অ-মানব ও এক বিন্দু রহস্য
অ-মানব ও এক বিন্দু রহস্য ( প্রথম পর্ব )
রচনাঃ- সেলিনা জাহান প্রিয়া
পুলিশ একটা লোকের দিকে এগিয়ে গেল। শীতের রাত আর ঠাণ্ডা বাতাস লোকটা রেল স্টেশনে একটা বেঞ্চে বসে সিগারেট খাচ্ছে। পুলিশ বলল ভাই একটু আগুন হবে? মুখে চাপ দাড়ি মাথায় একটু বাবরী চুল কিন্তু মানুষটার মধ্যে শীতের কোন ভাব নেই। লোকটা পুলিশের দিকে তাকিয়ে একটু ভাব নিয়ে বলল সরি পুলিশ কে আগুন দিয়ে জীবন নষ্ট করতে চাইনা। পুলিশ একটু অবাক হয়ে বলল – আরে ভাই আমাকে আগুন দিলে জীবন নষ্ট হবে কি ভাবে? লোকটি বলল হাতে ঘড়ি আছে আপনার? পুলিশ বলল আমার হাতে ঘড়ি নাই। এবার লোকটি বলল ভাই আমার টাইম জানা দরকার কিন্তু। তাহলে আপনি টাইম কত জেনে আমার কাছ থেকে আগুন নিয়ে জান। আমি ছাড়া আশপাশে আর কোথাও আগুন পাবেন না। পুলিশ খুব মাইন্ড করে বলল আপনি জানেন আমরা পুলিশ? লোকটি বলল হ্যা আপনার পোশাক কিন্ত তাই বলে। আপনি কি পুলিশের সাথে কি ভাবে ব্যবহার করতে তা জানেন না? লোকটি বলল পুলিশ কি জানে? জনগণের সাথে কি ব্যবহার করতে হয়? এমন সময় পুলিশের এক দারগা ডাক দিয়ে বলল কি আলম সাহেব আগুন আনতে কত সময় লাগে। পুলিশের নাম আলম। সে তার দারগা কে বলল সার আপনার কাছে ঘড়ি আছে? দারগা বলল ঘড়ি নাই। তা ঘড়ি কেন? এই ভদ্রলোক টাইম না জেনে আগুন দিবে না। দারগা বলল স্টেশন ম্যানেজারের কাছে ঘড়ি আছে টাইম জেনে আগুন নিয়ে আসুন। আলম পুলিশ বলল ঠিক আছে স্যার। স্টেশন ম্যানেজার টেবিলে উপরে একটা বই রেখে পড়ছে। পুলিশ আলম সাহেব বলল ম্যানেজার স্যার এখন রাত কয়টা বাজে? ম্যানেজার তার হাঁট ঘড়ি দিকে তাকিয়ে বলল আরে শ্যালা দেখি শীতে বইসা গেছে। পুলিশ ভাই দাঁড়ান ফোনে সামনের স্টেশনে থেকে জেনে বলছি। ম্যানেজার হেসে বলল এখন রাত ২ টা বাজে পুলিশ ভাই। আলম পুলিশ সেই মানুষের কাছে যেয়ে বলল ভাই রাত দুটা বাজে। এখন আগুন দেন বড় সাব সিগারেট খাবে। হাতের সিগারেট টা আর একবার টান দিয়ে পুলিশ কে বলল যার আগুন দরকার তাকে আসতে বলেন। আপনি জন গণের কাজ করবেন কোন বসের না। পুলিশ বলল ভাই আপনি সাঙ্গাতিক ভেজাল মানুষ। আমাদের দারগা সাব কিন্তু খুব রাগী মানুষ। একটু আগুন দিবেন আর আপনি তাই নিয়া পুলিশের সাথে তামসা করছেন। বিষয়টা কিন্তু স্যার জানলে আপনে রে তের শিকের ভিতরে নিয়া যাইব। লোকটি হেসে বলল যা যা ক্ষমতা সেই তাই করবে। পুলিশ বলল আপনার কি ক্ষমতা শুনি? লোকটি বলল আমার আগুন আপনাকে দিব না। যার আগুন সে আসলে দিব। পুলিশ খুব বিরক্ত হয়ে দারগার কাছে গিয়ে বলল স্যার লোকটার মনে হয় মাথায় ছিট আছে। ঘড়ির টাইম টাইম জানালাম তার কথা মত কিন্তু সে আমাকে আগুন দিল না। বলল যার আগুন তাকে আসতে বল। দারগা বলল আরও দুই জন কে বলল যাও তো তাঁরে ধরে নিয়ে এসো। তিন জন পুলিশ গেল তার লোকটির কাছে। লোকটি পায়ের উপর পা