সেলিনা জাহান প্রিয়ার গল্প: ‘অ-মানব’-(৫১ তম পর্ব)
অ-মানব’-(৫১ তম পর্ব)
———————– সেলিনা জাহান প্রিয়া
বাজারারের অনেক মানুষ ভীর করলো অ-মানব কে ? মঙ্গল মিয়া এসে বলল ভাই একটা কথা বলি । আপনি যেই ভাবে হাসছিলেন আমি প্রথম ভাবলাম আপনি পাগল ।
কিন্তু এখন যেই বিষয় নিয়ে আপনি কথা বলছেন টা কিন্তু ঠিক না। মালেক মিয়া ভাল মানুষ না। আমি ধরম পাশা থাকি । মালেক মিয়া মানুষটার মনে কোন দয়া মায়া নাই ।
আমার ভয় হয় আপনাকে না আবার লোক জন নিয়ে মাইরা হাট পা ভেঙে দেয় । অ-মানব বলল দেখুন আমার কথা আপনি চিন্তা করেছেন । এই চিন্তা খুব ভাল । মালেক মিয়া হয়ত অনেক টাকা আছে । আর আমাদের আছে মায়ের জন্য ভাল বাসা । এই বাজারে কার কার মায়ের জন্য ভালোবাসা আছে হাট তুলুন । যার যার মায়ের জন্য ভালবাসা আছে তারা সবাই আল্লার নামে আমার পাশে থাকবে । আজ মনে করেন আমারা আমাদের স্বার্থের জন্য না । একজন মা দিয়ে শুরু করব । যাতে সারা দেশের মায়ের ভালবাসা যাদের মনে আছে তারা কাজ শুরু করবে । আলফু মিয়া সবাই আলফু ডাকাত বলেই চিনে । বয়স হয়েছে । ১২ বার ২০ বছর জেল খেটেছে । এখন বয়স প্রায় ষাট বছরের মতো হবে । অ-মানব কে ডাক দিয়ে বলল – বাবা কোন ভয় কর না। আমি হলাম আলফু ডাকাত । ভাটি অঞ্চলে আমারে সবাই সালাম দেয় । পুলিশের খাতায় আমি হলাম ডাকাত আর এখন হলাম গিয়ে এই খাটের ইজারাদার । আমার জীবন মোহন গঞ্জ থানার এক ওসি বদলে দিয়েছে । তাঁর সুক্কুর ওসি । আমি ডাকাতি করে ফেরছিলাম । আমাকেও হাতেনাতে ধরে ফেলে নদীতে । রাতে সেই নদীতে অনেক ঝড় হয় । ওসি সাব সাতার জানত না। পানিতে পড়ে যায় । আমি এক হাত বাঁধা অবস্তায় ।নদীতে ঝাপ দিয়ে তাঁর পা দিয়ে ভাসিয়ে সেই ধরি দেই । কোন মতে পানিতে উঠে আমাকে নৌকায় তুলে হাতের বাঁধ খুলে বলে যাও । আমি তোমাকে ছেড়ে দিলাম তুমি আমার জীবন বাচাইছ । আমি সুক্কুর ওসি কে বলি স্যার আমি পালাব না। ডাকাত কোন দিন পুলিশের কাছ থেকে পালায় না। তবে জেল থেকে পালায় ।
তাঁর পড় আমাকে থানায় রাখে । রাতে ওসি সাবের বিবি আমাকে দেখতে এসে ভাই ডাকে । আর বলে আমার ভাই ডাকাত তাহলে মানুষ আমাকে ডাকাতের বোন বলবে ।
ভাই আমি তোমারে জাবিনে আনব । তাঁর পড় সেই সুক্কুর ওসি বিবি সাব আমাকে জাবিনে মুক্ত করে বলে ভাই ন্যায়ের পক্ষে কাজ কর । আমাকে সেই বোন তাঁর কানের ঝুমকা বিক্রি করে টাকা দেয় বলে এই ঝুমকা আমার বাবা বিয়ের সময় দিয়েছিল । আজ তোমাকে দিলাম একটা ভাল কিছু কর ।
আমি আলফু এখন সেই বোনের টাকায় আল্লার রহমতে অনেক টাকার মালিক । আমি আলফু তোমার সাথে আছি বাবা । কার বুকে এত পাঠা দেখি ।
তুমি চল আমার সাথে । আর বল কি কি করতে হবে । আমারা চাই একজন মা ফিরে আসুক আমাদের মাঝে ।
মঙ্গল মিয়া বলল তাইলে মালেক মিয়ার খবর আছে ।
সবাই বলল আমরাও আছি কি কি করতে হবে বল ভাই ।
অ-মানব বলল – জীবনে একটা সমাজ একটা জাতি এভাবেই এগিয়ে যায় । আজ আমরা এগিয়ে গেলাম অনেক দূর । সন্তান বেঁচে থাকতে কোন মা থাকবে না আর বৃদ্ধা আশ্রমে । তাহলে শুনুন – আজ থেকে আগামী সাত দিন এই খবর সবার কাছে পৌঁছে দিন । তাঁর সাথে কোন কথা বলব না। তাঁর কাছে কিছু বিক্রি করব না। তাঁর সাথে বসব না।
আমারা সাত দিন দেখি কি দাড়ায় । আমারা তাঁকে সব কাজে না বলব । না বলব ।
