হোমিওপ্যাথিতে রোগ ও তার চিকিৎসা
হোমিওপ্যাথিতে রোগ ও তার চিকিৎসা
-আওলাদ হোসেন
(অর্গাননের আলোকে হোমিও রোগের চিকিৎসা দিতেহবে আর অর্গানন বুঝা জটিল ও কঠিন, দুর্বোধ্য)
মানুষের কি ধরাণা যে, হোমিও দোকানে গেলেই রোগের ওষুধ পাওয়া যায়, তেরী করাই থাকে? অবশ্যই না। রোগ ও ওষুধ দুটোই আবিষ্কার করতে হবে। আর এজন্যে প্রথমে রোগটিকে আবিষ্কার করতে হবে পরে ওষুধ অনুসন্ধান করতে হবে। অর্থাৎ রোগের একটি নাম দিতে হবে পরে ওষুধ দিতে হবে। কিন্তু ওষুধে কাজ হলো না। রোগটিকে আবিষ্কার করেন নাই। ২/৪টি কথা জিজ্ঞেস করেছেন বটে কিন্তু পূর্ণাঙ্গ রোগী লিপি নেই, জ্ঞানও নেই পাশ করেছেন কিভাবে কে জানে। কত রোগী কিভাবে চালিয়ে দেন কে জানে। (১) অভ্যন্তরমুখী আর-বহির্মুখী রোগ বৃদ্ধি জানতে হলে রোগী পর্যবেক্ষণ করে লক্ষণ আবিস্কার করতে হবে। কাজটি সহজ নয় ওষুধে কাজ হয়নি। যদি কাজ হোত ক্লিনিক উঠে যেত W.H.O নেড়ে চেড়ে বসত, বহুজাতিক কোম্পানির ব্যবসা উঠে যেত। কোটি কোটি টাকার প্রয়োজন হোত না। ডাক্তারী ব্যবসা ভাল যদি রোগীর ভালর জন্য হয়। রোগ আবিস্কার কঠিন কেন? ডা. হ্যানিম্যানের মূল বই পড়া নাই। আত্মা বা মন গরহফ থাকে কোথায়? অনুরূপ রোগ কষ্ট থাকে কোথায়? তার পর ওষুধ কাজ করে কোথায় ও কিভাবে করে? তাহলে সদৃশ কি? অদৃশ কি? এর মধ্যে আবার জীবনীশক্তি ঢুকে পড়েছে তাও বুঝতে হবে। Susceptibility রোগ প্রবণতা জানতে ও বুঝতে হবে। আমার মনে হয় ৫০% ডাক্তারি ছেড়ে বটতলার বোতল বা সালসা বিক্রি করবেন। অরাজকতায় দেশের মানুষ গরু মোটাতাজাকরনের ওষুধ মানুষকে খাওয়াবে নাতো কি করবে। অতএব বহুজাতিক কোম্পানির বিকল্প মোটাতাজা করণ সালসা অবশ্যই বিক্রি হবে যদি লাইসেন্স থাকে। অচির রোগে স্বচ্ছ সুগঠিত রোগের জন্য সদৃশ ওষুধের নির্বাচন কোন কঠিন কাজ নয় সবচেয়ে কষ্টের কাজ হলো রোগীলিপি রোগচিত্রের সঠিক প্রকৃতি আবিস্কার করা। (২) ১৫৩ নং সূত্রটিও খুবই সহজ। লক্ষণ আবিষ্কার করতে হবে, যেমন আকর্ষণীয় অসাধারণ, বিরল, বিশিষ্টপূর্ণ লক্ষণ সমূহকে বলা হয় গাছে ঝুলন্ত পাকা ফল। ১১৭ নং সূত্রে বলা হয়েছে রোগ সংঘঠিত হতে অদৃশ্য রোগশক্তি এবং ব্যক্তির ধাতগত বৈশিষ্টের অনুকুল পরিবেশ। যা জন্মে ও যেখানে তার পরিবেশ। কেউ গরমকাতর, কেউ শীতকাতর, কেউ উভয় কাতর। দু’রকম সাদৃশ্য আবশ্যক, এক রোগের সাধারণ লক্ষণ- নিদানগত যে অবস্থাটি আরোগ্য করতে হবে, দুই রোগের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণের সাথে যা ব্যাধিটিকে স্বতন্ত্র করে। এই সমস্ত তথ্য যে সমস্ত ডাক্তার এর লেখা থেকে নেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে ডা. হ্যানিম্যান-অর্গানন অব মেডিসিন, লেসার রাইটিং, ডা. কেন্ট. ডা. সি.