সেলিনা জাহান প্রিয়ার ধারাবাহিক গল্প – ‘অ-মানব’ -১৪তম পর্ব
‘অ-মানব’-১৪ তম পর্ব
——————– সেলিনা জাহান প্রিয়া
নাজ পাগলের কাছে এসে বলল ভাইয়া ঘুম কেমন হল । নাদিয়া আপু বলল আপনি নাকি ছাদে সারা রাতহেটেছেন । ভোর বেলা এসে ঘুমিয়েছেন । দুলা ভাই লন্ডন থেকে চলে এসেছে । আপনি ঘুমে ছিলেন তাই ডাকে নাই। পাগল নাজ কে বলল- তুমি একটা কাজ কর নাজ আমার জন্য ভাল করে লাল চা নিয়ে এসো । নাদিয়া কে বলল – হাসপাতালে যাওয়ার সময় যেন আমাকে নিয়ে যায় ।আর তোমাদের বাড়ির উত্তর পাশে পুকুরটা তে গোসল করা যাবে । নাজ বলল – বলেন কি ? ঐ পুকুরে কেউ গোসল করে না। দেখেন না কত ময়লা পরে আছে । পাগল বলল – আজ অনেক সুন্দররোদ । তোমাদের বাড়িটা অনেক সুন্দর । আমি বিকালে মাজারে যাব । নাজ বলল – নাদিয়া আপুর সাথে যাবেন । আপু ঘুরতে পছন্দ করে । পাগল বলল- তুমি কি পছন্দ কর ? আমি যাপছন্দ করি তা আপনাকে বলা যাবে না । পাগল হেসে বলল – এরমানে খুব সুন্দর তুমি যা পছন্দ কর তা সমাজ ভাল ভাবে দেখে না। তাই তুমি গোপন করছ । নাজ বলল- হা কিছুটা হয়েছে ।পাগল বলল তুমি যা পছন্দ কর । তা অনেকই করে না । নাজ যারযা পছন্দ তা কিন্তু তার চরিত্রের সাথে আস্তে আস্তে মিশে যায় । তুমি যা গোপনে পছন্দ কর তা কিন্তু তোমার মনের স্বভাবের একটা অংশ । নাজ বলল – বলেন কি ভাইয়া । হ্যা নাজ তুমি পছন্দ বিশ্বাসে জন্ম নিলে তখন খারাপ কিছুও ভাল মনে হয় । নাজ বলল আমি যা পছন্দ করি আপনি বলতে পারবেন ।পাগল বলল- মানুষ যা গোপন করতে চায় তা দ্রত প্রকাশ পায় । ঠিক আছে আমি বলব তুমি চা নিয়ে এসো ।।নাজ চা বানাতে চুলায় আগুন দিতেই । নাজ এর ছোট মামা রইসমিয়া এসে বলে নাজ ঐ লোকটা নাকি বাসায় । তা বাড়ী কোথায় কিছু জানা গেল । দেখতে তো রাজপুত্রের মত । মনে হয় অনেকশিক্ষিত । মানুষ বেশী শিক্ষিত হলে কিন্তু পাগল হয় । মামা ঐ ভাইয়া বাংলা ঘরে আছে । তোমার যা জানার তার কাছেযাও । নাদিয়া ঘুম থেকে উঠে রান্না ঘরে এসে বলল – মামা খুব ভাল হবে তুমি তো দুই দুই বার মেম্বারি ফেল করেছ । দেখ লোকটা তোমার কাজে লাগবে । আর মামা সন্ধ্যা চলে আসবে শাহ পরান যেতে হবে । একটা বিয়ের দাওয়াত আছে , তুমি না আসলে হবে না। দুলা ভাই শিলা কে নিয়ে রাতে বাসায় আসবে । রইস মিয়া বলল – আচ্চা আমি তাহালে মেহমানতার সাথে দেখা করে আসি ।রইস মিয়া বাংলা ঘরে এসে দেখে পাগল একটা বই পড়ছে । রইস মিয়া সালাম দিয়ে বলল – কিতা রে বা ভাল আছ নি ।— হ্যা আমি ভাল আছি । আপনি ?