প্রতিরোধ যুদ্ধে পাবনা
প্রতিরোধ যুদ্ধে পাবনা
রণেশ মৈত্র (একুশে পদক প্রাপ্ত সাংবাদিক)
সভাপতি মন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ
দেখতে দেখতে পঞ্চাশটি বছর পেরিয়ে এলাম। ইতিহাস অনেকটাই হারিয়ে যাচ্ছে। ইতিহাস বর্ণনা করেবই-পুস্তক-নিবন্ধাদি অনেকই প্রকাশিত হয়েছে, হচ্ছে। কিন্তু নবীন থেকে নবীনতর প্রজন্ম গুলিতে বিগত অধ শতাব্দীতে বই পড়ার আগ্রহ উদ্বেগজনক ভাবে কমে যাওয়া এবং সংবাদ পত্রের পাঠক সংখ্যাও মারাত্মক বাবে হ্রাস পাওয়া সেগুলি নতুন প্রজম্ন তেমন একটা জানতে পারছেন না। তবু লিখতে হবে, তবু বলতে হবে বাঙালির এই গৌরবগাথা।
একাত্তরের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক জনসভায় সেই মাত্র বজ্র শাণিত ভাষণ দিলেন বঙ্গবন্ধু–দেশবাসী তা লুফে নিলেন। অজশ্র আন্দোলনের অভিঘাতে পূর্ব থেকেই তপ্ত হয়ে ওঠা বাঙালি সেদিন থেকেই চূড়ান্ত যুদ্ধের প্রস্তুুতি শুরু করে দেন। পাবনা তার ব্যতিক্রম তো ছিলইনা বরং অনেক বেশী মাত্রায়ই তেতো ছিল।
২৫ মার্চেরগভীররাত। নিকষকালোঅন্ধকারেরআড়ালে দুইশতপাকসেনাসদস্য এসেইজারীকরেকারফিউ। টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবন দখলএবং জেলারঅভ্যন্তরেরএবংসারাদেশের সাথে টেলিফোনসংযোগবিচ্ছিন্নকরেদিয়েভবনটিতে ২৮/৩০ জনচাইনিজরিকয়েললেসরাইফেলধারীজওয়ানকে ২৪ ঘন্টাপ্রহরায় নিযুক্ত করেশহরেচলে সেনাটহল পথে ঘাটেঅসংখ্য গ্রেফতার ও কোমরে দড়ি বেঁধেবাহিনীরপাবনাস্থ হেড কোয়ার্টারওয়াপদাভবনে স্টক ও সীমাহীননির্য্যাতন।
২৬ মার্চ দিনভরতরুণেরা গোপনে গোপনেবাড়ী থেকে নানাজাতীয় অস্ত্র সংগ্রহকরে। সন্ধ্যায়নিজনিজবাসভবন থেকে গ্রেফতারহনসদরমহকুমাআওয়ামীলীগসভাপতিএডভোকেটআমিনউদ্দিন, ভাষানীন্যাপ নেতাপ্রখ্যাত দন্তচিকিৎসকঅমলেন্দু দ্ক্ষী, পরিবহনব্যবসায়ীসাঈদ তালুকদারপ্রমুখ।
২৭ মার্চ গোপন খবর এলোপাবনারহাইকম্যা-েরকাছেসন্ধ্যায়পাক-বাহিনীপুলিশলাইনআক্রমণকরবেতাদের অস্ত্রাপাচার দখলেরজন্য। ততোধিক গোপনেযুবকেরাপুলিশ-আনসারেরাপুলিশলাইনেরচতুর্দিকের দালানগুলির ছাদে পুলিশলাইনেরদিকে অস্ত্রতাককরেনিজেদেরকেআড়ালকরেশুয়ে থাকাকালেসন্ধ্যায় দুইট্রাক বোঝাইপাক সেনাএসেপুলিশলাইনআক্রমণশুরুকরতেনাকরতেইউপর থেকে অবিশ্রান্ত গুলিবর্ষণকরেনতরুণেরা। হতচকিতভীতিগ্রস্তপাক-সেনার দলের দু’জনমারাযায়। দেহ দুটিনিয়েতারাট্রাকেকরেইপালিয়েযায়। প্রথম দফা বিজয়এভাবেঅর্জিত হয়।
