একটানা ৫ বছর ধরে ঘুমাচ্ছেন এই সুন্দরী।

ইংল্যান্ডের স্টকপোর্ট শহরে বিশেষ কোন অভিজাত বংশে জন্ম হয়নি মেয়েটির। বাবা-মার অতি আদরের এই মেয়ে। মা বাবা সাধ করে মেয়ের নাম রাখে বেথ গুডিয়ার। সুন্দরী হিসেবে পাড়ায় তার বেশ সুনামই ছিল। তারা স্বপ্ন দেখতেন তাদের আদরের মেয়ে পড়াশোনা করে সমাজের উচ্চ শিখরে আরোহন করবে।

ছাত্রী হিসেবেও বেথ গুডিয়ার স্কুলের পরীক্ষাগুলোতে সে তার স্বাক্ষরও রেখেছে। শিশু মনস্তত্ত্ব নিয়ে পড়ার স্বপ্ন ছিল তার। এতদিনে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সবকিছু ওলটপালট হয়ে গেল ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে। বেথের ১৭তম জন্মদিনে। ঐদিন বেথকে অন্য সব দিনের চেয়ে আরো আকর্ষণীয় লাগছিল। এই বার্থডে গার্লকে নিয়ে সবাই যেন ছিল প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এই দিনের সুন্দর কিছু মুহূর্ত নিয়ে সেই দিনে সে যেই ঘুমোতে গেল মেয়েটি, তারপর থেকে তার ঘুম ভাঙ্গারই নাম নেই। তারপর পাঁচ বছরেও পুরোপুরি ঘুম ভাঙেনি।

sleeping-beauty-1
তন্দ্রাচ্ছন্ন বেথ

বেথ এক বিরলতম রোগে আক্রান্ত, যে রোগের নাম ক্লেন লেভিন সিনড্রোম (কেএলএস), ওরফে স্লিপিং বিউটি সিনড্রোম। এটি একটি বিরল ও জটিল স্নায়ু ব্যাধি। সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালের ছেলে মেয়েরা এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে ছোট শিশুরাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত মানুষের সর্বক্ষণই ঘুম পায়। ঘুমের প্রকোপ এতটাই বেশি থাকে যে, দিনের অধিকাংশ সময়টায় ঘুমিয়েও থাকতে চায়। অনেক সময়ে একটানা বেশ কয়েকদিন কিংবা কয়েক সপ্তাহও কেটে যায় ঘুমিয়ে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, সাধারণত ১৬ বছর বয়সেই এই রোগ বাসা বাঁধে মানুষের শরীরে। বেথের বয়স যখন ১৭, তখন তার শরীরে ধরা পড়ে কেএলএস-এর আক্রমণের লক্ষণ।

বেথের মা জেনাইন বলেন, গত পাঁচ বছরে তাঁর মেয়ে শতকরা ৭৫ ভাগ সময়ই ঘুমিয়ে কাটিয়েছে। এখন শুধু নামমাত্র খাওয়া, সামান্য পরিমাণ পানি পান করা এবং টয়লেটে যাওয়ার জন্য সে ওঠে। বাকি সময়টা সে ঘুমিয়েই কাটায়। যে সময়টা সে জেগে থাকে সেই সময়টাও তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় কাটে বেথের। বাচ্চাদের মতো করে কথা বলে, মুখ দিয়ে লালা গড়ায়, আর তেল-মশলা যুক্ত জাঙ্ক ফুড খাওয়ার জন্য বায়না করে। গত পাঁচ বছরে কেবল কয়েকবার ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছে বেথ। সেই সময়েও হুইল চেয়ারে করে তাকে নিয়ে যেতে হয়েছে।

বেথের ডাক্তার স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ গাই লেসসাইজার বলেন, ক্লেন লেভিন সিনড্রোম – রোগটি বিরলতম হলেও সাধারণত ১৩ বছরের বেশি স্থায়ী হতে দেখা যায় না। বেথের পাঁচ বছর কেটে গিয়েছে। যদিও তার মধ্যে উন্নতির কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না। হয়তো আরও বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে বেথের সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য।

বেথের ভালবাসার মানুষ ড্যান
বেথের ভালবাসার মানুষ ড্যান

বেথ এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার তিন বছর আগে তার ছিল এক ভালবাসার মানুষ। নাম তার ড্যান। ২৫ বছর বয়সি এই প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকের সঙ্গে হঠাৎই আলাপ হয় বেথের। সেসময় এ্ক মধুর বিকেলে বেথের হাত ধরে ড্যান বলেছিলেন, তার হাত কখনো ছাড়বেন না।

ড্যান এখনো বেথকে পাগলের মতো ভালোবাসে। পরিবারের নিষেধ সত্ত্বেও ড্যান কিছুতেই বেথকে ছাড়তে পারবে না বলে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে। বেথের জীবনে এখন আশার আলো জ্বালিয়ে রেখেছেন তার ভালবাসার মানুষ ড্যান। হয়তো একদিন ড্যানের ভালোবাসার শক্তিতে বেথ সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে ড্যানের বুকে।

তথ্যসূত্র

http://klsfoundation.org/what-is-kleine-levin-syndrome/
http://www.dailymail.co.uk/femail/article-3980288/Sleeping-Beauty-syndrome-Beth-fell-asleep-sofa-one-day-didn-t-wake-SIX-MONTHS-Five-years-aged-22-sleeps-time-victim-baffling-condition.html
http://www.cosmopolitan.com/health-fitness/a8375776/beth-goodier-sleeping-beauty-kleine-levin-syndrome/
http://www.mirror.co.uk/tv/tv-news/real-life-sleeping-beauty-who-9357508

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!