— আমারে আপনে চিনতা না। আমি নাজু নাদিয়া আর নাজ এর ছোট মামা ।— ও ! তাই ! মামা বসেন ।— তুমি আমাদের যা উপকার করেছ । তা আমাদের পক্ষে তোমারঋণ শোধকারর মত না।— মামা জগতে প্রতিটা প্রাণীই প্রতিটা প্রাণীর কাছে ঋণী ।— ভাইগ্না বেটা তোমার কথা ঠিক বুঝলাম । আমরা কি ভাবে অন্য প্রাণীর কাছেঋণী । আল্লাহ্ সব কিছু মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছে ।—- মামা গাছ আমাদের অক্সিজেন ফল ফুল বীজ দেয় । আমরা গাছ কেকার্বনডাই অক সাইড দেই । ঠিক তেমন করে দুনিয়ার সব প্রাণী কোননা কোন ভাবে অন্য প্রাণীর উপর নির্ভরশীল ।—- আচ্চা ভাইগ্না মশা আমাদের কি উপকারে আসে বল তো দেখি ।—- মা মসার কামুরে অনেক অসুক হয় , অসুক হলে ডাক্তার , তার পর চিন্তা করুনএকমাত্র মাসার জন্য মশারী । কত মানুষ সেই মশারী বানিয়ে জীবিকা করছে ।— আসলেই তো আমি এভাবে চিন্তা করি নাই । আপনার সাথে পরিচয় হয়ে ভালহয়েছে । তা আপনার নাম নাম জানা হল না।নাদিয়া চা নিয়ে এসে বলল মামা যার নাম তার নাকি মুখে বলা ভাল না। আমরা দুই বোন মিলে চিন্তা করেছি । ভাইয়া গত কাল থেকে সে তার নাম বলছে না। তাই একটানাম আমরাই দিয়ে দিব । শিলা আমাকে বলছে খালা মনি মামার জন্য একটা নাম ঠিক কর । পাগল বলল মন্দ হয় না। এই দুনিয়ায় মানুষ নামের জন্য কত কি করে ।রইস মিয়া বলল – আপনি ঠিক বলছেন আমি নাম কামাবার জন্য দুই বার মেম্বারি তেদাঁড়াইলাম । যদি ফেল করেছি । আর মানুষ কে বুঝতে পারি না। পাগল বলেমামা আসলেই পাশ করতে চান ।— হ্যা । পাশ না করলে তো সমস্যা । মানুষ যখন বলে মেম্বার । একটু লজ্জা লাগে ।— মামা আজ থেকেই আপনি পাশ ।— আজ থেকে মানে বুঝলাম না। নির্বাচন তো মেলা দেরি আরওএক বছর ।— পাগল বলল -পাশ করার কাজ এখন থেকে শুরু ।— নাদিয়া বলল ভাইয়া নির্বাচন অনেক কঠিন কাজ ।— নাদিয়া মামা যদি কথা শুনে । তাহালেই পাশ ।— এটা কিভাবে ভাইগনা !!— মামা দেশের মানুষ ধর্ম বিশ্বাস করে কিন্তু ধর্ম পালন করে কম । ঠিক কিনা ।— হ্যা ।আপনি যদি ধর্ম বেশী পালন করেন তাহালে আপনাকে কিছু ভালমানুষ ভোট দিবে।আর ধর্ম কম মানলে । যারা কম মনে তারা ভোট দিব । আপনি আজথেকে কত জন ভোটার আছে এবং কারা ভোটার হবে আপনার এলাকার তাদের একটা তালিকাবানান । তার পর দেখবেন আমি এমন ম্যাজিক দেখাব । যে ভোটআসার আগেই মানুষ বলবে। এবার রইস মিয়া কে মেম্বার বানাব । আপনি বলবেন তখন । না আমি দাঁড়াব না। তখন তারাইআপনাকে জোর করে দারাবে । আপনি টাকা ও সম্মান দুইটাই পাইবেন ।।