সেলিনা জাহান প্রিয়ার ধারাবাহিক গল্প ‘অ-মানব’-ষষ্ঠ পর্ব
‘অ-মানব’-ষষ্ঠ পর্ব
——————-সেলিনা জাহান প্রিয়া
আরে বাবা ভুল কেন । দেখ না কত টাকা ………………………।।
— ছেলে বলে বাবা আসলেই কি এত টাকা ? সামছু পুলিশ আজ নিজেই অবাক হল ১৭ লাখ টাকা । সামছু অনেক আগে মায়ের মুখে গল্প শুনছে যে রাস্তায় পাগলদের মাঝে অনেক আল্লাহর অলি থাকে । সেই সব অলি নাকি মাঝে মাঝে কিছু অতি ভাল মানুষের সাথে দেখা হয় । তাহালে সামছু মনে মনে ভাবে সে হয়ত অতি ভাল মানুষ । কারন জিবনে সে কাউকে জোর করে টাকা নেই নাই । পুলিশের চাকুরি করে মানুষ কত ছয় নয় করে । কিন্তু সামছু কোন দিন করে নাই । সে তাঁর মায়ের কথা মনে করে কোন দিন খারাপ কাজ করতে পারত না। যাই হোক বউয়ের চিকিৎসা তা ভাল হাসপাতালে করাবে । পে – অডার টা হাতে নিয়ে বলে । আল্লাহ্ হয়ত তাঁর বান্ধাদের সততার পুরুস্কার এভাবেই দেয় । আলেয়া বেগম বলে তুমি তো আমার সাথে কোন মজা করছ না ।
— না মজা করব কেন !
— কালকেই টাকা তুলে তোমাকে আগে মেডিক্যালে ভর্তি করে দেব । যে হে তু পাগলা বাবার উছিলায় আল্লাহ্ টাকা দিয়েছে । সামছু পুলিশ এখন ঐ পাগল টাকে পাগলা বাবা ডাকা শুরু করেছে । সামছু পুলিশের স্ত্রীও পাগালা বাবা বলতে শুরু করেছে । আসলে মানুষ যদি হটাৎ করে কিছু অস্বাভাবিক কিছু দেখে বা পেয়ে ফেলে তখন হয়ত কোন ঘটনা কে অনেক রঙ দেয় । সামছু পুলিশ এই পাগল কে- কি রঙ দেয় এক মাত্র খোদায় জানে ।।
মিলি পাগল কে নিয়ে তারা বাসার ভিতরে গেলে মিলির মা বলে – এত সুন্দর ছেলে কিন্তু মাথা নষ্ট হলে সেই মানুষের কোন দাম নেই । মিলি লক্ষ করলো জামা কাপড়ে কোন ময়লা নেই । হাত পা খুবেই পরিষ্কার । খালি পায়ে হাটে কিন্ত কোন ময়লা নেই পায়ে । মিলি মা কে বলে- — মা আজ একটা চোর ধরা খাইবে ।
— কোন চোর ধরা খাইবে । — তোমার জামাই বুঝলে ।।
— হ খেয়ে কোন কাজ নাই । এমন ভাল ছেলে আর কই পাইবি । তোর মত একটা পাগল মেয়ে নিয়ে যে সংসার করে এতেই বেশী ।
— আমি পাগল । আর তোমার মেয়ের জামাই হল সাধু মানুষ । তাই না। তোমার মত শাশুড়িদের জন্য মেয়ে গুলো কষ্ট পায় ।
— পাগল চুপ করে বসে আছে । আর মা মেয়ের কথা শুনছে । আজিজ মিয়া ঘরে অন্য রুম থেকে পাগল কে দেখে বোকা বনে গেছে। কারন যে রাতে তাকে পুলিশ ধরে ছিল ।ঐ পাগল ঐ দিন থানার লকাপে এক সাথে ছিল । আজিজ মিয়া একটু আগে যে মিলি কে বলল – পাগল দেখ কত কি চাইবে? আসলে সে এমন পাগল না। পাগলের সামনে এসে এমন অভিনয় শুরু করলো যে তাকে সে প্রথম দেখেছে । পাগল আজিজ মিয়ার দিকে চেয়ে বলল- অভিনয় খুব সুন্দর কিন্তু আমি মিলি না ।
— অভিনয় মানে
— দেখুন সে দিন রাতে কিন্তু আপনি যা যা করেছেন আমার সব মনে আছে । আপনি যেই যেই ফোন নাম্বারে পুলিশের ফোন থেকে কথা বলেছেন আমার কিন্তু সব নাম্বার মনে আছে ।
— আজিজ মিয়া মিলির দিকে সরল একটা চাহনি দিয়ে সব গুলো দাত বের করে এমন এক হাসি দিল যেন পাগল যা বলছে তা সবেই পাগলামি । আজিজ বলতে লাগলো মিলি ওকে খাবার দাও । খুব ভুল পাগল মনে হয় । পাগলে কত কই বলে । পাগলের কথা পাগলেই ভাল জানে । না পাগল ভাই মনের মত করে খবার খাও । পাগল বলল মিলি খালা তোমার আচার থেকে আমাকে একটু মিষ্টি জলপাই আচার দাও । মিলি তো অবাক । কারন জলপাইয়ের আচার এবার সব চাইতে ভাল হয়েছে । এটা সে কাউকে দেয় নাই । মাঝে মাঝে গভীর রাতে একটু একটু খাঁয় । মিলি এবার বলল তুমি আমার আচারের কথা কি করে জানো । আর আমাকে তুমি খালা বলছ কেন ? — পাগল মনে হয় আজ প্রথম হাসল । মিলি খালা এই নামে তোমাকে খুব সুন্দর লাগে ।
— মিলির মা বলল পাগলেও মানুষ চেনে ।
— পাগল এবার বলল আমি যদি মানুষেই চিনতাম । তাহলে নিজেকে মানুষ বলে ভাবতাম । এই যে মিলি খালা । আমার দিকে একটু দেখেন । আপনি আমাকে চিনেন না । জানেন না। শুধু একবার শুনছেন , রাস্তার মোরে একটা লোক সকাল থেকে আকাশ দেখছে । আর ভাবতে লাগলেন আমি পাগল । ঠিক আছে আমি পাগল কিন্তু আমার জন্য এই আশপাশের কেউ খাবার নিয়ে এলো না। কিন্তু আপনি এলেন ।
— হ্যা আসব না । আমার এলাকায় একটা মানুষ না খেয়ে থাকবে আর আমি তাকে দেখব না।
— তাহালে মিলি খালা । এই এলাকায় আপনিই মানুষ আর সব নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত । ঐ যে পশু পাখির মত নিজের খাবার জন্য । দেখেন না পশুরা খাবার ঘুম আর জন্ম দেয়া ছারা কোন কাজ আছে । ঐ পশু গুলোই অন্য পশুর কোন কাজে আসে না।
— মিলির মা বোকার মত পাগলের কথা গুলো শুনতে লাগলো ।।মিলির স্বামী পাগল কে বলল – তুমি যদি মিলি কে খালা বল তাহালে আমি তোমার খালু । কি বল? পাগল বলল খালু না ডেকে মামা ডাকি কি বলেন ?
