সবুজ সংকেত পেয়ে প্রচারে অর্ধশত সাবেক ছাত্রদল নেতা
অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনীতিতে বইছে নির্বাচনী হওয়া। ভিতরে ভিতরে প্রস্তুত হচ্ছে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপিও। সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের পাশাপাশি এবার ভোটযুদ্ধে লড়তে প্রস্তুতি নিচ্ছেন অর্ধশতাধিক সাবেক ছাত্রদল নেতা। এরই মধ্যে অনেকে এলাকায় পরোক্ষভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুও করে দিয়েছেন। সাবেক ছাত্রদল নেতাদের কারও কারও দাবি, লন্ডন ও ঢাকা থেকে সবুজ সংকেত পেয়েই নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন তারা। এসব ছাত্রদল নেতা আশাবাদী, যেভাবে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা পাচ্ছেন, এতে তাদের আগামী নির্বাচনে বিজয়ের সম্ভাবনাই বেশি। বিএনপি সূত্রে জানা যায়, সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে যারা বেশি বিতর্কিত তাদের অনেকেই এবার নির্বাচনে দলীয় টিকিট পাবেন না। এ ছাড়া বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে দায়িত্বশীল যেসব নেতা নিষ্ক্রিয় ছিলেন, তাদের অনেকেই বাদ পড়বেন। সে ক্ষেত্রে আন্দোলন-সংগ্রামে ত্যাগী ও অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদেরই প্রাধান্য দেওয়া হবে। এ কারণে ছাত্রদলের সাবেক নেতারা বেশি আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। এরই মধ্যে অনেকে এলাকায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এলাকায় সাধারণ মানুষেরও সমর্থনও পাচ্ছেন তারা।
পবিত্র রমজান ঘিরে ছাত্রদলের সাবেক নেতারা নিজ নিজ এলাকায় দলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে নিয়ে ইফতার কর্মসূচিও দিচ্ছেন। চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় সূত্রমতে, সাবেক ছাত্রনেতাদের একটি তালিকা তৈরি করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। ওই তালিকা লন্ডনে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছেও পাঠানো হয়েছে। আগামী নির্বাচনে ওই তালিকা ধরেই সাবেক ছাত্রদল নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। এরই মধ্যে অনেকে সবুজ সংকেত পেয়ে মাঠে কাজও শুরু করেছেন। ছাত্রদলের সাবেক অনেক নেতাই এর আগেও দলের মনোনয়ন পেয়েছেন।
সংসদ সদস্য এমনকি মন্ত্রীও হয়েছেন কেউ কেউ। তাদের বেশির ভাগই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন। এর মধ্যে সাবেক ছাত্রদল নেতা শামসুজ্জামান দুদু, আমান উল্লাহ আমান, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, আবুল খায়ের ভূইয়া, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন, শিরিন সুলতানা, হেলেন জেরিন খান, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, সেলিমুজ্জামান সেলিম, এস এম জিলানী ২০০৮ সালে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করেন।
নির্বাচনে অংশ নেন সাবেক ছাত্রনেতা হাবিবুর রহমান হাবিব ও মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের অনেকেই বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কয়েকজন ছাত্রদল নেতার আসন পরিবর্তন হতে পারে। তবে সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্য থেকে এবারই প্রথম অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী রাজশাহী কিংবা কুড়িগ্রাম থেকে নির্বাচনে লড়তে পারেন। দলের মনোনয়ন পেতে পারেন লক্ষ্মীপুর-৪-এ শফিউল বারী বাবু, সিরাজগঞ্জ-৫-এ আমিরুল ইসলাম খান আলীম, পঞ্চগড়-২-এ ফরহাদ হোসেন আজাদ, নওগাঁ-৪-এ আবদুল মতিন, ঝিনাইদহ-২-এ জয়ন্তু কুমার কুণ্ডু, ঝিনাইদহ-৩-এ আমিরুজ্জামান খান শিমুল, হবিগঞ্জ-৪-এ শাম্মী আক্তার, নেত্রকোনা-২-এ এ টি এম আবদুল বারী ড্যানী, মাদারীপুর-৩-এ আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, বরিশাল-১-এ আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান,
পটুয়াখালী-১-এ মুনির হোসেন, পটুয়াখালী-৩-এ হাসান মামুন, ঝিনাইদহ-৪-এ সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, নরসিংদী-৪-এ আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, নাটোর-১-এ তাইফুল ইসলাম টিপু, ঝালকাঠি-২-এ মাহবুবুল হক নান্নু, ভোলা-৪-এ নূরুল ইসলাম নয়ন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২-এ শেখ মোহাম্মদ শামীম, ভোলা-১-এ হায়দার আলী লেনিন, বরিশাল-৪-এ রাজীব আহসান, কুমিল্লা-৪-এ আবদুল আওয়াল খান, নেত্রকোনা-১-এ ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, চাঁদপুর-২-এ মোস্তফা খান সফরী। ভোটযুদ্ধে লড়তে প্রস্তুত রাজশাহীর পবা থেকে শফিকুল হক মিলন, নীলফামারী সদর থেকে শামসুজ্জামান জামান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থেকে শাহীন শওকত, খুলনার খালিশপুর থেকে রকিবুল ইসলাম বকুল, শরীয়তপুর থেকে মিয়া নুরুদ্দীন অপু, যশোর সদর থেকে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বাগেরহাট সদর থেকে আবদুস সালাম, ঢাকার তেজগাঁও থেকে সাইফুল আলম নীরব, ধানমন্ডি থেকে ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, উত্তরা থেকে এস এম জাহাঙ্গীর, মিরপুর থেকে মামুন হাসান, ময়মনসিংহের ফুলপুর থেকে মোতাহার হোসেন, সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে মিজানুর রহমান চৌধুরী, হবিগঞ্জ সদর থেকে জি কে গউছ প্রমুখ। ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন ছাত্রনেত্রীও আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছেন।
সাবেক ছাত্রনেত্রী সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১, রেহেনা আক্তার রানু ফেনী-২, নিলোফার চৌধুরী মণি জামালপুর-৫ থেকে দলের মনোনয়ন পেতে কাজ করছেন। জানতে চাইলে রেহেনা আক্তার রানু বলেন, ‘ফেনীর মেয়ে হিসেবে সংসদ নির্বাচন করতে দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় কাজ করে যাচ্ছি। চেয়ারপারসনের নিজ এলাকা ফেনী থেকে নির্বাচন করা যে কোনো নেতার জন্যই গর্বের। দল চাইলে আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। ’ বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, চেয়ারপারসন ছাত্রদলের অধিকাংশ সাবেক নেতার প্রতি সন্তুষ্ট। অনেককে ডেকে এরই মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। এ কারণেই সাবেক ছাত্রনেতাদের বড় একটি অংশ এখন এলাকামুখী।