নাদিয়া বলল ভাইয়া বিকালে হাসপাতাল যাবার কথা ছিল । ডাক্তার বলল আজ রিলিজ দিবে । সন্ধ্যায় একটা বিয়ের দাওয়াত আছে । আপনি যাবেন ।— আমি পাগল মানুষ বিয়েতে গেলে না জানি কে কি বলে । আমি বরং হাসপাতালেযাই । রইস মিয়া বলল না হাসপাতাল আজ বাসায় আসবে । শিলা বাসায় আসলেবুঝবে । সে যে কত জ্ঞানী মেয়ে ।। নাদিয়া বলল আচ্ছা ভাইয়া একটা কথা আমি দেখলাম আপনি সারা রাত রুম থেকে বের হয়ে এই শীতে ছাদে । আকাশের দিকে চেয়ে আছেন । রহস্যটা কি ? পাগল বলল- একটা কথা বলি নাদিয়া তুমি কেন রাত জেগে ।— ভাইয়া আমার ঘুম আসে না।— ঠিক আছে আজ ঘুম আসবে ।রইস মিয়া বলল ভাগিনা আমি এখন চলি । রাতে বিয়ে তে দেখা হবে।নাজু স্বামীর পাশে বসে শিলার দিকে তাকিয়ে বলে । ও নেগেটিভ রক্ত না হলে আজ কি হত আল্লাহ্ জানে । নাজুর স্বামীর নাম খালেক মজুমদার । মুজমদারিতে তাদের বিশালবাড়ী । পিতার বাড়ী রেখে তার পাশেই তিনি আলাদা বাড়ী করে থাকে । নাজু তার স্বামীকে বলল – মানুষটা অনেক ভাল। খুব সুন্দর করে কথা বলে । কিন্তু কেন জানি মনে হয় ওর মধ্য কিছু পাগলামি আছে। ও তার নাম বলে না। কোথায় থেকেআসছে তাও বলে না। শিলা ওর মাকে বলল – মা ঐ মামা মনে হয় অন্য গ্রহ থেকেআসছে । এর মধ্য ডাক্তার এসে বলল আপু ঐ মানুষটা কি আজ আসবে ।— কে ! ঐ পাগল টা । কেন— না আসলে ঐ মানুষ টার সাথে আমার কথা আছে ।— খালেক সাহেব বলল – যে কোন সময় বাসায় আসবেন । আমাদেরবাসায় আছে ও। ওকে আমার ও দেখার খুব ইচ্ছা । আসার পর থেকে সবার মুখে ওর প্রশংসাশুনছি ।— ডাক্তার বলল – আমি ওর কথার কাছে হেরে গেছি । শিলা বলে আব্বু তুমি কিজান । আমি ঘুমিয়ে দেখলাম ঐ পাগল মামা আমার জন্য ফুল এনেছে । ঘুম থেকেউঠে দেখি সত্যি ফুল এনেছে ।—- ডাক্তার বলল শিলার অবস্তা ভাল বড় স্যার দেখলে রাতেই বাসায় নিতে পারবেন। তবে আমি আপনাদের বাসায় আসব ।।নাজ নাদিয়া রইস মিয়া এর আগত পাগল মিলে শাহ পরান একটা বিয়ে বাড়িতে এসেছে । সবাই খাবার আর বউ দেখা নিয়ে ব্যস্ত । বর চলে এসেছে কিছুক্ষণ আগে ।খাবার টেবিল থেকে পাগল না খেয়ে উঠে যায় বিয়ের বরের সামনে । কাজী তখনবরের সই নেয়ার অপেক্ষা করছে । সবাই ছবি তুলছে । নাদিয়া পাগলের পিছনে পিছনে আসে । নাদিয়া বলে ভাইয়া তুমি কোথায় যাও । পাগল বরের সামনে চোখলাল করে তাকিয়ে চাইল । পাগল কে দেখে বর চিৎকার করে উঠেপাগলের পায়ে যেয়ে পরল । বিয়ে বাড়ির সবাই হতবাক হয়ে চেয়ে আছে । কে এই মানুষ বর কেনতার পা ধরে আছে ।
চলমান————