সেলিনা জাহান প্রিয়ার ধারাবাহিক গল্প অ-মানব-চতুর্থ পর্ব
অ-মানব- চতুর্থ পর্ব
———————সেলিনা জাহান প্রিয়া
ডিউটি অফিসার ফোনটা হাতে নিয়ে জানতে পারলো যে তাঁর মা আর দুনিয়ায় নেই । কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলল । রাতেই সে তাঁর গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য রওনা দিল । সামছু পুলিশ ঢাকা মেডিকেলের কাজ শেষ করে থানায় এসে কাগজ জমা দিয়ে জানতে চাইল যে পাগল মানুষ টা কোথায় । একজন বলল সে চলে গেছে ।
থানায় ঘুমিয়ে গেল সামছু পুলিশ ।
সকাল ৭ টা ওসি সাব ডাকল সামছু কে । সামছু তাড়াতাড়ি ওঠে হাত মুখ ধুইয়ে স্যারের সামনে গিয়ে বলল –
— স্যার সালাম
— হুম । সব কাজ ঠিক মত করেছ কালকে ।
— জী সার করেছি ।
— এই নাও এই প্যাকেট রাখ । আর ঐ পাগল কোথায় পেলে আমাকে জানাবে । যাও বাসায় যাও ।
— স্যার এই প্যাকেটে কি ?
— কিছু না বাসায় গিয়ে দেখ । আর একটু আগে আমার স্ত্রী এসেছে । তোমার হাতের লিখা তো
অনেক ভাল । কাল থেকে রাইটারের কাজ তুমি কর । আর আমার বিশেষ কাজ গুলো দেখবে ।
সামছু পুলিশ কিছুটা বোকা হল ।
রাস্তা দিয়ে যায় আর মনে মনে ঐ পাগল টা কে খুঁজে । বাসায় আসতেই আলেয়া বেগম বলল রাতে আসবে না এটা কি ফোন করে বলতে পারলে না।
— আরে কি করে বলি । কত কাজ । তোমার বাড়িওয়ালা কাছে রাতে ফোন করলে আবার ভদ্র
লোক খুব মাইন্ড করে ।
— যাও আগে গোসল করে এসো । গরম পানি করা আছে । আর তোমার হাতে কি এইটা ?
— আর বইলো না । ওসি স্যার দিয়েছে । বলল বাসায় যেয়ে দেখতে । আলেয়া বেগম প্যাকেট টা হাতে নিয়ে খুলে দেখে অনেক টাকা । সামছু মিয়াও দেখে অনেক টাকা । গনে দেখে তো পুরাই বিশ হাজার টাকা । যাই হোক ছেলের ভর্তি আর কোন চিন্তা নাই । আলেয়া বেগম বলে তুমি তো আবার কোন বাজে কাজ কর নাই । সামছু বলে সব পুলিশ কিন্তু খারাপ না।
— হ সব পুলিশ তোমার মত বোকা না। কিন্তু ওসি সাব তোমারে কি মাগনা মাগনা আত্ত গুলো টাকা
দিল । কোন কারন ছারা । আমি তো তোমার চাকুরি বয়সে দেখলাম না। কু পাঁচ টাকা দিতে ।
— আরে আর কইয়ো না। এক পাগলের সাথে দেখা হইছিল । ঐ যে মানি ব্যাগ ফিরত দিতে গেলাম যেই পাগলের কোথায় । রাতে সুক্কুর দারগা স্যার তাকে ধরে আনে লকাপে রাখে । এই পাগল তো এক অদ্ভুত
পাগল । সুক্কুর স্যার বেয়াদবি করল । সুজা পুলিশ লাইন । রাইটা রফিক বেয়াদবি করল । থানায় এসে সুনি ওকে ওসি স্যার দুই থাপ্পড় দিছে । কাল থেকে আমি রাইটার । রাইটার মানে কেইস লিখলে রোজ পাঁচশ হাজার । ঐ পাগলের জন্য তো ওসি সাবের স্ত্রী এক অনেক দিন ফিরত আসলো ।
— বল কি ?
