সেলিনা জাহান প্রিয়ার গল্প- আবেদ আলির বিয়ে
আবেদ আলির বিয়ে
——————সেলিনা জাহান প্রিয়া
আবেদ আলি বয়স ৪২ এর কাছাকাছি । অনেক চেষ্টা করে পরিবারের লোক জন তাঁকে বিয়ে দিতে পারছে না। তাঁর নাকি বিয়ে করতে লজ্জা লাগে । পরিবারের সবাই
তাঁকে অনেক চেষ্টা করে বিয়ে করাতে পারছে না। এই ছোট দুই ভাই তাঁর জন্য বিয়ে করতে পারছে না। আবেদের মা কিছু দিন কথা বন্ধ রাখে । কিন্তু ছেলের তাতে কোন দয়ামায়া মায়ের প্রতি হয় না। ছোট দুই বোনের বিয়ে হয়েছে । তারা ভাল আছে । মা বোন মিলে অনেক পীর ফকির করেও ছেলে কে বিয়ে দিতে পারছে না।
আবেদ আলির এক কথা আমি বিয়া করব না। এই নিয়া সংসারে মাঝে মাঝে ছোট ছোট ঝামেলা হয়তেই থাকে । ছোট ভাইয়েরা অনেক বার তাঁর বান্ধুবিদের ফোন করে
প্রেমের কথা বলতে বলেছে তাঁর ভাইয়ের সাথে। আবেদ আলি কোন মেয়ের সাথে ফোনে কথা বলে না। অচেনা মেয়ের নাম্বার হলেই কেটে দেয় বকা দেয় । খারাপ ব্যবহার করে । তাই কোন মেয়ে তাঁর সাথে কথা বলে না। আবেদ আলির বোনের বাসায় এক সাইকোলজিস্ট ভাড়া আসে । কথা প্রসঙ্গে একদিন সাইকোলজিস্টের কাছে
তাঁর ভাইয়ের ব্যাপারে কথা বলে । সাইকোলজিস্ট বলে একদম সহজ কাজ ।
আবেদ আলির বাপেও বিয়ে করবে । বোন হেসে বলে আমার বাপের না ভাই কে বিয়ে
করান । সাইকোলজিস্ট বলল- আপনাদের বাসার সবার সাথে কথা বলতে হবে । তবে আবেদ আলি সাহেব আসতে পারবে না। যথারীতি দুই বোন দুই ভাই মা বাবা
সাইকোলজিস্টের নিকট আসে । সাইকোলজিস্ট তাদের বলে আপনারা এমন একজন মেয়ে খুজে বের করেন যে আপনার ছেলে কে বিয়ে করতে রাজি । আর ঐ মেয়ে কে যেন আবেদ আলি না চেনে । আবেদ আলির বাবা বলে আমার এক কলিগের মেয়ে আছে । আমার ছেলে কে তারা পছন্দ করে । মেয়েটাও ভাল কিন্তু মেয়েটা আগে থিয়েটার করত । তাই একটু অপছন্দ । এখনো বিয়ে করে নাই । নাটক করা মেয়ে তো তাই কেউ সহজে বিয়ে করতে চায় না। সাইকোলজিস্ট বলে আল্লাহ আপনাদের
সাহায্য কারি নাটক করা মেয়ে হলে তো কথাই নাই । আমাকে মেয়েটার সাথে কথা
বলতে হবে । আবেদ আলি সাইকোলজিস্ট কে নিয়ে ঐ মেয়ের কাছে যায় । মেয়ে কে
সাইকোলজিস্ট কিছু কথা বলে । এবং আবেদ আলির পরিবারের সবার কথা চিন্তা করে মেয়েকে একটা কাজের কথা বলে সাইকোলজিস্ট । মেয়েটা প্রথমে বলে মানুষ কি বলবে । সাইকোলজিস্ট হেসে বলে যারা কথা বলবে তারাই আপনাকে সহযোগিতা করবে । আর বর্ষা কাল নাটকের প্লাটফরম খুব সুন্দর । মেয়ের সাথে কথা শেষ করে
সাইকোলজিস্ট বলে আঙ্কেল এখন আপনি আপনার ছোট দুই ছেলে কে নিয়ে আমার
বাসায় আসেন । আবেদ আলির ছোট দুই ভাই কে নিয়ে সাইকোলজিস্ট তাঁর বাসায় মিটিং করে । দুই ভাই তো মহা খুশি তারা দুই জন মিলে মহল্লার প্রায় ১০০ বন্ধু রেডি করে । আবেদ আলি কোন বিয়ে বা জন্ম দিনে পরিবারের সাথে যায় না। কারণ গেলেই সবাই তাঁকে বিয়ের কথা বলে । সকাল থেকে খুব বৃষ্টি । আবেদ আলির বাসায়
একটা ফোন করে সাইকোলজিস্ট । আবেদ আলির মা জানায় আবেদ আলি বাসায় আছে । সাইকোলজিস্ট বলে আপনি মেয়ের বাসার কথা বলে বাসা থেকে বের হন ।
আবেদ আলি বাসায় একা একা টেলিভিশন দেখছে । আবেদ আলির মা আবেদ কে বলে একটু তোর বোন ডাকছে আমি দেখা করে আসি । বাসা খালি সাইকোলজিস্ট ছোট দুই ভাই কে প্রস্তুতি নিতে বলে । মেয়েটা একটা সুন্দর শাড়ি পড়ে ভাল করে সেজে