হেরিং, ডা. ফ্যারিংটন, ডা. জে.বি. বেল, ডা. বরিক, ডা. ন্যাস তো আছেনই যারা অনেকের কাছেই পরিচিত এবং বাংলা অনুবাদও আছে। বিপদ হচ্ছে যারা মেটিরিয়া মেডিকা দিয়ে চিকিৎসা দেন এবং ভারতীয় বই পুস্তকের উপর একমাত্র নির্ভরশীল এবং হাজার হাজার বইএ ছেয়ে আছে। অর্গাননের বাংলাও আছে তবে পড়ে কয়জনে, বুঝে কয়জনে। ঢাকার ডাক্তার হাবিবুর রহমান ভালই লিখেন, হোমিও চেতনায় পাওয়া যায় ডা. কেন্ট এর দর্শন বইটি থেকে নেয়া। যে সমস্ত জ্ঞানীগুণী হোমিওপ্যাথির উজ্জ্বল আবির্ভাব ঘটেছিল হঠাৎ তা হারিয়ে গেল কিভাবে তা এখন গবেষনার বিষয়। শুনেছি আমেরিকা, ইউরোপ থেকে বিদায় অথবা অন্য কিছু ভিন্ন মাত্রা, তবে অর্গানন বাদ দিলে হোমিওপ্যাথি বাদ, আমাদের দেশে অর্গানন ভিত্তিক শিক্ষা দেয়া হয় কিনা সন্দেহ। আমার উদ্দেশ্য ছিল এই বইটি কিসের কথা বলে তা জানা, তা অনেক কষ্ট করে আক্ষরিক অর্থে কিছু জেনেছি করটিয়ার ডা. রেজাউল করিমের নিকট কিন্তু প্রয়োগ শিখতে পারিনি। অন্য কোন অলৌকিক ব্যাপার যদি না ঘটে আমি নতুন প্রজন্মের প্রবেশিকাদের উপদেশ দেব হোমিওপ্যাথি শিখতে হলে আগে অর্গানন অব মেডিসিন বইটি বাংলায় ও আছে পড়ে নিতে হবে অন্যথায় কোন দিন হোমিওপ্যাথির টিকিও খুঁজে পাবে না। প্রকৃত হোমিওপ্যাথের খোঁজ পাবেন না। অতএব দৃঢ়তার সংগে বলছি এনসি ঘোষ হাতে নেয়ার আগে অর্গানন অব মেডিসিন বইটি পড়ে নিতে হবে যদিও তাতে ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে আর থাকবে না তবুও অসহায় সরকারকে সত্য কথাটি ফাঁস করে দেয়ার জন্য নতুন প্রজন্ম ঘুণে ধরাদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য জোড় গলায় বলতে পারবে আমরা ডা. হ্যানিম্যান চাই। তার চামচা চাই না। এইখানে একটি কথা বলা হয়েছে ১৫৩ নং সূত্র খুবই সহজ কিন্তু Mastered the idea of the Paragraph এখানে চরিত্রগত বৈশিষ্ট এবং রোগলক্ষণ সমূহের মান বিবেচনা করে। যেমন স্থানীয় লক্ষণগুলো হ্রাস-বৃদ্ধি দ্বারা বিশেষিত হতে হয়। তাপে বৃদ্ধি অথচ আর্সেনিকের রোগী তাপ পছন্দ করে ও উপশম হয় এর বিপরীত হলে আর্সেনিক দেয়া যাবে না। অনেকেই প্রশ্ন করবেন হোমিওপ্যাথিতে রোগ কি? এলোপ্যাথিতে রোগ কি আলাদা? প্রকৃত প্রস্তাবে আমাদের জীবনীশক্তি রোগকে পছন্দসই স্থানে প্রকাশ করে এবং গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় লক্ষণ হিসাবে গণ্য হয় (সূত্রঃ-১৯৩)। No drug is capable of curing