সেলিনা জাহান প্রিয়ারঃ রম্য রচনা-ফেসবুক সেলিব্রেটি
রম্য রচনা-ফেসবুক সেলিব্রেটি
আমজাদ সাহেব সম্প্রতি ফেসবুকে সেলিব্রেটি হয়েছেন। স্ট্যাটাস দিলে ভালোই রেসপন্স আসে। মেয়েরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে এবং প্রশংসায় তাকে ভাসিয়ে ফেলে। আমজাদ সাহেবের বড় ভালো লাগে, আনন্দে মনটা ভরে যায়। এমন দিনের স্বপ্নই তো তিনি দেখতেন। অবশেষে তা সত্যি হল।
আজকাল তিনি সারাদিন ফেসবুকেই থাকেন। এমনকি ঘুমানও ফেসবুকে। ল্যাপটপ অন করে বুকে নিয়ে ঘুমান। তার স্ত্রী এসে মাঝে মাঝে যন্ত্রনা করে। তিনি স্থ্রী-কে উল্টা-পাল্টা বুঝিয়ে বিদায় করে দেন। এই মহিলাকে আমজাদ সাহেবের কাছে বিরক্তিকর মনে হয়। সারাদিন কানের সামনে বেহুদা প্যানপ্যান। কাজ না থাকলে যা হয় আর কি।
আজ একটু আগে তার স্ত্রী এসে তাকে বলল, ‘অ্যাই সারাদিন কম্পিউটারে কি? চোরের মত লুকিয়ে লুকিয়ে ইয়াং মেয়েদের ছোট ড্রেস পড়া ছবি দেখ – লজ্জা করেনা? যত বুড়া হচ্ছ ক্যারেক্টার তত ঢিলা হচ্ছে।’
আমজাদ সাহেব চেহারায় কৃ্ত্রিম গাম্ভীর্য ফুটিয়ে বললেন, ‘ফালতু কথা একদম বলবে না। মেয়েদের প্রতি যে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই সেটা তো তোমার অজানা থাকার কথা না। দেখনা তোমাকে দেখলে বিরক্ত হই। তুমি যে মেয়ে এটা নিয়ে সন্দেহ আছে তোমার? শোনো, কাজের কথা বলি। এক আমেরিকান বিজ্ঞানী ভবিষ্যৎবাণী করেছে যে উইদইন ফরটিন আওয়ার্স দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে। ঘটনা আসলেই সত্যি কিনা সেটা ইন্টারনেটে বসে যাচাই করছি। সার্চ করতে গিয়ে দুই একটা মেয়ের ছবি চলে এসেছে। ইন্টারনেট হচ্ছে তথ্য ভান্ডার। এখানে ছেলেদের ছবি যেমন থাকে, মেয়েদের ছবিও থাকে। তুমি এখন যন্ত্রনা কোরোনা। কেটে পড়। দুঘন্টা পরে এসে ছোট পিরিচে করে এক কাপ চা দিয়ে যেও, সাথে দুইটা গোল বিস্কুট।’
‘চা লাগলে নিজে বানিয়ে খাও। আর গোল কোন বিস্কিট তো তুমি কিনে আন নি। যে জিনিস কিনে আননি সেই জিনিস খেতে চাচ্ছ কেন?’
