৩৬ ঘণ্টায়ও অভিযুক্ত শাবাবকে গ্রেফতার ও গাড়ি জব্দে অগ্রগতি নেই
অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
ঢাকার মহাখালীর ফ্লাইওভারে গাড়িচাপায় পথচারী সেলিম ব্যাপারী নিহত হওয়ার ঘটনার পর ৩৬ ঘণ্টা পার হলেও অভিযুক্ত শাবাব চৌধুরীকে গ্রেফতার ও ঘাতক গাড়িটি জব্দে কোনো অগ্রগতি নেই পুলিশের।
শাবাব নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করীম চৌধুরী ও কবিরহাট উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুন নাহার শিউলির একমাত্র ছেলে। তিনি রাজধানীতেই অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় কাফরুল থানার ওসি শিকদার মোহাম্মদ শামিম হোসেন বলেন, সেলিম ব্যাপারী নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। তদন্ত চলছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযানও অব্যাহত রয়েছে।
মঙ্গলবার রাত ১০টায় রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভারে সেলিম ব্যাপারীকে চাপা দেয় ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৭৬৫৫ নম্বর গাড়িটি। এটি শাবারের মা শিউলির নামে নিবন্ধিত।
সেলিমকে চাপা দেয়ার পর গাড়িটি নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে ন্যাম ফ্ল্যাটে চলে যান শাবাব। এর পর থেকে গাড়িটি সেখানেই রয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে গাড়িটি জব্দ করার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি শিকদার মোহাম্মদ শামিম হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেন, তারা ঘাতক গাড়িটি খুঁজছেন। এখনও জব্দ করতে পারেননি।
নিহত সেলিম ব্যাপারীর (৪৮) গ্রামের বাড়ি বরিশালে। তিনি পরিবার নিয়ে উত্তরখান এলাকায় থাকতেন।
মঙ্গলবার রাতে তিনি মহাখালী ফ্লাইওভারে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ওই সময় এমপিপুত্র শাবাবের গাড়ির চাপায় নিহত হন তিনি।
ঘটনার তিন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, সেলিমের পায়ের ওপর গাড়ি তুলে দেয়ার পর তিনি বাম্পার ধরে ফেলেন। এর পর গাড়িটির চালক শাবাব ব্যাক গিয়ারে এসে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। গতি বাড়িয়ে তিনি আবারও সামনের দিকে এগিয়ে যান। এতে সেলিম ছিটকে ফ্লাইওভারের গার্ডারে গিয়ে পড়েন। মুহূর্তেই মাথা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় তার। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঘটনার পর তিনিসহ কয়েকজন মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারে করে ওই গাড়ির পিছু নেন। গাড়িটি ন্যাম ভবনের সামনে গিয়ে থামে।
এ সময় এমপিপুত্র শাবাবের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। ঘটনার কথা কাউকে জানালে প্রাণনাশের হুমকিও দেন শাবাব। তিনি মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন বলে মনে হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে একরামুলের স্ত্রী কামরুন নাহার শিউলি সাংবাদিকদের কাছে অভিযুক্ত গাড়ির মালিকানার বিষয়টি স্বীকার করেন।
তবে তার দাবি, গাড়িটি চালাচ্ছিলেন নুরুল আলম নামে তাদের গাড়িচালক। উত্তরায় এক বান্ধবীর কাছে একটি পার্সেল পাঠিয়েছিলেন তিনি। সেটি নিয়ে উত্তরা যাচ্ছিলেন নুরুল আলম।
নুরুল আলম কোথায় জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ওই গাড়িচালক এখন কোথায় তিনি তা জানেন না। চালক নুরুল আলমকে তারাও খুঁজছেন।
এদিকে ঘটনার বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করলে একরামুল করিম চৌধুরী বুধবার দুপুরে বলেন, গাড়িটি আমাদেরই। কিন্তু তবে আমার ছেলে দুর্ঘটনার সময় গাড়িটি চালাচ্ছিল না। আমাদের পাঁচজন গাড়িচালক আছেন। তাদের মধ্যে কেউ একজন গাড়িটি চালাচ্ছিল। আমি এখন নোয়াখালীতে অবস্থান করছি, তাই বলতে পারছি না গাড়িটি কে চালাচ্ছিল।
