আলকুশি কি? আলকুশি বীজের উপকারিতা, অপকারিতা ও আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার নিয়ম।
বৈজ্ঞানিক নাম: Mucuna pruriens, এটি Fabaceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ। আলকুশীর ইংরেজি: Velvet bean, Cowitch, Cowhage, Kapikachu, Nescafe, Sea bean।
আমাদের দেশের অঞ্চলভেদে আলকুশীর স্থানীয় নাম- দয়ারগুঁড়ো, শুয়াগুঁড়া, বিলাইখামচি, বিলাইআঁচড়া, সোয়াস গুঁড়ি, বিচ্ছুটি ইত্যাদি নামে একে ডাকা হয়। লাতিন শব্দ পিউরিয়েন্স মানে চুলকানোর অনুভূতি। মখমলের মতো ফলের খোসা হওয়ায় ইংরেজি নাম- বেঙ্গল ভেলভেট বিন, বিন মানে শিম বা শুঁটি। শিম পরিবারের একটি উদ্ভিদ। ফল অনেকটা শিমের মতো, ৪ থেকে ৬ টা বীজ থাকে। কচি ফলের খোসার ওপরে খাটো শুঁয়া থাকে ও খোসা থাকে সবুজাভ, ধীরে ধীরে তা বাদামি-সোনালি মখমলের মতো হয়ে যায়। ফলগুলো থোকা ধরে শিমের মতোই। একটা ফলের মধ্যে শিমের মতো চার-পাঁচটা শক্ত বীজ থাকে। আলকুশীর ফল পাকার সময় হলে এর খোসা থেকে পশমগুলো বাতাসে উড়তে শুরু করে। বনে থাকা বানরও তা বুঝতে পারে। তাই সে সময় তারা দল বেঁধে সে জায়গা থেকে সটকে পড়ে। পাকা ফল ঝরে মাটিতে পড়লে আবার তারা সেখানে ফিরে আসে। সেগুলো তারা খায় বিশেষ দৈহিক কারণে। কিছু আলকুশি আছে যার লোম নেই বললেই চলে সেটা কাকাণ্ডোল, Mucuna pruriens var. utilis নামি পরিচিত। মধ্য আমেরিকায় আলকুশির বীচি আগুনে ভেজে চূর্ণ করা হয় কফির বিকল্প হিসেবে। এ কারণে ব্রাজিলসহ অন্যান্য দেশে এর প্রচলিত নাম হচ্ছে নেস ক্যাফে। গুয়েতেমালায় কেচি সম্প্রদায়ের মানুষ এখনও খাদ্যশস্য হিসেবে এটি আবাদ করে। সবজি হিসেবে রান্না করে খায়।
আলকুশি বীজের উপকারিতা–
যৌ*ন স্বাস্থ্য ভালো করে: আলকুশি বীজ, পাতার রস মানব দেহের উপকারে ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি প্রজনন ক্ষমতাকে বাড়াতে সাহায্য করে। এটি নিয়মিত খেলে শুক্রাণু বৃদ্ধি করে যা প্রজনন এর ক্ষেত্রে ভুমিকা পালন করে। গরম দুধে মিশিয়ে Alkushi Powder খেলে বীর্য ঘন হয়। তাছাড়া এটি টেস্টস্টরেন মাত্রা বাড়িয়ে দেয় ফলে শুক্রানুর সংখ্যা বৃদ্ধি ও গতিশীল করে। যার ফলে যৌ*ন ক্ষমতা বহুগুনে বেড়ে যায়। আরও ভালো ফলাফল পেতে, আধা চা চামচ আলকুশির সাথে ১চা চামচ অশ্বগন্ধা ১গ্লাস দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন, সাথে মধু মিশিয়ে নিতে পারেন।
প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি ও বন্ধ্যাতা দুরীকরণ: কম টেস্টস্টরেন বা ফলিকন স্টিমুলেটিং হরমোন ও পোল্যাক্তিন বন্ধ্যাতা এর কারন হিসাবে পরিচিত। নিয়মিত Alkushi Powder খেলে এই সমস্যা সমধান পাওয়া যায়।
স্ট্রেস হ্রাস করে: কিছু গবেষণা পরামর্শ দেয় যে আলকুশি স্ট্রেস কমাতে এবং স্ট্রেসের প্রতি শরীরের প্রতিক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
ডায়বেটিস রোগ প্রতিরোধ করে: আলকুশি বীজের পাউডারে ডি চিরো ইনসিডল নামক একটি উপাদান থাকে। যা ইন্সুলিন এর প্রভাব অনুকরন করতে পারে। যা রক্তে সুগার এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ফলে ডায়বেটিস রোগ প্রতিরধে বিশেষ ভুমিকা রাখে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ: পরিশোধিত ও বিশুদ্ধ আলকুশির বীজের পাউডার নিয়মিত খেলে তা ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। এটি সেবনে গ্লুটাথিয়ন ও ক্যাটালজের পরিমাণ বৃদ্ধি করে থাকে। ফলে এটি এন্টি অক্সিডেন্ট ও ফ্রি র্যাডিক্যাল এর আঘাত থেকে কোষ গুলকে রক্ষা করতে পারে।
