সেলিনা জাহান প্রিয়ার ধারাবাহিক গল্প: ‘অ-মানব’-(৩১ তম পর্ব)
‘অ-মানব’-(৩১ তম পর্ব)
———————-সেলিনা জাহান প্রিয়া
মিতা সকাল থেকে কাজ নাই । ছাদে গিয়ে বসে আছে । পারু এসে বলল মিতা আমার একটা কাজ করে দে। অ-মানব কে একটু ডেকে দে।
—- আপা অ-মানব মনে হয় একটা ভুত । বা তার সাথে জিন আছে । দেখুন আম্মা জানকে দিয়ে কি সুন্দর করে রান্না করাচ্ছে । খালু জান কে দিয়ে বাগান পরিষ্কার করাচ্ছে । আর আমাকে বলে কি ?
—- কি বলে তোকে শুনি ।
—- বলে আমি নাকি কাজ চোর । একটা মানুষ যদি সকাল থেকে শুধু হাটে তাহলে নাকি ৬০ মাইল আনন্দের সাথে হাটতে পারে । এই বাসায় আমার কোন কাজ নেই ।
——- আচ্ছা তুই আমার সাথে আয় । আর অ-মানব কে আমার রুমে ডেকে পাঠাও
—- আপা আপনি পারবেন না। ও খুব চালাক ।
—– আচ্ছা আগে আসুক ।
অ-মানব এসে বলল আপু আমাকে ডাকছেন ।
—- হ্যা তোমাকে ডাকছি । পারুর স্বামী দুলাল চেয়ে দেখছে ।
—- জি আপা বলুন ।
—- এখন তোমার কি কাজ ।
—- আপা কাজের কোন শেষ নাই । যাদের কাজের জ্ঞান কম তারা কোন কাজের খবর রাখে না। কারন কাজের খবর রাখলে যদি কাজ করতে হয় ।
—- তুমি অনেক বেশি কথা বল । বেশি কথা আমার একদম পছন্দ না।
—- আপা জি
—- বল এখন কি কাজ ।
—- আপা আপনার স্বামী কে পুলিশে দেয়া ।
—- মানে কি ?
—- আপনার স্বামী ভাল জানে ।
—- এই তুমি কি করেছ ।
—- দুলাল মিয়া চুপ ।
—- এই তুমি চুপ কেন ।
— আপা আমি বলি ।
—- না তোমাকে বলতে হবে না।
—- এই চুপ কেন । বল ।
— আচ্ছা অ-মানব তুমিই বল
—- রাতের বেলা মিতার ঘরে গেছিল ।
পারু একদম চুপ । বল কি ? অ-মানব ।
— আপা মিতার কোন দোষ নাই । সে ঘিমের মধ্যে ছিল। আমি শুধু একটা ঘুমের মানুষ কে চুমা দিতে দেখছি । অনেক রাত দেখি বারান্দার বাতিটা নিভে গেল ।
থাক আপা আপনি বেশি কথা বলা পছন্দ করেন না। আমি যাই
—- আরে অ-মানব । তুমি এই কথা আর কাকে বলেছ ।
—- আপনাকে প্রথম ।
—- একটু দাড়াও অ-মানব । এই নাও এখানে এক হাজার টাকা আছে ।
—- আপা আপনাদের মত মানুষের জন্য দেশ নষ্ট হয় । আপনি তাকে শাসন না করে
তার কি দরকার সেই দিকে খেয়াল রাখুন । আর টাকা টা আপনার স্বামী কে দেন
পুরুস্কার হিসাবে । এত ভাল কাজ যেন না করে , আপনার স্মমানের দিকে চেয়ে।
আমি এই কথা কাউকে বলব না। নিজের সংসার আর কাজের প্রতি মন দেন ।
না হয় আজ কাল স্বামী ছিনতাই হয় ।
