আপনাকেই কেন বেছে বেছে মশা কামড়ায়?
অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
মশা অত্যন্ত বিরক্তিকর একটি প্রাণী। বলা হয়, পৃথিবীতে যত লোক বাঘের কামড়ে মারা যায় তার চেয়ে বেশি মারা যায় মশার কামড়ে। মশার কামড় খায়নি এমন লোক এই দুনিয়ায় খুঁজে পাওয়া ভার। বসে আছেন বন্ধুদের সঙ্গে। কিন্তু মশাদের টার্গেটে যেন আপনিই। এদিক ওদিক থেকে এসে আপনার গায়েই যেন সূচ ফুটিয়ে পালাচ্ছে মশার দল। কিন্তু এত লোক থাকতে আপনিই কেন? কোনও নির্দিষ্ট কারণ আছে কি? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আলবাত আছে, নইলে সাধে কি আর মশারা বেছে বেছে কাউকে কামড়ায়! মশা কেন কামড়ায় এই নিয়ে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগলেও খুব একটা মাথা ঘামাই না।
তবে কাউকে বেশি মশা কামড়ালে আমরা কটাক্ষ করে বলে থাকি, রক্ত মিষ্টি বলেই মশারা বেশি কামড়াচ্ছে! এ রকম নানা চলতি রসিকতা আমরা করেই থাকি। কিন্তু মশা কেন বেছে বেছে কিছু মানুষকে কেন বেশি কামড়ায়? কারণ অবশ্যই আছে।
মশা কেন কিছু মানুষকে বেশি কামড়ায়, এ নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে আমেরিকান মসকিউটো কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশন (এএমসিএ)। তাদের দাবি, এর পিছনে রয়েছে আমাদের বেশ কিছু বডি ফ্যাক্টর। তবে এই বডি ফ্যাক্টরগুলো যে বেশির ভাগই দায়ী, তেমনটা কিন্তু এখনও প্রমাণিত হয়নি।
শরীরের গন্ধ: যে বডি ফ্যাক্টরগুলোর কথা এএমসিএ বলছে, তার মধ্যে একটি হল মানুষের শরীরের গন্ধ। আমাদের শরীর থেকে নানা রকম গন্ধ বেরোয়। সেই গন্ধেই বেশি আকৃষ্ট হয় মশা। প্রায় ৫০ মিটার দূর থেকে এই গন্ধ পায় মশা।
রক্তের গ্রুপ: আপনার কি রক্তের গ্রুপ ‘ও’? তা হলে মশা আপনার প্রতি বেশি আকৃষ্ট হবে। গবেষণা বলছে, ‘ও’ গ্রুপের মানুষকে বেশি মশা কামড়ায়। তুলনায় কম কামড়ায় ‘এ’ গ্রুপের মানুষদের। ‘বি’ গ্রুপের প্রতি কম আকৃষ্ট হয় মশককুল।
কার্বন ডাই-অক্সাইড: মশারা সমস্ত রকম কার্বন ডাই-অক্সাইডের প্রতি আকৃষ্ট হয়। পূর্ণবয়স্ক মানুষেরা শিশুদের তুলনায় বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড ছাড়ে। ফলে শিশুদের তুলনায় তাদের মশা কামড়ায় বেশি।
ঠিক একই কারণে প্রসূতি মহিলাদের মশা বেশি কামড়ায়। কারণ তারা বেশি Co2 ছাড়ে।
অ্যাথলেট: আপনি কি খেলাধুলা করেন? তা হলে মশা তো আপনাকে ভালবাসবেই! কারণ, খেললে আমাদের শরীর প্রচন্ড গরম হয়ে যায়। সেই সঙ্গে ঘাম হয়। মশারা ল্যাকটিক অ্যসিড, ইউরিক অ্যাসিডের এবং অ্যামোনিয়ার মতো বেশ কিছু কমপাউন্ডের গন্ধের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। আর আমাদের ঘামে এই কমপাউন্ডগুলো থাকে। ফলে মশককুল ধেয়ে আসে।
ত্বক: আপনার ত্বকে কি স্টেরয়েড বা কোলেস্টেরল বেশি মাত্রায় আছে? তা হলে মশারা বেশি আকৃষ্ট হবে। তবে এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই যে ত্বকে কোলেস্টেরল বেশি থাকা মানেই শরীরে তা বেশি আছে।
বিয়ার: আপনি কি বিয়ার খান, তা হলে মশাও আপনাকে বেশি খাবে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বিয়ার খাওয়ার পর আমাদের ঘাম থেকে ইথানলের গন্ধ বেরোয়। তাতে বেশি আকৃষ্ট হয় মশা।
গর্ভবতী : মশাদের টার্গেটে থাকে গর্ভবতীরাও৷ কেন? জানা যাচ্ছে, গর্ভবতীদের শরীরে এক বিশেষ ধরনের গন্ধ থাকে, যা মশাদের আকৃষ্ট করে৷ তাই ঝাঁকে ঝাঁকে তারা গর্ভবতীদের দিকে ছুটে আসে৷ এ ব্যাপারে মহিলাদের আগেভাগে সতর্ক থাকতে হবে৷
