উপমহাদেশে গণতন্ত্রের হাল হকিকত
উপমহাদেশে গণতন্ত্রের হাল হকিকত
সিডনীর কথকতা-২৪
রণেশ মৈত্র (সিডনী থেকে)
সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ।
উপমহাদেশে বাস্তবে এখন তিনটি দেশ। বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্থান। ভারত তিনটি দেশের মধ্যে বৃহত্তম এবং নানা আন্দোলনে যথা সাম্রাজ্যবাধ বিরোধী, সামন্তবাদ বিরোধী, সাম্প্রদায়িকতা ও পুঁজিবাদ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের ঐতিহ্যও ভারতের বিপুল । সেখানে ঔপনিবেশিক শাসন উচ্ছেদের পর থেকে এতকাল যে গণতন্ত্রের চর্চা চলছিল তার খ্যাতি অনন্য উচ্চতায় উঠেছিল আন্তর্জাতিক পরিসরে। একথা আজ নির্দ্ধিধায় বলা চলে যে ১৯৫১ (!) সালে স্বাধীন ভারতের সংবিধান রচনা ও লোকসভায় তা গ্রহণের পর থেকে ২০১৪ পর্যন্ত বিগত ৬২/৬৩ বছর ধরে ঐ দেশটিতে গণতন্ত্র চর্চা বিতর্কের উর্দ্ধেই ছিল। ফলে যথার্থই বিশ্ববাসী
বলতো যে ভারত হলো “পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র” বা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। সময় সময় কম বেশি উত্থান পতন ও আপোষকামিতা ঐ গণতন্ত্রের উজ্জ্বলতাকে কিছুটা ম্লান করলেও তা ছিল অত্যন্ত সাময়িক এবং মানুষের গণতন্ত্রের আকাংখা ও গণতান্ত্রিক চেতনাবোধ এবং দেশের সংবিধান ও শ৩িশালী নির্বাচন কমিশনে এবং সর্বোপরি ভারতের আদর্শ বিচারব্যস্থা মিলিতভাবেই সকল ক্লেদ উপক্ষো করে গণতন্ত্রের পতাকা সমুজ্জ্বল রাখতে সক্ষম হয়েছিল। এই সময়কালের মধ্যে কখনও কখনও উচ্চ ক্ষমতালিপ্সা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও বর্ণবাদী পশ্চাতৎপদতা গণতন্ত্রকে সাময়িকভাবে বিবর্ণ করে তুলতে সক্ষম হলেও দীর্ঘ মেয়াদের জন্য
সে দেশে গণতন্ত্রকে বিপর্যস্ত বা বিধ্বস্ত করতে পারেনি।
একই কারণে সময় সময় সাময়িকভাবে হলেও ভারতের নানা অঞ্চলে সংঘঠিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামা, নারী পুরুষের মধ্যে বিরাজিত বৈষম্য, জাত-পাত নিয়ে ঘটে যাওয়া নানা দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে কড়া মনোভাব নিয়ে তা দমনে উপযুক্ত পরিমানে সক্ষম না হলেও দিল্লী মসনদে কংগ্রেস দীর্ঘতম সময়কাল ধরে গদিনলিন থাকতে পেরেছিল। আবার মূলত কংগ্রেসের দুর্বলতার এবং ব্যর্থতার কারণেই সম্ভবত ঐ বিশাল দেশটির প্রদেশে প্রদেশে বহু সংখ্যক আঞ্চলিক দলও গড়ে উঠেছিল। ঐ দলগুলি একদিকে যেমন প্রকৃত পক্ষে জাতীয় দল হিসেবেও গড়ে উঠতে পারছে না তেমনই আবার লোকসভায় স্থায়ীভাবে কোন শক্তির ভারসাম্য রক্ষা করতেও পারছে না। পরিণতিতে সে দেশের রাজনীতিতে নানবিধ সুবিধাবাদ ঠাঁই করে নিতে সক্ষম হচ্ছে। গণতান্ত্রিক কাঠামোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ঐ আঞ্চলিক দলগুলি কংগ্রেসের নানা দুর্বলতা চিহ্নিত করতে সক্ষম হলেও আন্দোলনের মাধ্যমে তা দূর করার