বনানীতে ধর্ষিতা ২ ছাত্রীর একজন সাফাতের শ্যালিকা?

 

 

 

 

অনলাইন ডেস্ক  কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের শিকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দুই শিক্ষার্থীর একজন সাফাত আহমেদের শ্যালিকা। তিনি সাফাতের সাবেক স্ত্রী ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার খালাতো বোন।

ঘটনার রাতে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ তার শ্যালিকাকেই ধর্ষণ করেন। আর আরেক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করেন সাফাতের বন্ধু নাঈম আশরাফ (প্রকৃত নাম এইচএম হালিম)।

৮ জুন আদালতে দাখিলকৃত চার্জশিট (অভিযোগপত্র) থেকে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ধর্ষিতাদের মধ্যে যিনি এজাহারে নিজেকে সাফাতের সাবেক স্ত্রী ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার খালাতো বোন দাবি করেছেন, বাস্তবে তিনি খালাতো বোন নন।

কিন্তু কেন ওই সময় পিয়াসা সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং তাকে খালাতো বোন বলে পরিচয় দেয়া হয়, সে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। যদিও এরই মধ্যে এ বিষয়ে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। সেখানেও ‘খালাতো বোন’ পরিচয়টি বহাল আছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভিকটিম সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন সেন্টারের অতিরিক্ত উপকমিশনার আসমা সিদ্দিকা মিলি বলেন, বাদী যেহেতু পিয়াসাকে খালাতো বোন পরিচয় দিয়েছেন, সেহেতু সেভাবেই লেখা আছে। এছাড়া আমরাও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে খালাতো বোন বলে জানতে পেরেছি।

এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাফাতের সাবেক স্ত্রী ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা রোববার রাতে বলেন, ‘আমি আসলে তাদের খালাতো বোন নই। মূলত ওদের (ধর্ষিত দুই তরুণী) অনুরোধে সেদিন থানায় গিয়েছিলাম।

তারা বলেছিল, পুলিশ আমাদের কথা শুনবে না। সাবেক স্ত্রী হিসেবে অন্তত তোমার কথা পুলিশ শুনবে। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর পুলিশ আমাকে উদ্দেশ্য করেও কিছু খারাপ মন্তব্য করতে থাকে।

একপর্যায়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে তারা আমাকে খালাতো বোন হিসেবে পরিচয় দেয়। ওই সময় সম্মান রক্ষার্থে আমিও আপত্তি করিনি।’

এদিকে রোববার মামলাটির বিচারিক কাজ শুরুর জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ পাঠানো হয়েছে। আজ চার্জশিট গ্রহণের দিন ধার্য হতে পারে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

চার্জশিটে বলা হয়, ঘটনার দিন সাফাত আহমেদের জন্মদিনের পার্টির কথা বলে বনানীর ‘কে’ ব্লকে ২৭ নম্বর সড়কে দ্য রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করা হয়।

এর আগে তাদের মারধর ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে মদপান করানো হয়। হোটেলটির ছাদে সুইমিংপুল সংলগ্ন ক্যাফেতে মদপান করানোর সময় মামলার ১নং আসামি সাফাত আহমেদ (২৬), ২নং আসামি নাঈম আশরাফ (এইচএম হালিম) ও সাফাত আহমেদের বন্ধু সাদমান সাকিফও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

এরপর হোটেলটির ৭০০ নম্বর স্যুটের পৃথক দুটি কক্ষে নিয়ে সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ (এইচএম হালিম) ওই দুই শিক্ষার্থীকে কয়েক দফায় ধর্ষণ করে।

এ সময় বাধা দিলে অস্ত্রের ভয় দেখানো ছাড়াও দুই শিক্ষার্থীকে ফের মারধর করা হয়। এ সময় ১নং আসামি মো. সাফাত আহমেদের নির্দেশে তার গাড়িচালক মো. বিল্লাল হোসেন (৪নং আসামি) ধর্ষণের ঘটনাটি ভিডিও করেন। মামলার ২ নম্বর আসামি নাঈম আশরাফ অভিযোগকারীর বান্ধবীকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। এ সময় তাদের গালাগাল করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিদের দেয়া জবানবন্দি, ধর্ষণের শিকার দুই শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা ও সাক্ষীদের দেয়া সাক্ষ্য থেকে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে আদালতে দেয়া অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন।

