ডা. আওলাদ হোসেন-অর্গানন পাঠ
অর্গানন পাঠ
ডা. আওলাদ হোসেন
অর্গানন পাঠের দুর্বোধ্যতা নিয়ে লেখা প্রবন্ধ হোমিও চেতনায় প্রকাশিত হয়েছিল। এখন লেখার মূল উৎস ডা. রেজাউল করিম এর অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে ফলে পাঠকগণ সরাসরি বইটি পড়তে পারেন এবং রেফারেন্স হিসেবে বইটি ব্যবহার করতে পারেন। অর্থাৎ যে সমস্ত অনুবাদ ভুল, সহজ সরল না হয়ে জটিল করা হয়েছে এই বই পড়ে সংশোধনের সুযোগ পাবেন। উপরন্ত যে ব্যাখ্যা অনুবাদকের দেয়া তা পড়লে সূত্রের অনেক বিষয় বুঝতে খুবই সহজ হবে। তবে বইটির মূল্য বেশি হওয়ায় ক্রেতা সাধারনের নিকট সহজলভ্য নাও হতে পারে। বইটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মূল ইংরেজি ডা. বোরিক হুবহু ছাপানো হয়েছে এবং অন্যন্য বিশিষ্ট লেখকের লেখা থেকে উদ্বৃতি দেয়া হয়েছে বঙ্গানুবাদসহ। এতে পাঠক সহজেই বিভিন্ন হোমিও পুস্তকের সংগে পরিচিত হতে পারবেন। বইটি লিখতে অনুবাদক কঠোর পরিশ্রম করেছেন এবং দীর্ঘদিনের সাধনার ফসল। ইংরেজি সংগে থাকায় গবেষকগণ সহজেই বুঝতে পারবেন কোনটির বাংলা শব্দ প্রকৃত কি হবে এবং প্রকৃত বাক্য গঠন কি হবে। অন্যান্য অনুবাদের সংগে মিলিয়ে নিতে পারেন। আমি অন্যন্য অনুবাদ ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষনের সংগে ইন্টারনেটসহ মিলিয়ে দেখেছি বইটি ব্যাতিক্রম ধর্মী। হোমিওপ্যাথির ছাত্র/ছাত্রীগণ না বুঝে গদবাধা যে অর্গানন অব মেডিসিন বইটি রপ্ত করতে না পারার কারনে কোনরকমে পরীক্ষায় পাশ করে থাকে তাদেরকে দুর্বোধ্যতার কবল থেকে রক্ষা করার জন্য এবং অর্গাননের ভয়-ভীতি কাটিয়ে উঠে অর্গানন বিশারদ হতে পারে অস্বাভাবিক জ্ঞান সম্পন্ন করটিয়া জেলা+উপজেলা, টাঙ্গাইল হতে প্রকাশিত বইটি সব রকম উপযোগী হয়ে শুধু সময়ের অপেক্ষা যাতে বইটি বহুল প্রচারিত ও প্রসার লাভ ঘটাতে পারে সেই জন্যেই এই লেখা যা পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে বইটি ক্রয় করতে উদ্যোগী হবে এবং পরীক্ষায় কৃতকার্যতা লাভ করবে।
যেমন ১নং সূত্রের ব্যাখ্যা হচ্ছে ঔষধ পাওয়া গিয়েছে বা হোমিওপ্যাথি আবিস্কৃত হয়েছে এখন ডাক্তারদের কাজ হচ্ছে দ্রুত রোগীর সেবা দেয়া। ২নং সূত্রে প্রমান করা হয়েছে আদর্শ আরোগ্য কেন বলা হয়েছে, ৩নং সূত্র হচ্ছে সূচিপত্র যা দিয়ে রোগে কি আরোগ্য করতে হবে, ওষধ সম্বন্ধে জ্ঞান, ওষধ প্রয়োগ সম্বন্ধে জ্ঞান, সঠিক প্রস্তুত প্রণালী ও রোগীর জন্য আবশ্যকীয় পরিমান (মাত্রা-ডোজ) তার পর ওষুধের পুন: প্রয়োগ, বাঁধা এবং তা অপসারনের জ্ঞান, ন্যায় এবং যুক্তি সঙ্গতভাবে চিকিৎসা করতে হয় এবং সেই হবে আরোগ্য কলার সত্যনিষ্ঠ ব্যবহারবিদ।
