আদালতে রকির জবানবন্দি এসআই জাহিদ আমার ভাইরে মাইরা ফেলাইছে
অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডি.কম
এসআই জাহিদসহ পাঁচজন মিলে থানায় আমার ভাইরে মাইরা ফেলাইছে। আমারে এসআই জাহিদ থানায় নিয়ে অনেক মারছে। মারার পর আমি অনেক অসুস্থ হয়ে যাই। এর পরে পুলিশ আমারে কোর্টে পাঠায়। কোর্ট থেকে আমারে পরে তিনদিন পর জামিন দিছে। আমি বাড়িতে আইস্যা দেখি আমার ভাইয়ের জানাজা হইতেছে। দেইখ্যা আমি অনেক কান্দি।
আজ সোমবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লার আদালতে রাজধানীর মিরপুরে নিহত জনির ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি তাঁর সাক্ষ্যে এভাবেই ঘটনার বর্ণনা দেন।
রকি আদালতকে আরো বলেন, জানাজা শেষে আমি এসআই জাহিদের ড্রাইভার টুটুলকে জিজ্ঞাস করি, আমার ভাই মরল কেমনে? পরে টুটুল জানায়, জাহিদসহ পাঁচজন আমার ভাইকে থানায় মাইরা ফেলাইছে। আজকে চার আসামি কোর্টে হাজির আছে, আরেকজন নাই। তারে দেখলে আমি চিনতে পারমু।
সাক্ষ্য শেষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) তাপস কুমার পাল জানান, আজ রকির জবানবন্দি শেষ না হওয়ায় বিচারক আগামী ১৭ জানুয়ারি পরবর্তী ধার্য করেছেন।
মামলার বাকি আসামিরা হলেন পল্লবী থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাশেদুল, এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টু, সোর্স সুমন ও রাশেদ।
২০১৪ সালের ৭ আগস্ট তৎকালীন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জহুরুল হকের আদালতে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ এনে নিহত জনির ছোট ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে একটি নালিশি মামলা করেন। পরে বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।
ঢাকা মহানগর হাকিম মারুফ হোসেন এ মামলাটির তদন্ত শেষ করে গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি পাঁচজনকে অভিযুক্ত এবং পাঁচজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্তকালে পুলিশের এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামান মিন্টুকে নতুন করে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
অব্যাহতির সুপারিশ করা পাঁচ আসামি হলেন পল্লবী থানার ওসি জিয়াউর রহমান, থানার এসআই আবদুল বাতেন, রাশেদ ও শোভন কুমার সাহা এবং কনস্টেবল নজরুল।
প্রতিবেদনটি গত বছরের ১৩ জুলাই ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা আমলে নিয়ে পল্লবী থানার এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামান মিন্টু, পুলিশের সোর্স সুমন ও রাশেদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মিরপুর-১১ নম্বর সেকশনে জনির প্রতিবেশী সাদেকের ছেলের গায়ে হলুদ চলাকালে পুলিশের সোর্স সুমন অনুষ্ঠানে মেয়েদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এ সময় জনি ও তাঁর ভাই পুলিশের সোর্স সুমনকে চলে যেতে অনুরোধ করেন। সোর্স সুমন ওই দিন চলে গেলেও পরদিন এসে আবার আগের মতো আচরণ করতে থাকেন। তখন জনি ও তাঁর ভাই তাঁকে আবারও চলে যেতে বললে সোর্স সুমন পুলিশকে ফোন করে তাঁদের ধরে নিয়ে যেতে বলেন। তাঁদের ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় এলাকার লোকজন পুলিশকে ধাওয়া দিলে পুলিশ পাল্টা গুলি ছোড়ে।
পরে জনি ও তাঁর ভাইকে থানায় নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। পরে তাঁদের ছেড়ে দেয় পুলিশ। জনির অবস্থা খারাপ হলে তাঁকে ন্যাশনাল মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আরো খারাপ হলে জনির মা তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।