একত্ববাদের একি দুরবস্থা
একত্ববাদের একি দুরবস্থা
(আল্লাহর সৃষ্টি কোটি কোটি গুণ বড়, কোটি কোটি মাইল দূরে এবং বৈচিত্রময়)
আওলাদ হোসেন
আমার লেখার উদ্দেশ্য ছিল বাংলায় আল-কুরআনের কিছু আয়াত সাধারণের নিকট প্রকাশ করা। অনেক লেখা ইনতিজার এ ধারাবাহিক প্রকাশিত হয়েছে এবং ৩টি বই বাজারে এসেছে। বিক্রি শূণ্যের কোঠায়। বইও শেষ। কিন্তু বন্ধুবান্ধবদের দিয়েই শেষ। পুস্তকের আয়াত এর সংগে বাস্তবের কোন মিল পাচ্ছি না। মানুষ মানুষই রয়ে গেল। প্রথমে আল্লাহকে দেখা যাবে না। অথচ আমাদের অনেকেই দাবী করেন তারা আল্লাহকে দেখেছেন।
২। আল্লাহর কালাম বিক্রি করা যাবে না, বিক্রি হচ্ছে।
৩। দেশ জয় করতে হবে আল্লাহর রাজত্ব কায়েম করার জন্য-তা হচ্ছে না।
৪। দেশ জয় করে আল্লাহর একত্ববাদ কায়েম করতে হবে।
৫। রাষ্ট্র জয়ের নেশা যেন রাজত্ব কায়েম না করে খেলাফত কায়েম করা হয়। ৪ খলিফার পর খিলাফত কায়েম থাকেনি।
৬। রাষ্ট্র পরিচালনার ভীতি ও ভিত্তি আল কুরআন অনুসারে হতে হবে-হয়নি।
৭। Break- ধর্মীয় লেবাছে, বর্তমান সরকার যাদেরকে যেখানে বসিয়েছেন তারই স্বজন প্রীতি ও অর্থ আত্মসাৎ করেছেন-অত্যন্ত দুঃখজনক।
৮। রাজ্য জয়ের পর ধর্মের প্রাধান্য অর্থাৎ অন্তত আল কুরআন জানা থাকতে হবে অন্যথায় মুসলমান নামধারী হওয়ার কোন প্রয়োজন আল্লাহর নেই-উল্টোটা চলছে।
৯। এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে সাহায্য করবে-তার উল্টোটা চলছে।
১০। সুদ হারাম-সুদের উপর পৃথিবী চলছে।
১১। Break- দিনে ভোট দেয়ার পরিবর্তে রাত্রে ভোট দেয়ার প্রচলন এবং বিরোধী দলকে দয়ার উপর রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে রাজধানীর কলামিস্টরা যথেষ্ট লিখেছেন। পরের সরকাররা কি করবে চিন্তার বিষয়। ততদিনে আমরা হয়তো পগার পার। তারাদের সাথে থাকবো।
১২। যে সমস্ত কারণে প্রকৃত একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা লাভ করেনি তার সম্ভাব্য কারণঃ-
ক) আল-কুরআন পড়া ও বুঝা খুবই কঠিন।
খ) রাজ্য পরিচালনায় ব্যর্থতা। দিক ভ্রষ্ট হওয়া ও ঈমানের অটুট অবস্থায় পরিপূর্ণ ভাঙ্গণ। লোভী, স্বার্থপর আল্লাহ অদৃশ্য বিশ্বাসে ভাঙ্গন এবং ইচ্ছামত স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা কায়েম, ধর্মদ্রোহীতা এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের যুগে যুগে কঠোর হস্তে দমন। মুনাফিক, দুর্বল চিত্ত, বংশ বা গোত্রীয় কলহ বিবাদ এবং পরকালের উপর সম্পূর্ণ অবজ্ঞা।
গ) মুসলমানেরা ব্রিটিশ কলোনীর অধীনে নিজেদের আত্মপরিচয় ও আত্মসচেতনতা হারিয়ে ফেলে। ইংরেজি শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষা দুই ভাগ করে দিয়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার, চতুরতা, মিথ্যা কথা বলা এবং প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করা অভ্যাসে পরিনত হয় এবং এলিট গ্রুপ নিজেদেরকে নাস্তিক ও পাশ্চাত্যের পদলেহী হতে ভালবাসে।
