বৈশাখী সাজে সাজাতে ব্যস্ত টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লী
বিভাস কৃষ্ণ চৌধুরী, টাঙ্গাইল, বিশেষ প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
আসছে পহেলা শৈাখ। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। দিনটিকে কেন্দ্র করে বাংলার ঘরে ঘরে মহোৎসব। সরকারি-বেসরকারি সংগঠন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও দিনটি উদযাপন করে ধুমধামের সাথে। দিনটি যেন বাঙালি জাতির কাছে চির চেনা। ধর্মীও অনুষ্ঠানের চেয়েও সার্বজনীন উৎসব হিসেবে দিনটি এখন আনন্দ উৎসবে পরিনত হয়েছে। আর এই আনন্দকে আরও আনন্দময় করতে চাই নতুন কাপড়। নারীর চাই নতুন শাড়ী। নারীদের বৈশাখী সাজে সাজাতে টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লী এখন ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। নববর্ষকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল শাড়িতে যোগ হয়েছে বাহারি রঙ আর নতুন কারুকাজ। বৈশাখের আগেই নিপুন হাতে বৈশাখী শাড়ি তৈরি শেষ করতে হচ্ছে। এ কারণেই মুলত তাঁত পল্লী এখন উৎসব মূখর আর তাঁতীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। টাঙ্গাইল সদরের বাজিদপুর, দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ও চন্ডী ও কালিহাতীর বল্লা রামপুরের তাঁত সমৃদ্ধ এলাকায় একই চিত্র দেখা যায়। ভোর না হতেই শুরু তাঁতের খটখটি শব্দ। রাতভর কাজ করেও তাঁতীর ক্লান্তি নেই। প্রতিযোগিতা একটাই, উৎপাদন যত বেশী হবে, সাপ্তাহিক বিল তত বেশী পাবে। সুতা রং করা থেকে শুরু করে শাড়ী বাজারে বিক্রি করা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই পরিবারের সব বয়সের মানুষ ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এক সময় দেশীয় শিল্পিদের নিপূন হাতে তৈরি মসলিন কাপড় দেশ বিদেশী রমনীদের নজর কেড়েছিল। সময়ের বিবর্তনে পূরনো মসলিনের কথা আধুনিক নারীদের স্মৃতিতে ধারন না থাকলেও টাঙ্গালের তৈরি তাঁতের শাড়ী সেই মসলিনের মতই দেশ বিদেশী রমনীদের মনে স্থান করে নিয়েছে। এজন্যই প্রবাদ রয়েছে “নদী নালা খাল বিল গজারীর বন টাঙ্গাইলের শাড়ী তার গর্বের ধন”।
একদিকে বৈশাখী বার্তা অন্যদিকে হরতাল-অবরোধের স্থিতিশীলতা তাঁত শিল্পের মন্দা অবস্থা অনেকটাই কেটে উঠেছে। উৎপাদন ও বাজার উভয়ই ভাল যাচ্ছে। নববর্ষকে কেন্দ্র করে বাজারে নেমছে নতুন শাড়ি। ভিন্ন বুটি আর নতুন নকশায় তৈরি এই শাড়ি শুধু বৈশাখ উৎসবের জন্য। দেশের সবচেয়ে বড় তাঁতের শাড়ির হাট টাঙ্গাইলের করটিয়া ঘুরে দেখা যায়, তাঁতিরা তাদের উৎপাদিত কাপড় নিয়ে প্রতিযোগীতায় নেমেছে। স্থানীয় ও দূর থেকে আসা অধিকাংশ ক্রেতাদের চাহিদাই এখন বৈশাশের শাড়ি। ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করতে অনেকটাই উপযোগি টাঙ্গাইল শাড়ি। মূল্যসীমা হাতের নাগালে রয়েছে সুঁতি বৈশাখী শাড়ি। যার খুচরা মূল্য ৩ থেকে ৪শ’ টাকার মধ্য। এছাড়া সিল্ক ,সপসিল্ক, রেশন ও দুতারের মধ্যেও রয়েছে উন্নতমানের বৈশাখী শাড়ি। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা।
শাড়ি বিক্রেতা মীর জাকির হোসেন বলেন, বর্তমানে স্থানীয় ও বহিরাগত অধিকাংশ গ্রাহকের চাহিদাই বৈশাখী শাড়ি।বিক্রির হারও বেড়েছে।
বেশাখী শাড়ির চাহিদা মেটাতে টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লীর পরিবেশ এখন উৎসব মুখর। ব্যস্ত সময় পাড়ি দিচ্ছে এ অঞ্চলের তাঁত শিল্পিরা। তাঁতশিল্পি লাভলু মিয়া বলেন,সামনে পহেলা বৈশাখ তার পর ঈদ। সব মিলিয়ে ব্যস্ততা অনেকটাই বেড়েছে। এদিকে বৈশাখী শাড়ি তৈররি জন্য বুটি কাটা,সুুঁতার বুনট তৈরি, নতুন নতুন নকশা তৈরিতেও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে শ্রমিকরা। নকশা তৈরিকারক আবুল হোসেন বলেন, বৈশাখী শাড়ি তৈরির জন্য নতুন নকশা তৈরির জন্য অনেক ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে।
টাঙ্গাইল শাড়ী ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেন জানান, উৎসবনুসারে টাঙ্গাইল শাড়ির কারুকাজ ভিন্ন হয়। বৈশাখীকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইল শাড়িতে যোগ হয়েছে ভিন্নধর্মী নকশাও কারুকাজ। যা সহজেই নারীদের পছন্দনীয়। চাহিদা পূরণ করতে টাঙ্গাইল শাড়ি যুগপোযেীাগ।