a mind state homeopathically unless it is Capable of Producing one like it এটাই হোমিওপ্যাথির ব্যর্থতা ও স্বার্থকতা প্রকাশ পায়। এখানেই ওস্তাদ, এখানেই সকল সফলতা জয় পরাজয় জোড় করে ৯ কে ৬ এবং ৬কে ৯ বানানো গ্রাম্য ভাষায় জোড় করে শিয়াল বাহাতি (ভূয়াপুর) অঞ্চল। আমরা সদৃশ করতে গিয়ে অসদৃশ করি অথবা ভুল করি অথবা অপূর্নাঙ্গ করি অযোগ্যতা অথবা অপারগতা এর কারণে এটাই হোমিওপ্যাথি যে কোন রোগীকে একসাথে মাত্র একটি ওষুধ সূক্ষ্মমাত্রায় দিতে হবে। এখানে স্বতন্ত্র করনের কথা বলা হয়েছে, সূত্র ৮৩ থেকে ১০৪ সূত্র পর্যন্ত। জীবনীশক্তি সম্পূর্ণ রোগমুক্ত ও স্বাধীন হয় এবং সাবেক অবস্থা প্রাপ্ত হয়। প্রাণীদেহে কেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে না অর্থাৎ সুস্থ্য দেহে ক্রিয়া যথার্থভাবে প্রকাশিত হয় অসুস্থ্য শরীরে চরিত্রগত লক্ষণ সাদৃশ্যে রোগ আরোগ্য করে। (৩) রোগীর সুস্থ্য অঙ্গসমূহে কোন লক্ষণ উৎপাদন করে না। আরেকটি সুন্দর কথা সমরেখা ও সমকোন বিশিষ্ট দুটি ত্রিভূজ পরস্পর যে ভাবে মিলে যায় হোমিওপ্যাথিতে অভিলাক্ষনিকভাবে রোগ ও ওষুধ সেভাবে মিলে যায় না। তাতে আরোগ্য বাঁধা সৃষ্টি করে না। নতুনরা যদি এভাবে শিখতে পারে (ছাত্র/ছাত্রী) তাহলে বৃদ্ধরা বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে না। আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের সময় বলা হত অর্গানন তো বুঝবেন না মেটিরিয়া মেডিকা পড়লেই হবে। হয়েছেও তাই ওস্তাদ মারা সাগরিদ, হোমিও শেষ তবে ক্যান্সার সারাতে পারে। এখন তিনি অর্গানন বিশারদ অর্গাননের প্রকৃত অনুবাদক। সর্বাধিক উপযুক্ত ওষুধ সূত্র-১৬৯ প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম ঔষধটি প্রয়োগের পর রোগীর সামগ্রিক অবস্থা পুনরায় পরীক্ষা করে যে পর্যবেক্ষনের ভিত্তিতে পরের সদৃশ্য ঔষধটি দিতে হবে। এক সাথে উভয় ঔষধ ব্যবহার করাতো কোন ভাবেই সমর্থন করা যায় না। সাধারণ জ্ঞানের অধিকারীরা হয়ত বুঝবে না, কিন্তু ১৮১ নং সূত্রে বলা হয়েছে, এ লক্ষণগুলো ঔষধ কর্তৃক সৃষ্ট নয়। এরা উক্ত রোগেরই লক্ষণ। ঔষধ কর্তৃক শুধু হাজিরকৃত। কয়জনের জান্যে ঔষধ নির্দিষ্ট উত্তেজক কারণ হিসেবে ক্রিয়া করতে সক্ষম। অর্থাৎ রোগ ছিল না, নতুন রোগ হোল। এটি তার নৈসর্গিক ক্ষমতা। ফলে সদ্য প্রয়োগকৃত পূর্ববর্তী ঔষধ বিবেচনায় রাখতে হয় এবং রোগে নতুন প্রকাশিত লক্ষণগুলো খুব সতর্কতার সাথে বিশ্লেষন করে যথার্থ সদৃশ ঔষধ নির্বাচন করতে হয়। এটাই সফলতার উপায় যেমন সালফার প্রয়োগের পর ক্যালকেরিয়া