ঘ) মুসলমানেরা জ্ঞানে বিজ্ঞানে পিছিয়ে পড়ে। পরাশক্তি বিছিন্ন, নির্বোধ, আল্লাহতে অনাস্থা এবং যে উদ্দেশ্যে বিশ্ব জয় তা থেকে ছিটকে পড়ে এবং স্থানীয় ভাবধারায় নিজেদের হীনবল মনে করে, Main Stream থেকে বিছিন্ন হওয়ায় এবং অথবা করায় দিকভ্রান্ত সাত সাগরের মাঝির আকার ধারণ করে এবং একত্ববাদ হারিয়ে দ্বৈতবাদ, ত্রিত্ববাদ ও বহুবাদে জর্জরিত হয়ে ক্যান্সারে রুপ নেয় এবং আল্লাহর গজবে পড়ে।
১৩। আল্লাহর সৃষ্টি বাণী হচ্ছে-” সে বলেঃ কে জীবিত করবে এ হাড়গুলোকে, যখন তা পঁচে গলে যাবে? বলুনঃ তিনিই এগুলোকে পুণরুজ্জীবিত করবেন, যিনি তা প্রথমবারে সৃষ্টি করেছেন।” ”অতএব পবিত্র মহান তিনি যার হাতে রয়েছে সর্ববিষয়ের সর্বময় ক্ষমতা এবং তাঁরই সমীপে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।” কে চায় শৃঙ্খলিত জীবন যাপন করতে? ইচ্ছামত ঘুরে ফিরে যদি চলা যায় তাহলে কে শোনে নীতি কথা? ভোটের সময় দেখা যায় টাকার এপিঠ আর ওপিঠ। একখন্ড বিড়ি দিলেই সব ঠিক। আর ১৬ কোটি বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ করেছে তাদেরকে ভোটে বিশ্বাস করা যায় না, কখন মারবে ঢেঁকি মারছে নাইল। তারপর বড়ের পীড়িতি গরীবের সুন্দরী বউটিকেও দিতে হবে অন্যথায় ভাতে মারব, পানিতে মারব।
১৪। স্কুল, কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের যে অবস্থা সব নায়ক আর নায়িকা-মোবাইলের যুগ। আমার ওস্তাদকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এখনতো পর্দা প্রথার কারণে মেয়েদের চেনাই যায় না, তিনি বল্লেন হাতে মোবাইল আছে অসুবিধা কী? অপর এক প্রশ্নে বলেছিলেন আমেরিকা বিশ্ব শাসন করছে তারা হিলারী ক্লিনটন কে চাইবে কেন? এটাই রাজনীতি যা আমরা বুঝতে অক্ষম। দেশের মাটিতে যে বাঘ তাদের কাছে বিড়ালসম প্রাণী অথচ স্বার্থ উদ্ধারে এটাই প্রকৃষ্ট পন্থা। কিন্তু বোকা পাবলিক কি এটাও বুঝে না কোনটি মেয়েলোক আর কোনটি পুরুষ আর এত মাদক আসে কোথা থেকে। ভাল প্রেমিকের জন্য প্রাণ দেয় যে প্রেমিকা সেই প্রেমিকার জন্য প্রাণ দেয় অন্য প্রেমিক। পিপড়াকে বুঝানো সম্ভব না পৃথিবী ঘুরে কেন, অনুরূপ মানুষকে বুঝানো সম্ভব না আল্লাহ দেখতে কেমন, কোথায় থাকেন। মৌলভীদের যে যুক্তি হচ্ছে টাকা যদি না নেই খাবো কি? আর মসজিদের উন্নয়ন হবে কিভাবে? অধিকাংশ মসজিদে অথবা মাহফিলে প্রকৃত নামাজীদের কর্তৃত্ব নেই এবং তারা দেশে দেশে ঘুরে বেড়ায় মুসলমানদের নিরুপদ্রব মুসলমান হওয়ার জন্য। দুনিয়ার মুসলমান এক হও এই স্লোগান দিতে অক্ষম, নারাজ। আল্লাহ জানেন, যে জাতি নিজের দূর্গতি নিজে টেনে আনে তাকে তার ফল ভোগ করতেই হয়, উপমা অনেক। পত্রিকা এখন ফটো দিয়ে প্রমাণ করে মুখের ভাষা, বর্ণনা বুঝে নেবেন। অনেক দূর দিয়ে জাহাজ। নৌকা যাচ্ছে বুঝাই যায় না, দেখাই যায় না, ছোট্ট হেডিং চোখে পড়ার মত না। দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে দেয়া, আবরারের মত গ্রাম্য চাষা মরে গিয়ে প্রমাণ করলো যে সে মরে নাই, আর রাজধানী তাদের মত বোকাদের জন্য না। এখানে অবশ্য আল্লাহর বাণী প্রযোজ্য-” মুহাম্মদ তো একজন রাসুল ব্যতিরেকে আর কিছু নয়। ……….”