ঘামের গন্ধ : অনেকেই বেশি ঘেমে ওঠেন৷ আর ঘামের ল্যাকটিক অ্যাসিড মশাদের হাতছানি দেয়৷ বডি টেমপারেচারের তারতম্যও ঘামের একটা কারণ৷ সুতরাং কারও যদি বেশি ঘাম হয়, তবে মশার আক্রমণের জন্য তৈরি থাকতে হবে৷
পোশাকের রং : পোশাকের রংও মশাদের ডাক পাঠায়৷ বিশেষত গাঢ় কোনও রং৷ লাল রং হলে তো আর কথাই নেই৷ তাই গরম বা যে যে সময়ে মশাদের উপদ্রব বেশি, সেই সময় হালকা রংয়ের পোশাক পরাই শ্রেয়৷
জিন : গবেষণাটিতে ১৮টি আইডেন্টিক্যাল (যেখানে জিনগত বিষয় এক থাকে) এবং ১৯টি ফ্রাটারনাল (যেখানে জিনগত বিষয় এক হয় না) নারী জমজের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা যায় আইডেন্টিক্যাল জমজদের মশারা বেশি কামড়ায় ফ্রাটারনালদের থেকে।
জেমস লোগান আরো বলেন, ভবিষ্যতে হয়তো শরীরের লোশনের পরিবর্তে এমন কোনো ওষুধ আবিষ্কার হবে যা খেলে দেহের ভেতর থেকে পোকামাকড়কে আকর্ষণের উপাদানগুলো হ্রাস পাবে।
জেনে নিন এমন কিছু খাবারের কথা যেগুলো মশার কামড় থেকে আপনাকে দূরে রাখবে, আবার মশা কামড়ালে তার জ্বালাও কমবে।
রসুন
অনেকেই শহরে মশা থেকে দূরে থাকলেও গ্রামের বাড়িতে বা বনে-বাদাড়ে বেড়াতে গিয়ে মশার শিকার হন। তারা বেড়াতে যাবার কয়েক দিন আগে থেকে কাঁচা রসুন খাওয়া শুরু করুন। প্রতিদিন ১-২ কোয়া কাঁচা রসুন খান। ঘামের সাথে রসুনের যে গন্ধ বের হবে তা মশাসহ বিভিন্ন পোকা দূরে রাখতে সক্ষম। এছাড়াও তৈরি করতে পারেন রসুনের এই পেস্ট রিপেলেন্ট।
পিঁয়াজ
শরীরের কোনো একটি বিশেষ জায়গায় যেমন পায়ের তলায় অনেকেরই বেশি মশা কামড়ায়। এই জায়গায় এক টুকরো পিঁয়াজ ঘষে নিন। এটা মশা ও অন্যান্য পোকা দূরে রাখবে।
গুঁড়ো দুধ
যদি মনে হয় মশার কামড়ে ত্বকের বারোটা বেজে গেছে তবে ব্যবহার করতে পারেন গুঁড়ো দুধের পেস্ট। এক ভাগ গুঁড়ো দুধ, দুই ভাগ পানি এবং এক চিমটি লবণ দিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন এবং এটা মশা বা পোকার কামড়ে প্রয়োগ করুন। দুধের এনজাইম ব্যথার উপশম করবে। সানবার্নের জ্বলুনি কমাতেও এই পেস্ট বেশ কার্যকরী।
লবণ
মশার কামড়ের জায়গাটা লবণপানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এর ওপরে তেল মেখে রাখুন।
অলিভ অয়েল
বৃষ্টির দিনে বাড়ির আশেপাশে পানি জমে থাকলে তাতে জন্মাতে পারে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা। এসব পানিতে কয়েক টেবিল চামচ তেল ঢেলে দিলে মশা ডিম ছড়াতে পারবে না। সুযোগ পেলে এসব পানি সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করুন। কফির গুঁড়োও এভাবে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া অলিভ অয়েলের সঙ্গে ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে ত্বকে মাখতে পারেন মশা দূরে রাখার জন্য।
অ্যাপল সাইডার ভিনেগার
রসুনের মতো করেই ব্যবহার করতে পারেন অ্যাপল সাইডার ভিনেগার। টানা কয়েকদিনে এক টেবিল চামচ করে অ্যাপল সাইডার ভিনেগার পান করলে দারুণ উপকার পাবেন। এছাড়া একটি তুলোর বল সাধারণ ভিনেগারে ভিজিয়ে সেটাও ত্বকে ঘষে নিতে পারেন, মশা দূরে থাকবে।
লেবু ও কমলার খোসা
পিঁয়াজের মতো একই কাজ করতে পারে টাটকা লেবু ও কমলার খোসা। এই খোসা ত্বকে ঘষে নিন। সুন্দর গন্ধের পাশাপাশি মশাও দূরে থাকবে।
ভ্যানিলা
ভ্যানিলা এক্সট্রাক্ট ব্যবহার করা হয় বেকিং করতে গিয়ে। সবাই এই সুগন্ধি পছন্দ করেন। কিন্তু মশা মোটেই পছন্দ করে না। এক টেবিল চামচ ভ্যানিলে এক্সট্রাক্ট এক কাপ পানিতে গুলে নিন। এরপর এই মিশ্রণ আপনার ত্বকে মেখে নিন, মশা দূরে থাকবে।
এছাড়াও মশার কামড়ের জ্বালা দূর করতে ব্যবহার করতে পারেন কলা, পুদিনা পাতা এবং মধু। এর যে কোনো একটি মশা যেখানে কামড় দিয়েছে সেই স্থানটিতে ঘষে নিন, ব্যথা কমে আসবে।