নূর হোসেনের ‘জলসাঘর’
সাত খুন মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত নূর হোসেনের ‘জলসাঘর’ এখনও অক্ষত। জলাশয়ের ওপর বাঁশ আর টিন দিয়ে তৈরি জলসাঘরটিতে ‘সুরের মূর্চ্ছনা’ নেই অবশ্য। বরং এখন বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। পাশেই বালুর মাঠের এক কোণে অযত্নে পড়ে আছে ‘এবিএস’ পরিবহনের অনেকগুলো বাস। দেখভালের কেউ নেই। অথচ বছর তিনেক আগেও এই মাঠ ছিল জমজমাট। জলাশয়ের ওপরে নির্মিত বাড়িটি সারাক্ষণ পাহারা দিতো নূর হোসেনের লোকজন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর সেতুর পশ্চিম দিকে শিমরাইল মোড় থেকে একটি সড়ক উত্তর দিকে ডেমরার দিকে গেছে। ওই রাস্তা ধরে একটু আগালে পূর্ব দিকে খেজুর গাছ দিয়ে ঘেরা নূর হোসেনের বাড়ি। বাড়িটির পাশেই একটি বিশাল জলাশয়ে এক সময়ে মাছ চাষ করা হতো। ওই জলাশয়ের ওপরে একটা বেশ বড় জলসাঘর।
জলসাঘরে যাওয়ার জন্য কয়েকটি নৌকা থাকতো। সন্ধ্যার পরেই নৌকায় চড়ে নূর হোসেন ও তার সহযোগীরা যেতো ঘরটিতে। রাতভর চলতো উল্লাস আর আমোদ-প্রমোদ। মদ-জুয়ার আসরও বসতো সেখানে। কোনও বিশেষ অতিথির সঙ্গে এ ঘরে বসেই কথা বলতো নূর হোসেন।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল সাত খুনের পর পালিয়ে যায় নূর হোসেন। এরপর ঘরটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। ঘরে থাকা আসবাবপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।
জলসাঘরের পাশেই বিশাল বালুর মাঠে নূর হোসেনের এবিএস পরিবহনের অন্তত ২০-২২টি বাস খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে। বেহাল বাসগুলোর কোনওটার সিট নেই, নেই অনেক যন্ত্রাংশও।
২০১৪ সালের শুরুর দিকে শিমরাইল রোড থেকে নারায়ণগঞ্জ রুটে এবিএস পরিবহন নামে একটি বাস সার্ভিস চালু করেছিলো নূর হোসেন। রুটটি দখলের জন্য প্রভাব খাটিয়ে কমল ও নসিব পরিবহন নামে দুটি বাস সার্ভিসকে কোণঠাসাও করে সে। নূর হোসেনের ক্যাডার বাহিনী নসিব পরিবহনের ১ নম্বর কাউন্টার দখল করে নেয়। তখন বন্ধ হয়ে যায় নসিব পরিবহন। তবে সাত খুনের পর ২০১৪ সালের ২ মে থেকে এবিএস পরিবহনও বন্ধ। আর নসিব পরিবহন নাম পরিবর্তন করে হয়েছে বন্ধু পরিবহন। নূর হোসেনের অনুপস্থিতিতে এবিএস পরিবহনের বাসগুলো কেউ আর চালানোর উদ্যোগ নেয়নি। সাত খুনের পর এসব বাস থেকে উদ্ধার করা হয়েছিলো অস্ত্র ও মাদক। সে কারণে নূর হোসেনের সহযোগী ও পরিবারের লোকজন এসব বাসের দিকে আর নজর দেয়নি।