সেলিনা জাহান প্রিয়া‘র ডিজিটাল গল্প- সুন্দরী বউয়ের জীন
সুন্দরী বউয়ের জীন
-সেলিনা জাহান প্রিয়া
এক ভদ্রমহিলার স্বামী একদিন এক পীরের কাছে গিয়ে বললেন, কেবলাজান বাবা খুবেই বিপদে আছি। মাঝে মাঝে রাতে আমার ঘুম ভেঙে যায়, তখন দেখি আমার স্ত্রীর কাছে থেকে একটা আলো ধপ করে নিভে যায়। মাঝে মাঝে তার শরীর থেকে আলো বের হয়। অনেক রাতে ঘুমের মধ্যে দেখি সে খালি হাসে আর হাসে। আমি তার দিকে তাকালে দেখি সে ঘুমিয়ে আছে, আর একটা আলো ফুরুৎ করে হারিয়ে যায়। হুজুর আমার খুব ভয় লাগছে। আমার মনে হয় আমার স্ত্রীর সাথে জীন আছে।
পীর সাহেব বললেন, চুপ করে চোখ বন্ধ করে কিছু সময় দুরদ শরীফ পড়। আমি আমার বাতেনি চোখ খুলে দেখি তোমার স্ত্রী কি করে?
হুজুর চোখ বন্ধ করে কিছু সময় পর বলে উঠেন, লা হাওলা, লা হাওলা। তার পর হুজুর চোখ খুলে বলেন, তোমার তো মহাবিপদ। আগে খানকায় মানত কর কি দিবি? বদ জীনের আছর পরেছে তোমার সুন্দরী স্ত্রীর উপরে। আর সেই জীন খুবই বিরক্ত। রাতে যখন তোমার স্ত্রীর সাথে কথা বলতে আসে আর তুমি তাঁদের সেই মহব্বতের কথায় সমস্যা সৃষ্টি কর। এই বদ জীনের এক সঙ্গী আমাকে বলেছে, তোমাকে আগুন পানির কাছে পেলেই জান কবজ করে তোমার স্ত্রী কে কায়েফ নিয়ে যাবে।
জি হুজুর আপনে ঠিক বলেছেন। সেই দিন আমার স্ত্রী বলল, আমি যেন ভাত রান্না করি, তার শরীর ভাল না। আমি গ্যাসের চুলায় ম্যাচ দিয়ে আগুন ধরাতে গেলে দেখি, আগুন ধপ করে জ্বলে উঠে। আমার হাতেও কিছুটা লেগেছে। হুজুর এখন বাঁচার উপায়?
হুজুর বললেন, তুমি কি বাঁচতে চাও?
জি হুজুর কেবলাজান, আমি বাঁচতে চাই।
মানত কর। আর আমি জীনের কবিরাজ কে জিজ্ঞাসা করি কত হাদিয়া নিবে? কারণ জীনেই জীন ছুটাতে পারে। লোহা দিয়ে লোহা কাটতে হয়।
হুজুর কেবলাজান, বাবা। আপনি তাই করুন।
হুজুর কেবলা আবার ধ্যানে বসে বলতে লাগলেন, জীন ভাই আমার গরীব লাদান মুরিদ, খুবই সহজ সরল মানুষ। এত টাকা দিতে পাড়বে না, জীন ভাই আমার দিকে চেয়ে আমার মুরিদ কে সাহায্য করুন। জীন ভাই, আপনার অনেক জীন আমার মুরিদ। কিন্তু আপনি আমার ভাই, তাই আপনার কাছে এই লাদান মুরিদের সুন্দরী স্ত্রীর ইজ্জত বাঁচান ভাই। আমার মুরিদের ইজ্জত, মানে আমার ইজ্জত।
