ভেদরগঞ্জে বৌ ভাত অনুষ্ঠানে বর পক্ষের হামলায় আহত-১০
সৈয়দ মেহেদী হাসান, শরীয়তপুর প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ছয়গাঁও ইউনিয়নের লাকার্তায় বৌ ভাত অনুষ্ঠানে কনে পক্ষের লোকজনকে পরিকল্পিত ভাবে বর পক্ষের লোকজন মারধর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে । এ ঘটনা অন্তত ১০ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে।
আহতদের শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহত রিফাত ও ইমরানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।
ভেদরগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে আহতের পরিবার।
স্থানীয় সূত্র ও আহতের পরিবার জানায়, প্রায় ২ বছর পূর্বে ভেদরগঞ্জ উপজেলার লাকার্তা গ্রামের আঃ রশিদ ভুইয়ার ছেলে সৌদী প্রবাসী লিটন ভুইয়ার সাথে একই ইউনিয়নের আবুবকর সরদারের মেয়ে লামিয়া আক্তার তমার বিয়ের কথা পাঁকাপাকি হয়। গত ৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার তমার পিতার শরীয়তপুর রূপ নগরের (ঋষি পাড়া) বাড়িতে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সমাপ্ত হয়। ৯ সেপ্টেম্বর লাকার্তা ভুইয়া বাড়িতে ছিলে লিটন-তমার বৌ ভাত অনুষ্ঠান। তমা ও লিটনের এ বিয়ে অনেকে মেনে নিতে না পারায় কতিপয় লোক অশুভ পন্থা অবলম্বন করেন। বৌ ভাত অনুষ্ঠানে কনে পক্ষের এক অতিথির সাইড ব্যাগ চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুলকালাম ঘটনা বাধিয়ে কনের খালাতো ভাইদের সহ প্রায় ১০ জনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে বর পক্ষের লোকেরা।
স্থানীয় সূত্র আরো জানায়, চুরি যাওয়া ব্যাগ সদর উপজেলার দেওভোগ গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে সুবর্না আক্তার কনার কাছ থেকে উদ্ধার হয়। এ সময় বর পক্ষের রাব্বি, অনিক, তুষার, সজিব সহ কতিপয় লোক অভিযুক্ত চোর কনার পক্ষ নিয়ে কনে পক্ষের রিফাত, রকিব, ইমরান সহ প্রায় ১০ জনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে। পরবর্তীতে স্থানীয় মেম্বার শাহিন বিষয়টি সমাধানের জন্য কথিত চোর কনার পরিবারকে ডেকে এনে ৫০ হাজার টাকা দাবী করেন। এক পর্যায়ে কনার পিতা গিয়াস উদ্দিন ১৫ হাজার টাকা দিতে রাজী হয়। ঘটনাস্থলে থেকেই প্রথমে ৯ হাজার ৫শ টাকা আদায় ও পরবর্তীতে মেম্বার শাহিন তার লোক পাঠিয়ে বাকী ৫ হাজার ৫শ টাকা কব্জা করে কথিত চোর কনাকে তার পিতার জিম্মায় দেয়ার ব্যবস্থা করেন।
এ বিষয়ে বর লিটনের ছোট ভাই স্বপন ভুইয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি অসুস্থ বলে এড়িয়ে যান।
হাসপাতালের বেড থেকে আহত রকিব ও ইমরান জানায়, যখন তারা ব্যাগ চোরকে চিহ্নিত করতে পারে তখনই রাব্বি, রাবিক, তুষার, সজিব সহ স্থানীয়রা চোরের পক্ষ নিয়ে চোরকে রক্ষার চেষ্টা করে। কনে পক্ষের লোকজন চুরি যাওয়া ব্যাগ রক্ষা করতে গেলেই রাব্বি, তুষার, রাবিক, সজিবরা তাদের উপর ছেন দা, চাপাতি দিয়ে আক্রমন করে। আহত রবিক ইমরানদের ধারণা এটি পরিকল্পিত হামলা এবং পরিকল্পনা করেই তাদের কোপানো হয়েছে। তা না হলে ঘটনাস্থলে দ্রুত ধারালো অস্ত্র আসলো কোথা থেকে। এ সময় আহত রিফাতের কাছ থেকে দুটি মোবাইল সেট ও তার মায়ের সাথে থাকা স্বার্ণালংকারও ছিনিয়ে নিয়েছে হামলাকারীরা। তাদের অভিভাবকগণ উকিলের সাথে আলাপ করতে গেছে। তারা আদালতে মামলা করবেন।
অভিযুক্ত কনার পরিবার জানায়, বর-কনে পক্ষের অভ্যন্তরিন ক্রোন্দলে শিকার হয়ে তাদের টাকা ও মানসম্মান গেছে। প্রথমে স্থানীয় মেম্বার এ ঘটনা মিটিয়ে দিতে ৫০ হাজার টাকা দাবী করে। পরবর্তীতে ১৫ হাজার টাকায় রফাদফা হয়। সাথে থাকা ৯ হাজার ৫শ টাকা দিয়ে আসি পরবর্তীতে মেম্বারের লোক মটর সাইকেল নিয়ে আমাদের বাড়ি আসলে তার হাতে বাকী ৫ হাজার ৫শ টাকা দেই। অথচ পুলিশ আমার মেয়ের কাছে চোরাই কোন ব্যাগ বা মালামাল পায়নি।
মেম্বার শাহীন বলে, অন্যসব ঘটনা সত্য। তবে আমি কোন টাকা পয়সার লেনদেন করিনি। আমি জন প্রতিনিধি তাছাড়া আমার প্রতিপক্ষ আছে। তারা আমার মানসম্মান নষ্ট করতে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
ভেদরগঞ্জ থানা পুলিশ উপ-পরিদর্শক (এসআই) সজল পাল বলেন, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। কথিত চোরের কাছ থেকে কোন চোরাই মালামাল পাওয়া যায় নাই। তাছাড়া কেউ অভিযোগ করতেও রাজী হয় নাই। তাই বন্ড রেখে চোরকে তার পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
- কাগজ টুয়েন্টিফোর বিডি ডটকম এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।