আবেদ আলির বাসায় এসে কলিং বেল বাজায় । আবেদ আলি দরজা খুলে দেয় । মেয়েটা প্রায় ভিজে গেছে । বলল ভাই বাহিরে খুব বৃষ্টি আমি একটু বাথরুম ব্যবহার করতে পারি । আবেদ আলি বলে বসায় তো কেউ নেই । মেয়েটা হেসে বলে ছিঃ কি বলছেন আপনি আছেন । আর আপনাকে দেখে মনে হয় না আপনি খারাপ।প্লীজ ভয় লাগলে আপনি দরজাটা খোলা রাখেন । মেয়েটার সরলতা চাহনি আর মিষ্টি হাসি দেখে আবেদ আলি তাঁকে বাসায় প্রবেশ করতে দেয় । মেয়েটা বাথ রুমে যায় । ৫ মিনিটে ই বৃষ্টির মধ্য মহল্লার রংবাজ ছিটকা তারু আর রাসেলের দল বল নিয়ে বাসায় ঢুকে আবেদ আলি কে বলে ছিঃ! ” আপনি বি হালায় দুই নাম্বার” । “বাসায় মাইয়া মানুষ নিয়া ফুরতি করেন খালি বাসায়” । ভাবছেন বৃষ্টির দিন কেউ দেখব না। ভাবছেন পলাইয়া কাম সারবেন ! আমরা মহল্লার পোলাপান সব বাসার খবর রাখি । আবেদ আলি বলে কি বলছ ? রাসেল বলে ৫ লাখ টাকা দে । ঐ মহল্লার সবারে ক আবেদ মিয়া বিয়া সাদি না কইরা মহল্লায় আকাম কুকাম করবার লাগছে । তারু একটা চর দেয় আবেদ আলির গালে । মেয়েটা বাথ রুম থেকে আসতেই । তারু বলে আজ হাতে নাতে ধরা খাইছ । মেয়েটা বলে এ সব কি বলছেন । আমি তো এর কোন মানে খুজে পাই না । রাসেল বলে দুই জন রে পিটান দিলে সব কইবা । পুলিশ রিমান্ডে নিলে সবাই বলে তোমরা বি হালায় বলবা । এর মধ্য মহল্লার লোক জন এসে ভরে যায় । আবেদা আলির মা বাবা ভাই বোন সবাই চলে আসে । মেয়েটা সোফায় বসে কাদতে থাকে । একজন বলে পুলিশ নিয়ে আয় ।
এর মধ্য সাইকোলজিস্ট এসে হাজির মেয়ের কাজিন হিসাবে । সবাই কে বলল আমার বোন কে এভাবে খারাপ বানানো হল কেন সে শিক্ষিত মেয়ে । তারু রাসেল অন্য সব বন্ধুরা সাইকোলজিস্টের শিখানো কথা মতে কথা বলতে শুরু করল । মেয়েটা বলছে এখন আমার মরা ছারা কোন গতি নাই । আবেদের বোন বলে হ আমার ভাই যদি খারাপ কিছু করে থাকে তাহলে এই মেয়ে কে আমার ভাই কে দিয়ে বিয়ে করিয়ে দে । আজ যদি বউ থাকত তাহলে এত বাজে কথা শুনতে হত না। আমি আমার শ্বশুর বাড়িতে মুখ দেখাতে পারব না। আবেদের মা পায়ের জুতা খুলে ছেলে কে মারে আর বলে আমার পেটে কি রেখছি । আমি বাসায় নাই তুই মেয়ে কে কেন বাসায় প্রবেশ করতে দিলি । বাবা তারু রাসেল তোমরা খুব ভাল কাজ করেছ । মেয়ের ভাই কই সাইকোলজিস্ট বলে খালা মনি আমি এই খানে । বাবা আমার ইজ্জত বাচাও । তোমার বোনের মা বাবা কে আসতে বল । অন্য দুই ছেলে কে কাজি আনতে বলে । সন্ধ্যা ৭ টায় আবেদ আলির বিয়ে হয়ে যায় । আবেদ আলি বাসর ঘরে মেয়েটাকে বলে
আজ আমার জন্য তুমি অনেক আপমান হলে । মেয়েটা কান্না ভরা কণ্ঠে বলে
আল্লাহ হয়ত আমাদের কপালে এটাই রেখেছে । আমি কোন দিন বিয়ে করব না বলে
প্রতিজ্ঞা করে ছিলাম । আবেদ আলি বলে ঠিক আমিও । তাই আল্লাহ এই দু জন কে
এই কঠিন শিক্ষা দিল । আবেদ আলি মেয়েটার হাত ধরে বলে যা হয়েছে ভুলে যাও ।
বাহিরে সবাই রাতের নান্না মিয়ার পোলাও খাচ্ছে । তারু আর রাসেল কে আবেদ আলির মা বুকে জরিয়ে বলে মহল্লায় দু একটা মাস্তান না থাকলে মহল্লার ভাল কাজ হয় না। সাইকোলজিস্ট এবার বলে খালামনি আমার ফি । খালা মনি বলে বিয়ের সময় দাওয়াত দিও । পোলার বিয়াতে তো আনন্দ করতে পারলাম না বাবা সাইকোলজিস্ট তোমার বিয়েতে কিন্তু আমার আনন্দ হবে তোমার উপহার । খালামনি সাইকোলজিস্ট কে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় ।