সেলিনা জাহান প্রিয়ার গল্প- নিষিদ্ধ রাত্রির নারী

 

 

নিষিদ্ধ রাত্রির নারী

———————-   সেলিনা জাহান প্রিয়া

 

হাত ঘড়িটা আর একবার দেখে নিল কবির। রাত বার তা বাজতে এখনো ১৫ মিনিট বাকি। ঠিক বারটায় মেইল ট্রেনটা যাবে। শুধু রাতের ট্রেনটাই ঠিক টাইমে হুইসেল বাজিয়ে যায়। আজ তার জীবনের শেষ দিন। আবার রাত বারটায় তিন মিনিটে তার জন্ম দিন। পকেটে হাত দিয়ে দেখে একটা সিগারেট আছে। আগুন দিল সিগারেটে। মনের সুখে একটা একটা করে সুখ টান দিচ্ছে। আর ভাবছে আমাকে কেউ মুল্য দিল না। বাবা আমাকে বুঝে না। মা সারাদিন আমার ভুল ধরতে থাকে।

কোন কাজ বা চাকুরির কোন কেউ সাহায্য করে না। সবাই শুধু উপদেশ দেয়। জীবনের চেয়ে যাকে বেশি ভালবাসি সে কিনা বলে কোন বেকার ছেলে কে বিয়ে করবে না। কেন করবে না? প্রেম করার সময় তো আমি বেকারই ছিলাম।

মা আমার কিছুতেই এই মেয়ে কে বিয়ে করাবে না !! বাবা আজ কাল টাকা চাইলে পুরো রামায়ন শুনায়। মানুষ তো একটা কিছু নিয়ে বাঁচবে। ভালবাসার মানুষটাও যদি আমার সাথে একটু ব্যবহার করত মনটাকে বুঝাতে পারতাম। কবির রেল লাইনের উপর শুয়ে আছে আর সিগারেট টেনে যাচ্ছে। মানি ব্যাগটা বের করে শেষ পর্যন্ত আর একবার ভালবাসার মানুষ টার ছবি দেখে নিল। মনে হচ্ছিল ছবির মানুষটা তার দিকে চেয়ে ছলনার হাসি হাসছিল। খুব ইচ্ছা ছিল যদি বাবা কিছু টাকা দিত তাহালে জন্ম দিনের সন্ধ্যাটা তার সাথে কাটাতাম একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে। কেন এত কিছু ভাবছি। আমার তো কারো কথা ভাববার না। আমি কি কোন মানুষ। আমার কি মুল্য আছে ? রেল গাড়ির অপেক্ষায় আছে। এটাই তার জীবনের শেষ রাত। এই মায়ার পৃথিবীর কোন মুল্য নেই। হেমন্তের আকাশ পানে চেয়ে আকাশ দেখছে কবির। এই তো আর কয়েক মিনিট তার পর হয়ত আর কেউ কোন দিন তাকে ভুল বুঝবে না। একমাত্র মৃত মানুষ কে সব দুঃখ থেকে মুক্তি দেয়। অনেক দূরে চোখ গেল কবিরের ট্রেন আসছে। বাহ আমি আমার মরণ দেখতে পাছি কিন্ত রেল লাইনের মাঝ দিয়ে কি হাটে। চাঁদের আলো তে মনে হয় একজন রমণী। কবির উঠে দাঁড়ালো। আবার হাত ঘড়িটার দিকে তাকালো। রাত বারটা ৫ মিনিট। এ কি মেয়েটা তার দিকেই আসছে। হয়ত মেয়েটা রেল লাইন দিয়ে দাঁরে কাছে কোথাও থাকে। কবির আবার শুয়ে পরল রেল লাইনের উপরে। ট্রেন খুব কাছে মেয়েটা কবিরের দিকে দৌরে কবিরে কাছে আসে। কবিরে হাত ধরে টান দিয়ে রেল লাইনের পাশে নিয়ে যায়।

– কি ব্যাপার মিঃ মরবেন নাকি ?

– হ্যা মরতে চাই । কেন আমাকে হাত ধরে টান দিলেন। আমি তো আপনাকে বাচাতে বলি নাই ?