ভূমিকায় তাদেরকে তেমন একটা দেখা যায় না। তবে সময় সময় বিশেষ করে ইদানিং বিজেপির সর্বভারতীয় এবং সর্বমুখী আক্রমনের শিকার হয়ে বিপর্যস্ত ভারতের জনগণের মনোভাবের কারণে কর্ণাটকের সাম্প্রতিক নির্বাচনে বিজেপির অসৎ ও সংবিধান বিরোধী কর্মকান্ডের পরিণতিতে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিতব্য লোকসভা নির্বাচনকে লক্ষ্য করে আঞ্চলিক দলগুলি ইতিবাচক পথে অগ্রসর হবে এমন লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
ভারতে দীর্ঘকাল ধরে তলে তলে শক্তিশালী হয়ে ওঠা সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদের মত ক্ষতিকর এবং জাতীয় ঐক্য বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে বিজেপি গড়ে উঠলেও তা ভারতের জাতীয় পর্যায়ে দীর্ঘকাল যাবত কোনো শক্তিশালী দল হিসেবে গড়ে উঠতে সক্ষম না হলেও অকষ্মাৎই যেন দেখা গেল কিছু লোকসভা নির্বাচনে তারা ভারতের প্রায় সকল প্রদেশ থেকেই বিপুল সংখ্যক সদস্য জিতিয়ে অকল্পনীয় ভোটাধিক্যে দিল্লীর সিংহাসন দখল করে বসলো সাবেক গুজরাটি মু্খ্যমন্ত্রী নরেন্দধ মোদীর নেতৃত্বে।
ভারতের সাম্প্রদায়িক শক্তিসমূহের এই উত্থানের পেছনে একদিকে সর্বভারতীয় পর্যায়ে একের পর এক কংগেসের ব্যর্থতা বিকল্প সর্বভারতীয় অসাম্প্রদায়িক দল, রাজনৈতিক দল হিসেবে অনন্য কোন দল বিশেষ করে সে দেশের কোন বাম গণতান্ত্রিক শক্তি গড়ে উঠতে না পারা এবং সর্বোপরি “বাবরি মসজিদ অভিযানকে” প্রতিরোধে কংগ্রেসের অমার্জনীয় ব্যর্থতাই মূলত দায়ী। সাম্প্রদায়িক শক্তির এই উত্থান ভারতীয় গণতন্ত্রের আন্তর্জাতিক মর্যাদাকে যেমন আহত করেছে, তেমনই আবার ভারতের গণতন্ত্রকে নানাভাবে কলুষিত করেও তুলছে। এই একটিমাত্র মেয়াদে দিল্লীর শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েই বিজেপি রাষ্টধীয় উদ্যেগে সাম্প্রদায়িকতার যে
তা সারা ভারত ব্যপী শুরু করে, তা ঐদেশের অতীতের সকল গ্লানিকে হার মানিয়েছে। একই সাথে তা মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার ও গণতন্ত্রকেও পদদলিত এবং কুলষিত করেছে।
তদুপরি বিজেপি হিন্দুত্ববাদের সাথে অর্থনৈতিক অসততাকেও বৈধতা দিতে সচেষ্ট বিগত লোকসভা নির্বাচনী অভিযান পরিচালনার সময় থেকেই। যেভাবে নরেন্দধ মোদি কোটি কোটি টাকা খরচ করে হেলিকপ্টার ভাড়া করে অন্ততঃ একটি মাসজুড়ে প্রতিটি প্রদেশর বিভিন্ন এলাকায় সভা করে বেড়ালেন সেই অর্থ তাঁর নিজ ̄^ উপার্জিত ছিল না, ছিল না তাঁর দলীয় তহবিলেও । ঐ বিপুল অর্থ দিবি ̈ তিনি পেয়েছিলেন ভারতের একচেটিয়া পূঁজিপতিদের কাছ থেকে। ̄^ভাতই তাদের ̄^ার্থ রক্ষার লিখিত বা মৌখিক অ১⁄২ীকার করেই।
বিগত কয়টি বছর ধরে মোদির কার্যকলাপ তারই ই১ি⁄২ত দেয়। এই আর্থিক দুর্নীতিকে কোনভাবই বৈধ ̈তা দেওয়া চলে না। বিষয়টি ধরতে নির্বাচন কমিশনও ব ̈র্থতার পরিচয় দিয়েছে অপ্রত ̈াশিতভাবে।
