রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিএনপির ত্রাণ বিতরণের অনুমতি দেয়নি পুলিশ, আটকে দিয়েছে ২২টি ট্রাক
অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাণ বিতরণে অংশ নিতে মঙ্গলবার স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর্জা আব্বাসের নেতৃত্বে কক্সবাজার পৌঁছে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। রাতভর ২২ টি ট্রাকে ত্রাণ সামগ্রী ভরে বিএনপি নেতকর্মীরা। পরে ২২টি ত্রাণবাহী ট্রাক সকাল থেকে শহীদ মিনার রোডের বিএনপি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। এর পর সকাল ১১ টার দিকে পুলিশের একটি দল ট্রাকগুলোর আশেপাশে অবস্থান নিয়েছে। পুলিশ ২২ টি ট্রাকের চাবিও জব্দ করেছে।
জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরী জানান, পুলিশ জানিয়েছে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া ত্রাণবাহী গাড়ি কোথাও যেতে পারবে না। এর পরই জেলা বিএনপি সভাপতি উখিয়া টেকনাফের সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী ও সদর আসনের সাবেক এমপি লূৎফর রহমান কাজল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গেলেও জেলা প্রশাসকসহ অন্যরা বাইরে থাকায় দেখা করা সম্ভব হয়নি।
নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) তাহমিলুর রহমান জানান, ব্যক্তি বিশেষের ব্যানারে ত্রাণ দেয়া যাবে না। যারা ত্রাণ দিতে চায় তাদের প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। তবে বিএনপির বিষয়টি আমি জানি না।
এদিকে ত্রাণবাহী ট্রাকের পাশে অবস্থান নেয়া পুলিশের এসআই আবুবকর জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি ছাড়া ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো কোথাও যেতে না দিতে উপরের নির্দেশনা রয়েছে।
মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেন, অসহায় শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ বিতরণে কোনো রাজনীতি নেই। তবুও সরকার আমাদেরকে ত্রাণও দিতে দিচ্ছে না। এটা নিন্দনীয় ও চরম অমানবিক কাজ। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নির্দেশে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সাহায্য নিয়ে আমরা কক্সবাজার এসেছিলাম কিন্তু এখানে পুলিশ আমাদের গাড়ি বহরকে নানা অযুহাতে আটকে দিয়েছে। শরণার্থীদের কাছে যেতে দিচ্ছে না।
তিনি বলেন, কক্সবাজার প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রথমে বলা হলো আপনারা দুইটার পরে যান। কুটনীতিকরা চলে গেলে আপনারা যাবেন। আমরা মেনে নিলাম। আমার দুইটা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে রওনা দিলে আমার গাড়ির পিছনের সবগুলো গাড়ি আসতে দেয়নি। পুলিশ গাড়ি বহরের মুখোমুখি তাদের একটি গাড়ি দিয়ে আমাদের বহরকে আটকে দেয়।
মির্জা আব্বাস আরো বলেন, এখানে আমরা ত্রাণ দিতে এসেছি অন্য কিছু না। তাই সরকারের উচিত ছিল আমাদের নির্বিঘ্নে নিপীড়িত মানুষের কাছে যেতে দেয়া কিন্তু তারা পদে পদে বাধা দিচ্ছে। এককভাবে কোনো রাজনৈতিক দল ২০ ট্রাক ত্রাণ নিয়ে আসেনি, এমন কি আওয়ামী লীগও আসেনি। ওবায়দুল কাদের সাহেব যদি এসে থাকেন সরকারের কিছু মালামাল নিয়ে এসেছেন, যা’ একেবারে অপ্রতুল। আমরা প্রায় দশ হাজার পরিবারের পঞ্চাশ হাজার সদস্যের জন্য ত্রাণ নিয়ে এসেছি। বিশাল ত্রাণের বহর দেখে আওয়ামী লীগ সহ্য করতে পারছে না, এটা ওনাদের ভালোলাগছে না।
তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি নেত্রী যদি নির্যাতিত মানুষের পক্ষে মাঠে না নামতেন এবং রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বিবৃতি না দিতেন তাহলে আওয়ামী লীগ রোহিঙ্গাদের জন্য মাঠে নামতো না। খালেদা জিয়ার নির্দেশে আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ নিয়ে এসেছি। আওয়ামী লীগের উচিত ছিল আমাদের ত্রাণ বহরকে স্বাগত জানানো। আমরা কী দেখলাম? আমরা ত্রাণও দিতে পারব না! গতকাল আমাদের বিমানকে দুই ঘন্টা বিলম্ব করানো হলো। সমগ্র কক্সবাজারকে বন্ধ করে দেয়া হলো। রোহিঙ্গাদের জন্য সকল ত্রাণবাহী গাড়ি পৌঁছাতে পারল না। শরণার্থীরা সারাদিন কষ্ট করল। লোক দেখানো কাজ বিএনপি করে না বরং আওয়ামী লীগই লোক দেখানো কাজ করে। মিথ্যা কথা ওনারই বলে আমরা বলি না। আওয়ামী লীগের আগে আমাদের নেতা-কর্মীরা মাঠে নেমেছে। আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে আসছি রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিনে দেখতে যে তাদের আরো কী প্রয়োজন আছে। আমরা এখানে ত্রাণ দিতে এসেছি ঝগড়া করতে আসিনি; ত্রাণ দিয়েই ফিরবো কক্সবাজার থেকে।
উল্লেখ্য বিএনপির ত্রাণ বহরের সাথে আছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সহ-সভাপতি শামসুজ্জামান দুদু, কেন্দ্রীয় নেতা লুৎফুর রহমান কাজল, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী প্রমুখ।