সেলিনা জাহান প্রিয়ার গল্প: ‘অ-মানব’- (২৪ তম পর্ব)
সেলিনা জাহান প্রিয়ার গল্প: ‘অ-মানব’- (২৪ তম পর্ব)
———————————————— সেলিনা জাহান প্রিয়া
ট্রাক চালকের নাম সাবু । আসার পথে হেল্পার চলে যাই রাগ করে । সাবু মিয়ার তখন জ্বর । মহাজন কে বলে। কিন্তু মহাজন বলে জত জ্বরেই থাক তাকে আসতে হবে । তারাতারি করতে জেয়ে এই টিলার রাস্তা দিয়ে আসে ।হটাত তার বমি আর জর বেরে যায় । বমি করার জন্য সে ট্রাক থেকে নামে । তার পর আর কিছু মনে নাই । মুসা মিয়া বলল ভাগ্য ভাল এই মানুষ টা ছিল ।
পাগল চালকে বলল জিবনে যা আপনার অধিনে না তাকে কন দিন বিশ্বাস করতে নেই যেমন অসুখ । মানুষের জিবনে মৃত আর রোগ না বলে প্রবেশ করে । মুসা মিয়া বলে – বাবাজি ঠিক বলেছেন ।
সাবু বলে ভাই আপনএ না আসলে আজ কি জানি হত ।
— পাগল বলে সব কিছু একটা অজানা নকশায় হচ্ছে । কেউ এই নকসা দেখতে পায় । আর কেউ পায় না। সব জিবন নিয়ে স্বপ্ন দেখে আর জিবন কি সেটা নিয়ে কেউ কন চিন্তা করে না।
— মুসা মিয়ার মেয়ে পাগলের কথা গুলো আড়াল থেকে শুনে । বেদেনা ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পরেছে । সে তার বাবা কে ডেকে বলে বাবা আত মানুষ ঘরে তো চাউল নাই । দুপুরে কি রান্না করব । যে চাউল আছে তা দিয়ে তো সবার হবে না। মুসা মিয়া মেয়ে কে বলে আল্লাহর মেহেমান আল্লাহ্ একটা ব্যবস্তা করবে । ঘরে আসতেই সাবু বলে চাচজান একটা কথা বললে মনে কিছু নিবেন না।
— কি কথা আর বলবেন আপনি আমি তো কেউ কারো চিনা জানা না।
— আমার মায়ের সাথে আমার একটা পাচ বছরের মেয়ে আছে সে আসবে । আমি কিছু টাকা দিচ্ছি । আপনি আমাদের সবার জন্য কিছু বাজার করেন । এই বলে সাবু মিয়া দুই হাজার টাকা বের করে দিল ।
ডাঃ জিবন আর দিলরুবা হোটেল খুব আরাম করে ঘুমাচ্ছে । ডাঃ জীবনের ঘুম দেখে
দিলরুবা বলে কি উঠবে না ।
— আরে উঠতে মনে চায় না ।
— তাহলে ঘুমাও ।
— হা একটু ঘুমিয়ে নেই । বিকেলে আমরা সাভার যাব ।
— সাভার কেন ।
— আমার এক বন্ধুর বাড়ি । দাওয়াত আছে ।
— না আমি সাভার যাব না। তুমি যাও ।
— কেন গেলে কি হবে ।
— কি আবার হবে । আমি কি তোমার বিয়ে করা বউ ।
— না বিয়ে করা বউ না হলে কি সমস্যা ।
— তোমার সমস্যা না থাকতে পারে কিন্তু আমার আছে । আমি মেয়ে মানুষ । কেউ
দেখলে বা জানতে চাইলে মিথ্যা বলতে হয় । তোমার জন্য আমি যে কত মিথ্যা বলি । আমার বান্ধবি ঠিক বলত মানুষ প্রেমে পড়ে শয়তানের জন্য । এই প্রেম মানুষ কে
মিথ্যা বাদী বানায় ।
