হিন্দু শিক্ষার্থীদের গরুর মাংস খাওয়ানোর অভিযোগে বিদ্যালয় ঘেরাও করে প্রতিবাদ
মো. রাশেদ খান মেনন (রাসেল), টাঙ্গাইল, বিশেষ প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে শিক্ষা সফরে নিয়ে হিন্দু শিক্ষার্থীদের গরুর মাংস খাওয়ানোর অভিযোগে বিদ্যালয় ঘেরাও করে প্রতিবাদ করেছে বিক্ষোব্দ শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২৮ জানুয়ারি) শিক্ষার্থীদের গরুর মাংস খাওয়ানোর ঘটনাটি প্রকাশ পেলে ক্ষুব্দ শিক্ষার্থীরা ক্লাশ বর্জন করে। পরে এলাকাবাসী প্রথমে বিদ্যালয় ঘেরাও করে প্রতিবাদ করে। পরে বিদ্যালয় বন্ধ করে দেয় তারা। এই ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জানা গেছে, উপজেলার ফলদা রামসুন্দর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের নিয়ে বার্ষিক বনভোজনের আয়োজন করে। গত শনিবার (২৬ জানুয়ারি) বিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা উঠিয়ে গাজীপুরের সাফারি পার্কে যায়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে হিন্দু ধর্মের ২২জন শিক্ষার্থীও ছিল। পিকনিকে দুপুরে খাওয়ার জন্য গরুর মাংসের আয়োজন করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেখানে হিন্দু শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা কোন খাবারের ব্যবস্থা ছিল না। এসময় হিন্দু শিক্ষার্থীরা খাওয়ার পর জানতে পারে তারা গরুর মাংস খেয়েছে। পরে বিষয়টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর ইকবালকে মাংসের বিষয়টি জানালে তিনি শিক্ষার্থীদের জানান একদিন খেলে কিছু হবে না। পিকনিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর ইকবালসহ অন্যান্য শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
হিন্দু শিক্ষার্থীরা জানান, পিকনিকে গাজীপুরের সাফারি পার্কে যাওয়ার জন্য ৩শ টাকা করে চাঁদা দিয়েছি। গরুর মাংসের কথা প্রধান শিক্ষক স্যারকে জানালে তিনি জানান, একদিন খেলে কিছু হবে না, খাবি না তবে আসলি কেন? পরে বিষয়টি আমাদের অভিভাবকদের অবহিত করি। এঘটনায় সোমবার প্রধান শিক্ষকের শাস্তি দাবী করে আমরা ক্লাশ বর্জন করেছি। এছাড়া এলাকার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে বিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়।
উপজেলা হিন্দু-বৈদ্য-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি সরন দত্ত জানান, পিকনিকের নামে হিন্দু শিক্ষার্থীদের গরুর মাংস খেতে দেয়া ঠিক হয়নি। প্রধান শিক্ষক হিন্দু শিক্ষার্থীদের আলাদা খাওয়ার ব্যবস্থা করেনি। এতে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার হিন্দু-মুসলিম সকলে বিদ্যালয় ঘেরাও করে এর প্রতিবাদ করেছে।
উপজেলার ফলদা রামসুন্দর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর ইকবালের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানান।
উপজেলার ফলদা রামসুন্দর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তাহেরুল ইসলাম তোতা জানান, বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) ইউএনও, ওসিসহ এলাকার লোকজন নিয়ে জরুরী মিটিং করবো। সেদিন এর একটি সুষ্ঠ সুরাহা করা হবে।
ভূঞাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ রাশিদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিদ্যালয় এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহীনুল ইসলাম জানান, প্রধান শিক্ষক হিন্দু শিক্ষার্থীদের গরুর মাংস খেতে দিতে পারেন না। তারপরও যদি এধরনের ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।