– কেউ কাউকে বাচায় না ! হয়ত আপনার আরও কিছু কাজ বাকি আছে দুনিয়ায় তাই বেঁচে গেলেন।

– এটা আবার কেমন কথা। আমার আবার কোন মুল্য আছে নাকি ? আর এই দুনিয়ায় আমি হলাম একটা অপদার্থ । যার কো ন মুল্য নাই।

– বাহ দারুন তো। তা কে বলেছে আপনার মুল্য নাই শুনি।

– আপনাকে বলে কি হবে আপনি কি বুঝবেন মনের কষ্ট।

– মনের কষ্ট বুঝে লাভ নাই। মন দিয়ে কি হয়। মন দিয়ে কি এক বেলার খাবার আসে? মন কে কাজের মধ্য রাখুন। মনকে যদি অপাত্রে দান করুন তাহালে তো মরতে হবে।

– আপনি কে যে আমাকে এত উপদেশ দিচ্ছেন।

– আমি যেই হই কিন্তু সকাল নয়টা পর্যন্ত আর মরতে পারছেন না। কারন নয়টার আগে কোন ট্রেন নাই । বরং আমার সাথে চলুন। ঐ একটু সামনে একটা মোর আছে দারুন চা বানায়। ফটিক মিয়ার চা। দারুন মজা। কেন দারুন মজা জানেন? রাতের বেলা ও চায়ের সাথে একটা বিশেষ জিনিস মিশায়। খাইলে একটু একটু নেসা লাগে।

কবির মেয়েটার দিকে ভাল করে তাকালো। এখন আর তার বুঝতে বাকি নেই আসলে এই মেয়েটা কে? কবির ভাবতে লাগলো মরতে পারলাম না তাও বাঁচালো একটা রাতের খারাপ মেয়ে। আসলে ও আমাকে কেন বাঁচালো। আমাকে তো ওর বাঁচানোর কথা না। কবির মেয়েটার দিকে ঘাড় ফিরিয়ে এক নজর দেখল। বাহ চাঁদের আলোতে মেয়েটাকে ভালই দেখাছে। আসলেই কি মেয়েটা এত সুন্দর না কি মেকাপ করার জন্য? আর কথা বলে খুব সুন্দর করে। কবির মেয়েটাকে বলল- কেন মরতে চাইলাম জানতে চাইলেন না? মেয়েটা একটু চোখ বাকা করে বলল- দেখুন মানুষ কেন মরতে চায় এটা আমি ভাল করে জানি। কবির আবার প্রশ্ন করলো কীভাবে জানেন? মেয়েটা বলল, এই যে আমাকে দেখছেন
আর ভাবছেন এত রাতে একটা মেয়ে রেল লাইন দিয়ে হেটে আসছে নিশ্চয় মেয়েটা কোন বাজে মেয়ে। আপনি ভাবতে পারেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেখুন সমাজে আমরা না জেনে অনেক অগে থেকেই অনেক কিছু ভেবে বসি। এই মানুষ জাতটা ভাবতে পারে বলেই যত সব সমস্যা।

কবির আর রাতের এই রহস্যময় মেয়েটা হাঁটছে সামের দিকে। কবির আর একবার আকাশটা দেখল। আর মেয়েটার দিকে দেখল! মেয়েটি একটু হেসে বলল- মেয়েদের দিকে আড় চোখে দেখতে হয় না। তাহালে একটা মেয়ের রুপ ভাল করে দেখা যায় না। কবির এবার একটু হাসল …। হাটতে হাটতে ফটিক মিয়ার চায়ের দোকানে সামনে চলে আসলো। কবির বুঝতে পারলো এটাই তার সেই নেসা ওয়ালা চা বিক্রেতা।