— হ্যা ডাক । মিলি একটু রাগ করে বলল – বাবা পাগল একটা কথা সত্য করে বলল তো । মিলির স্বামী বলল আরে পাগলের কথা শুনে কি লাভ ? পাগল বলল – মামা আপনি মিথ্যা বলছেন । আমি যে পাগল তা আপনি কি করে জানেন ? আমাকে কি চিনেন ?
— আজিজ মিয়া বলল -না তোমাকে চিনি না। তবে তোমার কোন মতলব আছে ।
— আমার না আপনার তা বের করা উচিৎ ।। মিলির মা বলল -মিলি পাগলে খাবার শেষ হলে বিদায় দে । কোন কথা থেকে কোন কথা বলে । পড়ে লাগবে একটা ঝামেলা ।
— মা ঝামেলা হলে আমার হবে কিন্তু পাগল মিথ্যা বলে না। — পাগল মিলি খালা কে বলল , খালা তোমার আচার গুলো ছাদ থেকে নিয়ে এসো । সন্ধ্যা হয়ে গেল যে । মিলি তো আচারের কথা ভুলেই গিয়েছিল । আচার মানেই তাঁর সব কিছু ।
— তাই তো । মা তুমি ওকে চা দাও । আমি আচার আনি । রাতে ও আমাদের সাথে খাবে । মিলি স্বামী পকেট থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে বলল – পাগল মামু এই নাও টাকা । বিদায় হও । এটা পাবনা না ।
— পাগল বলল আমি কি পুলিশ নাকি ? ঐ রাতের মতো টাকা দিয়ে কিনে নিবেন । দেখুন ঐ মহিলার ঠিকানা আমি শুনেছি ।। মিলি তো তাদের কথা শুনে আচার আনা এবার ভুলে গেল । আজিজ মিয়া কি পাগলের মত ক্তহা বলছ । এই বাসা থেকে বের হও ।
মিলি বলল – আমার বাসা কে থাকবে কে বের হবে এটা বলার মালিক আমি ।
— তাহালে স্বামী হিসাবে আমার কোন দাম নাই ।
— থাকবে কি ভাবে । একজন পাগলের সাথে কি ভাবে কথা বলতে হয় । তুমি ভুলে গেছ । মিলির মা বলল – আমি আগেই বলেছি একটা সমস্যা হবে । মিলি বলল আমি আগে পাগলের কথা শুনব । উ সত্য বলছে । আর সত্য শুনতে মানুষ ভয় পায় । পাগল বলল খালা এটাই সত্য । আমরা সত্য শুনতে ভয় পাই ।
মিলির স্বামী বলল তুমি পাগল নিয়েই থাক আমি যাই । পাগল বিদায় করে আমাকে ফোন কর । দেখি কে থাকে বলে হন হন করে চলে গেল বাসা থেকে বের হয়ে । মিলির মা বলল – তোরা ঝগড়া না করে আর পারলি না । পাগল বলল মিলি খালা চল তোমার আচার নিয়ে আসি । আর তোমার জন্য একটা খুশির সংবাদ আছে ।
যা তোমার জিবনের সব আশা পুন্য হয়ে যাবে । মিলি কে নিয়ে পাগল আচার আনতে ছাদে যায় । মিলি বলে আরে পাগল তোমার খালু একটু পরেই আসবে কিন্তু তাকে পুলিশ ধরেছে কেন । খালা কাল কে বলি ।
— হা তাই বল কিন্তু তুমি এই ছাদের ঘরে থাকবে ,। আমি হিমু খালা কে বলছি তোমার জন্য এই চিলেকোঠা । এখন আকাশ দেখ তুমি আমি তোমার জন্য কিছু খাবার আর কাপড় পাঠাই । মিলি তাঁর প্রিয় আচার গুলো নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যায় । পাগল মানুষটা ছাদের এক কোনে যেয়ে আকাশের দিকে অপলক চোখে চেয়ে হাত দুটি দু পাশে মেলে দেয় ।
চলমান ————————