সেলিনা জাহান প্রিয়ার ধারাবাহিক গল্প – ‘অ-মানব’- (১৫তম পর্ব)
‘অ-মানব’- (১৫তম পর্ব)
———————– সেলিনা জাহান প্রিয়া
বিয়ে বাড়িতে সবাই অবাক হয়ে বরের সামনে আসলো । বর পাগলের পা ধরে বসে আছে । নাদিয়া পাগল কে বলে ভাইয়া কি বেপার নওশা আপনার পায়ে ধরে আছে কেন । পাগল বলল – কনের বাবা কে একটু ডাকো । সবাই অবাক হয়ে দেখছে । নাজ বলল ভাইয়ার পায়ে ধরেছে নওশা । রইস মিয়া কনের বাবা কে বলল ভাই জান । আমার ভাগিনা হয় তার সাথে একটু কথা বলুন ।। কনের বাবা কে পাগল বলল- যখন স্রষ্টা কাউকে নিজ থেকে ভালবাসে তখন সে তার জন্য কাউকে পাঠায় । বর কে বলল তুমি উঠ । বর উঠে পাগল কে বলল আপনি এখানে কি করে খবর পেলেন ।। পাগল বর কে বলল – যখন যার পতন হবে তখন সে সেই যাবে । বরের বাবা আসে বলল – কে আপনি আর কি ঘটনা । পাগল বলল আপনার ছেলে ই ভাল করে জানে । বর মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল । নাদিয়ে বলল – ভাইয়া বিষয় টা খুলাসা করে বলত ।। পাগল বলল – সব কিছু জানতে নেই ।। কনের বাবা বলল- কি গঠনা । ছেলের কোন দোষ আছে নাকি ? আমাদের এই বিয়ে তো রাবর(ঘটক) দিয়ে ঠিক করা । পাগল বলল ঘটক কে তাকে আনুন । রইস মিয়া ঘটক নিয়ে আসতেই । ঘটক কে বলল – আপনি তো সব জানেন । ঘটক বলল – তার আগের বিবি আসতে চায় না। আর তার সাথে তো তালাক হয়েছে ।। পাগল বলল – তালাকের পেপার দেন । ঘটক বলল- তাইন বলেছে পড়ে দিবে। পাগল বলল আপনে কি বলেছেন এই মেয়ের বাবা কে ? ঘটক চুপ করে গেল । মেয়ের বাবা ঘটক কে একটা চর দিল ।। এই বদমাইশ কে পুলিশে দেয়া দরকার ।। পাগল বলল না ঘটক আর ছেলের বাবাকে দিতে হবে ।। ছেলে তার বাবা সাহসে এই অন্যায় করছে । পরিবার থেকে কেউ উৎসাহ না পেলে খারাপ হতে পারে না। প্রতিটা মানুষ খারাপ হওয়ার জন্য প্রথমে দায়ী তার পরিবার ।। নাদিয়া অ নাজ বলল বর কে সহ লাল দালানে দিয়া দেন ।।কিন্তু কনের কি হবে রইস মিয়া বলল । পাগল কনের বাবা কে বলল – আপনার মেয়েটা কি লিখা পড়া করে । কনের বাবা বলল – হা ছাত্রি হিসাবে খুব ভাল । পাগল বলল পড়তে থাকুক । কাল থেকে কলেজে যাবে । মেয়েটা কে ডাকুন । আমি তাকে এমনকথা বলে দিব যে সে আর এই দুঃখ মনে রাখবে না। রইস মিয়া পুলিশ নিয়ে আসতেই ছেলের বাবা বলল – মিয়া কাজটা ভাল করলা না। পাগল বলল — আগে চিনে নেন ভাল মন্দ কি ? তার পর বলুন ।। নাদিয়া পাগল কে নিয়ে কনের ঘরে গেল-মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে শেষ । পাগল বলল – ওকে কাঁদতে দিন । সারা জীবন কান্না থেকে বেঁচে গেল । মেয়েটির কাছে খুব শান্ত হয়ে বসে বলল- আজ আমার জন্য তোমার ভাল হয়েছে না কি খারাপ হয়েছে । তুমি