দানশীলতার ফযিলত
নবী করীম (সা:) বলিয়াছেন:- দানশীল ব্যক্তিকে আল্লাহ্ তা’আলা কৃপন আবেদ অপেক্ষা অধিক পছন্দ করেন, মানব হৃদয়ের যাবতীয় রোগের মধ্যে কৃপনতা সর্বাপেক্ষা জঘন্য রোগ। তিনি আরও বলিয়াছেন: ‘আমার উম্মতগণের মধ্যে আবদাল শ্রেনীর লোকেরা যে বেহেস্তে প্রবেশের যোগ্য হইয়াছে, সে যোগ্যতা নামাজের কারনেও লাভ করেন নাই, রোযার কারনেও করেন নাই; বরং দানশীলতা, আত্মার পবিত্রতা, সৎ কাজের উপদেশ প্রদান, সৃষ্টজীবের প্রতি দয়া- এই কয়েকটি সৎ স্বভাবের দরুনই লাভ করিয়াছেন।’ হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে: আল্লাহ্ তা’আলা হযরত মুসা আলাইহিস সালামকে ওহীর মাধ্যমে নির্দেশ প্রদান করিলেন যে, ‘সামেরীকে হত্যা করিও না- সে দানশীল লোক।’ “যাহারা কৃপন স্বভাব হইতে রক্ষা পাইয়াছে তাহারাই সফলতা লাভ করিবে।” (সূরা তাগাবুন)
একদা একবার এক যুদ্ধে কিছু লোক বন্দি করিয়া মদীনায় নিয়ে আসা হইল। রাসুল (সা:) একজন বাদে সকল বন্দিদের হত্যা করার আদেশ দিলেন। ইহাতে হযরত আলী (রা:) রাসুল (সা:) কে বলিলেন হে আল্লাহ্র রাসুল (সা:) আপনি সবাইকে হত্যা করিতে বলিলেন কিন্তু একজনকে হত্যা করিতে নিষেধ করিলেন কেন? রাসুল (সা:) বলিলেন এই মাত্র জিব্রাইল আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে কানে কানে বলিয়া গেলেন যে তাহাকে যেন হত্যা না করা হয়। কারন সে দানশীল।
আল্লহ্ তা’আলা বলেন, “তোমাদের মধ্যে মর্যাদা সম্পন্ন ও ধনবান ব্যক্তিরা যেন তাদের আত্মীয়, দরিদ্র এবং আল্লাহ্র রাস্তায় হিজরত কারীদের দান করিবে না বলিয়া শপথ না করে এবং তাহারা যেন (তাহাদের অপরাধ) ক্ষমা করিয়া দেয়। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদিগকে ক্ষমা করেন।” (সূরা নূর: রুকু ৩)
মেসতাহ্ নামক এক ব্যক্তি হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা:) এর কুটুম্ব এবং পোষ্য ছিল। উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়শা (রা:) এর প্রতি মিথ্যা অপবাদ সংক্রান্ত ব্যাপারে সে ব্যক্তি যোগদান করিলে হযরত আবু বকর (রা:) তাহাকে ভরন পোষন প্রদান করা বন্ধ করিয়া দিলেন এবং শপথ করিয়া বলিলেন যে, তিনি আর তাহাকে সাহায্য করিবেন না। এতৎ সম্বন্ধে উপরোক্ত আয়াত নাযিল হইল। ইহাতে হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা:) খুবই লজ্জিত হইলেন এবং সাথে সাথে তওবা করিলেন এবং উক্ত ব্যক্তিকে পুনরায় সাহায্য করিতে লাগিলেন।
হযরত মুসা (আ:) নিবেদন করিলেন: ইয়া আল্লাহ্! মুহাম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন গুনে এমন উন্নত অবস্থা প্রাপ্ত হইয়াছেন? উত্তর আসিল, ‘ঈছারের গুণে।’ হে মুসা! যে ব্যক্তি সারা জীবনে একটিবারও ঈছার করিবে তাহার কার্য্যাবলীর হিসাব-নিকাশ গ্রহণ করিতে আমার লজ্জা হইবে; তাহার স্থান হইবে বেহেস্তে। তথায় সে যথেচ্ছা অবস্থান করিবে। (কিমিয়ায়ে সাআদাত, বিনাশন খন্ড)