আমজাদ সাহেব এই মহিলার সাথে তর্কে যাওয়ার কোন প্রয়োজন মনে করলেন না। বেকুব টাইপের মহিলা। এড়িয়ে যাওয়াই আলো। তিনি বললেন, ‘আচ্ছা যাও।’
তার স্ত্রী চলে গেলেন। তিনি ডেস্কটপটা বন্ধ করে ল্যাপটপ চালু করলেন। ল্যাপটপ দিয়ে ফেসবুকে ঢুকে একটা স্ট্যাটাস দিতে হবে।
তার মন আজ অত্যাধিক ভালো। গতকালকে দেয়া স্ট্যাটাসটা বেশ হিট হয়েছে। লাইক এসেছে সাড়ে চারশোর মত। এর মধ্যে মেয়েদের লাইক প্রায় তিনশোর মত, তিনি এইমাত্র গুণে দেখলেন। মেয়েদের প্রতিটা লাইক কমেন্ট থেকে তিনি অনুপ্রেরণা পান, ছেলেদের লাইক কমেন্ট থেকেও অনুপ্রেরণা পাওয়া উচিত কিন্তু কি কারণে জানি তিনি পান না এবং পাওয়ার দরকারও মনে করেন না।
তার গতকালকের স্ট্যাটাসে এক মেয়ে মন্তব্য করেছে, ‘ভাইয়া আপনার লেখার মধ্যে একটা লেখক সুলভ ভাব আছে। পুরুষশাসিত সমাজে নারীদের আপনি যোগ্য মূল্যায়ন করতে জানেন। এই জিনিসটা ভাল্লাগলো।’
এই মন্তব্যে তিনি দারুন আনন্দিত হয়েছেন। আনন্দে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন নি। বাচ্চাদের মত হাউমাউ করে কেদে ফেলেছেন।
একই স্ট্যাটাসে এক ছেলে কমেন্ট করেছে, ‘ভাইয়া আপনার লেখায় রবীন্দ্রনাথের ছোয়া আছে। আমি মনে করি আপনিই হবেন এই যুগের রবীন্দ্রনাথ। বাংলা সাহিত্যে আপনাকে খুব দরকার।’
এই কমেন্টে আমজাদ সাহেব কোন ফিলিংসই পেলেন না। তার কাছে মনে হল এটি একটি বাজে এবং অপ্রাসঙ্গিক কমেন্ট।
ছেলেদের ব্যাপারে আমজাদ সাহেবের আগ্রহ এমনিতেই কম। এরা কমেন্ট দিলেই কি আর না দিলেই কি। হু কেয়ারস? তার লেখাগুলোতে মেয়েদের সুন্দর বর্ণনা থাকে। তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন তার লেখা দিয়ে ফ্রেন্ডলিষ্টের প্রতিটি মেয়েকে খুশি করতে। ফলে ছেলেদের নিয়ে কিছু নেগেটিভ কথা লিখতে হয়। তিনি আগ্রহ করেই সেটা লেখেন এবং লিখে কিছুটা গর্বও অনুভব করেন।
ইদানিং একটা সমস্যা হচ্ছে। ছেলেদের নিয়ে নেগেটিভ কথা লেখার কারণে ইনবক্সে কিছু ছেলে তাকে থ্রেট দিচ্ছে বিশ্রী ভাষায়। তরুন প্রজন্মের ছেলেদের ভাষা এই লেভেলে নেমে এসেছে এটা জেনে তিনি দুঃখিত হয়েছেন। তিনি নিজে তরুণ থাকা কালে ‘শালা’ ছাড়া আর কোন ভালো গালিই জানতেন না।
গত পরশু এক ফালতু ছেলে তাকে ইনবক্সে ম্যাসেজ দিয়েছে। সেই ছেলের আইডির নাম ‘অ্যাঞ্জেল কালা জাহাঙ্গীর’।
এই কালা জাহাঙ্গীর লিখেছে, ‘ওই বুইড়া, মেয়ে নিয়া রসালো লেখা লেইখা হিট হইতে চাস? ছেলেদের নিয়া আজেবাজে লেখা লেইখা পার পাবি মনে করছস? খাড়া তোর সেলিব্রেটি হওয়া ছুটাইতাছি।’
আমজাদ সাহেব তাজ্জব হয়ে গেছেন। তার ছেলের বয়সী এই ছোড়া তাকে তুই করে বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করছে। তিনি সাথে সাথে ছেলেটিকে ব্লক করেছেন এবং ব্লক করার আগে ইনবক্সে একটা ছোট ম্যাসেজ দিয়েছেন। লিখেছেন, ‘তুই একটা অমানুষ। নারীর মূল্য তুই বুঝবিনা। দে আর গ্রেটস।’
আমজাদ সাহেব গতরাতে এই বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘক্ষণ ভেবেছেন। তার সব লেখা আসলেই কি নারী বিষয়ক হয়ে যাচ্ছে? ব্যাপারটা তো ঠিক হচ্ছেনা। বড় লেখকরা মেইনলি কি নিয়ে লিখতেন? তারা কি নারী নারী করতেন? না মনে হয়। আমজাদ সাহেব মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ওপেন করলেন। নতুন একটি লেখা লিখবেন। এই লেখায় নারী নিয়ে একটি অক্ষরও লিখবেন না। সবাইকে তিনি দেখিয়ে দেবেন তিনি যেকোন টপিক নিয়েই লিখতে পারেন। সেটা কলাগাছ হোক আর খেজুর গাছ হোক।
টপিক হিসাবে তিনি সিলেক্ট করেছেন ‘বাংলাদেশ’। দেশ নিয়ে লিখবেন। সামনে ২৬ শে মার্চ। এই সুযোগে দেশপ্রেমটাকেও একটু ঝালিয়ে নেয়া যাক। নারী প্রেম থেকে দেশপ্রেম। প্রতিটি প্রেমের মূলেই দেখা যাচ্ছে নারী। বাহ সুন্দর তো!