অ-মানব ঘর থেকে চলে গেলে পারু কাদতে থাকে । দুলাল চুপ করে বসে থাকে কোন কথা বলে না। পারু বলে তুমি আগে থেকেই খারাপ । আমাকে ভালবাসার কথা বলে
তুমি আমাকে ঠকিয়েছ । আসলেই যাদের কাজের কোন যোগ্যতা নাই তারা খারপ
আর ভাল কাজের মানুষের ভুল ধরা । আমি আর আমার বাবার বাসায় থাকব না।
আমাকে কোথায় নিয়ে রাখবে চিন্তা কর । আজ যে ভুল করেছ । কাল যদি আবার কর
ভাই বোন মা বাবার কাছে মুখ দেখাতে পারব না।
রেবেকা বেগম পারুর কান্না শুনে ঘরে এসে বলে কি রে কান্না কেন ।
—- না মা কান্না করি নাই । জিবনে কোন দিন কোন কিছু না বল নাই ।
সব কিছুতেই হ্যা । আজ ভাবছি । জিবনে কিছু না বলার মানুষ থাকতে হয় ।
আমাকে কিছু কাজ শিখাও । লিখা পড়া তো অনেক করেছি । কিন্তু সংসার
কি টা শিখি নাই । দুলাল বলল মা আপনি ঘরে যান । আমি পারুর সাথে একটু
কথা বলি । স্বামী স্ত্রী মধ্যে শুরু হয় একটা নতুন ভুল বুঝাবুঝি ।
আমজাদ সাহেব খুব মজা করে গাছের বই পড়ছে । রেবেকা বেগম বলল তোমার
মেয়ে পারু আজ কান্না করছে ।
— কেন কি হল টাকা লাগবে ।।
— এই টাকা দিয়েই তো ছেলে মেয়ের মাথা নষ্ট করছ । কিছু একটা হয়েছে । কি হয়েছে টা পরিষ্কার না। তবে আজ মনে হয় মেয়েটা কথা বলা শিখেছে । এখন যদি
কিছু হয় ।
জাফর সারাদিন শুধু অ-মানবের দিকে চেয়ে থাকে । আসলেই এটা মানুষ না। ভুত ।
মালি তো একদম চুপ কারন তার কোন কাজ নেই । গাড়ি চালক মিতা কে খুব পছন্দ করে । মিতা আলি কে দেখতে পারে না। তাই আলির মনে খুব কষ্ট । অ-মানব
কারো সাথে কোন কথা বলে না দরকার ছাড়া । আমজাদ সাহেবের জন্য চা নিয়ে
অ-মানব আসে ।
— আমজাদ সাহেব চা হাতে নিয়ে বলে । এই মাত্র আমার চা খেতে ইচ্ছা করছে আর তুমি নিয়ে এলে ।
— স্যার আপনি যদি মন থেকে কাউকে ভাল বাসেন দেখবেন তার যে কোন কিছু
আপনি বলার আগেই সে জেনে যাবে ।
— রেবেকা বেগম বলে তুমি এই বাসায় আজ এক মাস হল এসেছ । আমি এখন
তোমার স্যারের জন্য চা আনতে যেতাম । অ-মানব তুমি আমাকে যা শিখালে আমি খুব মুগ্ধ । রান্না বাজার আর টাইম মেনে সব পরিকল্পনা করা । তোমার স্যার
বলে তুমি নাকি জাদু জান ।
—- অ-মানব হেসে বলে আম্মাজান আপনি মেয়েদের কাজ শিখান ওদের রুটিন করে দেন । আমার কাছ থেকে রান্না আর ঘরের কাজ শিখে নিতে । তাতে তাদের জীবন
সুন্দর হবে । আমজাদ সাহেব বলে রেবেকা তাই কর ।
বাসার এখন দুই মেয়ে অ-মানবের সাথে রান্না শিখে ।। মিতার হাতে ঘড়ি সে টাইম দেখে কাজ করে ।
