দেবীগঞ্জে শিশু মৃত্যুর পর মায়ের মামলা দায়ের, আটক ১ পলাতক ২
নাজমুস সাকিব মুন, পঞ্চগড় প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে ১৭ বছরের এক কিশোরী স্ত্রীর মর্যাদা না পাওয়ায় কথিত প্রেমিক শরিফুল ইসলামসহ আরো ২ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী মেয়ে ও শরিফুলের বাড়ি উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের অমরখানা গ্রামে।
অভিযুক্ত শরিফুল একই এলাকার গোলাম মোস্তফার ছেলে। শরিফুল সোনাহার বিএম কলেজে অধ্যায়নের পাশাপাশি ঢাকার একটি মুরগি ফার্মে চাকরি করেন। ভুক্তভোগী মেয়েটি ভাউলাগঞ্জ কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষে অধ্যায়নরত রয়েছেন।
শরিফুল এর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) রাতে থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী কিশোরী। যার মামলা নং ০১।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দেবীগঞ্জ থানার এস আই সত্যেন্দ্রনাথ রায় জানান, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ এর ১/৩০ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার নথি ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাশাপাশি এলাকার বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে শরিফুল ও মেয়েটির মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। শরিফুল মেয়েটিকে বিয়ে করবে বলে শারীরিক সম্পর্ক জোড়ায়। এরই এক পর্যায়ে মেয়েটি সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়েন। ২৬ জুলাই রাতে পরিবারের অগোচরে মেয়েটি একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন। চরম আতঙ্কে থাকা মেয়েটি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। পরিবার ও সমাজের ভয়ে মেয়েটি তার সন্তানকে বাড়ির পাশের পুকুরে কচুরিপানার উপর রেখে আসেন। পরদিন সকালে প্রতিবেশী এক মহিলা শিশুটির কান্না শুনতে পেয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে এলাকার ইউপি সদস্য মহেশকে বিষয়টি অবগত করেন। মহেশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সবার সহযোগিতায় তাৎক্ষণিক শিশুটির মা কে চিহ্নিত করে শিশুকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেন। এই সময় পারিবারিক জিজ্ঞাসাবাদে মেয়েটি শিশুর পিতা হিসেবে শরিফুলের কথা জানান। সারারাত মুক্ত পরিবেশে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টিতে শিশুটি কচুরিপানার উপর থাকায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে। শিশু ও তার মাকে চিকিৎসার জন্য দেবীগন্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সেখানকার চিকিৎসকরা শিশুটিকে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানেও শিশুটির শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা বেশি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৭ জুলাই শিশুটি মৃত্যুবরণ করেন। এরপর শিশুটির পিতার পরিচয় নিশ্চিত হতে ডিএনএ’র নমুনা সংরক্ষণ করার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পোস্টমর্টেম সম্পন্ন হয়।
অমরখানায় শিশুটির দাফন কার্য সম্পন্ন হওয়ার পর ইউপি সদস্য মহেশ শরিফুল এর পিতাকে ভুক্তভোগী মেয়েটিকে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নেয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু শরিফুল এর পিতা ও চাচারা সালিশে বসার কথা বলে সময় ক্ষেপন করতে থাকেন। যার ফলে বাধ্য হয়ে মেয়েটি সুবিচারের আশায় মামলা দায়ের করেন।
দেবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) শাহা আলম মামলা দায়ের ও একজন আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সালিশে বসার কথা বলে শরিফুলের বাবা গোলাম মোস্তফা ও চাচা শাহিনুর ইসলাম সময় ক্ষেপণ করায় তাদেরকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা মামলার ৩ নং আসামী শাহিনুর ইসলাম কে আটক করেছি। মামলার ১ নং আসামী শরিফুল ও ২ নং আসামী গোলাম মোস্তফা কে আটক করতে পুলিশ তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।
অভিযুক্তদের আটক করে আইনের আওতায় এনে দ্রুত চার্জ শিট প্রদান করা হবে বলে জানান ওসি (তদন্ত) শাহা আলম।