– চাচা সালাম।

– আরে আম্মা জান।

ষাট বছরের বুড়ো মানুষ কি সুন্দর করে ডাক দিল। কবির খুব অবাক একটা রাস্তার মেয়েকে কেউ এত সুন্দর করে ডাকে। ফটিক মিয়া বলে আজ কারে নিয়া আইছেন। আর বলবেন না- ফটিক চাচা ওর নাম জানা হয় নাই। কবির নিজে থেকে বলল আমার নাম কবির। ফটিক মিয়া অবাক হয়ে বলল- কবির নামের মানুষ তো খুব ভাল হয়, তা বাবাজি মরার ইচ্ছা বাদ দেন। নেন এক কাপ চা খান। আজ কোন কাস্টমার নাই। আপনি প্রথম আসলেন। তাও এবার রাজ কন্যার সাথে।

রাজ কন্যা মানে? মেয়েটা বলল ফটিক চাচা আমাকে শখ করে রাজ কন্যা ডাকে। তা আপনার কোন নাম নাই রাজ কন্যা। মেয়েটি বলল রাস্তার মেয়েদের যে যার পছন্দ মত নাম দেয়। আপনি একটা নাম দিতে পারেন। কবির একটু অবাক হয়ে বলল- এই রাস্তার জীবন বাদ দিতে পারেন না।

মেয়েটা বলল- দেখুন কবির সাহেব এই রাস্তার মাঝে জীবনের সব অভিজ্ঞতা রয়েছে। কত মানুষের সুখ দুঃখ এই রাস্তা। রাস্তা আর নদী মানুষের জীবনে মিশে আছে। তবে নদীর পার ভাঙ্গে আর রাস্তা গুলো মানুষ তার সুবিধার জন্য ভাঙ্গে।

কবির মেয়েটার যুক্তির কাছে বার বার হেরে যাচ্ছে। মেয়েটা এবার বলল- এই যে আপনি মরতে যাচ্ছেন কারন আপনার কোন পিছু টান নাই মনে হয়। যে মা আপনাকে কষ্ট করে জন্ম দিল এত বড় করলো তার একটু মান অভিমান আপনার ভাল লাগে না। যে বাবা আপনাকে লালন পালন করে বড় করলো তার শাসন আপনার ভাল লাগে না। আর আপনি যাকে ভালবাসেন সে আপনাকে মুল্য দেয় না। এটা কি আপনার ব্যর্থতা না? তাহালে আপনি তাদের মুল আশা থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। কোন নিয়মের মধ্য আসতে পারছেন না।

কবির অবাক হয়ে বলল- আমার মনের কথা আপনি কি করে জানলেন। মেয়েটি এবার বলল- বললাম না এই যে রাস্তা আমাকে জীবনের সব কিছু দিয়েছে। দেখুন আমি একসময় একটা ছেলেকে ভালবাসতাম। আমার বড় বোন একটা বেকার ছেলেকে বিয়ে করে শেষ পর্যন্ত আমার বাবা পেনসনের টাকা দিয়েও সেই ছেলেকে বোনের জন্য রাখতে পারে নাই। একদিন আমার বোন মারা যায় সেই বেকার ছেলের হাত থেকে বাচতে। যারা বেকার ওরা মনে করে কেউ তাদের জন্য কিছু করবে আসলে ও তো নিজের জন্য কিছু করে না। দেখুন রাস্তায় বের হলে দেখবেন মানুষ কত রকমের কাজ করছে। আসলে কাজ করার মত সাহস থাকতে হবে।
আর এই আমি বাবা মারা যাওয়ার পর। আমার ভালবাসার মানুষটি আমাকে দেখালো এক নতুন স্বপ্ন। আমি হয়ে গেলাম ওর উপরে উঠার শিরি। আমাকে দিয়ে হাতিয়ে নিল একের পর এক টেন্ডার। আমি হয়ে গেলাম ওর কাজ পাওয়ার একমাত্র স্বর্ণকমল। এই সমাজের নামি দামি মানুষের কাছে আমি কল গার্ল। যার জন্য এত কিছু করলাম সে বলে বেশ্যা শুধু আনন্দের জিনিস এটা কেউ সংসারে রাখে না। আমার মা খুব অসুস্থ। ছোট বোন ক্লাস টেন এ পরে। চাকুরি করলে কয় টাকা পাব আমি মাত্র ইন্টার পাশ। মাস গেলে বাসা ভাড়া মায়ের অসুক। বোনের মামলা। ছোট ভাইয়ের পড়ার খরচ। মিঃ কবির আপনি কি আমার চেয়ে অসুখি?