এবার রেফারেন্স হিসেবে কতিপয় বই এর নাম উল্লেখ করছি- (১) ডা. এইচ সি এলেন নোসডস শিল্পীর কাজ। (২) ডা. কেন্ট ফিলসফি-শক্তির ব্যাখ্যা মেটিরিয়া মেডিকা। (৩) ডা. টেষ্টি হোমিওপ্যাথিক মেটিরিয়া মেডিকা-হ্যানিম্যানের দর্শন সম্পর্কে মেটিরিয়া মেডিকা (৪) ডা. ডানহাম-সায়েন্স অব হোমিওপ্যাথি শক্তিকৃত ঔষধের একবড়িই একশত। মেটিরিয়া মেডিকা একই নামভূক্ত ব্যাধিও স্বতন্ত্র। (৫) ডা. ফেরিংটন-দুটি উপাদানের সমন্বয়ে রোগের জন্ম (৬) ডা. জে.বি.বেল ডায়রিয়া ঔষধের লক্ষণ তালিকায় রোগের নিদানগত লক্ষণ থাকা জরুরী নয়। (৭) ডা. রবিন মার্ফি রেপার্টরি কেন্টের রেপার্টরি সমালোচনা…। (৮) ডা. হেবিংস গাইডিং সিম্পটম রোগের ৩টি চরিত্রগত লক্ষণই যথেষ্ট। (৯) ডা. এস. হ্যানিম্যান দি লেসার রাইটিং, অর্গানন, ক্রনিক ডিজিজ, মেটিরিয়া মেডিকা, চিররোগের তাৎক্ষনিক উপশম অশুভ লক্ষণ, মহিলাদের ঋতু স্রাবের সময় এন্টি সোরিক ওষুধ নিষেধ, সর্বশেষ লক্ষণ সর্ব প্রথম দূর হয়, আরও অনেক বিষয়ে সংক্ষেপে উল্লেখ আছে।
কিছু কিছু শব্দের ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে যেমন-সোরা কি, ক্ষুদ্র মাত্রা কি, ডিনামাইজেশন, অদৃশ্য শক্তি কি? ওষুধের প্রাথমিক ক্রিয়া এ্যালোপ্যাথির গুণগান, সবল ব্যাধি দুর্বল ব্যাধিকে ধ্বংস করে, কৃত্রিম চিররোগ, অপ্রকৃত চির রোগ ইত্যাদি।
মুখবন্ধে তিনি কিছু তথ্য দিয়েছেন যা আমাদের জানা উচিত যেমন- অন্য কোন পেশার ফাঁকে Mission হয় না। Perfect Conviction সংস্কার মুক্ত মন-জীবনীশক্তির বিশৃঙ্খলা-সূত্র-৯, ঔষধ সম্পর্কে জ্ঞান ১০৫ সূত্র থেকে ১৪৫ নম্বর পড়লে রেপার্টরি ও মেটিরিয়া মেডিকা বুঝতে মোটেও কষ্ট হবে না। এই খানে বিরাট প্রশ্ন এবং সংশয়। আমি দীর্ঘ ৫-৭ বৎসর তার কাছে অর্গানন পাঠ করে কিছু সূত্র বুঝতে পেরেছি কিন্তু তার কথা অর্গানন না বুঝলে রেপার্টরি এবং মেটিরিয়া মেডিকা বুঝা যাবে না কথাটি আজও রপ্ত করতে পারিনি। কিন্তু কোন সূত্রের কারণে রোগীকে কোন ঔষুধ দিতে হবে তা বুঝিয়ে দিলে ভালো হতো।
ডা. হ্যানিম্যান উত্তরে বারে বারে জানিয়েছেন হোমিওপ্যাথি সম্বন্ধে যা বলার আমি তার সবই “অর্গানন অব মেডিসিন” বইটিতে লিখে দিয়েছি। আর যারা অকৃতকার্য হন তাদের সম্বন্ধে বলেছেন (ক) তারা ঔষধ নির্বাচনে ভুল করেছেন (খ) তারা ঠিকমত বিষয়টি পাঠ করেননি (গ) ঔষধের ক্রিয়াকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করেন নি কারন ঔষধের সূক্ষ্মতা নিয়ে তাদের মধ্যেই অবিশ্বাস কাজ করেছে। অথচ আমরা যারা ডাক্তার প্রথমেই শিখতে হয় ওষুধ এবং বড়জোর তা দিয়ে কি কাজ হয় বা কোন রোগ সারে অর্থাৎ এক কোপে চলা। আঁচিল সারানো যে হোমিও প্যাথি না বরং সর্বাঙ্গীন লক্ষণ সমূহের চিকিৎসা বা রোগ নয় রোগীর চিকিৎসা জানার জন্য সর্ব প্রথম অর্গাননের ২৯১ টি সূত্র বুঝে মুখস্ত করা দরকার।
এ ক্ষেত্রে এ বইটি পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পালন করেছে এবং ভালো ছাত্র/ ছত্রীদের জন্য এই বইটিই যথেষ্ট। মনে রাখতে হবে বইটির ব্যাখ্যা করকগণ নিজেরাই বইটিকে দুর্বোধ্য করে রেখেছেন, শিক্ষার্থীদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। উপরন্ত প্রথমেই NUX Vomica Pulsatilla, Belladonna, Bryonia, Rhus tox, Natrum Mur, Medo ইত্যাদি উচ্চ শক্তিতে প্রয়োগ শিখিয়ে যে ক্ষতি করা হয় তা সম্পূর্ণ অর্গানন বইটি না পড়লে বুঝানো সম্ভব হবে না। বর্তমানে বাজারে রেডিমেড ঔষধের শিশি, বোতল, Strip ইত্যাদি পাওয়া যায়। প্রশ্ন হচ্ছে রোগীকে স্বতন্ত্রকরন, ঝাঁকি