চাঞ্চল্যকর ফারুক হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ দ্বিতীয়বার পেছাল
অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামীলীগের জনপ্রিয় নেতা বীরমুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ বুধবার (১ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে এ মামলার সাক্ষী গ্রহণের তারিখ দ্বিতীয়বার পেছাল। এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহনের পরবর্তী তারিখ আগামি ২৭ নভেম্বর (সোমবার) ধার্য করা হয়েছে। টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক আবুল মনছুর মিয়া এ আদেশ দেন।
আদালত সূত্র জানায়, বুধবার (১ নভেম্বর) টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবুল মনছুর মিয়ার আদালতে ফারুক হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য ছিল। সকাল ১১টার দিকে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক আবুল মনছুর মিয়া এজলাশে বসে প্রথমেই চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার কার্যক্রম শুরু করেন। কিন্তু এমপি রানাকে অসুস্থতার কারণে আদালতে হাজির না করায় সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। আদালত সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামি ২৭ নভেম্বর নতুন তারিখ ধার্য করেন। এর আগে গত ১৮ অক্টোবর (বুধবার) এমপি রানাকে অসুস্থতার কারণে আদালতে হাজির না করায় স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়নি। এবার ‘পাইলসের’ কারণে তাকে আদালতে হাজির করা সম্ভব হয়নি বলে কারা কর্তৃপক্ষ আদালতে জানায়। এর আগে গত ১৮ অক্টোবর ‘কোমড়ে ব্যাথার’ কারণে এমপি রানাকে আদালতে হাজির না করায় সাক্ষ্য গ্রহন হয়নি।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পিপি মনিরুল ইসলাম খান জানান, আদালতের বিচারক আবুল মনছুর মিয়া বুধবার সকাল ১১টায় এজলাশে বসেন ও প্রথমেই চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার কার্যক্রম শুরু করেন। রাষ্ট্রপক্ষ মামলার বাদি নাহার আহমদ, ছেলে আহমদ মজিদ সুমন ও মেয়ে ফারজানা আহমদ মিথুনের হাজিরা দাখিল করেন। কারাগারে আটক আসামী আনিসুল ইসলাম রাজা, মোহাম্মদ আলী, মো: সমিরকে আদালতে হাজির করা হয় এবং জামিনের থাকা আসামী মাসুদুর রহমান, ফরিদ ও নুরু হাজির হন। কিন্তু মূল আসামি উপস্থিত না থাকায় রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য করেন আগামি ২৭ নভেম্বর।
এদিকে, মামলার মূল আসামি টাঙ্গাইল-৩(ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা আদালতে হাজির না হওয়ার প্রতিবাদে ‘আওয়ামী পরিবার’- এর ব্যানারে বাদি পক্ষের লোকজন আদালত চত্তরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে।
বিক্ষোভ মিছিলটি আদালত ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে পুনরায় আদালত প্রাঙ্গণে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও মামলার বাদি নাহার আহমদ, জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র সাইফুজ্জামান খান সোহেল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক তানভীর হাসান(ছোট মনি), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সোলায়মান হাসান, জেলা আওয়ামী সেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক মাতিনুজ্জামান সুখন, জেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন মানিক প্রমুখ। বক্তারা, মামলার মূল আসামি এমপি আমানুর রহমান খান রানা কালক্ষেপন করে বিচারকাজ বিলম্বিত করতে অসুস্থতার অজুহাতে আদালতে হাজির হচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন। তারা এমপি রানা সহ সকল আসামির ফাঁসি দাবি করেন।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পিপি মনিরুল ইসলাম খান। তাকে সহযোগিতা করেন, অ্যাডভোকেট আব্দুল গফুর। আসামি পক্ষের আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অ্যাডভোকেট আব্দুল বাকি, জহিরুল ইসলাম জহির সহ আরো কয়েকজন।
প্রকাশ, টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানাকে অসুস্থতার কারণে আদালতে হাজির না করায় আটবার এই মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি পিছিয়ে যায়। গত ৬ সেপ্টেম্বর মামলাটির অভিযোগ গঠন করা হয়। গত ১৮ অক্টোবর এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহনের প্রথম তারিখ ধার্য ছিল। চাঞ্চল্যকর এই মামলায় এমপি রানা ছাড়াও তার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পাসহ ১৪জন আসামি রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমদের গুলিবিদ্ধ লাশ তার কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিনদিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমদ বাদি হয়ে টাঙ্গাইল মডেল থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১৪ সালের আগস্টে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে এই হত্যায় এমপি রানা ও তার ভাইদের নাম ওঠে আসে। ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। দীর্ঘ আটবার চার্জ গঠনের তারিখ পিছানোর পর গত ৬ সেপ্টেম্বর এ মামলার চার্জ গঠন করা হয়।