সেলিনা জাহান প্রিয়ার গল্প: ‘অ-মানব’-দশম পর্ব

‘অ-মানব’-দশম পর্ব
 ——————- সেলিনা জাহান প্রিয়া

পাশের বাসার মহিলা রেজিয়া কেন জানি পাগল টা কে খুব ভয় ভয় পাচ্ছে । তাই একটু সাহস করে ছাদের পাশে এলো । মাথার কাপড় টা টেনে চারপাশ দেখে নিল , কেউ আছে কি না । রেজিয়া ভাবলও একটু বকা দিয়ে দেই । পাগলের কথা কেউ কি বিশ্বাস করবে । মিলিদের ছাদ আর রেজিয়াদের চাঁদ মাত্র দুই ফিট দূরত্ব ।

রেজিয়া পাগল কে ডেকে বলল
—– এই যে মিঃ পাগল ছাগল এই দিকে আসো । কি নাম তোমার ? সারা দিন
আমার জানালার দিকে চেয়ে থাক কেন ?
পাগল মানুষটা রেজিয়ার কাছে একটা সুন্দর হাসি দিল । বড় বড় চোখ করে তাকাল । তার পড় আকাশের দিকে তাকাল । রেজিয়া এবার বলল- এই পাগল তুমি কি বোবা
নাকি ? কথা বল না কেন ? পাগল এবার বলল-
— কি জানতে চান ।
— আমি যা যা বললাম ?
— আমি যে আপনার দিকে চেয়ে থাকি এটা সত্য ।
— কেন চেয়ে থাক ?
— কোন টা বলব আপনাকে ? দুইটা কারনে চেয়ে থাকি ।
— দুইটা কারন কি কি ?
— প্রথম টা খুব মজার । দ্বিতীয় টা খুব নোংরা । তা আগে কনটা শুনবেন ।
— কোনটাই না ।
— আর কিছু জানতে চান ।
— তুমি আমার বাসার দিকে মুখ করে তাকবে না ।
— ওকে থাকব না। আর কিছু ।
— এবার বল দেখি প্রথম কথাটা ।
— আপনি যে ঐ দিন সন্ধ্যায় আপনার দেবর কে চুমু দিলেন খুব সুন্দর ।
— ছিঃ তুমি মিথ্যা বলছ ।
— আপনি যে আপনার দেবর কে এত টাকা দিলেন । আপনাকে নিয়ে ভিসা করে
এক সাথে পালাবেন । বাকী টাকা দিয়েন না। কারন আপনার ভিসা দুই টা নকল । আসলে সে তার বসের বউ কে নিয়ে পালাবে । আগে ভিসার কাগজ দেখুন । না হয় কিন্তু আপনি মরবেন ।।
রেজিয়া একটা গালি দিয়ে বলল পাগলের আচ্চা পাগল । মুখে যা আসে তাই বলে । যা বলছি এই পাশ থেকে । পাগল আবার একটু হেসে আকাশের দিকে চেয়ে বলল আকাশ আর মানুষের রং বড় রহস্য ময় । পাগল তার রুমে চলে গেল । রেজিয়া মনে মনে বলল – আসলেই তো পাগল ঠিক দেখেছে । ঠিক বলেছে । আমার দেবরের ব্যাপারে এত বেশী জানে কি ভাবে । আমরা যে বিদেশ চলে যাব এটা তো আমার দেবর আসাদ ছাড়া আর আমি ছাড়া কেউ জানে না। তাহলে পাগল জানল কি করে ?