তদুপরি ঐ শত শত জনসভা ̧লিতে ̄^য়ং নরেন্দধ মোদি যে সকল প্রতিশ্রুতি ভারতের জনগণকে দিয়েছিলেন তাও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রক্ষিত হয়নি। ২০১৯ এর আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আর যে কয়েকটি মাস বাকী রয়েছে সেই প্রতিশ্রুতি ̧লি এই কয়েকটি মাসে যে পূরণ হবে না বিভিন্ন প্রদেশের সাধারণ মানুষেরা তা বেশ উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন। যদিও এই মোহমু৩ি ব ̈াপভাবে ভারতের সর্বত্র ঘটেছে এমন দাবি করাটাও অস১⁄২ত এবং অবা ̄Íব বলে উপলব্ধি করি। তবে তার শুভ সূচনা বেশ কিছুদিন যাবতই লক্ষ ̈ করা যাচ্ছে। এমন কি বিজেপির তরফ থেকে অর্থনৈতিক দুর্নীতি নানাভাবে প্রতিরোধ করে অসাম্পধদায়িক গণতন্ত্র পুণরুদ্ধারের সফল সূচনাও ঘটতে দেখা গেল সম্পধতি দক্ষিণ ভারতীয় প্রদেশ কর্ণাটকে।
উল্লেখ ̈, কর্ণাটকের সাম্পধতিক প্রাদেশিক নির্বাচনে বিজেপি একক বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভুত হয়েছিল তা সত ̈ কিন্তু তারা একক সংখ ̈াগরিষ্ঠতা অর্জনে ব ̈র্থ হয়। দ্বিতীয় ও ত…তীয় দল হিসেবে বেরিয়ে আসেন কংগ্রেস ও অপর একটি ধর্মনিরপেক্ষ আঞ্চলিক দল ।
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী অত ̈ন্ত নিপুনভাবে বিষয়টির সফল পরিসমাপ্তি ঘটালেন ত…তীয় দলটির সাথে জোটবদ্ধ হয়ে জোটভু৩ সকল সদসে ̈র ̄^াক্ষরসহ লিখিত আবেদন জানিয়ে কর্ণাটকের গভর্ণরকে এই জোটকে মন্ত্রীসভা গঠনের আমন্ত্রণ জানাতে অনুরোধ
জানানোর মাধে ̈মে। গভর্ণরকে বিজেপি জানালো তারা বৃহত্তম দল এবং মন্ত্রীসভা গঠনের সুযোগ তাদেরই প্রাপ ̈। মন্ত্রীসভা গঠনের সুযোগ পেলে ১৫ দিনের মধে ̈ই বিধানসভার অধিবেশন ডেকে সংখ ̈াগরিষ্ঠতা দেখাতে তারা সক্ষম হবেন। বি ̄§য়করভাবে গভর্ণর
বিজেপির আবেদনে সাড়া দিয়ে মন্ত্রীসভা গঠনের সুযোগ দেওয়ামাত্র কংগ্রেস উচ্চ আদালতের শরনাপন্ন হয়। শেষ পর্যন্ত তা দধুতই ভারতের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। সুপ্রিম কোর্ট তখন গভর্ণরের হাতে লিখিত মেজরিটি থাকতেও বিজেপিকে মন্ত্রীসভা গঠনের সুযোগদান বি ̄§য়কর ভেবে ১৫ দিনের পরিবর্তে ২৪ ঘন্টার মধে ̈ বিধানসভার অধিবেশন ডেকে সংখ ̈াধিক ̈ প্রমাণের আদেশ দিলে বিজেপি পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের মনোনীত মুখ ̈মন্ত্রী পদত ̈াগ করেন। গঠিত হয় কংগ্রেস পরিচালিত বিজেপি বিরোধী এক মন্ত্রীসভা যার কোন নমুনা ইদানিং কালের ভারতে চোখে পড়ে না। বিজেপির লক্ষ ̈ ছিল এম. এ. এ কেনাবেচার কিন্তু সে সময় তারা পেল না ।
শুধু তাই নয় এই নতুন মন্ত্রীসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে বিজেপি বিরোধী সকল ভারতীয় নেতার সমবেত হওয়ার মাধ ̈মে তাঁরা একটি বার্তা সকলকে দিলেন যে ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে সাম্পধদায়িকতা বিরোধী বিজেপি বিরোধী জোট গঠিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তবে সেই জোট গঠনের শুভ সম্ভাবনা যেমন প্রবল তেমনই তা আবার নেত…ত্বের দ্বন্দ্বে বিপর্য ̄Í হওয়ার আশংকাও কিছুটা বিদ ̈মান।