আচ্ছা দেশ নিয়ে কি লিখবেন? দেশ নিয়ে তো সবাই জানেই। এই দেশের জনসংখ্যা, আয়তন এসব লিখবেন? এসব লিখলে সেই স্ট্যাটাসে কেউ কি লাইক দেবে? দেয়ার তো কথা না।
হঠাৎ আমজাদ সাহেবের মনে হল একজন লেখক খুব ভিন্ন কিছু নিয়ে লেখেন না। সবাই যা লেখে লেখকও তা নিয়েই লেখেন কিন্তু তার উপস্থাপন হয় ভিন্ন। সুতরাং বাংলাদেশ নিয়ে ভিন্নভাবে লিখলেই হবে এবং অবশ্যই সেটি নারী বর্জিত হতে হবে।
তিনি শুরু করলেনঃ ‘এক লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার পাচশ সত্তুর বর্গকিলোমিটারের দেশটিকেই মূলত বাংলাদেশ নামে ডাকা হয়। এটি ওসাম একটি দেশ। এই দেশে প্রচুর গাছপালা আছে। জানালা দিয়ে তাকালেই সবুজ মাঠ। সেই মাঠে গরু ছাগল ঘোরাঘুরি করছে। সুতরাং এই দেশকে সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বলাটা অবশ্যই সমীচিন।
এই দেশের মানুষ মূলত মুসলিম। তবে এখানে হিন্দু খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধও আছে। এছাড়াও আছে কিছু ভন্ড এবং চিটার টাইপের লোক। এই দেশে প্রচুর নদী আছে বলেই এটিকে নদীমাতৃক দেশ বলা হয়। মাতৃ শব্দটির মানে হল মাতা। মাতা আমাদের পরম শ্রদ্ধেয়। আবার এই মাতা একজন নারী। সুতরাং নারী জাতির গুরুত্ব অপরিসীম। দে আর গ্রেটস।’
আজকাল তিনি সারাদিন ফেসবুকেই থাকেন। এমনকি ঘুমানও ফেসবুকে। ল্যাপটপ অন করে বুকে নিয়ে ঘুমান। তার স্ত্রী এসে মাঝে মাঝে যন্ত্রনা করে। তিনি স্থ্রী-কে উল্টা-পাল্টা বুঝিয়ে বিদায় করে দেন। এই মহিলাকে আমজাদ সাহেবের কাছে বিরক্তিকর মনে হয়। সারাদিন কানের সামনে বেহুদা প্যানপ্যান। কাজ না থাকলে যা হয় আর কি।
আজ একটু আগে তার স্ত্রী এসে তাকে বলল, ‘অ্যাই সারাদিন কম্পিউটারে কি? চোরের মত লুকিয়ে লুকিয়ে ইয়াং মেয়েদের ছোট ড্রেস পড়া ছবি দেখ – লজ্জা করেনা? যত বুড়া হচ্ছ ক্যারেক্টার তত ঢিলা হচ্ছে।’
আমজাদ সাহেব চেহারায় কৃ্ত্রিম গাম্ভীর্য ফুটিয়ে বললেন, ‘ফালতু কথা একদম বলবে না। মেয়েদের প্রতি যে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই সেটা তো তোমার অজানা থাকার কথা না। দেখনা তোমাকে দেখলে বিরক্ত হই। তুমি যে মেয়ে এটা নিয়ে সন্দেহ আছে তোমার? শোনো, কাজের কথা বলি। এক আমেরিকান বিজ্ঞানী ভবিষ্যৎবাণী করেছে যে উইদইন ফরটিন আওয়ার্স দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে। ঘটনা আসলেই সত্যি কিনা সেটা ইন্টারনেটে বসে যাচাই করছি। সার্চ করতে গিয়ে দুই একটা মেয়ের ছবি চলে এসেছে। ইন্টারনেট হচ্ছে তথ্য ভান্ডার। এখানে ছেলেদের ছবি যেমন থাকে, মেয়েদের ছবিও থাকে। তুমি এখন যন্ত্রনা কোরোনা। কেটে পড়। দুঘন্টা পরে এসে ছোট পিরিচে করে এক কাপ চা দিয়ে যেও, সাথে দুইটা গোল বিস্কুট।’
‘চা লাগলে নিজে বানিয়ে খাও। আর গোল কোন বিস্কিট তো তুমি কিনে আন নি। যে জিনিস কিনে আননি সেই জিনিস খেতে চাচ্ছ কেন?’