জোছনা দরজা খুলে তো অবাক । সত্যি জোছনার মা বাবা আসছে । মাকে জড়িয়ে জোছনা বলে মা তুমি যে আসবে এটা কিন্তু আমি জানি । মিলি বলল – পড়ে জানিস আগে বসতে দে । জোছনার মা বলল- আপা আপনার কি হইছে মন এত খারাপ কেন । চোখ ফুলা ফুলা অসুক নাকি ? কি রে জোছনা তুই কি তোর মামীর দিকে খেয়াল রাখিস না। জোছনা বলতে লাগলো মা আমাদের বাসায় একটা পাগল
আছে । পাগলে কি জানি বলছে । সেই সকাল থেকে শুধু কাঁদছে । জোছনার বাপ বলল- পাগল এই বাড়িতে আসলো কি ভাবে । জোছনা বলল- মামী ঐ রাস্তা থেকে নিয়ে আসছে । তবে সে অনেক ভাল ।
মিলি বলল- যারে মা জোছনা তো বাবা মাকে খাবার দে । আর পাগল কে বলল আমার সাথে দেখা করতে ।। মিলি তার মায়ের কাছে যায় । মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে – মিলির মা বলে
— আমার এমন হাসি খুশি মেয়েটা কানলে ভাল লাগে না। কি হয়েছে বল শুনি ?
— মা আজিজ একটা বিয়ে করেছে । ঐ ঘরে একটা বাচ্চা আছে ।
— মিলি এটা তোকে কে বলেছে ?
— পাগল
— তুই পাগলের কথা বিশ্বাস করে কাঁদছিস ।
— মা ও পাগল না। আসলে ও অন্য রকম মানুষ । ও মিথ্যা বলে না। কিন্তু আমি চিন্তা করছি
আজিজ কেন আমাকে বলে না। আমি থানায় ফোন করে সব জেনেছি । আমার বান্ধবির ভাই
এ এস পি রেজা কে ফোন দিয়েছিলাম । রেজা একটু আগে আমাকে ফোন করে বলল মিলি আপু
তুমি যা যা বলেছ সব ঠিক আছে । সন্ধ্যায় ঐ মেয়ে আর বাচ্চা কে থানায় আসতে বলেছে আমার
কথা মত । মা এই বাড়ী ঘর তো আমাদের । কার জন্য রেখে যাব । আমি আজিজ কে কিছু
বলব না । বস্তি থেকে একটা শিশু তো সুন্দর পৃথিবি দেখবে ।
—- মিলির মায়ের চোখে পানি ।
—- মিলি বলে মা তুমি কান্না করছ কেন ? আল্লাহ্‌ তো আমাকে একটা সন্তান দিয়েছে । হউক না তা
সতীনের ঘরে ।
—- মিলির মা বলল সত্য কি ভাবে সামনে আসে তাই চিন্তা করছি ?
—- হ্যাঁ মা তাই তো । যদি পাগল না আসতো জানতেই পারতাম না।
—- মিলির মা বলল এর চেয়ে একটা সত্য আজ ৩৫বছর ধরে আমার মনে জ্বলে জ্বলে শেষ ।
—- কি সেই সত্য মা আমাকে বলল ।
মিলির মা বলতে লাগলো মাগো । আজ হতে প্রায় ৩৫ বছর আগে । তোমার বাবা আমাকে রেখে বিয়ে
করে । আমি ঐ মহিলাকে মেনে নেই না। তখন আমরা দিনাজ পুর লিচু বাগান এলাকায় থাকি । তোমার বাবা চাকুরির সুবাদে ঐ খানে থাকা । আমি একদিন খবর পেলাম ঐ মহিলা মা হতে চলছে ।
আমি হিংসায় শেষ হতে লাগলাম । কিছুতেই তোমার বাবাকে মেনে নিতে পারছি না। আমার বিয়ের ১৪ বছরে তোমার বাবাকে সন্তান দিতে পারি নাই । ঐ মহিলা হাসপাতালে ভর্তি হয় । একটা ফুট ফুটে
মেয়ে হয় । কিন্তু মেয়েটার মা মারা যায় । তোমার বাবার কাছে তখন চিকিৎসার টাকা ছিল না । কিন্তু আমার কাছে ছিল । আমিও টাকা দেই নাই । যাই হউক । কয়দিন পড়ে আবার খবর এলো
বাঁচাটা খুব অসুস্থ বাচবে না। ঢাকা নিতে হবে । আমাকে আমার মা বলল , হারাম জাদি নিজের পেটে তো বাচ্চা হবে না। যাও আল্লাহ্‌ দিছে সেটাও নিতে পারবি না। আমার পেটে একটা ডাইনি জনম নিছে ।
আমি সেই দিনেই ঐ মেয়েটাকে নিয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালে যাই । তাকে ভাল করতে আমার তখন ১০ ভরি স্বর্ণ বিক্রি করি । আল্লাহর রহমতে মেয়েটি ভাল হয় । তোমার বাবা ঢাকা বদলী হয় ।
— মা তাহালে ঐ মেয়েটি ?
— মিলির মা মিলিকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে । আর বলে মা মিলি ঐ মেয়েটি তুই ।
মা আর মেয়ে মিলে খুব চিৎকার করে কান্না করতে লাগলো । জোছনা , আর জোছনার মা বাবা মিলি
আর মিলির মায়ের কান্না দেখে তাড়াও কাদতে লাগলো । কান্নার শব্দ শুনে ছাদ থেকে পাগল ঘরে আসলো । মিলি পাগলের হাত ধরে কান্না করছে । পাগল হাসতে লাগলো আর হাসতে লাগলো ।

চলমান———

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!