কার্ব লক্ষণ প্রকাশিত হয়। হোমিও ঔষধের সব লক্সণ কোন রোগীতে থাকার আবশ্যকতা নাই কিন্তু রোগের চরিত্রগত সকল লক্ষণ প্রদত্ত ঔষধের লক্ষণ তালিকায় থাকতে হবে। অর্থাৎ আমরা সদৃশ্য কেন মিলাই এবং কিসের সংগে মিলাই একটি রোগের সংগে অপরটি ওষুধের সংগে। এটি ঞধঁঃড়ষড়মু হয়ে যেত যদি ব্যক্তি স্বাতন্ত্র করণ পৃথক না হোত। ২+২=৪ হবেই কিন্তু রোগ ২ নাও হতে পারে বা ওষুধ ২ নাও হতে পারে+আনুষাঙ্গিক বিষয়াদি যা বলা হয়েছে আলোচনায় প্রাধন্য বেশি পাবে। সূত্র-২৬০-২৬৩ পথ্যাদিটির রোগ ও অচির রোগে গুরুত্বপূর্ণ দিক যার বিষদ বিবরণ জেনে নিতে হবে। তবে ডা. হ্যানিম্যানের ক্ষতি আমরা যেভাবে করছি তা উল্লেখ করার মত। ১। সুপ্ত সোরা ও বিকশিত সোরা কি ছাত্রাবস্থায় আমি শিখিনি যদিও চিররোগ গ্রন্থ পাঠ্য ছিল্ ২। ডাক্তার নিজেই বিশ্বাস করতে পারে না যে এত সূক্ষ্ম মাত্রা ও সূক্ষ্ম শক্তিতে ওষুধ কাজ করতে পারে তা সদৃশ বিধান মতে ওষুধ নির্বাচন করতে ভুল করে ৪ ওষুধ কার্যকর হতে যে সময় দেয়া প্রয়োজন তা রোগী ও ডাক্তার উভয়েই দৈর্য ধারণ করতে পারে না। শেষের কথাটির প্রতি আমার পর্যবেক্ষণ এই যে, ডাক্তার যদি ১ এর হয় আবার সেই ১ এর গণতন্ত্রের হয় কথাটি মনে পড়ে তাহলে রোগী নির্ভয়ে অপেক্ষা করতে পারে এবং করবে কিন্তু যদি ২ নম্বর হয় তাহলে জোড় করে খাওয়ালে রোগীর সমূহ ক্ষতি হবে এবং সময় হাতছাড়া হয়ে যাবে সে গ্যারান্টি থেকে মুক্তি দেবে কে? তাহলে দেখা যায় অর্গাননের বিরাট ব্যাপক, বিস্তৃত পাঠ থেকে জানা যায় রোগ অদৃশ্য ওষুধ অদৃশ্য যার উপর কাজ করে জীবনী শক্তি অদৃশ্য যদি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন তা হলে ডাক্তার হলেন আর চিকিৎসা আপনার দক্ষতা,প্রয়োগ জ্ঞান ইত্যাদি শুধু একটি শর্ত যে সমস্ত বই কলেজে বর্তমানে ইন্টারনেটে শোভা পাচ্ছে তা সাজানো রয়েছে কার জন্যে উত্তরটি কি হবে আপনিই ভাল জানেন। ডা. হ্যানিম্যান ঠেঙ্গানী খেতেন আবিস্কারের জন্য, এখন আপনি ঠেঙ্গানী খাবেন স্বজাতির হাতে,কারণ অপরিবর্তিত। স্কুল জীবনের আলোকে হোমিওতে করটিয়া গিয়ে বুঝতে পালাম ভাল শিক্ষককে আর ভাল ছাত্র কে? হোমিও এর এক নিদর্শন সব মানুষই এক কিন্তু কোন মানুষই কারো মতো নয়। সবই স্বতন্ত্র অলৌকিক।
- প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। কাগজ২৪-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য কাগজ২৪ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।
কাগজ টুয়েন্টিফোর বিডি ডটকম এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।