সেলিনা জাহান প্রিয়ার গল্পঃ- অন্তরে রেখেছি (প্রথম খণ্ড)
অন্তরে রেখেছি
————–সেলিনা জাহান প্রিয়া
আসিফ রাতে দেখা হবে পার্টিতে। একটা লাল টি শার্ট পড়ে এসো। আজ তোমাকে এক জনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব। সারমিন আপুর সাথে।
আসিফ বলল দেখ লাইজু তুমি জান আমার লাল টি শার্ট নাই। আর এখন কিনতে পারব না।
লাইজু বলল আচ্ছা তুমি ঠিকানা মতো এসে গেইটের সামনে থেকে ফোন দিও। রাখি আমি একটু পার্লারে যাব।
আসিফ ফকিরা পুলের একটা ম্যাসে থাকে। খুবই সাধারন একটা ছেলে। লাইজুর সাথে পরিচয় হয় এক দিন বৃষ্টির সময়। লাইজু রিক্সা থেকে পড়ে যায়। তখন সবাই ছবি তুলা নিয়ে ব্যস্ত। রাজারবাগ তখন ফ্লাই ওভার নির্মাণ হচ্ছিল। সেই কাদা পানিতে কেউ তাকে উদ্ধার করতে যায় নাই। তখন আসিফ গিয়েছিল। সেই খানে কাছেই ইসলামি ব্যাংক হাসপাতাল। সেই দিন সে লাইজুকে অনেক সাহায্য করেছে। আসিফের সাথে সেই থেকে পরিচয়। লাইজু খুব অবাক হয় আসিফের কোন মোবাইল ফোন নেই। লাইজু বলে তাহলে আপনাকে কোথায় পাব। আচ্ছা আমি যে ব্যাথা পেয়েছি তা সামান্য। এখন চলুন আমার সাথে একটু কাজ আছে। আসিফ বলে আপু আজ বিদায়। লাইজু বলে এটা কেমন কথা বিদায়। আপনাকে খুব ভাল লেগেছে। দেখুন আমার জামা কাপরের কি অবস্থা। একটু পরিষ্কার করলাম পানি দিয়ে। আপনার জুতা প্যান্টে কাদা লেগে নষ্ট হয়ে গেছে। এই সব তো আমাকে বাচাতে এসে। আসিফ বলল আপু কিছু হবে না। সামনেই আমার মেস। আমি বদলে নিব। কিন্তু লাইজু কোন কথা ই শুনে না। বলল চলুন শান্তি নগরের ভিতর দিয়ে টুইন টাওয়ারে। আর ভাল করে পা ধুয়ে নিল।
রিক্সায় উঠে লাইজু বলল আমার নাম লাইজু। আপনার নাম?
——– আপু আমি আসিফ। বাড়ি নেত্রকোনা জেলায়। তবে এখন ময়মনসিংহ বাবা মা থাকে। আমি ঢাকা একটা চাকুরী চেষ্টা করছি। লাইজু বলল তাই তো আপনি উদ্ধার করতে গেলেন। ঢাকার মানুষ সব সাংবাদিক হয়ে গেছে। দেখেন না আমি পড়ে গেছি আর তারা ছবি তুলছে। কেন তুলছে জানেন। আসিফ বলল না। আরে সবাই ফেইস বুকে দিয়ে লাইক কামাবে। লাইকের গুষ্ঠি কিলাই। লাইক দিয়া কি টাকা হয়। ফালতু যত সব। আচ্ছা আসিফ কি চাকুরী খুঁজছেন। লিখা পড়া কত টুকু?
আসিফ বলল তেমন না। জাতিয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি, এ পাস করেছি।
————- কম্পিউটার জানেন?
————— না।
————– আচ্ছা ভাল। আজ আমার পাল্লায় পড়েছেন। যে খানে যাবার কথা যাওয়া হল না । মার্কেটে যাব ড্রেস কিনে বদলাবো। পার্লারে যাব। তার পড় দেখব অন্য কি করা যায়। আপনার হাতে তো কোন কাজ নেই।
——————– না। তেমন কোন কাজ নেই।
———————- ভাল। দারুন হল। বেকার মানুষ আমার খুব পছন্দ।
আসিফ মেয়েটার কোন কিছুই বুঝতে পারছে না। রিক্সা টুইন টাওয়ারের সামনে আসতেই লাইজু বলল নামুন। রিক্সা থেকে নেমে একটা ড্রেসের দোকানে গেল। বডির মাপ বলতেই দোকানদার কিছু ড্রেস বের করে দিল। ট্রায়েল রুমে ঢুকে চেঞ্জ করে আসলো। একটা ব্যাগে কাদা মাখা জামা গুলো ভরে আসিফ কে বলল একটু রাখুন। এবার আসিফ জুতার দোকানে চলুন। জুতা বদলালো। পুরাতন জুতার ব্যাগটা আসিফের হাতে দিল। কয়েক বার নিজেকে ভাল করে দেখল। ব্যাগ থেকে মেকাপ বক্স থেকে আয়না বের করে চুল চোখ মুখ ভাল করে দেখে নিল। এবার একটা হাসি দিয়ে বলল এই যে মিস্টার আসিফ দেখুন তো আমাকে ভাল লাগছে না।
আফিস বলল আপু ভাল লাগছে।
—————- লাইজু বলল চলুন আপানার জন্য প্যান্ট জুতা আর টি শার্ট কিনি।
—————— আপু আমার লাগবে না।
——————- আরে মিয়া থামুন। বেশি কথা বলেন।