অথবা “………….বলুনঃ যদি তোমরা নিজেদের ঘরেও থাকতে, তবুও যাদের নিহত হওয়া নির্ধারিত ছিল তারা বেরিয়ে পড়ত নিজেদের মৃত্যুর স্থানের দিকে।” অথবা “আল্লাহর অনুমতি ছাড়াও কেউ মরতে পারে না, এ জন্য নির্দিষ্ট সময় লিখিত আছে-৩ঃ ১৫ঃ ১৪৫।” কিন্তু পৃথিবীকে আল্লাহ পাক সব জাতির জন্য সমান ব্যবস্থা রেখেছেন এবং শয়তান নিয়োজিত এবং সদা তৎপর আছে। মুসলমান যাবে কোথায়? একত্ববাদ হারিয়ে মনোবল হারিয়ে অন্যান্য জাতির পদলেহণে পরিণত হয়। জীবন রক্ষা করাই ফরজ। অথচ একত্ববাদই ইসলাম ও মুসলমান যা তাওরাত ও ইঞ্জিল-এ উদ্ধৃত।
গোটা দেশ অথবা গোটা জাতিকে ধ্বংস করার ইতিহাস আল-কুরআনে দেয়া আছে এবং আমি আমার লেখায় যথেষ্ট পরিমাণ লিখে শেষ দিয়েছি তবুও ২/১ টি উদাহরণ দেয়া হল।
আর সে সময়ের কথা স্মরণ কর, যখন আমি তোমাদেরকে ফেরাউনের লোকদের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছি; তারা তোমাদেরকে দিত নিকৃষ্ট শাস্তি, তোমাদের পুত্র-সন্তানদের মেরে ফেলত এবং মেয়েদের বাঁচিয়ে রাখত। এতে তোমাদের প্রতি তোমাদের পরওয়ারদেগারের বিরাট পরীক্ষা রয়েছে।
অতঃপর আমি তাকে ও তার বাহিনীকে পাকড়াও করলাম, তৎপর আমি তাদেরকে সমুত্তেদ্র নিক্ষেপ করলাম। অতএব, দেখ জালেমদের পরিণাম কি হয়েছে।
সে বলল, আমি অচিরেই কোন পাহাড়ে আশ্রয় নেব, যা আমাকে পানি হতে রক্ষা করবে। নূহ (আঃ) বল্লেন আজকের দিনে আল্লাহর হুকুম থেকে কোন রক্ষাকারী নেই। একমাত্র তিনি যাকে দয়া করবেন। এমন সময় উভয়ের মাঝে তরঙ্গ আড়াল হয়ে দাঁড়াল, ফলে সে নিমজ্জিত হল।হুদ-
আর আমার আদেশ যখন উপস্থিত হল, তখন আমি নিজ রহমতে হুদ এবং তাঁর সঙ্গী ঈমানদারগণকে পরিত্রাণ করি এবং তাদেরকে এক কঠিন শাস্তি থেকে রক্ষা করি।
আর হে আমার জাতি! আল্লাহর এ উষ্ট্রীটি তোমাদের জন্য নিদর্শন, অতএব তাকে আল্লাহর যমীনে বিচরণ করে খেতে দাও, এবং তাকে মন্দভাবে স্পর্শও করবে না। নতুবা অতি সত্বর তোমাদেরকে আযাব পাকড়াও করবে। (আল কোরআন)
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, আল্লাহর নির্ধারিত সময়ে সব কিছু ঘটে থাকে এবং ফুলের সৌরভ ছড়ানো, সমুদ্রে ঝড় তোলা এবং ফল ফসলের মাঠ, পশুপাখী, মানুষের রৃন হুংকার সবই বস্তুবাদীর রূপকার অদৃশ্য একাত্ববাদ শক্তির প্রকাশ মাত্র যা আমরা ভেবে দেখতে পারছি না, উদাশীনতা মোহাচ্ছন্ন অযুক্তিবাদী করে রেখেছে প্রলয় বা ধ্বংসকে ডেকে আনার জন্য। কুল আমিনু বিহি আওলা তুমিনু।