ঘাটাইলে অগ্নিকান্ডে ওষুধ ব্যবসায়ী স্বপ্ন পুড়ে ছাই
মোঃ সবুজ সরকার সৌরভ, ঘাটাইল(টাঙ্গাইল)প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ১ নং দেউলাবাড়ি ইউনিয়নের চৈথট্র গ্রামের মোখলেছ নামে এক ওষুধ ব্যবসায়ী স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়েগেছে। এই ঘটনায় একই মার্কেটের আরও দুইটি দোকানের আংশিক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। খুঁজ নিয়ে জানা যায় অনেক কষ্ট করে পরিবারের শেষ সম্বল টুকু বিক্রি করে, বিভিন্ন এনজিও থেকে প্রায় তিন লক্ষ টাকা উত্তোলন করে এবং বেশ কয়েকটি ওষুধ কোম্পানীর নিকট থেকে মাসিক বাকীতে ওষুধ নিয়ে মাস ছয়েক আগে একটি নতুন দোকান সাজিয়ে বসেছিলেন চৈথট্র হাই স্কুল সংলগ্ন তেমোড়া বাজারে। বেশ ভালই চলছিল তার দোকান।দোকানে যা আয় হতো তাই দিয়ে চলতো তার ৬ সদস্যর সংসার। কিন্তু ভাগ্যর নির্মম পরিহাস আর বিধি বাম হওয়ার কারণে নিয়তির কাছে অসহায় আত্ন সর্মারপন এই হত দরিদ্র যুবকের। হঠাৎ বৈদূতিক শর্ট সার্কিট অথবা কয়েলের আগুন থেকে আগুন লেগে তার পুরো ঘরের ওষুধ সহ সকল ফার্নিচার পুড়ে একেবারে ছাই হয়ে গেছে। সেই সাথে ক্ষতি গ্রস্হ হয়েছে তার সাজানো গুছানো স্বপ্নের দোকানটিরও। একটি ওষুধের বড়ি কিংম্বা ক্যাপসুলও অবশিষ্ট নেই। সারা রাত ধরে পুড়তে থাকা ওষুধ ও ফার্নিচারের পোড়া গন্ধ চার দিকে ছড়িয়ে পড়লে শেষ রাতে সংবাদ শুনে বাজারে ছুটে আসে ব্যবসায়ী মোখলেছ। এসেই দেখেন তিল তিল করে জোগাড় করা সঞ্চয় দিয়ে গড়া তার স্বপ্ন মুহুর্তের মাঝে পুড়ে ছাই হয়েগেছে। সেই সাথে তার কপালটাও পুড়ে ছাই হয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায় মাত্র এক মাস আগে নতুন বিয়ে করে ওষুধের দোকান দিয়ে বসেছিলেন মোখলেছ। দুই ভাই, এক বোন বৃদ্ধ বাবা, মা ও নব- বিবাহিতা স্ত্রী নিয়ে সাজানো গোছানো ছিল মোখলেছের সংসার। দোকানটিই ছিল তার এক মাত্র আয়ের উৎস। এখান থেকে সারা দিনে যে আয় হতো তাই দিয়ে চলতো তাদের সংসার। হত দরিদ্র পরিবারে বেড়ে উঠা মোখলেছ অনেক কষ্টে করে গড়ে তুলেছিলেন তার এই ওষুধের ফার্মেসী। কিন্তু সব কিছু হারিয়ে বাক রোদ্ধ হয়ে পড়েছেন তিনি। নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থও নেই তার। বিভিন্ন এনজিও থেকে টাকা উত্তোলন করে দোকানে ওষুধ তুলেছিলেন এবং বেশ কয়েকটি ওষুধ কোম্পানীর নিকট থেকে মাসিক বাকীতে ওষুধ উঠিয়ে ছিলেন। এখন সে পড়েছেন উভয় সংকটে।এক দিকে এনজিওর কিস্তির টাকার চাপ অপর দিকে ওষুধ কোম্পানীর টাকার চাপে নিঃশ্ব হয়ে জীবনের আশা ছেড়ে দিয়ে কখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে আবার কখনো উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে একটু সরকারী সাহায্য কিংম্বা সহযোগিতার আশায় পাগলের মতো ছুটা ছুটি করছেন।
এ বিষয়ে জানতে মোখলেছের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার আর বাঁচার কোন পথ খুলা নেই। প্রায় ৪/৫লক্ষ টাকা ঋন করে দোকানটি দিয়েছিলাম পরিবার পরিজন নিয়ে দু- বেলা দু- মুঠো ডাল ভাত খাওয়ার আশায়। ঘরে বৃদ্ধ মা, বাবা, ভাই, বোন ও স্ত্রী রয়েছেন। আমার একার উপার্জনেই চলতো অভাবের সংসার। আমি সারা দিন যা রোজগাড় করতাম তাই দিয়ে বাজার করে সংসার চালাতাম। আজ ৪ দিন যাবত আমার পরিবারের লোকগুলো অর্ধহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন বলতে বলতেই হাউ মাও করে কেঁদে উঠেন এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
এ ব্যাপারে স্হানীয় লোকজন, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার বাবলু মিয়ার সাথে কথা বলে জানা যায়, ছেলেটি অনেক কষ্ট করে বিভিন্ন এনজিও এবং বিভিন্ন কোম্পানীর কাছ থেকে ওষুধ বাকী নিয়ে মাস ছয়েক আগে দোকানটি দিয়েছিলেন। মাত্র কয়েক দিন হয় বিয়েও করেছে ছেলেটা, কিন্তু কোথা থেকে কি হয়েগেল বুঝতে পারছিনা।
এ ব্যাপারে দেউলাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আমি সংবাদ পেয়ে সাথে সাথে ঘটনা স্হলে গিয়েছিলাম এবং পরিষদ থেকে সরকারী সহযোগিতা পাওয়ার ব্যাপারে প্রত্যায়ন পত্রও দিয়েছি। আসলে ছেলেটি খুবই দরিদ্র ও অসহায়। সরকারের কাছে ছেলেটিকে আর্থিক সহযোগিতা করার জন্য জোড় দাবি জানাই।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, ছেলেটি আমার কাছেও এসেছিল। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নিদ্দিষ্ট ফর্মপুরণ করে সমাজসেবা মন্ত্রনালয়ে পাঠানোর জন্য ও আর্থিক সহযোগিতা করার জন্য উপজেলা সমাজ সেবা অফিসারকে অবহিত করা হয়েছে।আশা করি ক্ষতিপুরণের বিষয়ে সরকার এটি নিশ্চই বিবেচনা করবে।