আমজাদ সাহেব এই মহিলার সাথে তর্কে যাওয়ার কোন প্রয়োজন মনে করলেন না। বেকুব টাইপের মহিলা। এড়িয়ে যাওয়াই আলো। তিনি বললেন, ‘আচ্ছা যাও।’
তার স্ত্রী চলে গেলেন। তিনি ডেস্কটপটা বন্ধ করে ল্যাপটপ চালু করলেন। ল্যাপটপ দিয়ে ফেসবুকে ঢুকে একটা স্ট্যাটাস দিতে হবে।
তার মন আজ অত্যাধিক ভালো। গতকালকে দেয়া স্ট্যাটাসটা বেশ হিট হয়েছে। লাইক এসেছে সাড়ে চারশোর মত। এর মধ্যে মেয়েদের লাইক প্রায় তিনশোর মত, তিনি এইমাত্র গুণে দেখলেন। মেয়েদের প্রতিটা লাইক কমেন্ট থেকে তিনি অনুপ্রেরণা পান, ছেলেদের লাইক কমেন্ট থেকেও অনুপ্রেরণা পাওয়া উচিত কিন্তু কি কারণে জানি তিনি পান না এবং পাওয়ার দরকারও মনে করেন না।
তার গতকালকের স্ট্যাটাসে এক মেয়ে মন্তব্য করেছে, ‘ভাইয়া আপনার লেখার মধ্যে একটা লেখক সুলভ ভাব আছে। পুরুষশাসিত সমাজে নারীদের আপনি যোগ্য মূল্যায়ন করতে জানেন। এই জিনিসটা ভাল্লাগলো।’
এই মন্তব্যে তিনি দারুন আনন্দিত হয়েছেন। আনন্দে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন নি। বাচ্চাদের মত হাউমাউ করে কেদে ফেলেছেন।
একই স্ট্যাটাসে এক ছেলে কমেন্ট করেছে, ‘ভাইয়া আপনার লেখায় রবীন্দ্রনাথের ছোয়া আছে। আমি মনে করি আপনিই হবেন এই যুগের রবীন্দ্রনাথ। বাংলা সাহিত্যে আপনাকে খুব দরকার।’
এই কমেন্টে আমজাদ সাহেব কোন ফিলিংসই পেলেন না। তার কাছে মনে হল এটি একটি বাজে এবং অপ্রাসঙ্গিক কমেন্ট।
ছেলেদের ব্যাপারে আমজাদ সাহেবের আগ্রহ এমনিতেই কম। এরা কমেন্ট দিলেই কি আর না দিলেই কি। হু কেয়ারস? তার লেখাগুলোতে মেয়েদের সুন্দর বর্ণনা থাকে। তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন তার লেখা দিয়ে ফ্রেন্ডলিষ্টের প্রতিটি মেয়েকে খুশি করতে। ফলে ছেলেদের নিয়ে কিছু নেগেটিভ কথা লিখতে হয়। তিনি আগ্রহ করেই সেটা লেখেন এবং লিখে কিছুটা গর্বও অনুভব করেন।
ইদানিং একটা সমস্যা হচ্ছে। ছেলেদের নিয়ে নেগেটিভ কথা লেখার কারণে ইনবক্সে কিছু ছেলে তাকে থ্রেট দিচ্ছে বিশ্রী ভাষায়। তরুন প্রজন্মের ছেলেদের ভাষা এই লেভেলে নেমে এসেছে এটা জেনে তিনি দুঃখিত হয়েছেন। তিনি নিজে তরুণ থাকা কালে ‘শালা’ ছাড়া আর কোন ভালো গালিই জানতেন না।
গত পরশু এক ফালতু ছেলে তাকে ইনবক্সে ম্যাসেজ দিয়েছে। সেই ছেলের আইডির নাম ‘অ্যাঞ্জেল কালা জাহাঙ্গীর’।
এই কালা জাহাঙ্গীর লিখেছে, ‘ওই বুইড়া, মেয়ে নিয়া রসালো লেখা লেইখা হিট হইতে চাস? ছেলেদের নিয়া আজেবাজে লেখা লেইখা পার পাবি মনে করছস? খাড়া তোর সেলিব্রেটি হওয়া ছুটাইতাছি।’