— ডাঃ জিবন চিন্তা পড়ে গেল । এবার বলল – ঠিক আছে আশুলিয়া যাব ওকে
— ঠিক আছে । আমি গোসল করতে গেলাম ।
— ডাঃ জিবন দিলরুবার ফোন ম্যাসেজ সব চেক করে দেখল । না। কিছুই নাই ।
সে একটা ফোন দিল তার লোকের কাছে বলল আশুলিয়া ।
— দিলরুবা গোসল শেষ করে বলল -একটা কথা আমাকে বিয়ে করছ কবে।
— দিলরুবা আমি বিয়ে করলে তোমাকেই করব । বাড়ির ঝামেলা টা শেষ করি ।
তার পর ।
— প্রেম করার সময় তো পা ধরে বলেছিলে দিলরুবা তুমি আমার জিবন । জখন চাইবে বিয়ে করব । আসলে তোমরা পুরুষ মানুষরা একবার একটা মেয়ের জিবন
ভোগ করলে অন্য একটা মেয়ের জন্য প্রেম জেগে উঠে । তোমাদের প্রেম শরীর আর কিছু না। তবে আমি দিলরুবা আমার শরীর আমি হাটে তুলব না। আমি বিক্রি একবার হইছি । আর বিক্রি হব না। বাচি আর মরি । তুমি মেয়ে মানুষ দেখছ কিন্তু
আমাকে দেখ নাই ।
— তুমি কি বলতে চাও ।
— জীবন তোমার ফোন রেকট হয় । তুমি জান । আমার সব কিছু তুমি জান না ।
তুমি কখন কার সাথে কি কথা বল । তোমার মোবাইল থেকে সব কিছু এখন
রেকট ।
— জীবন ভয় পেয়ে বলে । এটা কি তুমি ইচ্ছা করে করছ ।
— দেখ প্রেম করছ আমার সাথে । রাতের পর রাত থাকছ আমার সাথে । আর বিয়ে
করবা অন্য মেয়ে । তাহলে তুমি কি ?
— আমি কি মানে ?
— তুমি একটা লোফার ।
— আমি লোফার ?
— ডাঃ। জীবন ভুইয়া তুমি নিজেকে খুব চালাক মনে কর তাই না।
— দিলরুবা কোন চালাকি না ।
— তাহলে এখন বিয়ে কর ।
— বিয়েই কি জীবনের সব ।
— না বিয়েই সব না মিঃ জীবন । মেয়ে মানুষ নিয়ে খেলা সব ।
— আমি তোমার সাথে ঝগড়া করব না।
— তোমাকে তো ভাল মানুষ জন্ম দেই নাই । কাপুরুষ জন্ম দিয়েছে ।
— ছিঃ দিলরুবা ।
— ঘুম থেকে উঠ । আমাকে নিয়ে একটু নিউ মার্কেটে যাও । আর আমি কোন পিল
খাব না। আমি চাই তোমার মত একটা কাপুরুষ আমার গর্ভে জন্ম নেক ।
ডাঃ জীবন অবাক হয়ে দিলরুবার দিকে চেয়ে থাকে কি শান্ত মেয়ে ছিল আজ দেখি পুরা কাল নাগিনী রে বাবা । কোন কথা না বাড়িয়ে সে তার ফোন টা অফ করে দেয় । কারন কথা যদি সত্যি রেকট হয় । তাহলে তো সব পরিকল্পনা ফাস হয়ে যাবে ।
বিকেলে বের হয় ডাঃ জীবন এর দিলরুবা । ডাঃ জীবন তাকে বুঝতে চায় যে
তার পক্ষে এখন কোন ভাবেই বিয়ে করা সম্ভব না। দিলরুবা কে একটা ফাস্ট ফুডের দোকানে বসিয়ে বাহিরে আসে । তার সাথে দুই জন কথা বলে । একজন বলে আমি আপনাকে আমার বোনের জন্ম দিনের কথা বলে হোটেল থেকে নিতে আসব । খুব কাছের কথা বলে আমি আর আপনি ঐ মেয়ে সহ রওনা দিব । তার পর ঐ মেয়ে কে তুলে নিব ।