পরে শাবাবই গাড়িটি চালাচ্ছিল বলে সেলিম ব্যাপারীর স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করলে এ ব্যাপারে জানতে এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি মোবাইলে খুদেবার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।
কাফরুল থানা পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানান, ঘটনার পর তিন প্রত্যক্ষদর্শী থানায় এসে ঘটনার বর্ণনা দেন। তাদের বর্ণনায় পুরো ঘটনার চিত্র উঠে আসে। গাড়িতে চালক ছাড়া তারা আর কাউকে দেখতে পাননি। গাড়ির চালক ছিল বেপরোয়া। ঘটনার পর গাড়ি নিয়ে চালক পালিয়ে যান। এ ঘটনার পর রাতেই অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা করেছেন নিহতের জামাতা আরিফুল ইসলাম ভুঁইয়া।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিহত সেলিম বনানী সেতু ভবনসংলগ্ন ফ্লাইওভার পার হচ্ছিলেন। এ সময় বেপরোয়া গতিতে আসা একটি প্রাইভেটকার তার পায়ের ওপর তুলে দেয়। এ সময় গাড়ির চাপা খেয়ে সেলিম গাড়ির বাম্পার চেপে ধরেন। তখন গাড়ি ব্যাক গিয়ারে দিয়ে আবারও সেলিমকে চাপা দেয় চালক।
এ সময় ফ্লাইওভারের গার্ডারে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যান সেলিম। গার্ডারের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মাথা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় সেলিমের। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
চালকের পরনে ছিল এক রঙের শার্ট ও কালো প্যান্ট। মোটরসাইকেলে করে ওই গাড়ির পিছু নিলে সেটি ন্যাম ভবনের সামনে গিয়ে থামে। ওই গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে শাবাব চৌধুরী।
সেখানে তার সঙ্গে আমাদের প্রচণ্ড বাকবিতণ্ডা হয়। ঘটনার কথা কাউকে জানালে তিনি আমাদের নানাভাবে হুমকিও দেন।
সেলিম ব্যাপারীর জামাতা আরিফুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, আমরা জানতে পেরেছি ওই গাড়ির চালক ছিলেন নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে শাবাব চৌধুরী।
সেলিম ব্যাপারীর মেয়ে সাদিয়া আক্তার তামান্না বলেন, বাবা মহাখালীতে একটি ডেভেলপার কোম্পানির এমডির গাড়িচালক ছিলেন। ওই এমডি নাখালপাড়া এলাকায় থাকেন। এমডির বাসায় গাড়ি রেখে আমার বাসায় আসার কথা ছিল বাবার। রাত সাড়ে ৯টার দিকে মোবাইল ফোনে শেষবারের মতো বাবার সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল।
মোবাইল ফোনে বাবা আমাকে বলেন, ডিউটি শেষ করে গাড়ি জমা দিয়েছি। গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি, তোমার বাসায় যাব।
তিনি বলেন, মাকেও ফোন করে আমার বাসায় আসার কথা জানিয়েছিলেন।
আরিফুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, রাত ১০টার দিকে মোবাইল ফোনে কল করে কে যেন জানিয়েছে, আমার শ্বশুর দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, এমপি একরামুল করিমের পরিবারের পক্ষ থেকে সমঝোতার জন্য নিহত সেলিম ব্যাপারীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। নিহতের পরিবারকে এ বিষয়ে অভিযোগ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
এর আগে ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে প্রাডো গাড়ি থেকে তার পিস্তল দিয়ে চার-পাঁচটি গুলি ছোড়ে।
এতে রিকশাচালক আবদুল হাকিম ও দৈনিক জনকণ্ঠের অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী আহত হন। হাকিম ১৫ এপ্রিল ও ইয়াকুব ২৩ এপ্রিল মারা যান। উৎস-যুগান্তর।