২৮ মার্চ ভোরেপুলিশ অস্ত্রাবারেরতাবৎ আস্ত্র তরুণদেরমধ্যে বিলিকরার পর অস্ত্রশাস্ত্রেনতুনভাবে সজ্জিত তরুণেরা টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবণেরচুতষ্পার্শ¦স্থ দালানগুলির ছাদে আগেরসন্ধ্যারঅনুরূপ অস্ত্রতাককরেশুয়েপড়েঅতর্কিতে গুলিবর্ষণকরতে থাকে দরজা-জানালারফাকদিয়েরাইফেলের গুলি দিগবিদিকে ছুঁড়তে থাকেপ্রত্যুত্তরে দুঘন্টাব্যাপীউভয়তরফের গুলিবৃষ্টির পর হঠাৎ থেকে যায়পাক-বাহিনীর গুলিবর্ষণ। নেমেআসে টেলিফোন এক্সচেঞ্জভবনেগভীরনীরবতা। বিক্ষিততরুণেরা দু’একজন অস্ত্রহাতে নেমেএসেসজোরেদরজায়ধাক্কাদিয়ে ভেঙ্গে ঘরেঢুকে দেখেন দরজায়ধাক্কাদিয়ে ভেঙ্গে ঘরেঢুকে দেখেনপাক-সেনারা মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায়নিথর দেহে শুয়েপাশে গুলিবিহীনঅসংখ্য রাইফেল। জানতে পেয়েসবাই নেমেএসেলাশগুলিকে ঘর থেকে বাইরেরমাঠেএনেশুইয়ে দেয় বিজয়েরপ্রমাণহিসেবে। অসাধারণবিজয়েপাবনাতেউল্লাসরুমেআসে। অত:পরপাক-সেনাদেরআরও দুটি ছোটখাটআস্তানায়প্রতিরোধ যোদ্ধাদেরঅতর্কিতহানা ও মনোবলহীন ৭/৮ জন সেনাদেরকেহত্যা।
২৯ মার্চ। পাকবিমানবাহিনীরএকটিবিমানহঠাৎপাবনারআকাশেউড়তেউড়তেনীচেতাককরে গোলাবর্ষণকরতে থাকে। তখনওয়াপদাভবনেঅবরুদ্ধ দেড়শতাধিকপাক-সেনাকেহাজারহাজার কৃষক“জয়বাংলা” শ্লোগানেনিয়ে অবস্থানকরলেওআকস্মিক গোলাবর্ষণে প্রতিরোধ ভেঙ্গে বিচ্ছিন্নহয়েপড়তেনাপড়তেইনাটোরক্যান্টনমেন্ট থেকে কয়েকটিবাণির্জিকট্রাকেসাদা পোষাকেসাদাপতাকাউড়িয়েজয়বাংলা শ্লোগানদিয়েভবনেরসামনে পৌছাতেইসকলপাকসেনাসাদা পোষাকেওয়াপদাভবন থেকে বেরিয়ে দ্রুতট্রাকে উঠে পড়ে। তারআগেআটকদেরকয়েকজনকে গুলিকরেহত্যাকরে। পাকবাহিনীএবারেনাটোরঅভিমুখেযাত্রাকালে অজ¯্র ব্যারিকেডের সম্মুখীন ও গাছেরডালটিনেরঘরের ছাদ থেকে তরুণদেরআক্রমণেরশিকার হয়। তারআগেসবাইবুঝে ফেলেনট্রাকগুলিকাদেরকেনিয়ে কেন এসেছিল।
পথের অজ¯্র খন্ড খন্ডলড়াইতেউত্তরপক্ষক্ষতিগ্রস্তহতেহতেসন্ধ্যায়যখনট্রাকুলি গোপালপুরচিনিকলেরকাছে পৌঁছায়তখন দেখা গেল-সেনাবাহিনীর কেউই আরজীবিত নেই-জীবিত নেইতাদেরচালকেরাও।
মুক্তহলোপাবনাপ্রথম দফা ২৯ মার্চেরসন্ধ্যায়তিনদিনের যুদ্ধে ২০০ সশস্ত্র পাক-সেনাকেহত্যাকরে। পাবনাইপ্রথম জেলা-যে জেলাপাকবাহিনীকেযুদ্ধে নির্মূল করে স্বাধীন হয় ২৯ মার্চ। পরদিন হয় কুষ্টিয়া।