কবির আরেক কাপ চা নিল। আসলেই তো আমার কোন দুঃখ থাকার কথা না। আমি যে এখন বেঁচে আছি সবটাই এই মেয়ের অবদান। কবির মেয়েটাকে বলল- কই ফটিক মিয়ার চায়ে তো কোন নেশা নাই। মেয়েটা বলল- আসলেই নেশা নেই, আপনাকে খাওয়াতে আগ্রহী করা আর ঐ খারাপ জায়গাটা থেকে একটা ভাল জায়গায় নিয়ে আসার বাহানা মাত্র।
— তা আমাকে সাহায্য করে কি লাভ হল
— আমি তো আদার বেপারি না যে সব কিছুতেই লাভ খুজব!
— তা আমি কি আপনাকে তুমি বলতে পারি?
— তা বলতে পারেন তবে তুমি বলার কিন্তু একটা রেট আছে। হাজার হলেও আমি নিষিদ্ধ নারী। মুল্য ছাড়া কিছুই বুঝি না।
— তা তোমাকে তুমি ডাকার জন্য কত দিতে হবে?
— দেখ আমি এখন কোটি পতির বিছানায় যাই না। মাঝে মধ্য বের হই রাতে শুধু ফটিক মিয়ার চা খাবার জন্য। যে রাস্তা দিয়ে হেটে আসলাম তার একটু সামনেই আমার বাসা। শুধু চা
খাবার জন্য বের হওয়া। আশপাশের লোক জন জানে আমি পুলিশ। মাঝে মধ্য পুলিশের গাড়ি
থেকে নামি তো?
— তা কত দিব এই মহিলা পুলিশ কে?
— বেকার দের কাছ থেকে আমি কিছু নেই না। তুমি বরং চায়ের দাম দাও।
— জানেন আজ আমার জন্ম দিন।।
— বল কি? এই দিনে তুমি মরতে আসছো। জান একটা বেবি জন্ম দিতে একজন মায়ের কত কষ্ট।
— আসলেই আমি ভুল করেছি। কিন্তু কি করব। আমার তো করার কিছুই নাই। না কোন চাকুরি। না কোন ব্যবসা। প্রেমিকার বিয়ে সেও আমাকে বিয়ে করবে না। কারন তার ফিউচার নষ্ট করতে চায় না।
— দেখ কবির ঐ মেয়ে তোমাকে ভালবাসে না সে তার ফিউচার কে ভালবাসে। কারন ফিউচার মানে হল অনেক টাকা। কিন্তু জান কি কবির কেউ আমরা ফিউচার দেখি না । সুধু
আগ বারিয়ে চিন্তা করি। যাই হোক, তোমাকে যে মুল্যায়ন করে নাই তুমি তাকে অবমুল্যায়ন না করে বরং রাস্তা বদল করে নেউ। সময় বলে দিবে কোন রাস্তা কোথায় যায়।
— কিন্তু আমি করব টা কি? এত আপমান আমার ভাল লাগে না।
— দেখ যে তোমাকে আপমান করে সে তোমার ভাল চায়। আমি রাস্তার মেয়ে আমার কথা কি শুনবে। আজকের এই রাত টা তোমার জীবনে অনেক কিছু বদলে দিবে। তোমার জীবনের
এই নিষিদ্ধ হয়ত তোমার ভাল কিচু এনে দিবে।
— আমি জানতে পারি কি ভাবে?
— মনের মধ্য শক্তি আছে তোমার। কারন তুমি নিজে নিজে মরতে চাইছ। এটা কম সাহসের কথা না। এই সাহসকে কাজে লাগাও। আমাকে দেখ। আমি দেখতে অনেক সুন্দর। খুব ভাল করে কথা বলতে পারি কিন্তু আমি পুরুষ মানুষ না। আমি যার সাথে গত ৭ বছর ছিলাম তার কাছ থেকে আমি তো অনেক কিছু শিখেছি। আমার এই মেধাকে তোমার কোন কাজে লাগাও।