কিছুক্ষণ পীর চুপ থেকে আবার বলতে লাগলেন, জি জীন ভাই পঞ্চাশ হাজার এক টাকা, একটা কালো খাসী আর এগারটা মোরগ, দুইটা গামছা, দুইটা শাড়ী, দুইটা লঙ্গি। আর এক সের খাঁটি ঘি আর এক সের সরিষার তেল আর ২০ কেজি জিলাপি। জি জীন ভাই, আমার মুরিদ পাক্কা জবানে সব দিতে রাজি হয়েছে।
ধ্যান থেকে চোখ খুলে বললেন, তোমারে আল্লাহয় রক্ষা করেছে। যে এত অল্প হাদিয়ায় রাজি করাতে পেরেছি। জিনিস পত্রের যে দাম বেড়েছে। যাও সন্ধ্যার মধ্যে সব নিয়ে এসো। বাদ মাগরিব বিশেষ জিকিরের মধ্য দিয়ে সেই জীনকে বিদায় দিব। আর শুন মূর্খ মুরিদ, সব জিনিস এক দামে কিনবা। জীন দামাদামির জিনিস পছন্দ করে না। বাজারে গিয়ে দেখবে আমার মুরিদ মনির মিয়া থেকে আমার কথা বলে সব কিনে আনবে। আমার কথা শুনলে দাম কম নিবে।
পীর কেবলাজান বাবাকে কদমবুসি করে ভদ্রলোক বিদায় নিয়ে যান। সন্ধ্যার আগেই কেবলাজানের মুরিদের দোকান থেকে সব জিনিসপত্র কিনেন। তাই নিয়ে পীর কেবলা বাবার কাছে আসেন। নগদ পঞ্চাশ হাজার এক টাকা পীর সাব ডান হাতে নিয়ে টাকাগুলো উপরে দিকে তুলে ধরে বলেন, হে জীন ভাই। এ আমার সচ্ছা পেয়ারা মুরিদ হে। উসকো পানা মিলনে চাহিয়ে। টাকা পীর কেবলা চুমা দিয়ে নিজ পকেটে রাখেন। ছাগল থেকে লুঙ্গি সব বুঝে নেন। তার পর মুরিদ কে এক বোতল পানি। সাতটা তাবিজ দিয়ে দেয়। তাবিজ জীনে ধরা স্ত্রীর গলায় একটা, বালিশে একটা, ঘরের দরজায় একটা, পুকুরে একটা, গাছে একটা, পানির কলসে একটা আর একটা স্বামীর ডান হাতে বাঁধতে হবে। একুশ দিনে জীন চলে যাবে।
স্বামী রাতে চুপ করে শুয়ে থাকেন। দেখেন, স্ত্রী ঘুমায়। না কোন আলো দেখা যায় না। স্ত্রী আর রাতে হাসে না। তাবিজ পড়ার পর স্ত্রী বেশ ভালই আছে। রাতে আর আলো আসে না। মুরিদ তো মহা খুশি। আসলেই পীর বাবা খুব কাজের।
মাস খানেক পরে একদিন আবার ঘুম ভেঙে যায় স্বামীর। দেখেন, স্ত্রী হাসতেছে মিট মিট করে, সেই আলো। ভয়ে মুরিদ লা ইলাহা ইল্লা আন্তা পড়তে লাগলেন। স্ত্রী আবার চুপ হয়ে ঘুমিয়ে গেল। আলো নেই।
খুব সকালে পীরের বাড়ির দিকে যাচ্ছেন এমন সময় তার ভাগনে সাইকোলজীস্ট এর সাথে দেখা। মামাকে দেখে সাইকোলজীস্ট বললেন, এত সকালে মামা কই যান?
আরে ভাগনে, তোমাকে বলে কি হবে? তুমি হলে পাগলের ডাক্তার।
আরে মামা, বলবেন তো কি হয়েছে?
