সেলিনা জাহান প্রিয়ার ধারাবাহিক গল্প: ‘অ-মানব’- (১৩তম পর্ব)
নাদিয়ার সাথে এসে পাগল শিলার সামনে আসে । শিলার দিকে তাকিয়ে বলল যার অনেক কাজ বাকী সে যেতে পারবে না। এই দুনিয়ায় প্রতিটা মানুষ কোন না কোন কাজে এসেছে। শিলার মা বলল – ভাই আপনি খুব সুন্দর করে কথা বলেন । নেন এই চেয়ারে বসেন । আপনার জন্য খাবার আনা হচ্ছে । পাগল বলল- আসলেই খুব খুদা লেগেছ । নাদিয়া বলল – ভাই আপনার আসলেই বাড়ী কোথায় । পাগল বলল – দেখুন আমি মিথ্যা বলি না। আমার কোন বাড়ী নেই । আমি একজন যাযাবর । যে খানে রাত সেখানেই ঘুমিয়ে পরি । নাদিয়া নাস্তা দিল । চা দিল ।
শিলার মা বলল – ভাই দুনিয়ায় যার কেউ নাই । তার আল্লাহ্ আছে । আল্লাহ্ আজ আপনাকে পাঠাইছে । আপনার যতদিন মনে চাইবে । আমার বাসায় থাকবেন । আমার বাসা এই শহরে লিচু বাগান । বিমান বন্দর রোড । নাদিয়া তুই ভাইকে নিয়ে বাসায় যা । বাংলা ঘরে সুন্দর একটা বিছনা করে দে। ভাই তুমি যেমন আমাদের চেন না। আমাদের জন্য তোমার রক্ত দিলে । আমিও তোমাকে চিনি কিন্তু আজ হতে তুমি আমার ভাই । নাদিয়া বাসায় নিয়ে যা। পাগল শিলার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল মা মনি তারা তাড়ি ভাল হয়ে উঠ । নাদিয়া পাগল কে রিক্সা করে তার বাসার দিকে যাচ্ছে । পাগল বলল অনেক শীত লাগছে কি আপনার ।
— হ্যা
— নাক টা চাদর দিয়ে ঢেকে বসুন । কান ঢেকে দিন । আর চিন্তা করুন
আপনি ভাল আছেন ।
—- নাদিয়া হেসে বলল আপনি খুব মজার মানুষ । এই সিলেটে অনেক পাগল আমি
দেখেছি কিন্তু আপনার মত দেখি নাই ।
— পাগলটা নাদিয়ার দিকে চেয়ে একটু হেসে বলল পাগল দেখা যায় না । পাগল কে
অনুভবে বুঝে নিতে হয় । নাদিয়া আপনার কাছে বিশ টা টাকা হবে ।
— হ্যা হবে এই নেন ।
পাগল আম্বার খানা পয়েন্টে নেমে বিশ টাকা দিয়ে ফুল কিনল । নাদিয়া তার ফুল কিনা দেখে হেসে বলল কাকে দিবেন ।
— কেন আপনাকে দেব । গোলাপ আপনার খুব পছন্দ । নাদিয়া গত সাতদিন এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ফুল দেখে । কিনতে মনে চায় কিন্তু সময়ের জন্য কিনতে পারে না। ফুল গুলো পেয়ে খুব খুশি হল । নাদিয়া বলল কি নামে ডাকি আপনাকে
— পাগল একটু হেসে বলল আমার নাম অনেক বড় আপনার পক্ষে মনে রাখা সম্ভব
না । বরং আপনার যা ইচ্ছা ডাকুন । নাদিয়া হেসে বলে পাগল আপনি ।
— পাগল হেসে বলে এই নামটা আমার খুব প্রিয় দু জন মিলে এক সাথে হেসে দিল ।