অ-মানব আমজাদ সাহেব কে নিয়ে বাগানে কাজ করে । মালির কোন কাজ নেই ।
অনেক রাত দুলাল মিয়া চুপ করে আবার মিতা ঘরে যাওয়ার জন্য মিতার দরজার কাছে আসে । মিতা কে ঘুমের মধ্যে অন্ধকার রুমে জাবরে ধরে । মিতা ভাবছে এটা গাড়ি চালক আলি । মিতা বলছে আলি এটা ঠিক না। তুমি যাও কেউ দেখে ফেলবে ।
অ-মানব খুব শান্ত ভাবে পারুর রুমে যেয়ে পারুর পা ধরে ডাক দেয় । পারু ঘুম থেকে উঠে অ-মানব ভাই তুমি কি করে । অ-মানব হাতে ঈসারা দেয় চুপ করে তার সাথে আসার জন্য । পারু তার সাথে আসে । মিতা ঘর দেখিতে বলে জান । কিন্তু আজ তাকে ছারবেন না। আপনি মারবেন । আমি দুলাল কে ধরে রাখব ।
— মিতা বলছে আলি ভাই প্লিস । যান তো । পাগলামি করেন । আমি আপনাকে বিয়ে
করব । এখন যান । পারু ঘরের আলো জেলে দেয় । মিতা বোকা হয়ে দেখে পারু
আপুর স্বামী ।
—- পারু বলে কি রে মিতা দরজা না লাগিয়ে ঘুমাস কেন । কুকুর বিড়াল আছে
চার পাশে জানিস না। দুলাল কে দুই গালে দুই টা চর দেয় । সার্টের কলার ধরে
ঘরে নিয়ে যায় । অ-মানব বলে আপউ কিছু বল না। এটা একটা মানসিক রোগ
হতে পারে । ডাক্তার দেখাও । আর প্রথম দিনের পড় ভাল হবার কথা । আর অপরাধ করলে তার চেহারায় ভয় থাকত । আপনি কিছু মনে নিয়েন না। আর মিতা কে বলে
আসেন যে ভাবছে রাগ করে আপনি ঐ ঘরে গিয়েছিলান ।
মিতা কে ডেকে অ-মানব বলে এটা কাউকে বল না। জিবনে সব কিছু কাউকে বলতে
হয় না বোন । মিতা অ-মানবের হাত ধরে কাদতে লাগলো । অ-মানব মাথায় হাত
দিয়ে বলে পাগল আমি তোর আপন ভাই । যা ঘুমাতে যা।
অ-মানব এসে দেখে মেইন গেইট আজ তালা দেয় নাই জাফর । জাফর কে খোঁজতে
যেয়ে দেখে জাফর ভীমরুল খাঁ আলি আর একজন মানুষ মিলে ঘুমে । তারা যে রাতে তাস খেলেছে এটা বুঝা যাচ্ছে । অ-মানব গেইটের তালা মালির রুমে যেয়ে মেরে দেয় । আর মালির রুমের তালা গেইটে মেরে দেয় । অ-মানব ছাদে উঠে আকাশের দিকে চেয়ে তারা গণতে থাকে ।
রাজ সাহেব হটাত ছাদে আসে । তখন রাত তিনটা প্রায় ।
অ-মানব কে দেখে চেয়ে থাকে । কি করছে এই লোক ছাদে । কিছু বলতে যাবার
আগেই অ-মানব বলল রাজ ভাই আমরা এই বিশাল আকাশে ভেসে আছি । আমরা
কোথায় থেকে আসলাম কোথায় যাব কেউ জানি না। তবু আমাদের বেঁচে থাকার জন্য
কত চেষ্টা কিন্তু তার পড় ও আমদের চলে যেতে হয় । আমরা জন্ম নিয়েছি অন্য
অন্য মানুষের ইচ্ছায় । আমি যে জন্ম নেব টা আমি জানতাম না। আবার আমি কবে
