একজন রাজীব এর জীবনী (২)

একজন রাজীব এর জীবনী (২)
দেবী গাফফার

বর্ষাকাল চারিদিকে পানি থৈ থৈ। অনেক খানি বিল পার হয়ে, লুঙ্গি মাথায় বেঁধে স্কুলে আসা-যাওয়া চলতে থাকে। রাস্তায় যাওয়ার পথে পিছনে বাচ্চারা, মানুষ বলাবলি করে। পালা বারেক, ঐ যে কাসেমের পালা বারেক।
জিদে ব্যথায় বর্ষার বিলের পানিতে মিশে যেতো অসহায় কিশোর বারেকের চোখের পানি।

বাবা কাসেম বড়ো ভালো মানুষ। মা হালিমা, যে মার কোন তুলনা নেই।
ক্লাস এইট এ উত্তীর্ণ হলো। একাকী জীবনের বোঝা টেনে এতদূর আসা। বন্ধু নেই, ভাইবোন নেই।
মা-বাবা যতই ভালো বাসুক মনের মধ্যে তুফান চলতে থাকে, আমি আসলে কার সন্তান? কে আমার মা-বাবা?

স্কুলে যাওয়ার পথে, দুমকি বাজারের কাছে এক মহিলা প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকেন। একই জায়গায় দাঁড়িয়ে অপলকে বারেককে দেখতে থাকেন।

সহপাঠী আজম বলে, ঐ যে মহিলা দাঁড়িয়ে প্রতিদিন তোকে দেখে, উনি কে জানিস? বারেক বলে, জানি না তো। কে উনি? আজম বলে, উনিই তোর আসল মা।

সাথে সাথে আসমান জমিন এক হয়ে যায়। মাথা ঘুরতে থাকে।
স্কুলে না ঢুকে সমস্ত শক্তি দিয়ে বাড়ির দিকে দৌঁড়াতে শুরু করে।
মনে মনে বলতে থাকে, আমার মা একজনই আমার অন্য কোন মা নেই। নেই নেই। ঐ মুখ কোনদিন দেখতে চাই না।
ততদিনে বারেক নিজের জীবন কাহিনী শুনেছে।
ভাবতে থাকে, সেদিন যদি শিয়াল খেয়ে ফেলতো? এতিম খানায় কেনো
দিলো না? সারা জীবনের অপমান যেনো তীর হয়ে বুকে বিঁধতে থাকে।

এরই মধ্যে আজম এর সাথে বারেক এর বন্ধুত্ব হয়ে যায়। টিফিন এর ছুটিতে আজম বাসায় নিয়ে যায়।
এক সময় বারেক বুঝতে পারে, আজমদের বাসায় না গেলে মন কেমন যেনো করে, অস্থির লাগে।
কারণ হলো, আজিজের ছোট বোনটা।
বার-চৌদ্দ বছরের এক প্যাঁচের শাড়ি পরা মেয়েটা, কখন যে সমস্ত মনপ্রাণ জুড়ে বসে আছে টেরই পাননি।
টিফিন এর সময় বাসায় গেলে, সাথে সাথে এক গ্লাস লেবুর শরবত এনে হাতে দিতো। কষ্ট করে আমড়া পেড়ে হাতে দিয়ে বলতো ‘খাইয়েন কিন্তু’।
বাধভাঙা ভালোবাসা এগিয়ে যেতে থাকে।
একা বারেক আগামীর স্বপ্ন বুনতে থাকে। এই বুঝি জীবনের সমস্ত গ্লানি মুছে যাবে।
টিফিন টাইমে একবার যাওয়া চাই, এক নজর দেখা চাই।

স্বপ্নেরা বারেকের সরল মনটা নিয়ে খেলতে থাকে।
ততদিনে আজম বুঝে ফেলে রোমিও-জুলিয়েট পার্ট টু দুমকিতে শুরু হতে যাচ্ছ।
বারেক বুঝতে পারে আজম কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখছে।
(বারেক এর বন্ধুর নাম পরিবর্তন করা হয়েছে)
দেখা যাক নিয়তি কোথায় নিয়ে যায়।
‘চলবে…’

একজন-রাজীব-এর-জীবনী-১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!