আরে ভাগনে, আমি আগেই সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করতে চাই নাই। কানের কাছে এসো আস্তে করি বলি। তোমার মামীকে জীনে ধরেছে। আমার কেবলা বাবা পীর সাহেব মাস খানেক আগে তাবিজ দিয়েছিল। সেই তাবিজে মাস খানেক জীন ছিল না।
আরে মামা, সব কিছু খুলে বলুন, জীন ভুত একটা বিশ্বাস মাত্র। আছে বা নাই তার কোন প্রমাণ নাই। আজ পর্যন্ত কেউ দেখে নাই। এটা বিশ্বাসের ব্যাপার।
না ভাগনে, তুমি বললে তো হবে না। আমি নিজের চোখে দেখেছি।
মামা কি দেখেছেন খুলে বলেন।
তাহলে শোন ভাগনে, তোমার মামী রাতে একা একা হাসে। আমি ঘুমের মধ্যে থেকে টের পাই। আমি তার দিকে তাকালেই দেখি মুখের কাছে একটা আলো নিভে যায়। আর তোমার মামী তখন নাক ডাকে আর কিট মিট দাঁত কাটে আর মিট মিট হাসে।
ও এই কথা মামা!
আরে ভাগনে, তুমি এই কথা বলে হাসু দিয়ে উরিয়ে দিলে আর আমি ভয়ে শেষ। লক্ষ টাকা খরচ করে জীন দিয়ে জীন ছারাচ্ছি।
আরে মামা আপনি সরল মানুষ। সারাদিন পরিশ্রম করে বাসায় এসে ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু মামা এখন যুগটা হল ডিজিটাল। মামী হয়তো রাতে মোবাইল চালায়। আপনি ঘুমালে কারো সাথে হয়তো চ্যাট করে। ফেইসবুক চালায়।
কি বললে ভাগনে! তার তো কোন মোবাইল নাই।
মামা, থাকতে পারে আজকালের মেয়ে বড় ডিজিটাল। পীরের কাছে পরে যান। আজ রাতে পরীক্ষা করুন। জীন ভুত কিছুই না। আপনার ঘুম যদি এমন কিট মিট হাসিতে ভেঙে যায়। তখন বালিশের নিচে, বা খেতার নীচে, বা তোষকের নীচে একবার চেক করুন।
কিন্তু ভাগনে, পীর সাহেব তাবিজ যে দিল তখন তো আর দেখলাম না।
তখন হয়ত মামী বিষয়টা আপনে বুঝতে পরেছেন ভেবে কয়দিন চুপচাপ ছিল। আপনি মনে করেছেন জীন চলে গেছে। আবার আপনি নাক ডেকে ঘুমাছেন আর মামী আবার শুরু করেছে।
তাই নাকি ভাগনে! তুমি দেখি পীরের চেয়ে বড় পীর। আচ্ছা তাহলে আজ রাত দেখি।
আজ মুরিদ বাসায় এসে স্ত্রী কে বলছেন, শরীরটা ভাল না। খালি জ্বর জ্বর লাগছে। যথারীতি ঘুমিয়ে পড়েন।
মাঝ রাতে শুনেন, সেই কিট মিট হাসি, ফিস ফাস শব্দ। স্ত্রীর দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখেন, স্ত্রীর ঘুম, ধপ করে একটা আলো নিভে গেল। স্ত্রী দাঁত কিট মিট করছে। স্ত্রী গভীর ঘুমে কিট মিট হাসছে। মনে হয় রাতের বেলা বোবা ধরেছে।
স্বামী স্ত্রীর বালিশের নীচে হাত দেন। ওমা সত্যিই একটা মোবাইল ফোন।
স্বামী তার নিজ কানে ধরেন। অপর দিক থেকে বলছে, জান ঘুমিয়ে গেছ নাকি। হ্যালো কথা বল। জান কথা বলছ না কেন? নাকি তোমার জীন আবার জেগে উঠছে? হ্যালো জান কথা বল। আমার লক্ষ্মী সোনা কেন কথা বল না।
স্বামী খুব শান্ত হয়ে বললেন, হ্যা, আজ জীন জেগে উঠেছে। সকাল হতে দে।।