তুলে খুব ধীরে সিগারেট টেনে যাচ্ছে। কিছুটা দূরে তিন চারটা কুকুর শুয়ে আছে। তিন পুলিশ এসে বলল ঐ বেটা তকে স্যার নিয়ে যেতে বলছে। লোকটি একটা হাসি দিয়ে বলল পুলিশ ভাইরা দেখুন একজন মানুষ নিতে যদি তিন জন পুলিশ লাগে তাহলে ষোল কোটি মানুষকে জেলে নিতে কত পুলিশ লাগবে। পুলিশ ভাই একটা কথা বলি – একজন বলল বলেন কি বলবেন। লোকটি নাক থেকে সর্দির পানি ঝেরে বলল আপনরা কেউ কি ধূমপান করেন, তিন জন বলল না করি না। তাহলে যে করে সে অন্যায় করে। আমি ধূমপান করি তাই আমি অন্যায় করি। আপনরা অধূমপায়ী তাই আমি আপনাদের কাছে সিগারেট খাওয়ার আগুন দিয়ে অন্যায় ভারি করতে চাই না। তিন জন পুলিশ হেসে বলল আরে বেটা চল আমাদের সাথে। না হয় ঘাড় ধরে নিয়ে যাব। লোকটি হেসে বলল ঐ দেখুন কুকুর গুলো আর একবার আমার সাথে এমন করে কথা বললে কিন্তু ওরা খুব মাইন্ড করবে। একজন পুলিশ বলল আমাদের কুকুরের ভয় দেখাও। এমন সময় তিনটা কুকুর ঘুম থেকে হামাগুড়ি দিয়ে এক সাথে ঘেউ ঘেউ করে পুলিশের দিকে তেরে আসলো। লোকটি বলল আরে অবুঝ শান্ত হয়ে যা এরা ধূমপান করে না। ভদ্র। একজন পুলিশ হাতে লাঠি নিতেই তিন কুকুর খুব ভয়ঙ্কর ভাবে চিৎকার দিতেই আশপাশ থেকে আরও কিছু দৌরে চলে আসলো। পুলিশদের চারপাশ ঘিরে ফেলল। পুলিশ খুব ভয় পেয়ে গেল। লোকটি বলল জাগতের কত মানুষ কে লাঠির ভয় দেখাবেন। সব সময় লাঠি বুলেট কাজ করে না। জান যার আগুন দরকার তাকে আসতে বলুন । পুলিশ গুলো খুব ভয়ে ভয়ে দারগার কাছে গিয়ে বলল স্যার লোকটি মনে হয় কোন যাদুগর । একজন বলল স্যার ভুত হতে পারে । আরেক জন বলল না স্যার ভুত না । ভুত হলে তো সিগারেট খেতে না। দেখুন না স্যার একটা সিগারেট আধ ঘণ্টা যাবত টেনে যাচ্ছে কিন্তু শেষ হয় না। আমার মনে হয় জীন হতে পারে । কারন কুকুর গুলো তার ইশারার কথা বুঝে যায় । আলম পুলিশ বলল স্যার
আমার মনে হয় আপনি গেলে সে আগুন দিবে । দারগা বলল তাকে ধরে আনতে পারলে না। তিন জন বলল স্যার কুকুর গুলো আমাদের ছিরে খাবে । দারগা শেষ পর্যন্ত উঠে রেস্ট রুম থেকে বের হয়ে বেঞ্চে বসে থাকা লোকটির কাছে গিয়ে দাঁড়ালো / লোকটি পাশে কুকুর গুলো খুব শান্ত ভাবে বসা । দারগা আসতেই কুকুর গুলো এক সাথে দারগার দিকে তাকিয়ে খুব হালকা ভাবে ঘেউ ঘেউ করে চুপ হয়ে গেল । লোকটি কুকুদের উদ্দেশ্য করে বলল তোরা কি ভদ্র হবি না। দারগা সাব আসছে যা দূরে গিয়ে ধ্যান কর । আর শুন আমাকে রেখে কিন্তু যাবি না। কুকুর গুলো একটা একটা করে ভিন্ন দিকে যেতে লাগলো । কিন্তু তিনটা কুকুর তাঁদের আগের জায়গায় গিয়ে বসল ।। দারগা ভাল করে চারপাশ দেখল । আবার বলল এই মিয়া একটু আগুন দেন সিগারেট ধরাব । লোকটি বলল সরি স্যার পুলিশ কে আগুন দেয়া যাবে না। দারগা হেসে বলল কেন ? লোকটি বলল সার্ভিস যোগ দেয়ার সময় আপনি অধূমপায়ী হিসাবে যোগদান করেছেন । সার্ভিস নীতি মতে পুলিশ আর্মি অধূমপায়ী । তাই আপনি আইনের লোক হয়ে আমার কাছ থেকে আগুন নিয়ে বেআইনি কাজ করতে পারেন না । পুলিশ বলল ভাই অনেক শীত তার সাথে ঠাণ্ডা বাতাস একটু আগুন দিলে খুব উপকার হয় । একটু আগুন ধরালে শীত কম লাগত । লোকটি বলল ভাল কাজ , ভাল চিন্তা আপনি পুলিশ ভাইদের বলুন কিছু কাগজ আর চার পাশ থেকে কিছু কাঠ নিতে । দারগা তিন পুলিশ ডেকে বলল আগুন ধরানোর জন্য কাঠ নিতে । তিব চার মিনিতের মধ্যে কাঠ কাগজ আর কিছু কাটুন নিয়ে এলো । এক সাথে করে দিল । লোকটি আবার আগুন জালাতে লাগলো । রেল স্টেশনে প্লাটফর্মে এক কনে আগুন জ্বালিয়ে সবাই বেশ আগুনের তাপ নিয়ে শীত থেকে আরাম পেতে থাকলো । দারগা পকেট থেকে সিগারেট বের করে আগুন ধরালো ।
দারগা বলল ভাই আপনার নাম কি ? এই শীতের মধ্যে পুলিশ কে দিয়ে কাঠ এনে আগুন ধরিয়ে খুব আরাম নিচ্ছেন । আপনি খুব চালাক মানুষ । যদি আগুন আগেই দিতেন তাহলে এই আগুন জ্বালানো সম্ভব না। আমি খুব বিরক্ত হচ্ছিলাম । রাগ করেছিলাম কিন্তু আপনি আপনার কাজটা সহজে করিয়ে নিলেন । সিগারেটের আগুন পেলাম কিন্তু আপনি দিলেন না । খুব মজা হল । ভাই নামটা বলুন আপনার । এই শীতে আপনার কোন শীত নাই । দারগার দিকে তাকিয়ে বলল ভাই আমার কোন নাম নাই তবে মানুষ কিছু মানুষ আমাকে অ-মানব বলে ডাকে ।
—– অ-মানব মানে
—– আমি এখনো মানুষ হতে পারি নাই । এই কুকুর গুলো আপনার কোন কথা শুনবে ।
—– দারগা না , তবে যারা পোষে তাঁদের কথা শুনে
—— রাইট । কিন্তু আমি অ-মানব বলে তারা আমার কথা শুনে ।
—— দারগা বলল , ভাই মজা করা ভাল না । এরা আপনার কথা শুনবে এটা কি আমাকে বিশ্বাস করতে বলছেন ?
——– অ-মানব বলল তাহলে একটা বাজী রাখি ?
——– দারগা বলল আচ্ছা বাজী কুকুর গুলো যদি এই শীতে স্টেশনের পাশের পুকুরের পানিতে নামতে পারেন তাহলে আপনি যা চাইবেন । যদি আমার হাতে দেয়ার মত ক্ষমতা থাকে তাহলে আমি তাই দিব ।
——– অ-মানব বলল দেখুন দারগা সাব এই শীতের মধ্যে কুকুর গুলো পানিতে নামানো কি ঠিক হবে
——— দারগা হেসে বলল ভাই অ-মানব এই শীতের রাতে কুকুর তো দুরের কথা মশাও ভুলে পানিতে যায় না।
———— আর যদি যায় তাহলে আপনি আপনার সর্ত মানবেন । সবার সামনে কথা দেন ।
———–হ্যা যদি কুকুর কে আপনি পানিতে নামতে পারেন তাহলে আমি আমার সর্ত রাখব ।
——-অ-মানব বলল দারগা সাব কোন কুকুর পানিতে নামলে আপনার জন্য ভাল হয় সেটা বলুন ।
দারগা তিনটা কুকুর হতে মাঝের কুকুর দেখিয়ে বলল ঐ কুকুরটা । অ-মানব আগুনের উপরে হাত দিয়ে হাত গুলো আকাশের দিকে তুলে একটা শ্বাস নিল । একটা হাসি দিয়ে বলল দারগা সাব আর একবার চিন্তা করুন ।
—– দারগা বলল আমি চাকুরী করি আজ ৩০ বছর । আমার সাথে সবাই বলছে আপনি নাকি জীন ভুত যাদুগর এটা যে ভুল তাই প্রামান করে দিব ।
