সিলর আব্দুর রাজ্জাক।
উৎস-দ্য ডেইলি স্টার