ঝলমলে রোদ উঠছে । শীতের দিনে রোদ সবাই পছন্দ করে । নাদিয়া বলল আজ তিন দিন পড়ে সূর্যের মুখ দেখলাম । পাগল আকাশের দিকে চেয়ে বলে আকাশ আর
মানুষ এই দু এর কোন সীমা নেই ।। সিক্সা চলে আসে বাসার সামনে ।
মিলি ছাদে বাচ্চা কুলে নিয়ে বসে আছে । এমন সময় পাশের বাড়ির রেজিয়া বলে
আপা পাগল টা কোথায় । মিলি বলল ওকে পাগল বল না তো রেজিয়া । অ আল্লাহ্ বান্দা ।
—- আপা আপনি বলেন আল্লাহর বান্দা । আসলেই ঐ লোকটা একটা
সয়তান । জানেন আমি ওর ভয়ে জানালা খুলি না। খালি জানালার দিকে
চেয়ে থাকে ।
—- দেখ রেজিয়া তুমি যা বললে আর বল না । এত অল্প সময়ে কাউকে খারাপ বলা
চলে না। জোছনা এসে বলল – মামী আসলে রেজিয়া অ্যান্টি শুধু শুধু বেশী কথা
বলে ।
— মিলি বলল শুন রাজিয়া পাগলের সাথে যদি কথা বলে থাক । তাহালে মনে
রেখ এটা তোমার কপাল ।। এই বলে মিলি ছাদ থেকে তার ঘরে চলে
যায় । জোছনা ছাদের গাছ গুলোতে পানি দিতে থাকে ।
রেজিয়ার দেবর রেজিয়া কে ডেকে বলে ভাবি কাল কে তোমার ছবি তুলতে হবে । আগের ছবি দিয়ে তোমার পাসপোর্ট করেছি । এই নাও পাসপোর্ট । রেজিয়া পাসপোর্ট পেয়ে মহা খুশি । মনে মনে বলে পাগলের কথা কি ঠিক ? দেবর কে বলে আচ্ছা একটা কথা বলি তুমি যে অফিসে কাজ কর সেই অফিসের বস এর বউ কে কি তুমি চেন ?
রেজিয়ার দেবর এমন একটা ভাব নিল । দেখ ভাবি বস মানেই বস । আর তাদের বউ রা আরও বড় বস । আমি বসের বউ কে চিনি না। তবে শুনেছি ঐ মহিলা নাকি খুব খারাপ । রেজিয়ার দেবর জানে এক মহিলা অন্য মহিলার প্রশংসা শুনতে পছন্দ করে না। রেজিয়া তার দেবরের ফোনটা ভাল করে চেক করে । দেখে পরিচিত সব নাম্বার থেকে ফোন এসেছে ।। রেজিয়া আর দেবর মিলে তাদের বিদেশ যাওয়ার সব সময় ঠিক করে নেয় । প্রথমে তারা থাইল্যান্ড যাবে সেই খান থেকে অন্য দেশে ।
পাগল বিকেলে মেডিক্যালে আসে নাদিয়ার সাথে । নাদিয়ার ছোট বোন বলে – ভাইয়া আপনি এখানে বসুন । আমার নাম নাজ । আমরা তিন বোন । আমি নাজ । নাদিয়া আর নাজু আপু সবার বড় । সাথে সকালে তারা দু জন আমার মামা হয় । দুলা ভাই আজ লন্ডন থেকে আসবে রাতে ।। আপনি শুধু নাম নিয়ে রহস্য করছেন কেন ? আপনার নাম কি বলব বলেন । আমাদের ভাই তার নাম থাকবে না। শিলা ঘুম থেকে
উঠে পাগলের দিকে চেয়ে বলে – আম্মু আমি ওর নাম জানি ।
— শিলার মা মেয়ের দিকে চেয়ে । তাই মা মনি কি নাম বল শুনি ।