দিয়ে ঔষধ খাওয়ানো, শক্তির পরিবর্তন ইত্যাদি অর্গাননের শিক্ষা কি অবান্তর বা অহেতুক? তবে যারা বিক্রি করেন তাদের এটা ব্যবসা, অতএব এখানে মূল পার্থক্য বুঝতে হবে। যারা প্রচার করেন অর্গানন শিক্ষার প্রয়োজন নেই তারাই প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে, হোমিও ডাক্তারেরও প্রয়োজন যদি এ্যালোপ্যাথির মতো লিটারেচার পড়েই ঔষধ দেয়া যায়, তাহলে এক ধাপ উন্নতি হোল। কিন্তু মানুষকি এতই বোকা? কাজ না হলে কি ঔষধ কিনে বা খায়? যুক্তিটিই হচ্ছে কাজ না হলে খেত না। এখন সহস্রতমিক ওষুধ প্রয়োগের সময় চলছে যার ব্যবহার আরও অধিক জানার বিয়য়। আবশ্য আর একটি কথা বলা হয়ে থাকে হোমিও প্যাথিতে কোন Reaction নেই। এসবেরই উত্তর পাওয়া যাবে এই বঙ্গানুবাদটিতে যা কোন দিন সমাদৃত হবে সর্বমহলে সর্বত্র।
আরেকটি কথা ডা. হ্যানিম্যান নিজেই যেহেতু বার বার অপমান অপদস্থ হয়েছেন এই সূক্ষমাত্রা প্রচার করার জন্য, সেই হোমিওপ্যাথরাই যদি বিরুদ্ধাচরণ করে বা অপমান করাটাকে বিরাট কিছু মনে করে আমার মনে হয় ডা. হ্যানিম্যানের জীবনের প্রথম শিক্ষাটাই লাভ করতে ব্যর্থ হয়েছে। সত্য প্রকাশ ও প্রচার করতে এর বিরোধীতা করা আর ডা. হ্যানিম্যানের বিরোধীতা করা একই কথা। সত্য প্রচারে বাধা দেয়ার আপনি কেউ নন-রেজাউল করিম করটিয়ার ডাক্তার কিনা প্রশ্ন করে লাভ নেই, তার বইটি কঠিন বা সহজ পড়ে দেখলেই বুঝতে পারবেন। শিক্ষার্থীর মান সম্মান শিক্ষালাভের মাধ্যমে প্রকাশ পায়, গ্রাম্য টাউটের মতো জিদের ভাত কুত্তা দিয়ে খাওয়ানো বা সেই গল্পের কুকুরের মত সে নিজেও খাবে না অন্য কাউকেও খেতে দিবে না। ভাল ডাক্তার হওয়া অথবা বিদ্যা অর্জন এতে ঈর্ষান্বিত হওয়ার কিছু নেই। হোমিওপ্যাথির অপর নামই হচ্ছে ড্রেনের পানি বা ফোঁটা ডাক্তার হিসেবে গর্বের সঙ্গে তিরস্কৃত হওয়া শেখা যাকে আল্লাহ পাক বলেছেন দৈর্ঘ্য ধারণ করা। আর ডা. হ্যানিম্যান শিখিয়েছেন ওষুধের মাধ্যমে কিভাবে অদৃশ্য শক্তির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা যা W. H. O বিশ্বাস করেনা ও স্বীকার করে না।
টাঙ্গাইলবাসীদের গর্ব যে ৬০০ পৃষ্ঠার মূল্য ৫০০/- টাকা অর্গানন অব মেডিসিন, স্যামুয়েল হ্যানিম্যান, উইলিয়াম বরিক অনুদিত ইংরেজি ভাষ্য থেকে বঙ্গানুবাদ ডা. রেজউল করিম, দি হোমিও ক্লিনিক শহীদ মিনার রোড, করটিয়া, টাঙ্গাইল মোবাইল + ৮৮০১৮ ১৫২৩৯০৩৪ একসময় উপ মহাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্বে অর্গাননকে ব্যাখ্যা করার মত যোগ্যতা রাখে। কারণ যেভাবে প্রতিটি সূত্রের ব্যাখ্যা করা হয়েছে আমি ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে অনেক দিন এর গবেষনা মূলক লেখা ও ব্যাখ্যা পড়েছি কিন্তু এই বইটির মত পরিচ্ছন্ন সুষ্পষ্ট, যে ব্যক্তি অকাট্য চিন্তা ভাবনা কোথাও পাইনি বলেই আমি চ্যালেঞ্জ হিসাবে বিষয়ীট গ্রহণ করতে রাজী আছি। প্রশ্ন হচ্ছে বইটির প্রচার প্রসার ঘটানোর সুযোগ লেখকের শারীরিক অক্ষমতার জন্য সম্ভব হচ্ছে না যা একান্ত ভাবে প্রয়োজন। যদি হোমিও চেতনা অনুগ্রহ পূর্বক সাড়া দেন তাহলে আমরা কৃতার্থ হবো।