যদি কান্না কর তাহালে আমি ভাববো আমি অন্যায় করেছে । বিশ্বাস কর তুমি বোন আমি যে কেন এই বিয়েতে আসছি আমি নিজেও জানি না। তোমার কি মনে হয় আমি অপরাধী । মেয়েটি কান্না থামিয়ে বলল – এক পিতা আমারে জন্ম দিছে । আজ একটা শয়তানের কাছ থেকেআমাকে বাচাইলেন । আপনি আমার আর এক পিতা । পাগল বলল- মা চোখের পানিমুছে হাতে কলম ধর । তুমি পড়তে শুরু কর । আমাদের সমাজে কত নারী মিষ্টি কথায় জীবন শেষ হয় । তুমি তাদের বলে জাগিয়ে তুল । বলো তাদের নারী বিয়েইতার পরিচয় না। সেও এ সমাজের মানুষ । মেয়েটি পাগলের হাত ধরে চোখ বন্ধ করে বলল – আমি মানুষ আমি নারী না। কনের বাবা বলল- হে মা এখন থেকে তুমি মানুষ । পাগল তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নাদিয়া আর নাজকে নিয়ে বাসায় ফিরছে ।নাদিয়া বলল- ভাইয়া বর তোমাকে এত ভয় পেল । একদম পায়ে ।—- পাগল বলল । ও আমাকে ভয় পায় নাই—- তাহালে কাকে ভয় পেয়ে পা ধরেছে ।—- আমার সততার কাছে সে ভয় পেয়েছে । কারন সততাকে টাকা দিয়ে কেনাযায় না । মানুষ শুধু মিথ্যা কিনে টাকা দিয়ে । যখন সত্যসামনে আসে তখনমিথ্যা পালিয়ে যায় । মিথ্যা অন্ধকার তাতে কিছুই দেখা যায় না। সততা হলআলোর মত যা সব কিছু পরিষ্কার দেখা যায় ।।— নাজ বলল- ভাইয়া তোমার কাছে অনেক কিছু শেখার আছে ।।—- পাগল বলল । নাজ আমরা শিখতে চাই না। আবার যিনি শিখেছে সে শিখাতেচায় না । ভাবে শিখলে তার মুল্য কমে যাবে ।।রেজিয়া মিলির ছাদে রাতে ফুল গাছ গুলো দেখছে । খুব অল্প সময়ে পুরো ছাদ কি সুন্দর করেছে । এই অল্প সময়ে একটা মানুষ কি করে এত সুন্দর করে গেল । রেজিয়ার স্বামী বলল – ঐ পাগলের কজ দেখেছ । আসলেই মানুষ টি জিনিয়াস । আমার খুব ভাল লেগেছে । যদিও আমি কথা বলিনি ।রেজিয়া বলল জিয়াস না ছাই মিলির উপর সতীন দিয়ে গেল । আজআবার মিলি তার বাড়ী তার স্বামী কে দান করে দিল । মিলি কি কাজটা ঠিক করলো । রেজিয়ার স্বামী বলল – বিশ্বাসে মিলাই তর্কে বহু দূর ।রেজিয়া তার স্বামী কে বলল—- আচ্ছা আমাকে কতটা বিশ্বাস কর ।—– স্বামী বলল । সব টুকু ।—- এই বিশ্বাস আমার কি কাজে লাগবে—– আমি জানি না।—– খুব তাড়াতাড়ি জানবে ।।—- আচ্ছা ভাল । চল ঘুমাতে ।—- তুমি যাও । ঘুমাতে ।। তোমার ছোট ভাই বল আসতে ওর সাথে কথা আছে ।।রেজিয়ার স্বামী ঘরে যেতেই তার দেবর এসে বলল ভাবি আজকের আকাশ টা সুন্দর ।শীত কমে গেছে । ভাইয়ার অ্যাকাউন্ট থেকে কি টাকা তুলে তোমার অ্যাকাউন্ট নিয়েছ । শুন ভাইয়া যে হে তু প্রতিদিন উত্তরা যায় । তাই আমরা সিলেট থেকে বিমানে উঠব । ভাইয়া সকালে অফিসে গেলে আমি তোমাকে সিলেটের বাসে তুলে দিব । ঐ খানে তোমার জন্য একটা হোটেলে রুম রাখা আছে । আমি দুই দিন পড়ে এসব ।