অ-মানব কুকুর দিকে তাকিয়ে চোখ গুলো লাল করতেই মাঝের কুকুর একটা দৌড় দিয়ে পুকুরে লাফিয়ে পড়ে ঘেউ ঘেউ করতে লাগলো । দারগা বেঞ্চ থেকে উঠে দাড়িয়ে অ-মানবের দিকে তাকিয়ে একেবারে বোকা হয়ে গেল । আসলেই তো এটা মানুষ নাকি ভুত । দারগা তার চোখে মুখে যা দেখছে টা বিশ্বাস করছে না। এখন চিন্তায় পড়ে গেল এই অ-মানব না জানি কি চায় ? পুকুর থেকে কুকুর টা উঠে শীতের পানি ঝারা দিয়ে আগুনের কাছে এসে শুয়ে পড়লো । অ-মানব কুকুরের মাথায় হাত দিয়ে বলল জগতের অনেক ভাল কাজ কুকুর করে তবু মানুষ তোর নাম ধরে গালি দেয় । তারা যদি তোর চরিত্র জানতো তাহলে কুকুর বললে সে রাগ না করে গর্বিত হত ।।
দারগা সহ অন্য সব পুলিশ বলল চমৎকার কথা বলেছেন আমরা না জেনে কুকুর কে মন্দ বলি । আসলে কুকুর তো ভাল কাজ করে । স্টেশন ম্যানেজার হাঁটতে হাঁটতে আগুনের কাছে এসে বলল দারগা সাব এখন রাত চারটা বাজে । একটু পড়ে একটা মেইল ট্রেন আসবে । ট্রেনের মধ্য করিম মিয়া চা বিক্রি করে । লেবু চা যদি খান তাহলে আমার রুমে আসবেন ।
দারগা অ-মানব কে বলল বলুন আপনি কি চান ? দারগার দিকে চেয়ে কুকুর গুলো কে বলল এই কুকুর বন্ধুরা তোমরা সাক্ষী এই দারগা সাব আমার কথা রাখতে বাধ্য । অন্য পুলিশ ভাইদের বলল ভাই আপনাদের সামনে কথা দিয়েছে । কুকুর গুলো এক সাথে ঘেউ করে উঠলো ।
অ-মানব বলল দারগা সাহেব – আপনার মেয়ের নাম বিন্দু- ঠিক বলেছি কি ?
——- দারগা খুব অবাক হয়ে! ঠিক কিন্তু আপনি কি করে জানেন ?
——- অ-মানব বলল ভাই দুনিয়া কে কি ভাবে সুখি হবে, ভাল থাকবে- আমরা তা কেউ জানি না।
আপনার মেয়ে হয়ত একটা বেকার অল্প শিক্ষিত ছেলে ভাল বেসেছে । কে জানে সে হয়ত আগামীতে আপনার চেয়ে ভাল কিছু হতে পারে । তাই আজকের মানুষ কে আগামিতে কি হবে তাই আগেই খারাপ চিন্তা না করে ভাল চিন্তা করি । আপনার মেয়ে বিন্দুকে তার ভাল লাগা ছেলের সাথে বিয়ে দিবেন এই কথাটা কিন্তু আমার রাখতে হবে । আপনি বলেছেন আমি যা চাই যদি সাধ্যের মধ্য হয় তাহলে আপনি রাখবেন ।। দারগা চুপ হয়ে যায় অ-মানের দিকে তাকিয়ে বলে আপনি কি আমাকে চিনেন ? অ-মানব বলল জগতের প্রতিটা অণু পরমাণু একে অন্যের সাথে পরম মমতায় মিশে আছে কেউ কারো অপরিচিত না।একটা ট্রেন মেইল ট্রেন হুইসেল দিয়ে স্টেশনে প্রবেশ করে । তাও মাঝে মাঝে থামে যদি কোন দিন ক্রসিং থাকে । ম্যানেজার সাব চা খেতে ডাক দেয় দারগা সাব কে । দারগা বলল তোমরা দাড়াও আমি আসছি । ম্যানেজারের রুমে চা শেষ করে। ট্রেন ছেরে দেয় । দারগা আগুনের কাছে আসে । পুলিশদের বলে অ-মানব কোথায় । আলম পুলিশ বলে আপনার পিছন পিছন গিয়েছে স্যার , সারা স্টেশনে কোথাও অ-মানব নেই । কুকুর গুলো নেই । দারগা তো কসম খেয়েছে যে তার মেয়েকে ঐ ছেলের সাথে বিয়ে দিবে না। কিন্তু আজ তো বাজিতে হেরে গেছে । কি করে তার মেয়ের নাম জানে ? তিন পুলিশ বলল স্যার মানুষ না সে কিন্তু জীন ।।