এই বলে আসিফ কে প্যান্ট টি শার্ট আর জুতা কিনে দিল। খুব অল্প সময়ে আসিফ অবাক হচ্ছে। খুব একটু পাগলামি আছে মেয়েটার মাঝে। লাইজু বলল মাত্র ২৫০০ টাকা খরচ করলাম আপনার জন্য। চাকুরী পেয়ে ফেরত দিবেন। আর একটা মোবাইল মাত্র দেড় হাজার টাকা সিম সহ আসিফের হাতে দিয়ে বলল–এটা আমার নাম্বার। আসিফ যেন আসমান থেকে পড়লো। একটা রিক্সা নিয়ে মেয়েটা বলল মগবাজার যাবেন। যাওয়ার সময় আসিফের হাতের ব্যাগ গুলো নিয়ে বলল রাত ১০ টায় কল দিবে। থ্যাংকস টু ডে। আজ বিদায়।
আসিফ তার চলে যাওয়া দেখল। আর ভাবতে লাগলো। জীবন মনে হয় এমনি হয়।
মেয়েটা আসলেই পাগল। আমরা হলে একটা থ্যাংকস দিয়ে বিদায় নিয়ে নিতাম।
ভাবতে ভাবতে দেখে মেয়েটা রিক্সা ঘুরিয়ে আবার আসিফ কে ডাক দিল। আসিফ কে বলল এই খানে পাঁচশত টাকা আছে দুপুরে খাবেন। আমি তো ভুলেই গেছি, তাছাড়া দুপুরে আমার দাওয়াত আছে। আসি বাই টেক কেয়ার। আসিফ মনে মনে বলল আজব মেয়ে মানুষ। জিবনে আজ প্রথম দেখলাম।
আসিফের টাকা টা আজ খুব উপকারে দিল। রাতে কম পক্ষে ম্যাসে তিন শত টাকা দেয়া যাবে। যাই হউক। আসিফ তার এক মামার বন্ধুর কাছে গেল। মামার বন্ধু বলল বাবা মাস তিনেক পড়ে যোগাযোগ কর। ম্যাসে এসে খাবারের বিল দেয় আসিফ। রাতের খাবার শেষ করে বিছানায় বসল। এমন সময় ফোন বেজে উঠল। ম্যাসের সবাই অবাক কারন আসিফ ঢাকা ছয় মাস হল। সবার কাছে ফোন চেয়ে পাগল করত।
আসিফের ভাললাগা ডলির বিয়ে হয়ে যাওয়ায় গত মাস থেকে আর কারো ফোন নেয় না। আসিফ একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস নিয়ে ফোন রিসিভ করে
———————————— হ্যালো আসিফ। খুব মিস করছি তোমাকে।
মাকে বললাম তোমার কথা। মা থ্যাংকস দিয়েছে তোমাকে। বল কেমন আছ।
———————————– জি আপু ভাল আছি,
———————————– কি আপু আপু কর। আমি কি বুড়ি নাকি। আমাকে তুমি করে বলবে। আমি লাইজু। আচ্ছা শুন আমি যেই জন্য ফোন দিলাম।
————————————- হ্যা বল কেন ফোন দিলে।
————————————- আমার মায়ের একটা সমস্যা। আমার মা সিলেট যাবে। সাথে আব্বু যাবে। অফিস থেকে একটা ছেলে যাবার কথা ছিল। সে যেতে পারবে না কারন তার ওয়াইফ এর ডেলিভারি। আমি আম্মু কে বলেছি। একটা ছেলে দেয়া যাবে। তার জন্য প্রতিদিন থাকা খাওয়া বাদে দু হাজার টাকা করে দিতে হবে। জাস্ট টুরিস্ট গাইড হিসাবে। আম্মুর আব্বুর সাথে ড্রাইভার থাকবে কিন্তু তার পড় ও তাদের সাথে একজন দরকার। তাহলে তুমি যাচ্ছ। কেমন। আমি হ্যা বলে দিলাম।
———————————— আসিফ বলল ঠিক আছে। কিন্তু টাকা নেয়া ঠিক হবে কি?
—————————————– তুমি কি দাদা হাতেম তাই না কি সুপার ম্যান যে ফ্রি কাজ করবে। একটা কথা মনে রেখ যারা ফ্রি কাজ করে তারা হয়তো শয়তান না মাতাল। ভাল মানুষের সময়ের মুল্য আছে। তাহলে সময় হল কাল সকাল নয়টায় কোথায় আসবে আমি আমার বাসার ঠিকানা এস এম এস করে দিচ্ছি।
—————————————— আচ্ছা ওকে দাও।
—————————————— দেখলে কাজ পেয়ে গেলে আসিফ। কাল দেখা হবে। আরেকটা কথা তোমার সাথে কি ভাবে পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে বলবে। ঠিক মনে নাই।
—————————————— আচ্ছা ওকে।
—————————————— ভাল থাক আসিফ। দেখা হবে।
ম্যাসের সবাই হা করে আছে। আসিফ চুপ করে বলল কি তোমরা কিছু বলবা?
ম্যাসের সব চেয়ে প্যাঁচাল দাঁত বের করে বলল যাই হউক আসিফের ফোন তো হল।
আরেক জন বলল ম্যাসের টাকা বাকি তিন মাস। আবার মোবাইল কিনে? কত রঙ। আসিফ কিছু ই বলে না। রাতেই তার জামা কাপড় গুলো ধুয়ে বারান্দায় মেলে দেয়।
চলমান –