— আরে আজ যে টাকা পাইলাম এটাও কিন্তু ঐ পাগলের কেরামতি ।।সামছু মিয়া মনে মনে ভাবে আসলে মানুষ টা কি পাগল । না পাগল না। আলেয়া বেগম জানালা দিয়ে চেয়ে দেখে ঐ দিনের গাড়ি টা আসছে । সামছু মিয়া গারির কাছে যায় । ড্রাইভার সালাম দিয়ে বলে স্যার আপনাকে যেতে বলেছে ।।
সামছু মিয়া বলে কখন যাইতে বলছে ।
— বিকালে
— আচ্চা আমি চলে আসব ।
— না স্যার আমি আপনাকে নিতে আসব ।
— আচ্ছা ওকে । সামছু পুলিশে কে ড্রাইভার স্যার ডাকলো শুনে মনটা ভরে গেল ।
আলেয়া বেগম বলল – তুমি তো আমার সাথে কিছু লোকাচ্ছ না। আজ এত টাকা । আবার গাড়ি । দেখ
কোন দু নম্বর কাজ তো করতাছ না। দেখ আমার চিকিৎসা লাগবো না। আমার শ্বশুর খুব ভাল মানুষ ছিল ।
— আরে আলেয়া তোমার সাথে কি আমি কোন দিন মিথ্যা বলছি । যদি বিশ্বাস না হয় । থানায় গিয়ে ওসি স্যার কে জিজ্ঞাসা করতে পার ।।
— না তুমি মুখে বলেছ এটাই আমি বিশ্বাস করি ।। সামছু পুলিশ একটা ঘুম দিল । আলেয়া বেগমের মনটা অনেক ভাল আজ । ছেলেটা লিখা পড়ায় খুব ভাল । ভাল একটা কলেজে ভর্তি করা যাবে । ছেলের সুন্দর জিবনের কথা চিন্তা করে তাঁর নিজের চিকিৎসার কথা ভুলে যায় । জগতের সকল মায়েরা হয়ত এমন । প্রতিটা মা চায় তাঁর সন্তান একজন ভাল মানুষ হয়ে বেঁচে থাকুক ।
*********
শীতের বিকাল শহরের মানুষ কিন্তু রোদ পোয়াতে পছন্দ করে না। কিন্তু মিলি বেগম অন্য রকম শীতের দিন বিকালে সে প্রতিদিন একটা বেতের মোড়া তে বসে গায়ে রোদ লাগাবে । তিনি আবার আচার বানাতে খুব পছন্দ করে । ভিবিন্ন রকমের আচার বানিয়ে ছাদে রোদে দিবে । বসে বসে আবার রাস্তার মানুষ দেখবে । আশপাশের মহিলারা তাকে খুব অপছন করে । কারন মহল্লার ছোট ছোট ছেলে রা মিলি খালা মনি বলতে অন্ধ । তাঁর আবার নিজের সন্তান নেই । কিন্তু মহল্লার ছোট বড় সব ছেলে মেয়ে রা তাঁর কাছে আসে কারন সে সবাইকে আদর করে সন্তানের মতো। এটা অনেক মহিলারা পছন্দ করে না। মিলির স্বামী একজন জটিল মানুষ । সব কিছু তেই কিন্তু খুঁজে । কিন্তু মিলির সব আচরণ মেনে নেয় । কারন মিলির বাবা মরে যাওয়ার আগে এই বাড়িটা মিলি কে দিয়ে যায় । মিলি অনেক ক্ষণ যাবত লক্ষ করছে ছাদে বসে একটা লোক রাস্তায় মোরে দাড়িয়ে আকাশের দিকে চেয়ে আছে । যে যায় তাঁর দিকে একবার তাকায় । একটা মানুষ কত ক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে । মিলি তাই দেখছিল । পাশের বাসার ১১ বছরের তুতুল এসে বলল – মিলি খালা কাল ভোর রাত থেকে লোক টা এই জায়গায় দাঁড়ানো । মনে হয় পাগল । এখন বেলা কত চিন্তা কর ?
— আসলেই তো
— মনে হয় নেশা টেশা করে ।
— আরে না মিলি খালা । যারা নেশা করে ওদের চোখ লাল থাকে । ব্যবহার খারাপ হয় । ও কিন্তু
অন্য রকম । আমি বললাম কি তুমি । ও বলল আমি তুমি কে । আমি বললাম আমি তুতুল ।
বলল না তুমি হলে তুতুল নামে পরিচিত আসলে তুমি একজন মানুষের জাত মাত্র । কেমন
পাগলের মত কথা না ! মিলি খালা মনি ।। আম্মু বলে ও নাকি ছেলে ধরা ।।
— শুন তুতুল । মা ঠিক বলেছে । মা চায় না যে তুমি পাগলের কাছে যাও । তুমি বরং একটা কাজ
কর আমি কিছু খাবার দেই । তুমি ওকে যেয়ে দাও ।
মিলি ছাদ থেকে নেমে ঘর থেকে এক বোতল পানি আর একটা বক্সে কিছু খাবার দিলো তুতুলের হাতে। পাগলটা কে দেয়ার জন্য । তুতুল বলল- মিলি খালা তুমি না! পারও। মানুষের সেবা করতে।
তুতুল খাবার নিয়ে পাগল টার কাছে এলো । অনেক মানুষ এই অদ্ভুত মানুষ টা কে দেখছে ।
পাগল খাবার দেখে বলল – যার খাবার তাকে আনতে বল । সে না আসলে আমি এই খাবার খাব না
চলমান——