ডাক্তার জীবন বলে এখন আর সম্ভব না। অ খুব চালাক । হোটেল এ সে তার আসল নাম ঠিকানা ব্যবহার করেছে । আমার সাথে ঢাকা এসেছে এটাও তার বন্ধু জানে । আমরা ছুটি শেষ করে চলে যাব । পড়ে তাকে আমি ঢাকা আবার নিয়ে আসব । এই নাও কিছু টাকা রাখ । ডাঃ জীবন এখন নতুন পরিকল্পনা করছে দেশের বাহিরে চলে যাবে । দিলরুবা কে নিয়ে হোটেলে ফিরে আসে । মনে মনে ভাবতে থাকে কি করা যায় । এমন সময় হোটেলে পুলিশ আসে । সবার রুমে রুমে চেক করছে । এখন ডাঃ জীবনের রুমে পুলিশ । ডাঃ জীবন পরিচয় দেয় সে ডাক্তার । সাথে তার স্ত্রী । পুলিশ বলে আপনি ডাক্তার ঠিক আছে আপনার স্ত্রী ঠিক আছে । তবে আমরা আপনাদের সম্মান করি । এই নিন দুইটা সাদা কাগজ । আপ্নারা শিখিত মানুষ । দুই জন দুই দিকে জান । আমি যা বলব তাই লিখবেন ।
ডাক্তার বলল এটা কেমন কথা । পুলিশ বলল- জিবনে অনেক পরীক্ষা দিয়েছেন স্যার কিন্তু পুলিশের পরীক্ষায় পাস করলে বুঝতে হবে আপনি ভাল ছাত্র । দিলরুবা কিছুটা ভয় পেল । ডাক্তার বলল কি লিখতে হবে ।
পুলিশ হেসে বলল স্যার আপনারা দু জন আপনাদের নাম কে কি করেন লিখেন । দুই জন লিখল । পুলিশ বলল – কেউ কারো দিকে দেখবেন না। এখন
আপনারা আপনাদের বিয়ের তারিখ লিখেন । এবং কোথায় কোন জেলায় বিয়ে হয়েছে লিখেন । কত দিন বিয়ে হয়েছে ? হানিমুন কোথায় করলেন? শ্বশুরের নাম লিখেন ? দু জন দুজানার অভিবাবকের নাম ও ফোন নাম্বার লিখেন ।
পুলিশ বলল- লিখা শেষ দারুন । কাগজ হাতে নিয়ে দেখল । কোন মিল নাই ।
ডাক্তার বলল- সরি ও আমার বান্ধবি । আমারা দু জন দুজন কে ভালবাসি । এখনো বিয়ে করি নাই । মানে খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করব । পুলিশ হেসে বলে
পুলিশের পরীক্ষা বি সি এস থেকে জটিল যারা পাস করে তারা কিন্তু পুলিশের মাথায় কাঁঠাল ভাংতে পারে । আপনারা শিক্ষিত মানুষ যদি আপনারা সমাজ কে নোংরা করেন তাহলে এই সমাজ শিখবে কার কাছ থেকে । দেখুন পুলিশের চোখ ফাকি দেয়া যায় না। আমরা মানুষের চোখের ভাষা দেখেই বুঝে নেই ।
ডাঃ জীবন কে বলল- আপনি সরকারি চাকুরি করেন । আপনার সম্মান আছে ,
আপনার কিছুই হবে না। কিন্তু এই মেয়েটা সমাজে কি হবে । আপনারা সমাজে মুখোস পড়ে সব অকাম করেন আর সব দোষ একজন নারি কে সহ্য করতে হয় । আপনি যত বড় অফিসার হন তাতে আমার কিছুই আসে যায় না। আমি আপনাকে অসামজিক কাজের জন্য গ্রেফতার করলাম । আগে থানায় তার পর অন্য সব । পুলিশ তাদের গাড়িতে তুলে নিল ।
চলমান——–