আজ রাতে তুমি যে কোন বিষয় নিয়ে ঝগড়া করবে । আমাকে সহ বকা দিবে । তোমার কাছ থেকে যেই টাকা ধার নিয়েছি এই বিষয় নিয়ে । ভাইয়া জানবে তুমি রাগ করে চলে গেছ । তিন দিন পড়ে তুমি তালাক নামা দিয়ে দিবে। ভাই সব দোষ আমাকে দিবে । আমিও রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে সিলেট এসে একসাথে মালয়েশিয়া ।।এই টাকা টাকা নিয়ে সত্যি রাতে রেজিয়া তার স্বামীর সাথে ঝগড়া শুরু করে দিল ।।নাদিয়া বাসায় সবাইকে বলল আজ ভাইয়ার জন্য ঐ মেয়েটার দারুন বাচা বেঁচে গেল । শিলা বলল – মামা কিন্তু একটা জিনিয়াস খালা মনি । নাজু বলল- কি থেকে কি হয় । ওরা নাকিমান্স ভাল না। নাদিয়া বলল – কি আর হবে । কিন্তু ভাইয়া কে যে ভয় পাইছে বেটা নওশা । তুমি যদি দেখতা । নাজু বলল – টা জিনিয়াস ভাই কোথায় । রইস মামার সাথে জিন্দা বাজার গেছে । এই পুকুর নাকি পরিষ্কার করবে । সব পানি মেশিন দিয়ে তুলে নাকি পুকুর ঠিক করবে । নাজু বলে বলিস কি ? হা দুলা ভাইয়ের সাথে কথা হলে দুলা ভাই তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে । আর সে জিনিয়াস পাগল ভাইয়া দুলা ভাইয়ের কাছ থেকে অনুমতি নেয় । শিলার জন্য একটা বাগান করবে ।শিলা বলে মা জিনিয়াস মামা দেখ এই পুকুরটা আগের মত করে দিবে ।রইস মিয়া কে নিয়ে জিন্দা বাজার একটা চায়ের চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছে ।রইস মিয়া বলল –— ভাগনে একটা ঘটনা আপনে কি ভাবে ঐ বর কে চিনলেন ।—- সব কিছু মামা জানতে নেই মামা ।তা মামা আপনি নাকি বিয়ে করেন নাই ।—- তোমারে কে বলছে /—- নাদিয়া—- আসলে মামা একটা মেয়ে আমার পছন ছিল । লন্ডন যাওয়ার আগে বলল তারকাগজ ঠিক হয়ে গেলে আমাকে বিয়ে করবে । আমি তাঁরে টাকা ওদিয়েছি ।তার কাগজ আমার টাকা দিয়ে ঠিক করে । কিন্তু তার পড়ে সে আমাকে বিয়েনা করে গোলাপ গঞ্জ থানার ঢাকা দক্ষিণের এক এক ছেলে বিয়ে করে । ঐ ছেলেদেখতে আমার চেয়ে সুন্দর ও পয়সা আমার চেয়ে বেশী ।।— ও সরি মামা । কিন্তু মামা বিয়ে না করে থাকার মধ্য একটা আলাধা মজা ।— ঠিক বলেছ ভাগনা । এই আমি যখন যা খুশি তাই করি। বিয়ে করলে কি পারতাম ।—- না মামা । বিয়ে করা মানে । বন্ধি ।— আচ্ছা ভাগনা তোমার বাড়ী ঘর নাই না কি ?—- মামা বাড়ী ঘর জিনবনের সব কিছু না। আমি আমার আসল বাড়িটা বানাচ্ছি—- ভাগনা আসল বাড়ী মানে ।—- মামা যেই বাড়ী বানাতে এই দুনিয়ায় আসছি । আমি আমার বাড়ী বানাবএই দুনিয়ার চাইতে সুন্দর বাড়ী ।—- ভাগনা পাগলের মত যে কি বল । এই দুলিয়ার চাইতে সুন্দর বাড়ী কোথায়—- মামা আমি সেই বাড়ী খুজতেছি ।
চলমান —–