মারা যাব তাও জানি না। আমাদের বলে কি আছে না জন্ম না মৃত্য । এই যে আপনি
সারা দিন ছবি তুলেন । একবার কি ভাবেন আপনি যে মা আপনাকে গর্ভে রেখেছে
তার প্রতি আপনার কিছু কর্তব্য আছে । আপনার বাবা কিছুই করে না। কিন্তু এত টাকা সে কোথায় পেল । কেন আপনার মা বাবা আপনার চাচা ফুফুদের কাছে যায় না। আপনি কি চান যে আপনি একদিন আপনার বাবার মতো ঘর কোনে মানুষ হয়ে যাবেন । আপনার বাবা মারা গেলে কি আপনি আপনার বোন রা আপনাকে কিছু
দিবে , আপনার বোন জামাইরা কেন আপনাকে কোন কিছুতেই কিছু বলে না।
—- রাজ আজ সত্যি অবাক হল অ-মানবের কথা শুনে । অ-মানব আমি কেন
তোমার মত করে ভাবতে পাড়ি না। আমি তো কোন দিন এমন করে চিন্তা করি নাই ।
—- চিন্তা কেউ করতে চায় না। কিন্তু এই চিন্তা তো আপনাকে দিতে হবে তাই না।
—- তুমি আসলে যা বলেছ সব ঠিক । কিন্তু আমার কাউকে ভাল লাগে না।
—- রাজ ভাই আপনি কি আপনার ভাল বাসার মানুষ টাকে আপনার কথা
বলে ছিলেন ।
—- হ্যা বলেছি , আর এই বিষয় নিয়ে চিন্তায় আছি ।
—- কি বলল আপনার ভাল লাগা আর ভাল বাসার মানুষটা ।
—- প্রথমে ভাবলো আমি ফান করছি । পড়ে আমি যখন বললাম সিরিয়াস ।
তখন বলল তুমি কি করবে রাজ ।
— আমি বললাম কি করার আছে । বাবার সম্পদ বাবা তার মেয়েদের দিয়ে দিবে
আমার কি করার আছে ।
— তখন মেয়েটা কি বলল ।।
—- তখন বলল আমাকে রাজ দেখ তাহলে তো তোমার সাথে রিলেসান রাখা যাবে না।
আমার আর যাই হউক টাকা ছাড়া চলতে পারব না।
— তাহলে মেয়েটা টাকার কে ভাল বাসে আপনাকে না। ঠিক ,
— ঠিক বলেছ অ-মানব । তা রাতে জেগে জেগে কি কর । তুমি
— আপনাদের মত মানুষের কথা চিন্তা করি ।।
— আচ্ছা আমি এখন কি করব অ-মানব ।
— যে যেমন তার সাথে তেমন । যে আপনার দুখের সাথী হবে সেই আপনার বন্ধু।
— রাইট । ঠিক বলেছ । চল অ-মানব আমার ঘরে । অনেক কথা আছে । আর তুমি
ঘুমাও কোথায় ।
—- যেই খানে ঘুমাই তা আজ মালি দারিয়ান , ড্রাইভার , আর একজন মিলে দখল ।
গেইট খোলা ছিল । আমি মালির তালা গেইটে আর গেইটের তালা মালির রুমে
আটকে দিয়েছি । এই নেন চাবি ।
রাজ হাসতে হাসতে বলল চল অ-মানব আমরা ঘুমাই । সকালে দেখি কে কি করে । চাবি যে আমার কাছে তুমি তা যান না। সবাই কে এক সাথে কালকে একটা ধুলাই দিমু
তাহলে মনটা পরিষ্কার হয়ে যাবে । অ-মানব আর এই বাড়ির ছোট ছেলে রাজ একসাথে হাসতে হাসতে ঘুমিয়ে পড়ে……………………।
চলমান———-