৮ জুন বৃহস্পতিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগের পরিদর্শক ইসমত আরা এমি। তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার ৬/০৫/১৭ তারিখে দায়েরকৃত ০৮ নম্বর মামলাটি আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী)/২০০৩ এর ৯ (১) /৩০ তৎসহ ৩২৩/৫০৬ পেনাল কোডে অভিযোগ হিসেবে দাখিল করেন। অভিযোগপত্র নং-১৫৫। প্রাথমিক তথ্য নম্বর-৮। তারিখ ০৫/০৬/১৭।

অভিযোগপত্রে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ কর্মকর্তা, চিকিৎসকসহ ৪৭ জনকে সাক্ষী হিসেবে উত্থাপন করা হয়েছে। অন্যদিকে ঘটনার রাতে দুই তরুণীর পরিহিত সালোয়ার-কামিজ, রেইনট্রি হোটেলের বেডশিট, বালিশের কভার, শারীরিক পরীক্ষার (ডাক্তারি পরীক্ষা) ফলাফল, ১০ রাউন্ড গুলিসহ একটি শটগান, ২৮ মার্চ রাত ৯টা থেকে ২৯ মার্চ সকাল ১০টা পর্যন্ত সাফাত আহমেদের নামে রেইনট্রি হোটেলের বিলের কপি (৫৯ হাজার ৫০১ টাকার মানি রিসিট), ঘটনার রাতে ধারণকৃত তিনটি ভিডিও ক্লিপ ছাড়াও ২২ ধরনের আলামত আদালতে উত্থাপন করা হয়েছে।

এসবের মধ্যে ঘটনার রাতে সাফাত রেইন্ট্রি হোটেলে তার যে ভিজিটিং কার্ড দিয়ে রুম বুক করেছিলেন সেই কার্ড ঘটনার ২ দিন পর সাদমান সাকিবের মামলার বাদিনীর কথোপকথনের রেকর্ড (ম্যাসেঞ্জার মাধ্যম), হোটেল ভাড়ার রসিদ (৫৯ হাজার ৫০১ টাকা, ১৮ ঘণ্টার জন্য) প্রভৃতি রয়েছে। তবে আলামত হিসেবে আদালতে দেয়া ভিডিও ক্লিপের একটিতে ঝাপসা কিছু চিত্র ও চিৎকারের শব্দ রয়েছে।

চার্জশিটে আরও বলা হয়, ২৮ মার্চ (ঘটনার দিন) রাত ৯টার দিকে আসামি সাফাত আহমেদের গাড়িচালক ও মামলার ৪ ও ৫ নম্বর আসামি বিল্লাল হোসেন এবং মো. রহমত আলী দুই ভিকটিমকে গুলশানের নিকেতন এলাকা থেকে বনানীর হোটেলটিতে নিয়ে আসে। রাত ৯টার দিকে তারা ভিকটিমদ্বয়কে হোটেলের ছাদে সুইমিংপুলে পৌঁছে দেয়।

পরে দুই ভিকটিমের ফোন পেয়ে তাদের আরেক বান্ধবী (নাম উল্লেখ করা হল না) কথিত জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তার চিকিৎসক বন্ধু ডা. শাহরিয়ারকে নিয়ে হোটেলটিতে আসেন। এর আগে হোটেলটির ছাদে সুইমিংপুল সংলগ্ন ক্যাফেতে বসে আরও দুই তরুণীকে নিয়ে (নাম প্রকাশ করা হল না) মদপান করছিলেন মামলার আসামি সাফাত আহমেদ, নাঈম আশারফ ও সাকিফ আহমেদ।

প্রসঙ্গত, ২৮ মার্চ বন্ধু সাদনান সাকিফের প্ররোচনায় জন্মদিনের পার্টিতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দুই তরুণী। নানা ভয়ভীতির মুখে তাদের মামলা করতে বিলম্ব হয়। ঘটনার এক মাসেরও বেশি সময় পর ২ মে বনানী থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!