জামাত ও হেফাজত একই মায়ের দুই সন্তান? মার্কিন কংগ্রেসে জামাত হেফাজতের বিরুদ্ধে বিল

মার্কিন কংগ্রেসে জামাত ও হেফাজতের বিরুদ্ধে বিল উঠেছে। বিলটি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত: নির্বাচনের আগে এই বিল তাৎপর্যবহ। শুক্রবার ২০শে নভেম্বর এটি মার্কিন কংগ্রেসের নথিভুক্ত হয়। একই দিন কংগ্রেস বিবেচনার জন্যে বিলটি ‘ফরেন এফেয়ার্স কমিটি’-তে পাঠায়। বিলে বাংলাদেশে ধর্মীয় চরমপন্থীদের উত্থানে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

বিলটি স্পন্সর করেছেন, ইন্ডিয়ানার রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান জিম ব্যাঙ্কস। সমর্থন দিয়েছেন, হাওয়াই’র ডেমোক্রেট কংগ্রেসওমেন তুলসী গ্যাবার্ড। এতে হেফাজতে ইসলাম ও জামাতে ইসলামী-কে ‘ধর্মীয় চরমপন্থী’ গ্রূপ বলে অভিহিত করে বলা হয়েছে, এরা গণতন্ত্র ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুর জন্যে হুমকিস্বরূপ।

বিএলের শিরোনাম, “গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর বাংলাদেশে সক্রিয় ধর্মীয় গ্রূপের হুমকীতে উদ্বেগ প্রকাশ’। বিলটি বাই-পার্টিজান, অর্থাৎ ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান উভয় পার্টির সদস্যের দ্বারা উত্থাপিত ও সমর্থিত। এতে বলা হয়, ১৯৭১’র মুক্তিযুদ্ধে ৩০লক্ষ শহীদ, ১কোটি শরণার্থী ও ২লক্ষ মা-বোনের ইজ্জ্বত লুন্ঠনের জন্যে জামাত অনেকাংশে দায়ী।

সাম্প্রতিক সময়ে সংখ্যালঘুর ওপর নির্যাতনের জন্যেও বিলে জামাতকে দায়ী করা হয়েছে। এতে হেফাজতকে চরমপন্থী গ্রূপ হিসাবে বর্ণনা করে বলে হয়েছে, এই গ্রূপটি বাংলাদেশকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র থেকে ধর্মীয় স্বৈরতন্ত্রে পরিণত করতে উদ্যত। আরো বলা হয়, এই ধরণের ধর্মীয় চরমপন্থী গ্রূপ দেশের ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা এবং সংখ্যালঘু গ্রূপের প্রতি সহিংসতার ঝুঁকি বাড়ায়।

বিলে বাংলাদেশে আইএস-সমর্থিত গ্রূপের ক্রমবর্ধমান কর্মকান্ড এবং এতদাঞ্চলে আল-কায়দার তৎপরতায় ন্যাটোর উদ্বেগের কথা উল্লেখ রয়েছে। এতে স্বাধীনতা যুদ্ধের ভিকটিমদের স্বীকৃতি এবং ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের ভিত্তি হিসাবে ধরার জনের কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। বিলে বাংলাদেশ সরকারকে রেডিক্যাল সংস্থাগুলোকে ঠেকাতে ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এতে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের বরাত দিয়ে বলা হয়, ২০১৮’র নির্বাচনের আগেপরে অর্থাৎ ২০১৩’র নভেম্বর থেকে ২০১৪’র জানুয়ারী পর্যন্ত বিএনপি, জামাত, শিবিরের আক্রমণে ৪৯৫টি হিন্দু বাড়ীঘর ধ্বংশ; ৫৮৫টি দোকান আক্রমণ ও লুটপাট; ১৬৯টি মন্দির ভাংচুর হয়েছে।

বিলে বলা হয়, ধর্মীয় চরমপন্থীরা বৌদ্ধ, খৃস্টান ও আহমদীয়দের ওপরও আক্রমন চালাচ্ছে। হেফাজতে ইসলাম দাবি না মানলে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জ্বিহাদের হুমকি দিয়েছিলো। ন্যাটোর এলাইড ল্যান্ড কমান্ডার জেনারেল জন ডব্লিউ নিকোলাস বাংলাদেশে আল কায়দার ক্রমবর্ধমান তৎপরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলেও বিলে উল্লেখ আছে।

এতে বাংলাদেশে ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের কথা উল্লেখ আছে। বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে সংখ্যালঘু নিরাপত্তা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্যে যে আহবান জানিয়েছে, সরকারকে সেটি বিবেচনায় নেয়ার আহবান জানানো হয়েছে।

এই সময়ে এই বিল ইঙ্গিত দেয় যে, বাংলাদেশে চলমান ঘটনার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নজর রাখছে এবং তারা বাংলাদেশে ধর্ম নির্বিশেষে সকল নাগরিকের নিরাপত্তা এবং গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত দেখতে চায়? বিলে বারবার জামাত, শিবির ও হেফাজতের কথা উঠে এসেছে। যদিও বাংলাদেশে মিডিয়ায় অজ্ঞাত কারণে হেফাজতের কথা তেমনটি উঠে আসেনি।

বাংলাদেশে নির্বাচনী ডামাডোলে জামাতের বিরুদ্ধে ব্যাপক হৈচৈ হচ্ছে, কিন্তু হেফাজত নিয়ে তেমন কথাবার্তা শোনা যাচ্ছিলো না? এই বিল পরিষ্কারভাবে জামাত-শিবির-হেফাজতকে একই পাল্লায় মেপেছে। প্রবাস ও দেশের কিছু কিছু বুদ্ধিজীবী প্রচ্ছন্নভাবে হেফাজতকে সমর্থন দিচ্ছিলেন। তাদের খোঁড়া যুক্তি হচ্ছে, ‘জামাত যুদ্ধাপরাধী, হেফাজত তা নয়’?

নির্বাচনে কৌশলগত কারণে সরকার হেফাজতের সাথে জোটবদ্ধ হলেও চরমপন্থী গ্রূপ হেফাজত ভালো হয়ে যেতে পারেনা। মুক্তমনা বুদ্ধিজীবীগন অবশ্যই সরকারি দলকে ভোট দেবেন, কিন্তু তারপরও হেফাজতকে সমর্থন করতে পারেন না? যারা জামাতের বিরুদ্ধে তারা একই কারণে হেফাজতের পক্ষে থাকতে পারেন না?

জামাত ও হেফাজত একই মায়ের দুই সন্তান। হেফাজত যখন বিএনপি ঘেঁষা ছিলো, তখন খারাপ ছিলো, আর আওয়ামী লীগ ঘেঁষা হবার সাথে সাথে ওরা ভালো হয়ে যায় কি করে? বিলে স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্র ও সংখ্যালঘু’র নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশকে মৌলবাদ রুখতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এতে জামাত, শিবির ও চট্টগ্রাম ভিত্তিক হেফাজতের সাথে পার্টনার বা অর্থ লেনদেন বন্ধের জন্যে মার্কিন সকল এজেন্সি’র প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

শিতাংশু গুহ, কলাম লেখক।
১লা ডিসেম্বর ২০১৮। নিউইয়র্ক।


  • প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। কাগজ২৪-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য কাগজ২৪ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!