ইতোমধে ̈ই খবর বেরিয়েছে পশ্চিম বাংলার মুখ ̈মন্ত্রী ত…ণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দে ̈াপাধ ̈ায় হয়তো তাঁকে সম্ভাব ̈ বিজেপি মন্ত্রীসভায় প্রধানমন্ত্রীর পদ দাবি করে বসে ঐ প্রচেষ্টা ব ̈র্থ করার উদে ̈াগও নিতে পারেন। এই অতিমাত্রায় উচ্চাকংখী নেত্রী যে শুধুই একটি প্রদেশের নেত…ত্বের দাবি করার যোগ ̈তা রাখেন ভারতের অন ̈ কোন প্রদেশের নয় তা তাঁর মাথায় ঢুকছে না। তাই অনেকের সন্দেহ বিজেপির সাথে তাঁর গোপন একটি আতাঁত রয়ে গেছে। ভবিষ ̈তে এ বিষয়টির যথার্থ-অযথার্থ প্রমাণিত হবে।
অপরপক্ষে পশ্চিমব১ে⁄২ সম্পধতি অনুষ্ঠিত পঞ্চায়েত বা ̄’ানীয় সরকার নির্বাচনে যে ভয়াবহ সন্ত্রাস কায়েম করে বিরোধীদের মনোনীত প্রাথীদেরকে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে না দেয়া (প্রায় ৪০ ভাগ আসনে ) এবং েেজার করে ব ̈ালট পেপারে সিল ছাপ্পড় মারা, বুথ দখল করা, প্রিজাইডিং অফিসারদেরকে ভয় দেখিয়ে বের করে দেওয়া প্রভ…তির মাধ ̈মে প্রায় বিরোধীদল শূন ̈ ̄’ানীয় সরকার নির্বাচনে উপহার দিলেন মমতা বন্দে ̈াপাধ ̈ায়ের নেত…তা¡ধীন ত…ণমুল কংগ্রেস। তা ভারতের সকল গণতন্ত্রকামী মানুষকে আতংকিত করে তুলেছে উদ্বেগাকুল করে তুলেছে সকল মানুষকে। এমনকি ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচন পশ্চিম বাংলায় কেমন আকার ধারণ করবে তা নিয়েও সকল সংশ্লিষ্ট মহল উদ্বিগ্ন বোধ করতে শুরু করেছে।
সবকিছু মিলিয়ে ভালমন্দের দোলাচলে ভারতীয় গণতন্ত্র আজ এক চ ̈ালেঞ্জের সম্মুখীন। বে-আইনি অর্থ, সাংসদ কেনাবেচা জোর করে বিরোধীদল শূন ̈ ̄’ানীয় সরকার নির্বাচন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে প্রধানতম অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যেহেতু এই উপমহাদেশের শুধু নয় গোটা বিশ্বেই ভারত পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র বলে পরিচিত। তাই ভারতের গণতন্ত্রের হাল আমলের চেহারা তুলে ধরতেই এত বেশি কথা বলতে হলো।
পাকি ̄Íান নিয়ে নিশ্চয়ই আলোচনার কোন অবকাশই নেই কারণ ১৯৪৭ এর ১৪ আগষ্ট দেশটি ভুমিষ্ট হওয়ার কাল থেকেই শুরু করে আজ পর্যন্ত একটি দিন বা মুহুর্তের জনে ̈ও সে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি অথবা হতে দেওয়া হয়নি। অদূর ভবিষ ̈তের তা হওয়ার নূ ̈নতম লক্ষণও ̄úষ্ট নয়। তাই যতদিন না সে দেশে ব ̈াপক এবং অপ্রতিরোধ ̈ গণজাগরণ ঘটছে ততদিন অপেক্ষা করা ছাড়া গত ̈ন্তর নেই। তবে গণতন্ত্র পাকি ̄Íানে প্রতিষ্ঠিত হোক- এ কামনা সর্বদাই পোষণ করব।
