প্রথম তালিকায় ২৮ প্রার্থীর নাম ঘোষণা রাজ্য বিজেপির
আন্তর্জাতিক ডেক্স । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
প্রথম দফার ভোটের মনোনয়ন পেশ করার আর চার দিন বাকি। লোকসভা ভোটের জন্য প্রথম দফার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল বিজেপি। যার মধ্যে বাংলার ২৮টি আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়েছে। গত বারের জেতা দুই আসনের মধ্যে দার্জিলিঙের জট কাটানো যায়নি। আবার কিছু আসনে প্রার্থীর নাম দেখে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে দলের অন্দরেই।
নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার রাতেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কমিটির বৈঠকে বাংলার ৪২টির মধ্যে ২৮টি কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত হয়। ঘোষিত তালিকায় গত বারের মতো তারকা চমক নেই। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ, শমীক ভট্টাচার্য, চন্দ্র কুমার বোস, লকেট চট্টোপাধ্যায়দের নাম রয়েছে। তেমনই আবার অর্জুন সিংহ, সৌমিত্র খাঁ, ভারতী ঘোষ, অনুপম হাজরার মতো অন্য দল থেকে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া মুখও আছে।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, বাংলা এ বার পাখির চোখ তাঁদের কাছে। গো-বলয়ের রাজ্যগুলিতে বিজেপির আসন যখন গত বারের থেকে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা, সেই সময় বাংলার মতো রাজ্য থেকে আসন বাড়িয়ে ঘাটতি পোষানোর লক্ষ্য হাতে নিয়েছে দল। প্রার্থী ঠিক করার জন্য শুধুমাত্র রাজ্য বিজেপির পাঠানো তালিকার উপরেই ভরসা রাখেননি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। পেশাদার সংস্থাকে দিয়েও সমীক্ষা করানো হয়েছে। কোন আসন জিততে বিজেপির কোন সক্ষম, প্রার্থী চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে সেই বিচারকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রের বক্তব্য।
কেন্দ্রীয় বিজেপি সূত্রে উদাহরণ দেওয়া হচ্ছে বীরভূমের। সেখানে রাজ্য থেকে তাঁর নাম না এলেও দুধকুমার মণ্ডলকে বেছে নেওয়া হয়েছে। কারণ, বীরভূমে যে ঘরানার রাজনীতি হয়, সেখানে তাঁকেই ‘উপযুক্ত’ বলে মনে করছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
তবে নেতারা এত সব মাপকাঠির কথা বললেও কিছু জায়গায় প্রার্থী পছন্দ হয়নি বিজেপির কর্মীদেরই। কোচবিহারে যেমন প্রার্থী হিসেবে নিশীথ প্রামাণিকের নাম ঘোষণার পরেই দলের দফতরে বিক্ষোভ শুরু করেন কর্মী-সমর্থকের একাংশ। তাঁদের হাতে ব্যানার ছিল, ‘দিনহাটার স্মাগলারকে একটিও ভোট নয়’। তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত নেতাকে দলে নিয়ে প্রার্থী করা কেন, প্রশ্ন তুলেছেন ক্ষুব্ধ কর্মীরা। সিপিএমের বিধায়ক খগেন মুর্মুর বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাঁকে দলে নেওয়ার প্রতিবাদে গাজলে পোস্টার দিয়েছিলেন বিজেপি কর্মীদের একাংশ। সেই খগেনকেই উত্তর মালদহে প্রার্থী করায় তাঁরা ক্ষুব্ধ। আবার হুগলি বা শ্রীরামপুরে টিকিট না পেয়ে রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতির পদ থেকে রাতেই ইস্তফা দিয়েছেন রাজকমল পাঠক।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবু এ দিন বলেন, ‘‘দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হল! আমরা কাল (শুক্রবার) থেকেই প্রচার শুরু করব।’’ দার্জিলিঙে প্রার্থী ঘোষণা হল না কেন? দিলীপবাবুর বক্তব্য, ‘‘ওই কেন্দ্রটি নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আরও আলোচনা করছেন।’’ বিজেপি সূত্রের খবর, সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াকে ফের প্রার্থী করা নিয়ে দলে আপত্তি ওঠায় সতপাল মহারাজের নাম উঠে এসেছিল। কিন্তু সতপাল রাজি হচ্ছেন না। এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ভার দিল্লির হাতেই ছেড়ে দিয়েছে রাজ্য বিজেপি।
বিধায়ক দিলীপবাবু প্রার্থী হচ্ছেন মেদিনীপুরে। পাশের কেন্দ্র ঘাটালে প্রাক্তন আইপিএস ভারতী। রাহুলবাবুকে উত্তর কলকাতা ও শমীকবাবুকে দমদমে প্রার্থী করছে বিজেপি। তৃণমূল ছেড়ে আসা অর্জুন ব্যারাকপুরে প্রার্থী হলেও বোলপুরের বিদায়ী সাংসদ অনুপমকে দেওয়া হয়েছে যাদবপুর। তৃণমূল থেকে আসা আর এক সাংসদ সৌমিত্র বিজেপির টিকিটে দাঁড়াচ্ছেন বিষ্ণুপুর থেকেই। দক্ষিণ কলকাতায় নেতাজির পরিবারের চন্দ্রবাবু, হুগলিতে লকেট এবং শ্রীরামপুরে বিজেপির যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি দেবজিৎ সরকারকে প্রার্থী করা হয়েছে।