আমজাদ সাহেব তাজ্জব হয়ে গেছেন। তার ছেলের বয়সী এই ছোড়া তাকে তুই করে বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করছে। তিনি সাথে সাথে ছেলেটিকে ব্লক করেছেন এবং ব্লক করার আগে ইনবক্সে একটা ছোট ম্যাসেজ দিয়েছেন। লিখেছেন, ‘তুই একটা অমানুষ। নারীর মূল্য তুই বুঝবিনা। দে আর গ্রেটস।’
আমজাদ সাহেব গতরাতে এই বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘক্ষণ ভেবেছেন। তার সব লেখা আসলেই কি নারী বিষয়ক হয়ে যাচ্ছে? ব্যাপারটা তো ঠিক হচ্ছেনা। বড় লেখকরা মেইনলি কি নিয়ে লিখতেন? তারা কি নারী নারী করতেন? না মনে হয়। আমজাদ সাহেব মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ওপেন করলেন। নতুন একটি লেখা লিখবেন। এই লেখায় নারী নিয়ে একটি অক্ষরও লিখবেন না। সবাইকে তিনি দেখিয়ে দেবেন তিনি যেকোন টপিক নিয়েই লিখতে পারেন। সেটা কলাগাছ হোক আর খেজুর গাছ হোক।
টপিক হিসাবে তিনি সিলেক্ট করেছেন ‘বাংলাদেশ’। দেশ নিয়ে লিখবেন। সামনে ২৬ শে মার্চ। এই সুযোগে দেশপ্রেমটাকেও একটু ঝালিয়ে নেয়া যাক। নারী প্রেম থেকে দেশপ্রেম। প্রতিটি প্রেমের মূলেই দেখা যাচ্ছে নারী। বাহ সুন্দর তো!
আচ্ছা দেশ নিয়ে কি লিখবেন? দেশ নিয়ে তো সবাই জানেই। এই দেশের জনসংখ্যা, আয়তন এসব লিখবেন? এসব লিখলে সেই স্ট্যাটাসে কেউ কি লাইক দেবে? দেয়ার তো কথা না।
হঠাৎ আমজাদ সাহেবের মনে হল একজন লেখক খুব ভিন্ন কিছু নিয়ে লেখেন না। সবাই যা লেখে লেখকও তা নিয়েই লেখেন কিন্তু তার উপস্থাপন হয় ভিন্ন। সুতরাং বাংলাদেশ নিয়ে ভিন্নভাবে লিখলেই হবে এবং অবশ্যই সেটি নারী বর্জিত হতে হবে।
তিনি শুরু করলেনঃ ‘এক লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার পাচশ সত্তুর বর্গকিলোমিটারের দেশটিকেই মূলত বাংলাদেশ নামে ডাকা হয়। এটি ওসাম একটি দেশ। এই দেশে প্রচুর গাছপালা আছে। জানালা দিয়ে তাকালেই সবুজ মাঠ। সেই মাঠে গরু ছাগল ঘোরাঘুরি করছে। সুতরাং এই দেশকে সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বলাটা অবশ্যই সমীচিন।
এই দেশের মানুষ মূলত মুসলিম। তবে এখানে হিন্দু খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধও আছে। এছাড়াও আছে কিছু ভন্ড এবং চিটার টাইপের লোক। এই দেশে প্রচুর নদী আছে বলেই এটিকে নদীমাতৃক দেশ বলা হয়। মাতৃ শব্দটির মানে হল মাতা। মাতা আমাদের পরম শ্রদ্ধেয়। আবার এই মাতা একজন নারী। সুতরাং নারী জাতির গুরুত্ব অপরিসীম। দে আর গ্রেটস।’