কবির অবাক হল মেয়েটার কথা শুনে। আর জানতে পারলো মেয়েটা খুব কাছেই থাকে। ফটিক মিয়ার চায়ের বিল দিয়ে মেয়েটার নাম্বার নিয়ে বিদায় নিল। আজ এই মেয়েটার জন্য সে বেঁচে গেল। মেয়েটার বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। যাওয়ার সময় বলল- কবির তুমি অবশ্যই মায়ের কাছে যাচ্ছ। আর কাল আমাকে ফোন দিবে। টাকা আমি দিব তুমি শুধু শ্রম দাও। যদি বিশ্বাস কর তাহালেই কিন্তু কল কর।

ভোর পাঁচটায় বাসার সামনে আসতেই কবিরের মা এক চিৎকার দিয়ে বলল বাবা কবির। চেয়ে দেখে বাবা আপন জনরা সবাই এসে গেছে। কবির কোন দিন কাউকে না বলে বাসা থেকে বের হয় নাই। বাবা মা যে এত কান্না করবে তা সে চিন্তাও করে নাই। নিজ ঘরে ডুকে ঘুমিয়ে গেল কবির। ঘুম ভাংতেই দেখে মা আর বাবা তার পাশে ঘুমিয়ে আছে। কবির ভাবতে লাগলো যদি ঐ মেয়েটা ঐ সময় না আসতো তাহালে আজ কি হত! তার বাবা মায়ের কি হত। আসলেই তো আমি ভুল করে ছিলাম। ভাগ্য ভাল যে ঐ মেয়েটা সময় মত এসেছিল। বিকেল তিনটা ফোন টা চালু করেই কবির তার প্রেমিকা কে ফোন দিল-
—-হ্যাল কে লুপা।
—- হাঁ লুপাই বলছি।
— কাল আমাকে ফোন দিয়ে ছিলে।
—- না আমি ফোন দেয় নাই। তোমার মা কয়েকবার ফোন দিয়েছিল। তোমার খবর নেয়ার জন্য। আমি কোন খবর জানি কি না। তুমি কই মরতে গেছ তা তো জানি না। তাই ফোন বন্ধ করে রেখেছিলাম।
— আমি কোথায় ছিলাম তোমার জানার কি কোন দরকার ছিল না।
— না ছিল না। যে ছেলে একটা চাকুরি যোগার করতে পারে না। বড় বড় কথা বলে। তার কোন খোজ নেয়ার দরকার নাই। দয়া করে ফোন না করে একটা চাকুরি খুঁজে বাসায় প্রস্তাব দাও। সময় ছয় মাস। না হয় আমার কাজিন কেই বিয়ে করতে হবে। প্রেম করার সময় তো বলেছ বাবা মামা চাচা আছে । কেউ তো একটা চাকুরি খুঁজে দিতে পারে না।
— তাই চাকুরি না পেলে কি আমাকে বিয়ে করবে না
— না। করব না।

কবির ফোনটা কেটে দেয়। কবিরের মা ছেলের পাশ থেকে শুলছিল ছেলের কথা। কবির কে বলল চিন্তা করিস না তো বাবা বলেছে যে একটা চাকুরি এ মাসেই ঠিক করে দিবে। আর আমাদের কি টাকা পয়সা কম আছে। থাক বাবা যখন চাকুরি হয় হবে। তোমার জন্য আমি যাব ঐ মেয়েকে বুঝিয়ে আনতে। কবির বলল- না মা ওকে আর ফোন দিও না।

কবির সন্ধ্যা বাসা থেকে বের হয়ে ফোনটা বের করে ঐ রাতের রাজ কন্যা কে ফোন করে।
— হ্যালো
— হ্যালো। কে কবির। এখন ফোন দেয়ার সময় হল। আমি কিন্তু খুব চিন্তা করছিলাম
— কেন রাজ কন্যা।
— কেন আবার। বুঝনা। কি অবস্তায় তোমাকে বাঁচালাম।
— সরি, রাজকন্যা।
—- আমি রাজ কন্যা না। আমার নাম চয়নিকা।
— বাহ। দারুন নাম তো। কে রেখেছে।
— টাকা ছাড়া বলা যাবে না। আগে টাকা কামাও। আর শুন তুমি আজ পত্রিকা দেখ। একটা ট্রেড লাইসেন্স কর। টাকা না থাকলে লাইসেন্স করার জন্য আমাকে ফোন করিও। দেখ কিছু কিছু সাপ্লাইয়ের কাজ আছে। এনজিও’র। সব চেয়ে ছোট ছোট কাজ গুলো বের কর। যে খানে
সমস্যা আমাকে বলবে।