— মা আমি স্বপ্নে তাকে দেখছি । আমার জন্য সে আকাশ থেকে আসছে । কই মামা
আমার ফুলটা দাও । পকেট থেকে একটা অপরাজিতা ফুল দিল শিলার হাতে ।
শিলা বলল আজ ফুটেছে আমাদের বাগানে তাই না মামা ।
— হা মা । রাতেই ফুটেছে তোমার জন্য তাই নিয়ে এলাম । নাজ বলল শিলা
তুমি কি ভাবে জানতে । যে ভাইয়া ফুল নিয়ে আসবে ।
— খালা মনি আমি স্বপ্নে মামা কে দেখছি । মামা আমাদের বাসায় জানালা দিয়ে
এই ফুল ছিরেছে আমার জন্য ।
— নাদিয়া হেসে বলল তোমার সব স্বপ্ন সত্য হোক । ডাক্তার বলেছে কালকে তোমাকে
রিলিজ দিয়ে দিবে ।
— পাগলটা শিলার মাথায় হাত রেখে বলে বাসায় গিয়ে তোমার জন্য অনেক অনেক গাছ লাগিয়ে দিব । তোমার বাগান কে অনেক সুন্দর বাগান করে দিব । শিলার মা নাজু বলে ভাই তোমার কথা শিলার আব্বু কে বলেছি । সে বলেছে তোমার যখন যা লাগবে আমাকে বলবে । নাদিয়া চা দেয় পাগল কে । নাজ বলে ভাইয়া একটা কথা বলব আপনাকে ।
— হ্যা বল শুনি ।
— ডাক্তার কে আপনি টিপ সই দেখতে বললেন । আপনি চলে যাওয়ার পর
সে কাগজ টা ছিরে ফেলে । পড়ে অন্য একটা কাগজে সে নিজেই তার
ঠিকানা লিখে নিজেই সই করে রাখে । কি ছিল আপনার টিপ সই এ ।
— ডাক্তার আমাকে একটা ভুল কাগজে টিপ সই নেয় । আসলে ঐ কাগজটার পিছনে
একটা চিঠি ছিল । যা তোমার জানা দরকার নাই । নাজু বলে ঠিক অন্যের বিষয়
না জানা ভাল । নাদিয়া বলে আপা আমি বাসায় যাই । ভাইয়া কি পড়ে আসবে না
কি আমার সাথে যাবে । নাজ বলে তুমি নিয়ে এসেছ তুমিই নিয়ে যাও ।
পাগল মানুষ টা ছাদে দাড়িয়ে কুয়াশার মধ্য আকাশের দিকে চেয়ে আছে । নাজ নাদিয়া ছাদে আসে পাগল কে ঘরে না পেয়ে ।
— ভাইয়া আকাশে কি দেখেন ।
—- নাদিয়া কে বলে আমি আকাশ দেখি না । দেখি একটা গতি । আমরা
যদি একবার সেই গতির দেখা পেয়ে যাই । তাহালে অনেক অনেক
দূরে কোথাও ।
নাজ বলল – ভাইয়া কালকে ডাক্তার আপনাকে একটু দেখা করতে বলেছে ।
নাদিয়া বলল – লোকটা আপনার কথায় খুব চিন্তায় পড়ে গেছে ।
পাগল নাদিয়া কে বলল – যার মধ্য চিন্তা আছে সে নিজেকে বদলাতে পারে আর যার মধ্য চিন্তা নাই সে অন্ধকার থেকে বের হতে পারে না । নাদিয়া চিন্তাশীল হও । নাজ তুমি পড়তে যাও । পরীক্ষার অল্প দিন বাকী আছে । নাজ নাদিয়া ছাদ থেকে যাওয়ার
সময় দেখে খুব সুন্দর করে পাগল আসন করে বসেছে আর তার চার পাশে অনেক গুলো জোনাক পোকা আলো জালছে । নাদিয়া নাজ কে বলে অবাক করা একটা মানুষ
চলমান——-