এবারে আসি বাংলাদেশ প্রস১ে⁄২ সংক্ষিপ্ত আলোচনায়। সুদীর্ঘ ২৩ বছরের নিরন্তর সংগ্রাম, লড়াই, আন্দোলনের পথ ধরে ১৯৭১-এ জাতির জনক ব১⁄২বন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আহ্বানে নয় মাস ব ̈াপী সশ ̄¿ মু৩িযুদ্ধে অভাবনীয় ও অত ̈ন্ত গৌরবজনক বিজয় অর্জনের মাধ ̈মে সাম্পধদায়িক, অগণতান্ত্রিক ও সামরিক ৈ ̄^রাচারী রাজনীতির নির্মম পরাজয় ঘটিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাজনীতির যে বিজয় সূচনা হয়েছিল, আজ প্রায় পাঁচ দশক পরে অকুণ্ঠ চিত্তে ̄^ীকার করে নেওয়াই ভাল যে আমরা ঐ বিজয় যথার্থভাবে ধরে রাখতে পারিনি। ১৫ আগষ্টের কালো রাত্রিতে নির্মমভাবে জাতির জনককে সপরিবারে নিধনের মাধ ̈মে গণতন্ত্র
বিকাশের পথ যেভাবে রুদ্ধ করা হয়েছে সেই অব ̄’ার বিশেষ কোন পরিবর্তন ঘটানো আজও সম্ভব হয়নি।
সাম্পধদায়িকতা আজও বিদ ̈মান এবং তার গতি প্রতিরোধের দৃশ ̈মান শ৩িরও সাক্ষাত পাওয়া যাচ্ছে না। রাষ্টধ সেখানে নির্বিকার, নিষ্পৃহ। ̄^াধীনতা ও গণতন্ত্রের দুশমন জামায়াতে ইসলামী ও ধর্মাশ্রয়ী দল ̧লি পাকি ̄Íানের মতই আজও বৈধ, জিয়ার “বিসমিল্লাহ” আজও সংবিধানে ঠাঁই পেয়ে আছে। সামরিক ৈ ̄^রাচারী এরশাদের “রাষ্টধধর্ম” আজও সংবিধানে লিপিবদ্ধ আছে। তাই ধর্মনিরপেক্ষ মু৩িযুদ্ধের মৌলিক অর্জন ধর্ম নিরপেক্ষতা আর পর্দার অন্তরালে। হেফাজতে ইসলামীর দাবিতে উচ্চ আদালত প্রা১⁄২ণ থেকে শিল্পকর্ম অন্তর্হিত, পাঠ ̈বই এ পাকি ̄Íানী ভাবধারায় সাম্পধদায়িক রচনা সমূহকে ̄’ান করে দেওয়া , রবীন্দধ- জরুলসহ অসাম্পধদায়িক লেখকদের রচনাসমূহ পাঠ ̈বই থেকে নিরুদ্দেশে পাঠানো, সংখ ̈ালঘু বিতাড়ন অব ̈াহত, অর্পিত সম্পত্তি নামে শত্রু সম্পত্তি আইন নামক পাকি ̄Íানী বর্বর আইনের অবসান না ঘটানো, মন্দির-গীর্জা, দেবোত্তর, সম্পত্তিসমূহ দখল এবং ২০০১ ও পরবর্তী সাম্পধদায়িক ঘটনাবলীর বিচার না হওয়া প্রভ…তি শুধুমাত্র গণতন্ত্রকে নাম সর্ব ̄^, অর্থহীন বাক ̈জালে আবদ্ধ করেছে।
সংসদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবেশ রচনা, কালো টাকা, সন্ত্রাসমু৩ নির্বাচন, মু৩িযুদ্ধের চেতনার আদর্শনিষ্ঠ বৃহত্তম বিরোধী দল গঠনের উদে ̈াগ আজও কল্পনায় ̄’ান পাচ্ছে না। ̄’ানীয় সরকার নির্বাচন ̧লি পর্যন্ত অধিকতর পরিমানে দলীয় প্রভাবের কবলে নিতে বিধি
সংশোধন করে সম্পধতি এম.পিদের প্রচারণায় অংশ নেওয়ার বাধা অপসারণ গণতান্ত্রিক প্রμিয়াকে জটিলতরই করে তুলছে।
এমনই হাজারো বাধা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে সংশয়াকুল করে তুলছে।
এহেন দুর্যোগের সম্মুখীন আজ উপমহাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা। ভবিষ ̈তের ঐক ̈বদ্ধ জনগণের সংঘটিত প্রতিরোধই একমাত্র পারবে বাধামু৩ নিরংকুশ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রμিয়াকে সফল করে তুলতে। এবং তা আমাদের এই উপমহাদেশের তিনটি দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ ̈ নানা মাত্রায়।