উর্বরতা এবং লিবিডো: আলকুশির অ্যাফ্রোডিসিয়াক বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয় এবং ডোপামিন এবং অন্যান্য কারণের উপর প্রভাবের কারণে পুরুষের উর্বরতা বৃদ্ধি করতে পারে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য: উদ্ভিদে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ফ্রি র্যাডিক্যালস দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি থেকে কোষগুলিকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। তাছাড়া দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
নিউরোপ্রোটেক্টিভ প্রভাব: কিছু গবেষণা ইঙ্গিত করে যে আলকুশির যৌগগুলির নিউরোপ্রোটেক্টিভ প্রভাব থাকতে পারে, যা সামগ্রিক মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে।
আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার নিয়ম–
সাধারণভাবে আলকুশি বীজের পাউডার প্রতিদিন প্রায় ১ থেকে ২গ্রাম (প্রায় ১/২ থেকে ১চা চামচ) খেতে পারেন। এটি খাবার কিছু উপায় রয়েছে। নিচে কিছু আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
পাউডার হিসাবে: আলকুশি বীজ খাঁটি দুধে শোধন করে শুকিয়ে পাউডার করে নিতে হয়। Alkushi Powder গরম দুধ বা পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। সাথে প্রয়োজন হলে মধু যোগ করতে পারেন।
বীজ হিসাবে: আলকুশি সিমের বিচির মতো করে রান্না করেও খাওয়া হয়ে থাকে । তাজা বীজ সিদ্ধ করে সালাদ হিসেবেও খাতে পারেন।
ক্যাপসুল হিসেবে: সাপ্লিমেন্ট হিসেবে আলকুশি বীজের ক্যাপসুল পাওয়া যায়। তবে তা গ্রহনের পূর্বে হাকিম বা ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
চা এর মতো করে: গরম পানিতে দারুচিনি গুঁড়া, চিনি ও আলকুশি পাউডার মিশিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারেন।
Alkushi Powder খাওয়ার নিয়ম এর মধ্যে এগুলো অন্যতম বলে মনে করা হয়। তবে আপনি যদি অন্য কোন ঔষধ সেবন করে থাকেন তাহলে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরী।
আলকুশি বীজের উপকারিতা–
উপকারিতা এর পাশাপাশি অত্যধিক সেবনের ফলে বমি বমি ভাব, হজম সংক্রান্ত সমস্যা এবং উচ্চ L-DOPA মাত্রা সম্পর্কিত জটিলতা সহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। কোনো নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য উদ্বেগের জন্য এটি ব্যবহার করার আগে সর্বদা একটি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করুন। এমনকি উচ্চ এল-ডোপা সামগ্রীর কারণে, আলকুশি খাওয়ার ফলে মাথাব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দনের মতো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
অতিরিক্ত L-DOPA গ্রহণের ফলে কিছু ব্যক্তির মেজাজ পরিবর্তন, উদ্বেগ এবং এমনকি হ্যালুসিনেশন হতে পারে।
আলকুশি ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়া হতে পারে, বিশেষ করে যে ওষুধগুলি পারকিনসন রোগ এবং বিষণ্নতার চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
বিশেষ সতর্কতাঃ গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়েদের সেবন করা উচিত নয়। অপ্রাপ্তবয়স্কদের সেবন নিষেধ।
আলকুশি পাউডার এর দাম–
বর্তমানে বিভিন্ন ওয়েভ সাইটে আলকুশি বীজ বা আলকুশি বীজ এর পাউডার পাওয়া যায়। তবে এক একটা ওয়েভসাইটে আলাদা আলাদা রকমের দাম দেওয়া থাকে। দামের তারতম্যের কারনে আসল পণ্য চিনতে কষ্ট হয়। তবে খাঁটি জিনিসের দাম সব সময় এ একটু বেশি থাকে। এ ক্ষেত্রে ভালো ও বিশ্বস্ত সাইট থেকে কেনা প্রয়োজন।
অর্গানিক আলকুশী কোন সহজলভ্য উপাদান নয়। কারণ এটি চাষ ও উৎপাদন খুবই কষ্টসাধ্য এবং এর জন্য নির্দিষ্ট আবহাওয়ার প্রয়োজন হয়। আমাদের নিজস্ব তত্বাবধানে আলকুশি বীজ এর খোসা ছাড়ানোর পর গরুর খাঁটি দুধ দিয়ে শোধন করে প্রসেস করা হয় Organic Folmul-এর প্রিমিয়াম আলকুশি পাউডার। এতে কোন ক্ষতিকর ও অপ্রয়োজনীয় উপাদান নেই, কারণ আমরা শুধুমাত্র আলকুশি বীজের গুঁড়া ছাড়া অন্য কিছু ব্যবহার করি না। আমাদের আলকুশি পাউডার এর কার্যকরীতা বাজারে বিক্রি হওয়া আলকুশি পাউডার থেকে উন্নত।