গত ছয় মাসে কবির ব্যবসা বুঝে গেছে। আস্তে আস্তে কবিরের হাতে অনেক কাজ চলে আসছে। ব্যাংক বীমা সহ অনেক প্রতিষ্ঠানের কাজ এখন কবিরের হাতে। সময় পেলে কথা হয় চয়নিকার সাথে। রাত তিনটা চয়নিকার ফোন কবির কাল একটা বিদ্যুতের শিডিউল কিনবে। ওপেন টেন্ডার। আমি বলে দিব কত মার্জিনে করবে। এ কাজটা পেলে হয়ত আর পিছন ফিরে দেখতে হবে না।

ছয় মাস পরে সত্যি সত্যি কবির কাজটা পেল। এত বড় কাজ সে পাবে জীবনে ভাবতে পারে নাই। মাঝে মাঝে কবির চয়নিকার বাসায় যায়। খুব মজা করে কবির। জীবনের রঙ বদলে দিল রাতের রাজ কন্যা। কিন্তু কেন কবিরের জন্য এত কিছু করছে। খুব অল্প সময়ে কবির উপরে উঠার শিরি পেয়ে গেছে। লুপা আজ কাল খুব বেশি ফোন করে কিন্তু কবির খুব ব্যস্ত। লুপা জানতে চায় কবিরের কাছে, চয়নিকা কে? কবির বলে চয়নিকা হল আমার দ্বিতীয় জন্ম। লুপা জানতে পারে চয়নিকা একটা কল গার্ল।

কবিরের মায়ের কাছে এসে বলে আপনার ছেলে একটা রাস্তার মেয়ের সাথে চলে। আমার জীবন নষ্ট করে। গত এক বছর আমার কাজিন আমাকে বিয়ে করতে পাগল হয়ে আছে। আর আমি আপনার ছেলের জন্য অপেক্ষা করছি। কবিরের মা বলে-লিপা আমার একটা মাত্র ছেলে যদি খারাপ কোন মেয়ের সাথে চলে এটা আমাদের জন্য খুব কষ্ট। আজ আসুক কবির।
রাতের খবার শেষ। কবিরে মা কবিরের কাছে জানতে চায় চয়নিকা কে? কবির মায়ের কাছে সব খুলে বলে। ঐ রাতের ঘটনা এবং তার সফলতার কথা। এবং বলে মা গত ছয় মাসে আর সে কোন খারাপ কাজ করে নাই। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে বাবা তুমি ওকে নিয়ে আসো আমি ওকে মাথায় করে রাখব। কবির ফোনে সব কিছু চয়নিকা কে বলে-
— চয়নিকা বলে কবির তুমি খুব ভাল একজন মানুষ। আমি তোমাকে সত্যি অনেক ভালবাসি।
— কাল তুমি এসো আমি তোমার সাথে তোমার মায়ের কাছে যাব।
রাত তিন টায় একটা ফোন আসে কবিরের ফোনে। একটা লাশ সনাক্ত করতে হবে। রেল লাইনে পরে আছে, কে বা কারা মেরে ফেলে গেছে। কবির লাশের কাছে আসে। চয়নিকার লাশ পরে আছে। পুলিশ কে বলে আমি চিনি ওকে। ও আমার হব স্ত্রী।

শেষ পর্যন্ত চয়নিকা কে মেরে ফেলে রেল লাইনে ফেলে গেছে। কবির বোকার মত প্রতিভাবান মেয়েটার লাশের পাশে বসে কাঁদতে থাকে। কার মরার কথা কে মারা গেল, আসলেই জীবনের সব কিছুই একটা অজানা অধ্যায়।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!