বাজারে সবাই বলল ঠিক আছে তাই হবে , যদি কেউ কথা বলে ভেবে নিব সে তাঁর মাকে অপমান করেছে । সবাই বলল হ্যা এখন থেকে ।
অ-মানব বলল আলফু চাচা সবাই কে বলেন এই সংবাদ গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দিতে ।
আমি এক কাপ চা খাই । আলফু মিয়া বলল চল আমার গতিতে বসে চা খাইবা ।
অ-মানব আলফুর সাথে তাঁর গদির দিকে হাটা দিল । কিছু কিছু মানুষ তাঁর পিছনে আসতে লাগলো ।
আলফু মিয়ার গদি বেশ সুন্দর । গতিতে কাজ করে রুস্তম আর সোহরাব । আলফু মিয়া গদিতে বসেই ডাক দিল কই রে দুই পালোয়ান । আলির দোকান থেকে চা নিয়ে আয় ।
বলবি চায়ের উপড়ে যেন দুধের সর ভাসে । মেহেমান আছে সাথে ডাল পুড়ি নিয়ে আসবি ।
অ-মানব বলল ভাই তোমরা একটু আদা নিয়ে এসো সাথে । আলাদা ভাবে । আমি দুধ চায়ে আদা খাই ।
——- আদা দিয়া দুধ চা কও কি মিয়া । জীবনেও তো খাই নাই ।
অ-মানব একটু হেসে বলল মানুষ জীবন কত রহস্য আমার এই খানে কি থাকার কথা ।
আসলে পাখির ঠিকানা আছে । মানুষের কিন্তু কোন ঠিকানা নাই । আজ মানুষ এ খানে তো কাল মানুষ ঐ খানে ।
—- তা চমৎকার বলেছ বলেছ । তা বাবা তোমার বাড়ি কোথায় আর এত কিছু কি ভাবে জান । মালেকের মা বড় ভাল মহিলা । কিন্তু কেন যে তাঁর মাকে বৃদ্ধা আশ্রমে দিয়েছে আমারা কেউ জানি না। তবে শুনা কথা তাঁর বউয়ের সাথে মনে হয় মিল নাই। মালেকে বউ নাকি অনেক সুন্দরী । আমরা কোন দিন তাঁর বউ কে দেখি নাই ।
রুস্তম চা দিতে দিতে বলল চাচা জান আল্লায় জাতের সাথে জাত মিলায় কিন্তু এমন ভাল মহিলার পেটে কেমনে এত বজ্জাত জন্ম নিল । মালেক মিয়া যেমন তাঁর বউ একেই রকম । মালেক মিয়ার মাইয়া দুই টা মাইয়া ও সেই মায়ের মত । বাপের টাকায়
এমন করে হাটে জমিতে পা পড়ে না।
—— অ-মানব বলল মানুষ সেই পরিবেশে আর যেই পরিবারে বড় হয় তাঁর মধ্যে সেই আচরণ প্রবেশ করে । কেউ বদলাতে পাড়ে শিক্ষা দ্বারা ।
মালেক মিয়া ঘুম থেকে উঠে সকাল ১১ টায় । আজ ও অন্য দিনের মতো নাস্তা করতে বসে বাজারের কাসেম মিয়ার দোকানে । কিন্তু কেউ তারে নাস্তা দিচ্ছে না ।
অনেক বার নাস্তা চাইল কিন্তু কেউ তাঁকে দেয় না। ম্যাসিয়া কে ডাকে একটা চর মারে কি রে হারাম জাদা কত বার নাস্তার কথা বলেছি নাস্তা দেশ না কেন ? ম্যাসিয়ার
চর খেয়ে কোন কথা না বলেই চলে যায় । মালেক মিয়া খুব রাগে হোটেলের ক্যাশ কাউনটারে যায় । ক্যাশে বসা ম্যানেজার কে বলে ঐ ম্যানেজার আমাকে নাস্তা দেয় না কেন ? ম্যানেজার কোন কথা বলে না ।
মালেক মিয়া অবাক হয় হোটেলে সব মানুষ তাঁকে চিনে কিন্তু কেউ কোন কথা বলছে না। রাগের মাথায় হোটেল থেকে বের হয় ১২.৩০ মিনিটে তাঁর লঞ্চ । লঞ্চ ঘাটে যাবার
পথে কম পক্ষে দশ বিশ টা সালাম পায় । আজ কেউ তাঁকে সালাম দিচ্ছে না।
মালেক মিয়ার খুব কাছের মানুষ ফটিক ব্যাপারী । মালেক মিয়া ফটিক কে ডাক দেয় বন্ধু একটু এই দিকে এসো তো কিছু কথা আছে । ফটিক মিয়া কথা না শুনার ভান করে অন্য দিকে চলে যায় । মালেক মিয়া নিজের শরীরে নিজেই চিমটি খায় । কারন সে কি স্বপ্নের দেশে আছে না সত্য সত্য বাজারে আছে বুঝার জন্য ।
হোটেলের ম্যাসিয়ার যাকে চর দিয়েছিল সবাই বলে ভাই অনেক ব্যাথা পাইছ । ম্যাসিয়ার
হাসি দিয়া বলে এটা হল মায়ের জন্য যুদ্ধ । আর যুদ্ধে নামলে তো একটু ব্যাথা পেতেই হয় । মায়ের জন্য এই ব্যাথা কিছুই না।