নিজের অনাবশ্যক দ্রব্য কোন অভাবগ্রস্ত লোককে দান করার নাম সা’খাওয়াত বা দানশীলতা। অপরের অভাব এবং প্রয়োজনকে নিজের অভাব ও প্রয়োজনের উপর প্রাধান্য দেওয়ার নাম ‘ঈছার’। ইহা দানশীলতা অপেক্ষা অধিক কল্যানজনক ও শ্রেয়। (কিমিয়ায়ে সাআদাত, বিনাশন খন্ড)
হযরত ইয়াহ্ইয়া এবনে যাকারিয়া আলাইহিস সালাম একদিন শয়তানকে দেখিয়া জিঙ্গাসা করিলেন, সেই ব্যক্তি কে যাহাকে তুমি সর্বাপেক্ষা বড় শত্রু বলিয়া মনে কর এবং সেই ব্যক্তি কে যাহাকে তুমি সর্বাপেক্ষা অধিক ভালবাস। শয়তান উত্তর করিল, কৃপন দরবেশকে আমি সর্বাপেক্ষা অধিক ভালবাসি। কেননা সে প্রানবন্ত পরিশ্রম সহকারে এবাদত করে, কিন্তু কৃপনতা তাহার এবাদতকে সমূলে ধ্বংস করিয়া ফেলে। পাপাচারী দানশীল ব্যক্তিকে আমি বিশেষ শত্রু বলিয়া মনে করি, সে ব্যক্তি খুব উড়াইয়া পাপ পঙ্কিলে মহানন্দে জীবন যাপন করে। কিন্তু আমার খুব আশঙ্কা হয়, তাহার বদান্যতা গুনের দরুন করুনাময় আল্লাহ্ তা’আলা তাহার প্রতি দয়া বর্ষণ করিতে পারেন। ফলে সে ব্যক্তি পাপাচারের প্রতি বিতৃষ্ণ হইয়া পাকা তওবা করিয়া নিষ্পাপ হইয়া যাইতে পারে। (কিমিয়ায়ে সাআদাত, বিনাশন খন্ড)
হযরত সোলায়মান (আ:) এর যুগের একটি ঘটনা। এক ব্যক্তির ঘরের পাশে ছিল একটি গাছ। সেই গাছে ছিল একটি পাখি। পাখিটি যখনই ডিম দিত তখনই লোকটি তা নিয়ে খেয়ে ফেলত। লোকটির অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে একদিন পাখিটি হযরত সোলায়মান (আ:) এর নিকট নালিশ করল। সোলায়মান (আ:) লোকটিকে নিষেধ করে বললেন, আর যেন কোন দিন পাখির ডিম খাওয়া না হয়। এর পরের বারও লোকটি পাখির ডিম খেয়ে ফেলল। তাই পাখিটি আবার হযরত সোলায়মান (আ:) এর নিকট নালিশ করল। সোলায়মান (আ:) এক জিনকে নির্দেশ দিলেন, লোকটি আবার যখন গাছে চড়বে, তখন খুব জোরে তাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিবে; যাতে লোকটি
কোন দিন গাছে চড়তে না পারে। তারপর একদিন লোকটি পাখির ডিমের জন্য গাছে উঠতে যাবে, এমন সময় এক ভিক্ষুক এসে হাক দিল বাবা! কিছু ভিক্ষা দিন। লোকটি প্রথমে ভিক্ষুককে এক মুষ্ঠি খাবার দান করল। তারপর শান্ত মনে গাছ থেকে ডিম নামিয়ে খেয়ে ফেলল। পাখিটি আবার সোলায়মান (আ:) এর কাছে নালিশ করল। সোলায়মান (আ:) সেই জিনকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি নির্দেশ পালন করলে না কেন? তখন জিন জবাব দিল, আমি আপনার নির্দেশ পালন করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। এমন সময় পূর্ব ও পশ্চিম থেকে দুই ফেরেশতা এসে আমাকে দূরে ফেলে দিল। সোলায়মান (আ:) বিস্মিত হয়ে কারন জিজ্ঞেস করলেন, জিনটি বলল-আমি দেখলাম লোকটি গাছে ওঠার আগে জনৈক ভিক্ষুককে এক মুষ্ঠি খাবার দান করল। সম্ববত এর বরকতে আল্লাহ্ তা’আলা তাকে আসন্ন বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন। সোলায়মান (আ:) বললেন হ্যাঁ সদকা বালা-মুসিবত দূর করে। একারনেই সে আসন্ন মহা বিপদ থেকে বেঁচে গেছে।
মো: ফজলুর রহমান
সাবেক প্রধান শিক্ষক
ধূলবাড়ী জুুনিয়র হাই স্কুল
ও
হুগড়া হাবিব কাদের উচ্চ বিদ্যালয়
হুগড়া, টাঙ্গাইল সদর, টাঙ্গাইল।