দিনাজপুরের আকাশ অঝোরে কাঁদছে।
ভূপেন্দ্র নাথ রায়, দিনাজপুর প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
শ্রাবনের শেষে আকাশে মেঘের ঘনঘটায় অঝোরে বৃষ্টি ঝড়ছে তো ঝড়ছেই। তিল পরিমাণ ঠাই নেই যেন মেঘের। কোন ক্লান্তি নেই বৃষ্ট থামার। দুই দিন যাবত এ্যামন অঝোরে বৃষ্টি ঝরছে যেন দিনাজপুরের আকাশ অঝোরে কাঁদছে। গতকাল রাত আনুমানিক ৯ টার দিকে ঝড় ও বজ্রবৃষ্টি পাতে রাস্তার গাছ উপড়ে পড়ে যোগাযোগে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। ঘটনাটি ঘটে দিনাজপুরের খানসামা-রাণীরবন্দর রাস্তায়। প্রত্যক্ষদর্শী সঙ্গীত শিক্ষক ললিত চন্দ্র রায়ের বরাতে জানা যায়, হঠাত ঝড়ো হাওয়া আর বজ্রবৃষ্টিতে রাস্তায় দুটি গাছ পড়ে যায়। যান চলাচলে কিছুটা অসুবিধা হলে উপস্থিত ভ্যান চালকেরা প্রচন্ড বৃষ্টিতেই নিজ উদ্যোগে সেগুলো সড়িয়ে সড়ক খালি করে। এরপর রাত দশটায় শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি যা ১১টার দিকে কিছুটা কমে। এভাবেই চলতে থাকে বৃষ্টির লুকোচুরি খেলা। কিন্তু আজ (১১আগষ্ট) শুক্রবার বিরতিহীন ভাবে অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে। একটু থামার ফুরসৎ নেই।
বিকেল ৫.৩০ ঘটিকায় কথা হয় বীরগঞ্জের প্রভাষক(কাহারোল দলুয়া কলেজ) ভবতরণ বর্মনের সাথে। তিনি জানান, রাত থেকে শিম শিম করে, কখনও মুষলধারে বৃষ্টি ঝড়ছে। অবিরাম বৃষ্টিতে মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা কম মনে হচ্ছে। বীরগঞ্জ বাসস্টান্ড এক প্রকার প্রায় যাত্রীহীন দেখা গেল। গাড়ীর হেলপার, কন্ডাক্টর যাত্রীর জন্য সৈয়দপুর-রংপুর, দিনাজপুর গেটলক করে ডাকছে। শুক্রবার এবং বৃষ্টির কারনে বীরগঞ্জ উপজেলা সদরে ততটা লোকের সমাগম নেই বললেই চলে। অধিক বৃষ্টিতে আমার ধানক্ষেতগুলো জলের নিচে তলিয়ে গেছে।
দিনাজপুর শহরে শুক্রবার ছুটির দিনে ফাঁকা ফাঁকা মনে হচ্ছে। রাস্তাগুলোতে পানি জমে আছে। অটোভ্যান এবং রিকসা কম থাকায় চলাচল করতে বেশ অসুবিধাই হচ্ছে- কথা গুলো বললেন লিমন নামের এক পুলিশ সদস্য। এদিকে মালদহ পট্টিতে শুক্রবার করে রাস্তার দুপাশে হকারদের কাপড় বিক্রি করতে দেখা যায়নি। অন্য শুক্রবার এখানে প্রচন্ড ভীড় জমে ওঠে। সাধারণ ক্রেতারা বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিন্ম শ্রেণীর মহিলারা কিছুটা স্বল্পমূল্যে কাপড় কিনতে পারে বিধায় সকাল থেকে সন্ধা অবধি খোলা আকাশের নিচে ভীড় জমায়। কিন্তু অবিরাম বৃষ্টির কারনে কোন হকার দোকান দিতে পারেনি। অফিস-আদালত, মার্কেট গুলো বন্ধ থাকায় শূন্যতার সৃষ্টি হয়। হোটেল গুলোতে জনশূন্যতা দেখা গেলো। এ নিয়ে পুলেরহাটের একটি ছোট হোটেল মালিক বললেন, এ্যামনি শুক্রবার, তার উপর কঠিন বৃষ্টি কিভাবে যে কারিগর, মেসিয়ারের বিল দেব ভেবে পাচ্ছি না।
অত্যাধিক বৃষ্টিতে দিনাজপুরের আত্রাই, ঢেপানদী, ইছামতি, বেলান নদীতে যেন নতুন রুপ ফিরে পেয়েছে। প্রচন্ড বেগে স্রোত বয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে কচুরিপানাগুলো স্রোতকে আকঁড়ে ধরেছিলো। সেখানে আজ এগুলো অসহায়ের মতো পানির প্রবল তোড়ে ভেসে যাচ্ছে দিগ্বিদিক শূন্য হয়ে। অন্যদিকে নিচু জমির সদ্য রোপন করা আমনের চারা গুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে চিরিরবন্দরের কৃষক কেশব বলেন, কয়দিন আগত অনাবৃষ্টির জন্যে শ্যালো দিয়া ওয়া গাইন্যো। এ্যাখন এ্যামন জল যে দোলা জমিগুলা ডুবি গ্যাছে। এ্যাই দুই দিনতে এ্যাত্ত জল এবার পোরথোম বান।
গ্রামের সাধারন লোকেরা কারেন্ট জাল বসিয়ে মাছ ধরছে। জালগুলোতে গাথুনির মতো মাছ ধরছে। এ বিষয়ে, খানসামা হাসিমপুর গ্রামের তপন বলল, জলত চতুরপাশ ভরে গ্যাছে। বাড়ির কাছতে মেল্লা মাছ পাওয়া যাছে। এই মাছ খাছি, বেচাছিও। গ্রামের অন্যারাও জাল, চাই নিয়ে দৌড়া- দৌড়ি করছে আমন ক্ষেত কিংবা জমির আলে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে যেন প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে। এদিকে ছয়টার পরপরই দিনাজপুরের আকাশ বিষন্নতায় মুখ ঢেকে নিয়েছে। শেষ বেলায় বৃষ্টি কিছুটা কমলেও এ যেন অঝোরে কান্নার পরই বিষন্নতা।
- কাগজ টুয়েন্টিফোর বিডি ডটকম এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।